ইউরোপে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ফলাফল কী হয়েছিল

ভূমিকা
পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। ফলে মহাকাশ সম্পর্কে মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা সামগ্রিক মানবসভ্যতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।
(1) পুরোনো ভুল ধারণার অবসান: প্রাচীন ভ্রান্ত জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণা যা টলেমি, অ্যারিস্টট্ল ও খ্রিস্টান চার্চ মানুষকে যুগের পর যুগ বিশ্বাস করিয়ে আসছিল, তার অসারতা প্রমাণিত হয়।
(2) বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে নতুন ধারণার প্রসার: প্রাচীন পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে কোপারনিকাস প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে, পৃথিবীসহ সমস্ত গ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে পরবর্তীতে অন্যান্য জ্যোতির্বিদ আরও এগিয়ে নিয়ে যান।
(3) খ্রিস্টান চার্চের প্রতিক্রিয়া: পঞ্চদশ শতকের আগে পর্যন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাকে প্রচার করে ইউরোপের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টান চার্চ। সেই ধারণাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা – সপাটে মিথ্যা প্রমাণ করায় চার্চ কর্তৃপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং নতুন ধারণার ধারক তাঁদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা শুরু করে।
(4) চার্চের প্রতিশোধ : নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে চার্চ ও পোপতন্ত্র কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে জিওরদানো ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে চার্চ। গ্যালিলিও গ্যালিলিকে অত্যাচার করে নিজের তত্ত্বকে ‘ভুল’ বলে স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয়। তিনি নির্জন নির্বাসনে একাকী শেষজীবন কাটাতে বাধ্য হন। কেপলারের মাকে ডাকিনীবিদ্যা চর্চার অভিযোগে কারারুদ্ধ করা হয়।
(5) ধর্মসংস্কারের পটভূমি তৈরি: পঞ্চম-ষোড়শ শতকে যুক্তিগ্রাহ্য মহাবিশ্বের ধারণার প্রসার এবং বিজ্ঞানচর্চা মানুষের মন থেকে চার্চ ও পোপতন্ত্রের ভুল বোঝানোকে অস্বীকার করতে শেখায়। চার্চের দুর্নীতি, কুসংস্কার সর্বস্বতার বিরুদ্ধে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা তৈরি হয়, যা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথ প্রস্তুত করে।
(6) বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা তৈরি: বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর আবিষ্কার ও নতুন তত্ত্ব প্রচার মানুষকে অন্ধবিশ্বাসের বেড়াজাল ভেঙে নতুনভাবে বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহী করে তোলে।
(7) বিজ্ঞানের সামগ্রিক অগ্রগতি : নতুন জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি করতে সক্ষম হয় তার ফলে বিজ্ঞানের সব শাখা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন চর্চা ও পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়।
মূল্যায়ন
বিশ্বব্রহ্মান্ডের সঠিক ধারণা ও তাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর আত্মবলিদান বৃথা যায়নি। বর্তমান পৃথিবী সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই অত্যাধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর