অধিকার সম্পর্কে ল্যাঙ্কির ধারণাটি বিবৃত করো।
|
ল্যাস্কির অধিকারের ধারণা
A Grammar of Politics’ নামক গ্রন্থে ল্যাঙ্কি অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, অধিকার বলতে সমাজজীবনের এমনসব শর্তগুলিকে বোঝায় যেগুলি বাতীত কোনো ব্যক্তি তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের বিকাশ ঘটাতে পারে না রাষ্ট্র ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের এইসব অধিকারকে সংরক্ষণ করে তার উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করে। অর্থাৎ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও রাষ্ট্র কর্তৃক সেইসব সুবিধা প্রদানের পারস্পরিক আধার হল অধিকার। রাষ্ট্রই ব্যক্তির তথা নাগরিকদের সত্তাসমূহকে সার্বিকভাবে উপলব্ধি করতে এবং তার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে থাকে। অতএব, ল্যাঙ্কির দৃষ্টিতে অধিকারের মূল বিষয়গুলি হল-
[1] রাষ্ট্র-পূর্ব অধিকার:
অধিকারের সৃষ্টি রাষ্ট্র সৃষ্টির আগে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই দেখা দিয়েছিল। রাষ্ট্র সৃষ্টির পরে সেগুলি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। তাই অধিকার হল সমাজনির্ভর বিষয় এবং তা সমাজের মধ্যেই নিহিত থাকে।
[2] অধিকার পরিবর্তনশীল:
ল্যাস্কি মনে করেন অধিকার কোনো স্থিতিশীল বিষয় নয়- তা পরিবর্তনশীল বিষয়। দেশ ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অধিকারেরও পরিবর্তন ঘটে। পূর্বের অধিকারের ধারণাটির পরিবর্তন ঘটে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে। কারণ গণতন্ত্র-পূর্ব সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন গণতন্ত্রে ঘটলে মানুষের অধিকারের ধারণাটির পরিবর্তন ঘটে। এই নতুন অধিকারের জন্য প্রয়োজন হয় নতুন আইন প্রণয়নের।
[3] জনকল্যাণমূলক আদর্শ:
ল্যাঙ্কি মনে করেন যে, রাষ্ট্রের একটি অন্যতম দায়িত্ব হল জনকল্যাণমূলক আদর্শকে কার্যকর করা। এই আদর্শকে কার্যকর করার মধ্যে নিহিত থাকে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বাধা- বাধকতার বিষয় এবং তার দ্বারাই ব্যক্তি তার অধিকারকে অর্জন করতে পারে। রাষ্ট্র ব্যক্তির ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে অধিকার সম্পর্কিত দাবিসমূহকে স্বীকার করে নেয়। রাষ্ট্র ব্যক্তিকে অধিকার দানে ব্যর্থ হলে ব্যক্তি রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে পারে। অর্থাৎ অধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি রাষ্ট্রকে আর আনুগত্য। জানাতে চাইবে না।
উপসংহার:
ল্যাস্কি অধিকারকে কোনো চিরন্তন বিষয় বলে মনে করেননি। রাষ্ট্র অধিকার সৃষ্টি করে না, রাষ্ট্র অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। তিনি অধিকারকে শুধু ঘোষণার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি, তিনি চেয়েছেন অধিকারের বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে।