আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো

আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো

আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল-আইন ও স্বাধীনতা। কারণ, আইন ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপূরক ভাবা হয় এবং বলা হয় আইন হল স্বাধীনতার শর্ত (Law is the condition of liberty)। আবার যারা অবাধ স্বাধীনতা বা অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থকে সমার্থক ভাবেন তাদের কাছে আইন ও স্বাধীনতার ধারণা দুটি পরস্পরবিরোধী।

আইন ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক

[1] আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বা পরিপূরক ধারণা

(i) আইন ছাড়া স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়: আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বলা যায়, স্বাধীনতা অবাধ নয়। কারণ, একজনের স্বাধীনতা অন্যজনের স্বাধীনতা ভোগে বাধা হয়ে দাঁড়ালে আইনই তার সমাধান করবে। স্বাধীনতা একদিকে আইনের উপর এবং অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের উপর নির্ভরশীল। কারণ আইনের দ্বারাই রাষ্ট্র স্বাধীনতা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।

(ii) স্বাধীনতার শর্ত হিসেবে আইনের ভূমিকা: স্বাধীনতার উপর আইনের প্রত্যক্ষ প্রভাব বর্তমান। রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্ব অর্থাৎ সরকার এবং আইনের উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিস্বাধীনতার সংরক্ষণ করা। এই কারণেই বলা হয় আইন হল স্বাধীনতার শর্ত। আইন মানুষের আচার-ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। অপরদিকে স্বাধীনতা ব্যক্তির খেয়ালখুশি নয়, স্বাধীনতা হল নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের আইনগত ব্যবস্থার মধ্যেই স্বাধীনতার অস্তিত্ব লুকিয়ে রয়েছে।

(iii) আইনের দ্বারা অনুমোদিত স্বাধীনতা: স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। আইনের দ্বারা সৃষ্ট ও সংরক্ষিত স্বাধীনতা হল আইনি অনুমোদিত স্বাধীনতা। এ প্রসঙ্গে বার্কার বলেছেন, এইরূপ স্বাধীনতা অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। (“…legal liberty, just because it is legal, is not an absolute or unconditional liberty.”)

[2] আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর পরস্পরের বিরোধী

(i) অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারের নামান্তর: অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন, স্বাধীনতার প্রকৃতিতেই নিয়ন্ত্রণ বর্তমান। স্বাধীনতা অনিয়ন্ত্রিত হলে দুর্বলের স্বাধীনতা সবলের দয়ার দানে পরিণত হবে। যেমন- শিল্পপতিদের অবাধ স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থাকলে শ্রমিকদের অধিকার সংকুচিত হবে এবং তাদের জীবন সংকুলান হয়ে উঠবে কষ্টকর।

(ii) উদারনীতিবাদী-ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদীদের ধারণা: উদারনীতিবাদী- ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর পরস্পরের বিরোধী। তাঁরা মনে করেন, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং আইনের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রের এই সার্বভৌম ক্ষমতার অভিব্যক্তি ঘটে।

(iii) নৈরাজ্যবাদীদের ধারণা: নৈরাজ্যবাদীদের অভিমতও এক্ষেত্রে পুরোপুরি স্পষ্ট। গডউইন, বাকুনিন প্রমুখ নৈরাজ্যবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্র ও তার আইনকে ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে ক্ষতিকারক বলে মনে করেছেন।

মূল্যায়ন

উপরোক্ত আলোচনাগুলি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আইন হল স্বাধীনতার পরিপূরক, আইন ছাড়া স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কারণ আইন একদিকে যেমন স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে, অন্যদিকে তেমনি স্বাধীনতা সম্প্রসারণেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment