অথবা, “মানুষকে দেবতা বানিয়ে আবার তাকে দেবতার চেয়ে মহত্ত্বর করে তোলা”-উদ্ধৃত অংশের তাৎপর্য আলোচনা করো
‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রসংগীতের অপূর্ব মহিমা আলোচনা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
অলৌকিক কর্মের পরিচয়
রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে শব্দ ও সুরের যে ইন্দ্রজাল রচনা করেছেন এবং সুর ও শব্দের মূর্ছনা দ্বারা শ্রোতাকে কার্যত যত্রতত্র চালনা করেছেন-এই কাজটিকেই ‘অলৌকিক কর্ম’ বলা হয়েছে। জীবনদেবতার পূজারী এবং রূপে-রসে, গন্ধে-গানে ভরা মহাবিশ্বের সৌন্দর্যপিপাসু রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্ট গানের ডানায় ভর করে কখনও স্বর্গে, কখনও মর্ত্যে আপন অজানাতে মধুর আনাগোনা করেছেন। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে গানের ভাষায় ও সুরে কখনো তাঁর প্রিয়তম মানুষটিকে দেবতার মহিমাদান করেছেন, আবার কখনও সদানন্দে বিভোর হয়ে সেই মানুষকেই দেবতার চেয়ে মহত্তর স্তরে উন্নীত করেছেন। মানবতার ধর্মই সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে-রবীন্দ্রনাথের গানের এমনই প্রকার।
অলৌকিকতার কারণ
‘বিচিত্র’ পর্যায়ের “আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে” গানটিতে এবং এরকম আরও বহু গানে রবীন্দ্রনাথ, তাঁর শ্রোতাদের মাটির বন্ধন থেকে ছিন্ন করে নিয়ে যান ‘আলোক মাতাল স্বর্গসভার’ মাঝে, আবার পরক্ষণেই শ্রোতাকে ফিরিয়ে আনেন ‘শ্যামল মাটির ধরাতলে’। নিজের অজান্তেই স্বর্গ-মর্ত্যে এই যে আমাদের মধুর আনাগোনা এবং মানুষকে দেবতা বানিয়ে পুনরায় তাকে দেবতার চেয়েও মহত্তর মানুষ করে তোলার এই অভূতপূর্ব কাজটি রবীন্দ্রনাথ মাত্র কয়েকটি শব্দ ও খানিক সুর দিয়েই অবলীলায় সম্পন্ন করতে পারেন। তাই প্রায় অসম্ভব এই কাজটি করার ক্ষমতাকে অলৌকিক কর্মক্ষমতা বলেছেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী।