আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2, 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

Table of Contents

আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2, 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর
আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর

আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2)

1. ‘আড্ডা’ প্রবন্ধটির কার লেখা? এর মূল গ্রন্থের নাম কী?

উত্তর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মজুতবা আলীর লেখা।

এর মূলগ্রন্থের নাম ‘পঞ্চতন্ত্র’।

2. ‘পাল্লা’ কী? এটি কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর ‘পাল্লা’ হল অতি উপাদেয় মৎস্য যাকে আমরা ‘ইলিশ’ নামে চিনি।

পাল্লা সিন্ধুনদে পাওয়া যায়।

3. নর্মদায় যে মাছ পাওয়া যায় তার নাম কী? কোন শহরে সেটি পাওয়া যায়?

উত্তর নর্মদায় যে মাছ পাওয়া যায় তার নাম ‘মদার’।

এটি ভরোচ শহরে শাওয়া যায়।

4. বাংলার বাইরে কোন্ দেশ আড্ডাবাজ? দেশটি কোথায় অবস্থিত?

উত্তর বাংলার বাইরে তথা ভারতবর্ষের বাইরে কাইরোবাসীরা হল আড্ডাবাজ।

কাইরো মিশরে অবস্থিত। এটি মিশরের রাজধানী।

5. কাইরোবাসী সাধারণত কোথায় বসে আড্ডা মারেন? শতকরা হিসেবে কাইরোতে আড্ডাবাজ কত?

উত্তর কাইয়োবাসী সাধারণত কাফেতে বসে আড্ডা মারেন।

শতকরা নব্বুই জন কায়রোবাসী আড্ডাবাজ এবং তার দশ আনা পরিমাণ অর্ধেক জীবন কাফেতে বসে আড্ডা মেরে কাটায়।

6. কাইরোতে লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের আড্ডা কোথায় বসত? সেখানকার বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের কাইরোতে আড্ডা বসত ‘কাফে দ্য নীল’ বা ‘নীলনদ কাফেতে’।

সেই কাফেতে প্রতি পাত্র কফির দাম ছ পয়সা এবং রাবড়ির মতো ঘন কালো কফি এখানকার বৈশিষ্ট্য।

7. নীলনদের কাফেতে লেখকের সঙ্গে কারা কারা থাকতেন তাঁদের নামগুলি লেখো।

উত্তর নীলনদের কাফেতে লেখকের সঙ্গে রমজান বে, সজ্জাদ এফেন্দি, ওয়াহহাব আতিয়া কপ্ট, জুনো, মার্কোস প্রমুখরা আড্ডা মারতেন।

৪. ‘ফারাও’ কাদের বলা হয়? লেখকের সঙ্গীদের মধ্যে কার শরীরে ফারাওদের রক্ত ছিল?

উত্তর প্রাচীন মিশরের রাজাদের উপাধি ছিল ‘ফারাও’।

লেখকের সঙ্গীদের মধ্যে ওয়াহহাব আতিয়া কপ্ট। যিনি ছিলেন খ্রিশ্চান এবং খাঁটি মিশরীয়। তাঁর শরীরে ফারাওদের রক্ত ছিল।

9. নীলনদের কাফেতে কারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে স্মিতহাস্য করেছিলেন? কেন?

উত্তর নীলনদের কাফেতে আড্ডার মেম্বাররা লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীকে দেখে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে স্মিতহাস্য হেসেছিলেন।

কারণ তাঁরা লেখককে দেখে ভেবেছিলেন তিনি হলেন তাঁদের সঙ্গে আড্ডা মারার উপযুক্ত লোক।

10. কাফের কফি পরিবেশনকারী ছোকরা কীভাবে আড্ডাবাজদের কাছে লেখককে রেকমেন্ড করেছিল?

উত্তর কাফের কফি পরিবেশনকারী ছোকরা আড্ডাবাজদের কাছে তুলে ধরেছিল লেখক অতিশয় ভদ্রলোক। তিনি টিপস দেন বেশ বড়ো মাপের।

11. লেখকের কাদেরকে ‘খানদানি মনিষ্যি’ বলে মনে হয়েছিল? এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?

উত্তর লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কাফেতে তাঁর সঙ্গীসাথিদের ‘খানদানি মনিব্যি’ বলে মনে করেছিলেন।

কারণ লেখকের তেরো দিনের শেখা আরবি ভাষাকে তাঁদের খাসা মনে হয়েছিল।

12. ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে ‘যগ্যিদাসের মামা’ কথাটি কে কোন প্রসঙ্গে বলেছেন?

উত্তর আড্ডা’ প্রবন্ধে আড্ডাবাজ রমজান বে যখন তাঁর মামার সম্পর্কে ‘আমার মামা’ বলে কথা বলতে যান, তখন লেখক সৈয়দ মজুতবা আলী মনে মনে সেই প্রসঙ্গে ‘যগ্যিদাসের মামা’ বলে উল্লেখ করেন।

13. রমজান বের মামা ভারতীয়দের সম্পর্কে কী বলেছিলেন?

উত্তর রমজান বের মামার হজ করতে গিয়ে কয়েকজন ভারতীয়ের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা নাকি পাঁচ-বকৎ নামাজ পড়ত আর সারা দিনরাত চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারত। তাঁরা বস্তুত ছিলেন বাঙালি সম্প্রদায়।

14. নীলনদ কাফেতে আড্ডাবাজদের কাছে লেখক কখন নিজেকে বাঙালি পরিচয় দিয়েছিলেন?

উত্তর লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর কাফের সঙ্গী রমজান বের মুখে জানতে পারেন যে, সুদূর মক্কাতেও বাঙালির পরিচয় আড্ডাবাজ। তখন তিনি বাঙালি হিসেবে গর্ব বোধ করেন। তিনি মনে করেন, বাঙালি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রীহট্ট, নোয়াখালি, চাঁটগা, কাছাড় অথবা কলকাতার খিদিরপুরে বসে আড্ডাবাজ হয়ে উঠেছে এবং মরা জয় করেছে। তখনই তিনি গর্বের সঙ্গে নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দেন।

15. মার্কোস কে? তিনি কীভাবে আড্ডার নতুন সদস্যকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন?

উত্তর গ্রিক নাগরিক মার্কোস ছিলেন নীলনদ কাফের আড্ডার একজন সদস্য।

তিনি কাফের নতুন সদস্য লেখককে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন শ্যাম্পেন খুলে। এই উপলক্ষ্যে কাফে মালিকের কাছ থেকে আদায় করেছিলেন মদ।

16. মার্কোস নীলনদ কাফের মালিক সম্পর্কে কী বলেছিলেন?

উত্তর মার্কোস নীলনদ কাফের মালিক সম্পর্কে বলেছিলেন যে, কাফের পিছনে মালিকের ড্রয়িংরুম আছে। আর সেই ড্রইংরুম থেকেই বেআইনিভাবে আফিম, ককেইন, হেরোইন, হশিশ সবকিছু বেচা-কেনা হয়।

17. ছোকরাকে বললেন, ‘আর একটা তামাকও সাজিস।’ কথাগুলি কে বলেছিলেন? কথা শুনে কার কী মনে হয়েছিল?

উত্তর কথাগুলি বলেছিলেন নীলনদ কাফের গ্রিক সদস্য মার্কোস।

কথাগুলি শুনে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী সুদূর কাইরোতে তামাক পাওয়া যায় জেনে অবাক হয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, সেটা স্বপ্ন না মায়া না মতিভ্রম।

18. মিশরীয়দের হুঁকো কেমন দেখতে ছিল?

উত্তর মিশরীয় ফর্শি হুঁকো দেখতে ছিল কেমন যেন ভোঁতা ভোঁতা জরির কাজ করা। এতে কোনো বিশাল নল ছিল না। নাজুক, মোলায়েম প্রকৃতির এবং গাঁইয়া। তবে ছিলিম খুব সুন্দর, বেশ বড়ো যাতে একপো তামাক হেসে-খেলে ধরে যায়। মিশরীয়রা এতে এক ধরনের সুগন্ধি মেশাত যা তামাকের খ্যাতি বৃদ্ধি করে।

19. ইজিপশিয়ন সিগারেট’ কী? কীভাবে তা তৈরি হত?

উত্তর মিশরে যে সুগন্ধি সিগারেট পাওয়া যেত তাকেই ‘ইজিপশিয়ন সিগারেট’ বলা হত।

গ্রিক দেশ থেকে যে তামাক মিশরে আসত তা টাকিশ ও ইজিপশিয়ান নামে পরিচিত। মিশরের কারিগররা এই তামাকের সঙ্গে কিছুটা খাঁটি খুশবাই মিশিয়ে তৈরি করত এই ইজিপশিয়ন সিগারেট।

20. ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ অনুসারে সেই সময় সিগারেটের জন্য ভালো তামাক কোথায় কোথায় জন্মাত?

উত্তর সেই সময় সিগারেটের জন্য ভালো তামাক জন্মাত তিন দেশে। আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে, গ্রিসের মেসেজেই অঞ্চলে এবং বুশের কুয়সাগরের পারে।

21. গ্রিসের উৎপন্ন তামাক কোথায় কোথায় যেত?

উত্তর গ্রিসের উৎপন্ন তামাক তুর্কির ইস্তাম্বুলে নিয়ে যেত। মিশর যেহেতু তুর্কিদের অধিকারে ছিল তাই কিছুটা তামাক তারা মিশরেও পাঠাত।

22. কোনো খুশবাই বা সুগন্ধী কীভাবে কোনো জিনিসকে নন্ট করে দিতে পারে?

উত্তর অনেক সময়েই বিশেষ কিছু গন্ধ অন্য বস্তুর ওপর প্রভাব ফেলে বস্তুটিকে নষ্ট করে দেয়। যেমন-খোলা চায়ের টিন থাকলে তাতে ফোড়নের ঝাঁজ লেগে যায়। যে জাহাজে কাঁচা তামাক তোলা হয় সেখানে অন্য কোনো সুগন্ধি দ্রব্য তোলা যায় না। তাহলে গন্ধ এবং স্বাদ দুই নষ্ট হয়।

23. ইউক্যালিপটাস তেল কী?

উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় সরু ও লম্বা পাতাবিশিষ্ট দীর্ঘ, চিরহরিৎ বৃক্ষ, যা ইউক্যালিপটাস নামে পরিচিত। এর থেকে নিষ্কাশিত তেল ঔষধি ও প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহার করা হয় সুগন্ধি হিসেবে।

24. ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ অনুসারে বিভিন্ন জাতির বিশেষ কিছুর প্রতি দুর্বলতাগুলি কী কী?

উত্তর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ অনুসারে, বাঙালি তার চুল কেতাদুরস্ত রাখতে ভালোবাসে, কাবুলিওয়ালারা পায়জারে পেরেক ঠোঁকে যখন-তখন: ইংরেজরা আয়না পেলেই টাইটা সামনে ঠিক মাঝখানে আছে কিনা দেখে নেয়। পাঠানরা তাদের মাথায় পাগড়ি নিয়ে সদা সচেতন থাকে, আর মিশরীয়দের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা হচ্ছে তাদের জুতো জোড়া সবসময় পালিশ করে চকচকে রাখা।

25. ‘আমার ঈযৎ বদনাম আছে।’-কার কীসে বদনাম আছে? এর ফলে কী হয়?

উত্তর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান, তাই তাঁর ভ্যাগাবন্ড হিসেবে বদনাম আছে।

এর ফলে সকলেই তাঁর কাছে দেশ-বিদেশের খবর জানতে চান। কেউ জানতে চান কোন্ দেশের রান্না ভালো, কেউ জানতে চান তুলনামূলক কাব্যচর্চার জন্য কোন্ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রজ অথবা কোন্ দেশের রমণীরা বেশি সুন্দর।

26. আড্ডার সবচেয়ে ‘ডাঙর দুশমন’ কী? কেন?

উত্তর আড্ডার সবচেয়ে ভাঙর বা বড়ো দুশমন হল বক্তৃতা।

কারণ যাদের দেশ-বিদেশ সম্পর্কে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আলোচনাটা একতরফা বক্তৃতার মতো হয়ে যায়। ফলে তা শুষ্ক নীরস সভা হয়ে যায়। আড্ডা জমে ওঠে না।

27. ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখকের মতে সবথেকে সুন্দর শহর কোন্টি? এখানে খাঁটি বাসিন্দারূপে কারা বাস করে?

উত্তর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর শহর কাইরো।

কাইরোতে খাঁটি বাসিন্দারূপে বসবাস করেন গ্রিক, আরব, তুর্কি, হাবশি, সুদানী, ইতালীয়, ফরাসির ইহুদি এবং আরো অনেকেই।

28. সাদ জগলুল পাশা কে? মিশরীয় হিসেবে তাঁর বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর সাদ জগলুল পাশা হলেন একজন মিশরীয় দেশপ্রেমিক ও রাষ্ট্রনায়ক। মিশরের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি বড়ো ভূমিকা নেন।

মিশরীয় হিসেবে তিনি ছিলেন বড়ো আড্ডাবাজ। তিনি দিনে অনন্ত একবার আড্ডার সন্ধানে বের হতেন।

29. নীলনদ কাফেতে লেখক কোথায় কাদের সঙ্গে আড্ডা মারতেন?

উত্তর নীলনদ কাফেতে লেখক উত্তর-পূর্ব কোণে তাঁর জন-পাঁচেক দোস্ত নিয়ে বসে আড্ডা মারতেন। যাঁদের সঙ্গে আড্ডা মারতেন তাঁরা হলেন রমজান বে, ওয়াহহাব আতিয়া কপ্ট, জুর্নো, মার্কোস প্রমুখ।

30. লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর বাড়ির পাশে কোন্ কাফে অবস্থিত? সেখানে কারা আড্ডা মারত?

উত্তর লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর বাড়ির পাশে ছিল সেমিরামিস কাফে।

এই কাফেতে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসে লেখক আড্ডা মারতেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা আড্ডা মারতেন তাঁরা হলেন চ্যাংড়ার দল, কলেজ-পড়ুয়া, কেরানি, বেকার অথবা ইনশিওরেন্স এজেন্ট।

31. ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখক শহর থেকে দূরে কোন্ কাফের কথা বলেছেন? তাঁর পরিবেশ কেমন?

উত্তর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখক শহর থেকে মাইল তিনেক দূরে এক কাফের কথা বলেছেন, যেখানে লেখক মাসে একদিন বা দুদিন যান।

কাফের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। খাসা জায়গা, সামনে দিয়ে নীলনদ বয়ে যাচ্ছে। তাদের আতিথেয়তাও খুব ভালো। দু-হাত বাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানায়।

আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 3)

“কথাটা ঠিকও, ভুলও। তুলনা দিয়ে নিবেদন করছি।”-কথাগুলি কে কোন্ প্রসঙ্গে বলেছেন? এ ব্যাপারে কী তুলনা দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়েছেন?

উত্তর কথাগুলি সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বলেছেন। বাঙালি আড্ডাবাজরা মনে করেন, বাংলা ছাড়া আর কোথাও তেমন আড্ডার প্রচলন নেই। এই প্রসঙ্গেই লেখক কথাগুলি বলেছেন।

কথাটি ঠিকও না, আবার ভুলও না, কারণ হিসেবে লেখক বলেছেন, সিন্ধনদে যে মাছের নাম ‘পাল্লা’, নর্মদায় তার নাম ‘মদার’। আবার, গঙ্গা-পদ্মায় তাই হল ‘ইলিশ’ যা খোট্টাদের দেশে ‘হিলসা’। আসলে একই মাছের ভিন্ন ভিন্ন নাম ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। তাই কথাটার মধ্যে কোনো ভুল নেই। তবে, সরষে বাটা আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে বাংলাদেশে তার পরিবেশন অন্য কোনো জায়গায় পাওয়া যায় না। সেদিক থেকে কথাটা ঠিক নয়। অর্থাৎ আড্ডা সর্বত্রই আছে কিন্তু তার পরিবেশনাই তার পরিচয়।

“কাইরোর আড্ডাবাজরা বলেন, একমাত্র তাঁরাই নাকি আড্ডা দিতে জানেন।”-কাইরোবাসী কোথায় আড্ডা বসাত এবং কেন?

উত্তর কাইরোবাসী নিজেদের সেরা আড্ডাবাজ মনে করতেন। কিন্তু তাঁরা কখনো কোনো অবস্থাতেই কারো বাড়িতে আড্ডা বসাতেন না। তাঁরা মনে করতেন, সেক্ষেত্রে আড্ডার নিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্র লোপ পায়। কারণ, যাঁর বাড়িতে আড্ডা বসত সে পানটা-আসটা, খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা ইত্যাদি আড্ডায় নিজের খরচে খাওয়ান, ফলে সকলে তাঁকে তোয়াজ করেন। তাই বাড়ির আড্ডায় সামন্তুস্য থাকে না। আবার, বাড়ির আড্ডাতে গিন্নির প্রভাবে আড্ডা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শতকরা নব্বুইজন কাইরোবাসী কাফেতে বসে আড্ডা মারতেই ভালোবাসেন।

“শতকরা নব্বুইজন কাইরোবাসী আড্ডাবাজ এবং তার দশ আনা পরিমাণ অর্ধেক জীবন কাটায় কাফেতে বসে আড্ডা মেরে।”-কেন কাইরোবাসী অর্ধেক জীবন কাফেতে বসে আড্ডা মেরে কাটায়?

উত্তর কাইরোবাসী আড্ডাবাজ এবং তাঁরা কাফেতে বসে আড্ডা মেরেই জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়ে দেন। কারণ কাফেতে বসে আড্ডা মারার জন্য কাউকে খয়ের খাঁ হতে হয় না। সকলেই সেখানে আত্মপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেকে প্রত্যেকের আত্মীয় বা বন্ধুসমান। তাছাড়া, কাফেতে বসে আড্ডা মারার সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হল, গিন্নিরা যখন তখন আড্ডার গলায় ছুরি মারতে পারেন না। নিজেদের পছন্দমতো অমলেট, কাটলেট খেয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা আড্ডা মারতে পারে। এটাই জীবনের পরম প্রাপ্তি।

জুর্নো কে? সংক্ষেপে তার পরিচয় দাও।

উত্তর জুর্নো হলেন নীলনদ কাফের একজন ফরাসি সদস্য। বেশ কয়েক পুরুষ ধরে মিশরে তাঁদের বসবাস। ফরাসিরা মিশরীয়দের প্রতি বিতৃয়, তাই কাইরোর আকাশ-বাতাস তাঁরা কতটা যে বিষাক্ত করে তুলেছেন তা কাবুর জানা নেই। তবে তিনি খুব সুন্দর আরবি কবিতা লেখেন। তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু ছিল যে, সে তলোয়ার চালিয়ে আড়াই ডজন বেদুইনকে ঘায়েল করে প্রিয়াকে উটের ওপর তুলে নিয়ে মরুভূমির দিদিগন্তে বিলীন হয়ে গেছে। লেখকের কাছে এটাই খুব মজার বিষয় যে কাইরো শহর থেকে পিরামিডের দূরত্ব মাত্র পাঁচ মাইল। মাত্র একবারই পিরামিড দেখতে গিয়েছে, উট কখনো সে চড়েনি। সবটাই মনগড়া কথা।

মার্কোস কে? তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর মিশরের নীলনদ কাফের আড্ডাবাজদের একজন সদস্য মার্কোস। মার্কোস জাতে গ্রিক এবং প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে তাঁর পরিবার মিশরে আছে। তাঁর কথায় মিশরের রানি, গ্রিক রমণী ক্লিয়োপাত্রার সঙ্গে নাকি তার খাস-কুটুম্বিতা আছে। হতেও পারে সেকথা সত্যি। কারণ প্রায়ই সে ব্যবসাতে লাভ করার জন্য সকলকে ফ্রিতে এক রাউন্ড কফি খাইয়ে দেয়। মার্কোস একবারে নৈর্ব্যক্তিক মানুষ ছিল। কখনো সে ঝগড়া-কাজিয়ায় মাথা গলাত না। বেশির ভাগ সময় সে চেয়ারের হেলানে মাথা দিয়ে আকাশের দিকে হাঁ করে ঘুমতো কিংবা খবরের কাগজে ফাটকা বাজারের হাল-হকিকৎ মুখস্থ করত।

“ভাবখানা ভুল লোককে বাছা হয়নি।”-কার সম্পর্কে কথাগুলি বলা হয়েছে? কোন প্রসলো কথাগুলি বলা হয়েছে।

উত্তর এখানে কথাগুলি ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মজুতবা আলীর সম্পর্কে কথাগুলি বলা হয়েছে।

সৈয়দ মুজতবা আলী যখন মিশরের নীলনদ কাফেতে যান এবং দেখেন কাফের উত্তর-পূর্ব কোণে একদল লোক বসে থাকত। তিনি বুঝতে পারেন, তাঁদের কাছে কফিটা গৌণ আড্ডাটাই আসল। লেখক বাঙালি এবং আড্ডাবাজ। তাঁকে দেখে কাফের ওই দলটির হয়তো তাই মনে হয়েছিল। লেখক অনেক সংকোচ ও জড়তা কাটিয়ে তাঁদের সন্ধ্যে আলাপ করার জন্য উঠেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, ‘এক রোঁদ কফি। এভাবে সোজা বাংলায় আরবির প্রকাশ ঘটিয়ে তিনি তাঁদের কাছে জাতে উঠে গিয়েছিলেন। তাঁরা খুব খুশি হয়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন যে, লোকটিও ভীষণ আড্ডাবাজ। সেই প্রসঙ্গেই আড্ডার মেম্বাররা ভেবেছেন তাঁরা ঠিক লোককেই বেছেছেন।

‘খাস আরবি বলেন আপনি।”-কথাগুলো কে কাকে বলেছেন? একথা শোনার পর কী ঘটেছিল?

উত্তর কথাগুলো নীলনদ কাফেতে ফরাসি জুনো ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীকে বলেছেন।

কথাগুলো শোনার পর লেখক খুব আশ্চর্য হয়েছিলেন। কারণ লেখক তখন সবেমাত্র তেরোদিন সে দেশে গিয়েছেন এবং অল্প অল্প আরবি শিখেছেন। বিদেশি হিসেবে তাঁর মধ্যে যে জড়তা ছিল তা জুর্নো এক ঝটকায় মুছিয়ে দিলেন একথা বলে। লেখকের মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের ‘কথা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘পরিশোধ’ কবিতার কয়েকটি লাইন-

'এত বলি-সিন্তপক্ষ দুটি চক্ষু দিয়া
সমস্ত লাঞ্ছনা যেন লইল মুছিয়া
বিদেশির অলা হতে-'

লেখক ভাবলেন, এরা নিশ্চয়ই খানদানি মানুষ, তাই লেখককে এমন সম্মান দিতে পেরেছেন। তখন তিনি মজা করে করজোড়ে বলেছেন, আপনারা ভারতীয় নীতির থেকে এককদম এগিয়ে-‘প্রিয় অসত্য বলবে’। আর ভারতীয়রা বলে ‘অপ্রিয় সত্য বলবে না।’

আস্তে আস্তে চেয়ার থেকে উঠে ডান হাত বুকের ওপর রেখে মাথা নীচু করে অতিশয় সবিনয় কণ্ঠে বললুম, ‘আমি বাঙালি।”-কথাগুলি কে বলেছেন? একথা শোনার পর তাঁকে অভ্যর্থনার কী ব্যবস্থা হল?

উত্তর সৈয়দ মজুতবা আলী তাঁর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে কথাগুলি নিজেই বলেছেন।

মিশরের নীলনদ কাফেতে নিজেকে ‘বাঙালি’ বলে পরিচয় দেবার পর মূলত গ্রিক মার্কোস বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মুখের ওপর থেকে খবরের কাগজ সরিয়ে তিনি লাফিয়ে ওঠেন। বলেন, ‘দাঁও মেরেছি। একটা শ্যাম্পেন হবে। আমাদের নূতন মেম্বার’। মালিককে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দেন। লাইসেন্সহীনভাবে মদ বেচলেও আফিম, কবেইন, হেরোইন, হশীশ যা খুশি লেখককে নিতে বললেন। আর সার্ভিং ছোকরাকে বলে দিলেন একটা তামাক সাজিয়ে আনতে। সেই খুশবাই বা সুগন্ধি লেখকের নাকে এমনভাবে লেগেছিল যা চোদ্দ বছর পরেও কাটেনি। এভাবেই আড্ডাবাজ বাঙালি বাবুটিকে কাফেতে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল।

তামাকের সঙ্গে খুশবাই। তার পিছনে রয়েছে গূঢ়তর, রহস্যাবৃত ইন্দ্রজাল।”-মিশরের এই খুশবাই বা সুগন্ধি রহস্য সম্পর্কে লেখক কী বলেছেন?

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে মিশরের ব্যবহৃত খুশবাই বা সুগন্ধি সম্পর্কে, তার রহস্য সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মিশরের ইজিপশিয়ান সিগারেট খেয়ে তিনি বলেছেন যে, তামাকের স্বাদ নষ্ট না করে সিগারেটকে খুশবাই করা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। মিশরীয়দের এই খুশবাই অত্যন্ত গূঢ় রহস্যাবৃত। তাই কী কৌশলে কী মশলা দিয়ে মিশরীয়রা তাঁদের মমিগুলোকে পচার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তা আজও কেউ জানতে পারেনি। তবে তাঁরা মূল কৌশল ভুলে গেলেও সুগন্ধ তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায়নি। সেটুকু বিদ্যা দিয়েই তামাকের মধ্যে সুগন্ধি মিশিয়ে সিগারেট তৈরি করে যাচ্ছে, তামাকের স্বাদ কোনোভাবেই নষ্ট না করে। তাই কাইরোর কাফেতে বসে যদি কেউ সিগারেট খায় আর কাফের সামনে দিয়ে যদি কেউ যায় তাহলে ওই সিগারেটের গন্ধ তার পথরোধ করে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লার তারিফ বা প্রশংসা করে।

“ক্রমে ক্রমে আলোচনার বিষয়বস্তু হটতে হটতে পৌঁছবে সেই সনাতন প্রশ্নে.”-সনাতন প্রশ্নটি কী? লেখক কীভাবে তার পর্যবেক্ষণ করেছেন?

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘গণতন্ত্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বলেছেন, কাইরোর নীলনদ কাফের আড্ডাবাজদের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে। নানা বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনা করতে করতে একসময় সেই সনাতন প্রশ্নে পৌঁছায়, অর্থাৎ কোন্ দেশের রমণী সবচেয়ে সুন্দর।

লেখক যেহেতু দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান, তাই তাঁর কাছেই এ ধরনের প্রশ্ন বেশি আসে। লেখককে কেউ জিজ্ঞাসা করেন কোথাকার রান্না ভালো, তুলনামূলক কাব্যচর্চার জন্য কোন্ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত, কোন্ দেশের রমণী সবচেয়ে সুন্দর। লেখক খুব কৌশল করে কলির পরশুরামের মতো উত্তর দেন-‘এনারাও আছেন, ওনারাও আছেন।’ বস্তুত মার্কিন লক্ষপতিরা সেখানে আসেন নানা ধান্দায়। আর তাঁদের সন্ধানে আসেন ডাকসাইটের সুন্দরী মহিলারা। হলিউডের ডিরেক্টররা সেই সুন্দরী নারীদের খোঁজে সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরাও সঙ্গে করে নিয়ে যান আরেক ঝাঁক সুন্দরী মহিলা। এহেন আজব কাফেতে বসে লেখক নানা ধরনের মানুষ ও তাঁদের আড্ডা দেখেন।

‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বর্ণিত সেমিরামিস কাফের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে কাইরোর সেমিরামিস কাফের বর্ণনা দিয়েছেন। এই কাফেতে সাধারণত চ্যাংড়া ছেলের দল, কলেজপড়ুয়া, কেরানির দল, বেকার কিংবা ইনসিওরেন্স এজেন্ট সকলে মিলে আড্ডা দেয়। এদের আলোচনার বিষয়বস্তুও নানাবিধ। যেমন-রাজনীতি, কোন্ পাশার বউ কোন্ মিনিস্টারের সঙ্গো পরকীয়া করে, ফলে তাঁর বোনপো পাটিতে ভালো চাকরি পেয়েছে, অথবা কোন্ প্রকাশক এক হাজারের নাম করে তিনি হাজার বই ছাপিয়ে ভালো পয়সা কামাচ্ছে ইত্যাদি দুনিয়ার হাজারো জিনিস। সকলেই যেন সবজান্তা হয়ে ওঠেন। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হয়, তাঁরা যেন মিশর তথা দুনিয়ার তাবৎ গোপন এবং গরম গরম সব খবর জেনে ফেলেছেন।

যেন এঁরা চোখের সামনে এক অদৃশ্য, অশ্রুত টেলিপ্রিন্টার নিয়ে বসে আছেন। আর সেখানে খবর জোগাচ্ছে রাশার বেরিয়া, জার্মানির হিমলার, কলকাতার টেগার্ট। এঁদের যদি দুনিয়ার যেখানে খুশি। যেমন-মস্কো, বার্লিন, লন্ডন, দিল্লির বড়োকর্তা করে দেওয়া যায়, তাহলে এঁরা এক নিমেষেই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবেন। লেখক আক্ষেপ করে মনে মনে বলেন, ‘হায় দুনিয়া, তুমি জানছ না তুমি কী হারাচ্ছ।’

‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বর্ণিত নীলনদ কাফের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখক নীলনদ সংলগ্ন এক কাফের পরিচয় দিয়েছেন। শহর থেকে মাইল তিনেক দূরে অবস্থিত এই কাফে, সামনে দিয়ে নীলনদ বয়ে যাচ্ছে। খুব সুন্দর এবং খাস জায়গা। এই কাফেতে দু-বাহু বাড়িয়ে আপন ভাইয়ের মতো অভ্যর্থনা জানানো হয়। খুব ভালোবেসে অতিথির সলো সকলে আড্ডা দেবে এবং পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আবার নতুন করে অতিথির মতামত জানতে চাইবে। মতামত না জানানো পর্যন্ত উদ্বার নেই। গাঁধীর দেশের লোক হলেও যে গাঁধীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই একথা তাঁরা বিশ্বাস করতে চান না। লেখকের সাহিত্যপ্রতিভা নিয়ে যষ্ঠেন্দ্রিয় নিয়ে তাঁরা শ্রদ্ধাশীল তবু তাঁদের মতে সায় না দিলে ছাড়ান নেই। এভাবেই কেটে যাবে গোটা চারেক রাত। তারপর বাড়ি ফেরা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment