বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

ব্যতিক্রমী প্রতিভা

বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় বাংলার চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। প্রথমে ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি ও পরবর্তীতে অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও, কেবল নিজের প্রতিভায় তিনি অসামান্য চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠেন। অবনীন্দ্রনাথ ও নন্দলালের আশীর্বাদী হাত মাথার উপরে থাকায় এবং রবীন্দ্রনাথের সহানুভূতিতে বিনোদবিহারী কলাভবনে পড়ার সুযোগ পান এবং শিল্পকীর্তিতে নিজের অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হন। তাঁর অনুভূতি শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে, তিনি অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে বলেছিলেন যে ‘স্পেস’-কে নতুনভাবে বুঝতে শিখেছি। 

উত্তরাধিকার ও মৌলিকতা

দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর যেন বিনোদবিহারীর অন্তরিন্দ্রিয়ের পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল। শান্তিনিকেতনে নন্দলাল বসুর তত্ত্বাবধানে যে দেয়ালচিত্র বা ভিত্তিচিত্রের (মুরাল) চর্চা শুরু হয়েছিল, তা তাঁর হাতেই পরিপূর্ণতা পায়। তিনি দেয়ালচিত্রকে আধুনিক চিত্রশিল্পের অন্যতম এক মাধ্যমে পরিণত করেছিলেন। বিশ্বভারতীর হিন্দি ভবনের দেয়ালে আঁকা ৭৭ ফুট বিস্তৃত ও ৮ ফুট দীর্ঘ বিরাটাকার ছবিটি হল বিনোদবিহারীর শ্রেষ্ঠ দেয়ালচিত্র। এই ছবিটির নাম হল ‘মধ্যযুগের সন্তগণ’।

অবদান ও কৃতিত্ব

তিনি কখনও অস্বচ্ছ জলরঙে নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন, আবার কখনও তাঁর ছবিতে মিশেছে অলংকরণ। চিন ও জাপানের ক্যালিগ্রাফিক তুলির টানে বিনোদবিহারীর ছবিতে কখনও উঠে এসেছে এক দ্রুততার আবহ। তাঁর চিত্রচর্চায় আবহসংগীতের মতো জেগে আছে এক বিষণ্ণতা ও নির্লিপ্তি। সত্যজিৎ রায়ের ‘The Inner Eye’ তথ্যচিত্রটিতে বিনোদবিহারী চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন। এ ছাড়া তাঁর লেখা ‘চিত্রকর’ নামক রচনা এবং ‘কর্তাবাবা’ নামক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ পাঠকমহলে আজও সমাদৃত হয়ে আছে।

Leave a Comment