‘আগুন’ নাটকে কৃষাণ ও সতীশ চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো
ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পীসংঘ এবং গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত থেকেই বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যজীবনের সূত্রপাত। তাঁর রচিত ‘আগুন’ নাটকের মাধ্যমে গণনাট্যের পথচলা শুরু হয়েছিল। যেখানে বিষয় ভাবনায়, চরিত্র পরিকল্পনায়, মঞ্চ ও প্রয়োগকলায় নতুনত্বের দোলা দিয়েছিল- সেখানে ব্যক্তিচরিত্র নয়, সমষ্টি-চরিত্রের প্রাধান্য দেখা গেল। কৃষক, শ্রমিক, প্রান্তিক, মেহনতি মানুষেরা উঠে এল নিজেদের জীবনযন্ত্রণার কথা বলতে। নাটকে ব্যক্তি নায়কের মধ্যে প্রাধান্য লাভ করল গোষ্ঠীর প্রতি চিন্তা। এখানে দুটি চরিত্র নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
(ক) কৃষাণ
‘আগুন’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে কৃষক পরিবারের প্রতিনিধি হিসাবে কৃষাণ চরিত্রের নির্মাণ। শ্রমজীবী মানুষের আটপৌরে, অনাড়ম্বর, অল্পে খুশি হওয়া জীবন এখানে উদ্ভাসিত। মাঠকে যারা ভরণ-পোষণ করছে সেই সমস্ত কৃষকের জীবনযন্ত্রণা, আকালের সংকটময় পরিস্থিতিতে তাদেরদুর্বিষহ, দুরবস্থাকে নাট্যকার কৃষাণ চরিত্রের মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
‘মাঠের থে ফিরে এসে ধড়ে যেন প্রাণ আর তিষ্ঠুতি চায় না।’
তারাই সকলকে খাদ্যের সংস্থান করেন, অথচ তাদেরকেই নিয়তির নির্মম পরিহাসে খাদ্যের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে, দীর্ঘ প্রতীক্ষায় লাইনে দাঁড়াতে হয় যা সত্যিই নির্মম ও বেদনাদায়ক।
(খ) সতীশ
‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে কারখানার শ্রমিক পরিবারের প্রতিনিধি সতীশ চরিত্রের উপস্থিতি। দুর্ভিক্ষের প্রাক্কালে স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার চালাতে তাকে হিমশিম হতে হচ্ছে। নিজ পরিবারকে সচ্ছল রাখতে সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
“এই চালডালের কী উপায় করি রে বোলতো।”
প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও তার অসহায়তা, অক্ষমতা সমগ্র শ্রমিক মানুষেরই। তার পরিবারে অনটন, দাম্পত্য অশান্তি প্রতিটি ঘরেরই প্রতিচ্ছবি।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো