আইনের প্রমুখ উৎসগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো
অথবা, আইনের বিভিন্ন উৎস আলোচনা করো

অতীতে আইনের উৎস হিসেবে ঈশ্বরের আদেশ, প্রথা, ধর্ম ইত্যাদিকে বোঝানো হত। পরবর্তীকালে আইনকে সংকলিত আইন হিসেবে দেখা হয়।
আইনের উৎসসমূহ
অধ্যাপক হল্যান্ড-এর মতানুসারে, আইনের প্রধানত ছয়টি উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলি হল-
প্রথা
প্রথা বলতে সমাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত আচার-আচরণ, অভ্যাস, রীতিনীতি ও লোকাচারকে বোঝায়। কোনো এক সময়ে কোনো এক ব্যক্তি সমাজে যে রীতি তৈরি করেছিল, তা পরবর্তীকালে অনেকে অনুসরণ করে ফলে সেই রীতিকে বলা হয় প্রথা (Custom)। প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করলে আইনের মর্যাদা পায়। সব দেশের সাধারণ আইন (Common Law) প্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত বলেই বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রথাকেই আইনের প্রাচীনতম উৎস বলে চিহ্নিত করেছেন।
ধর্ম
প্রত্যেক দেশের প্রাচীন সমাজে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকালে নিরক্ষর ও ধর্মভীরু মানুষের কাছে ধর্মীয় অনুশাসন ছিল আইনেরই নামান্তর। পরবর্তীকালে ওই ধর্মীয় অনুশাসনই আইনে রূপান্তরিত হয়। এ প্রসঙ্গে উড্রো উইলসন বলেন, প্রথম যুগের রোমান আইনগুলি ধর্মীয় অনুশাসন ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। এককথায় আইন ও ধর্ম ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল।
বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত
সমাজজীবন ক্রমশ জটিলতর হয়ে উঠলে প্রথা ও ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে বিচারব্যবস্থারও প্রচলন ঘটে। প্রাচীনকাল থেকেই সমাজের দলপতি, গোষ্ঠীপতি, রাজা, জমিদার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ সমাজের বিশৃঙ্খলা ও বিরোধ মীমাংসার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিচারকদের দেওয়া এই সমস্ত সিদ্ধান্তই পরবর্তীকালে আইনের মর্যাদা লাভ করে।
বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা
আইনের অন্যতম প্রধান উৎস হল আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা (Scientific Discussion)। আইনজ্ঞ, পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত, টীকা, মন্তব্য প্রভৃতি বিচারপতিরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ ও আলোচনা করেন। এই ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ বৈজ্ঞানিক এই অর্থে যে- এর মধ্যে আইনের প্রকৃত ব্যাখ্যা থাকে, জনমনে এই ভাষ্যের স্থান আছে এবং সমাজের চোখে এই ভাষ্য বা ব্যাখ্যা বিশিষ্ট ও তাৎপর্যপূর্ণ।
ন্যায়নীতি
আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ন্যায়নীতি (Justice) বা ন্যায়বিচার। যেক্ষেত্রে প্রচলিত বা বিদ্যমান আইন সাধারণ বুদ্ধি, বিবেচনা অনুসরণ করে ব্যবহার হয় না, সেক্ষেত্রে বিচারক আইনের পবিত্রতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এবং আইনের ভুলত্রুটি সংশোধন করে একে সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে, পরিমার্জিতরূপে পেশ করেন।
আইনসভা
আধুনিক যুগে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই আইনসভাকে আইনের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আইনসভায় বিধিবদ্ধ আইনকে নির্দিষ্ট, পদ্ধতিগত, গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণাপ্রসূত আইন বলা হয়। *5
পরিশেষে বলা যায়, আইনের কোনো উৎস পৃথকভাবে নয়, সম্মিলিতভাবেই আইন সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। তাই আইনের ছয়টি উৎসের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
আরও পড়ুন – আইনের অর্থ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো