অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা
অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা

‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ প্রকৃতির নিয়মে প্রতিটি প্রাণীকেই তাদের নিজস্ব পরিবেশে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগে। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে, বিশ্বের সমস্ত জীবকুলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই সহাবস্থান প্রয়োজন। মানুষ সভ্য হয়েছে, নিজের স্বার্থে প্রকৃতির নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছে তারা। ফলত অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়েছে প্রাণীকুল। শুধু তাই নয় আমরাও একদিন হারিয়ে যাব এই সুন্দর পৃথিবী থেকে। তার জন্য দায়ী থাকবে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।

দেশের জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত ভান্ডার হল অরণ্য বা বন। তাই বন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। বন আছে বলে উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে আছে-বেঁচে আছি আমরা। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রাথমিক কারণ হল বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা। গাছ না থাকলে কার্বন ডাইঅক্সাইডে ভরে যেত পৃথিবী। বন জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধ করে এবং গ্রিনহাউস প্রভাবকে হ্রাস করে। তা ছাড়া বন, বন্যার সময় বেশিরভাগ জল শোষণ করতে পারে, তাই মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের উদ্ধার করে। অরণ্যের নানাবিধ উৎপাদিত দ্রব্য যেমন- ওষধি গাছ, মধু, কাঠ ও কাঠজাত দ্রব্য লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করে। পৃথিবীর সমস্ত জীব একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সে বাঘ-সিংহ হোক আর মানুষই হোক, প্রতিটি জীবই ইকোসিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্য হল বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখা। খাদ্যশৃঙ্খলে সমস্ত প্রাণী পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। খাদ্যশৃঙ্খল সারিতে কোনো একটি জীবকে সরিয়ে দিলে তা খাদ্যশৃঙ্খলকে ব্যাহত করবে। বিস্তৃত বনগুলি বহু প্রাণীদের আশ্রয় দেয়। গাছ ধ্বংস হলে প্রাকৃতিক বাসস্থানের অভাবে প্রাণীরা মারা যায়। এইরকম ধ্বংসকার্যের ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর অনেক বিপন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বন রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অপরিহার্য।

যে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে, এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে, সেই অরণ্যকেই ধ্বংস করছে মানুষ। মানুষ তার লোভ-লালসায় অরণ্য ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাসস্থান নির্মাণ ও খাদ্যের প্রয়োজনে বনজঙ্গল কাটার দরকার পড়ল। জলবায়ুর প্রভাবে এবং শিকারি ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে ভালো নেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশের প্রাণীসম্পদ। ইতিমধ্যে বহু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষ ও প্রাণীদের বাঁচতে ও বাঁচাতে অরণ্য সংরক্ষণ ও বনসৃজন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বনাঞ্চলে গাছ কাটা যথাসম্ভব কমাতে হবে। বরং নতুনভাবে অধিক সংখ্যক চারাগাছ লাগাতে হবে। দ্রুত বৃদ্ধি পায় এমন গাছ লাগানো ভালো। বনে যাতে আগুন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বন্যপ্রাণী ধ্বংস করা উচিত নয়। সরকারের উচিত পশুপাখিদের চোরাশিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিপন্ন প্রজাতিগুলিকে বিশেষ সুরক্ষা দিতে হবে। ছাত্র, যুবক ও প্রাপ্তবয়স্কদের গাছ লাগানোর কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। সমাজভিত্তিক বনসৃজন প্রকল্পে বেশি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সর্বোপরি মানুষের মধ্যে অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে দেশের তরুণ সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।

বর্তমানে যেভাবে মানুষ উন্নয়নের নামে বন ও বন্যপ্রাণী ধ্বংস করছে তাতে আগামী দিন আমাদের বেঁচে থাকাই দুষ্কর হবে। ভারতে ১৯৮০ সালে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন কার্যকর হয়। কিন্তু সে তো কাগজে আইন। শুধু আইন দিয়ে কিছু হয় না, আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ‘নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছি’-এই বোধ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে থাকা দরকার। মানবজীবনের স্বার্থে, সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ অপরিহার্য।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment