অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু কী ছিল

অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু কী ছিল

অথবা, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ সম্পর্কে কী জান

অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু কী ছিল
অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু কী ছিল

ভূমিকা

প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান গ্রন্থ হল ‘অর্থশাস্ত্র’। মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী কৌটিল্য বা চাণক্যকেই অধিকাংশ পণ্ডিত অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা বলে স্বীকার করেছেন। তবে এই গ্রন্থটি বিভিন্ন যুগে নানাভাবে পরিমার্জিত হয়েছে বলে পন্ডিতদের অনুমান। অর্থশাস্ত্রে মৌর্য যুগ তথা প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রনীতি, সমাজ, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। 

  1. আবিষ্কার: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের পন্ডিত ড. আর শ্যাম শাস্ত্রী সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থটি আবিষ্কার করেন। তবে মূল গ্রন্থটির কিছু অংশ অবশ্য পাওয়া যায়নি। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীকালে ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়।
  2. রচনাকাল: কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের রচনাকাল সম্পর্কেও পণ্ডিতদের মধ্যে নানা বিতর্ক রয়েছে। তবে অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন যে, যেহেতু কৌটিল্য বা চাণক্য ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী, তাই অর্থশাস্ত্রের রচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী।
  3. অর্থশাস্ত্রের বিষয়বস্তু: অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু হল রাষ্ট্রনীতি। কৌটিল্য এই গ্রন্থে মৌর্য যুগ তথা প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিক, যথা-শাসন, আইন, বিচারব্যবস্থা, রাজার দায়িত্ব-কর্তব্য, অর্থনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করেছেন। ‘অর্থশাস্ত্র’-এ ১৫টি অধিকরণ, ১৫০টি অধ্যায়, ১৮০টি প্রকরণ এবং প্রায় ৬ হাজার শ্লোক আছে। অর্থশাস্ত্রের প্রথম অধিকরণে রাজার বিভিন্ন কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের বিষয়, দ্বিতীয় অধিকরণে মন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ অধিকরণে ফৌজদারি, দেওয়ানি এবং ব্যক্তিগত আইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম অধিকরণে উল্লেখিত হয়েছে অমাত্যসহ বিভিন্ন রাজকর্মচারিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ষষ্ঠ অধিকরণে রাষ্ট্রের ‘সপ্তাঙ্গতত্ত্ব’ এবং সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ অধিকরণে পররাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধ ও শান্তি এবং যুদ্ধবিদ্যার বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে। শেষ অধিকরণ দুটিতে প্রধানত তন্ত্রমন্ত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 

মূল্যায়ন

সবশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত একটি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হল কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’। এই গ্রন্থে মৌর্য যুগের শাসন, আইন, বিচার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বর্ণনার মধ্য দিয়ে কৌটিল্য প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিকগুলি তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রনীতি চর্চায় অসামান্য অবদানের জন্য তাই অনেকেই তাঁকে ‘ভারতের ম্যাকিয়াভেলি’ বলে অভিহিত করেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment