![]() |
পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদের অতি ব্যবহারের ফলাফলগুলি লেখো। |
জলসম্পদের ব্যবহারের সুফল
বহুফসলি চাষের বৃদ্ধি করা: পশ্চিমবঙ্গের উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে অতিরিক্ত জলসেচের ফলে একফসলি চাষের জায়গায় বহু ফসলি শস্যের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বহুফসলি কৃষি চালু না হলে পশ্চিমবঙ্গবাসী অনাহারে মারা যেত। যেমন – উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনায় বহুফসলি চাষ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তৃষ্ণা ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটায়: পানীয় জল প্রাথমিক ভাবে মানুষের তৃষ্ণা মেটায় এবং গৃহস্থালির অন্যান্য কাজে জলের ব্যবহার অনস্বীকার্য। নদীর জলকে পরিস্তুত করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের ফলে মানবজীবন তথা অনান্য জীবকুলও বেঁচে আছে।
পর্যটন শিল্পের বিকাশ : নদী উপত্যকায় যে সমস্ত স্থানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, সেই সমস্ত জায়গায় পর্যটকদের প্রতিটি চাহিদা পূরণ, যেমন স্নানাদি, ধর্মীয় কাজে জলকে ব্যবহার করা দক্ষিণেশ্বর, নদিয়ার মায়াপুরে মঠে গঙ্গার জলের ব্যবহার পর্যটন শিল্পে যথেষ্ট উন্নতিসাধন করেছে।
জলবিদ্যুৎ তৈরিতে : নদীর জলস্রোতে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গের ম্যাসাঞ্জোর, ছোটো রঙ্গিত।
শিল্পক্ষেত্র ও বনসৃজন : যে-কোনো শিল্প গড়ে তুলতে জল ব্যবহার করা হয়। যেমন হুগলি শিল্পাঞ্চলের জলের চাহিদা মেটায় হুগলি নদী। নতুন বনসৃজনের জন্য জল ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন।
পরিবহণের সুবিধা: নদী ও খালপথে কম খরচে যাতায়াত ও বাণিজ্যের সুবিধা হয়।
উর্বরতা বৃদ্ধি: কূপ-নলকূপের জলে নাইট্রেট, ক্লোরাইড, সালফেট প্রভৃতি খনিজ দ্রবীভূত থাকে, যা কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
জলসম্পদের অতিব্যবহারের কুফল
উদাহরণ: নদিয়া, মুরশিদাবাদ, মালদা, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা এবং উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনায় আর্সেনিক দূষণ ক্রমশ বাড়ছে।
ফ্লুওরাইড দূষণ বৃদ্ধি: মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফসফেট সার, কাচ, প্লাস্টিক মেশার ফলে ফুওরাইড জলে মিশছে। এই ফুওরাইড মিশ্রিত জল খেলে মানুষের ফ্লুরোসিস রোগ হচ্ছে। ফলে দাঁতের ক্ষয়সহ অনেক রোগ দেখা দিচ্ছে।
ভৌমজলস্তরের অবনমন : গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে এত বেশি ভৌমজল উত্তোলন করা হচ্ছে যে ভৌমজলের স্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে।
উদাহরণ: বিগত 40 বছরে বাঁকুড়া জেলায় 4.13 মিটার, পুরুলিয়ায় 2.24 মিটার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় 2.76 মিটার এবং কলকাতায় 7-11 মিটার নীচে জলস্তর নেমে গিয়েছে।
ভূমির অবনমন: অতিরিক্ত ভৌমজলের অবনমনের ফলে ভূমির ক্রমশ অবনমন ঘটছে এবং একটু একটু করে বসে যাচ্ছে। যেমন কলকাতা মহানগরে অতিরিক্ত মাত্রায় ভৌমজল তুলে নেওয়ার ফলে প্রতিবছর ভৌমজল ক্রমশ অবনমিত হচ্ছে।
কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ব্যাহত : কৃষিজমিতে অতিরিক্ত জলসেচ করার ফলে মাটিতে লবণের স্তর জমা হয় এবং মাটির ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষিজমিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। যেমন- বর্ধমান ও হুগলি জেলায় বিভিন্ন নদী বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
জলদূষণ ও জলসংকট: গৃহস্থালি, শিল্পক্ষেত্র প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বর্জ্যপদার্থ পরিষ্কার করতে জলের ব্যাপক ব্যবহার মারাত্মক ভাবে জলদূষণ ঘটায়। বৃষ্টিহীন অঞ্চলগুলিতে যথেচ্ছাচারে ভৌমজলের ব্যবহার জলসংকটের মতো পরিস্থিতিও তৈরি করছে।