কাদিরিয়া সম্প্রদায় এবং শত্তারি সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জানো লেখো

কাদিরিয়া সম্প্রদায় এবং শত্তারি সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জানো লেখো

কাদিরিয়া সম্প্রদায় এবং শত্তারি সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জানো লেখো
কাদিরিয়া সম্প্রদায় এবং শত্তারি সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জানো লেখো

কাদিরিয়া সম্প্রদায়

বাগদাদের অধিবাসী শেখ আবদুল কাদির জিলানি (বা গিলানি, ১০৭৭/৭৮ ১১৬৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন কাদিরিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। মনে করা হয়, সম্রাট আকবরের সময়কালে আরব বণিকদের মাধ্যমে কাদিরিয়া মতবাদ ভারতে প্রবেশ করে। দিল্লির শেখ আবদুল হক এদেশে এই মতবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

(1) শেখ আবদুল হক্: শেখ আবদুল হক সিন্ধু প্রদেশের উচু নগরে এসে কাদিরিয়া মতাদর্শের প্রতি প্রথম আকৃষ্ট হন। তিনি হাদিসের উপর একাধিক গ্রন্থও রচনা করেছিলেন। যদিও ধর্মপ্রচারক হিসেবে তিনি খুব একটা সাফল্য পাননি। 

(2) মিঞা মীর ও মুল্লা শাহ: ভারতে শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে কাদিরিয়া মতবাদ প্রচারকার্যে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন লাহোরের প্রখ্যাত সুফি সন্ত মিঞা মীর এবং তাঁর শিষ্য বাদাখশানের মুল্লা শাহ। ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে মুঘল শাহজাদা দারা শুকোহ এবং তাঁর ভগ্নী জাহানারা মুল্লা শাহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। মুল্লা শাহ উপবাস, প্রার্থনা এসবের থেকে অতীন্দ্রিয় অনুভূতির উপর বেশি জোর দিয়েছিলেন।

শত্তারি সম্প্রদায়

পঞ্চদশ শতকের শেষার্ধে শাহ আবদুল্লা শত্তারি দক্ষিণ ভারতে শত্তারি সিলসিলা স্থাপন করেন। এই গোষ্ঠীর সাধকেরা সামরিক পোশাকে সজ্জিত থাকতেন এবং নানা জায়গায় ভ্রমণের মাধ্যমে ধর্মমত প্রচার করতেন।

(1) শতারি মতাদর্শের প্রবর্তন ও প্রসার: সৈয়দ মহম্মদ ঘাউথ ষোড়শ শতকে গোয়ালিয়রের সন্ত সৈয়দ মহম্মদ ঘাউথ (১৫০০-১৫৬২ খ্রিস্টাব্দ) এই ভাবাদর্শকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি সংস্কৃত পুথি ‘অমৃতকুণ্ড’-কে ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং হিন্দু অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শনকে সুফিদের মধ্যে পরিচিত করেন।

  • শেখ আরিফ: সৈয়দ মহম্মদ ঘাউথের শিষ্য শেখ আরিফ বুরহানপুরে খাল্কা নির্মাণ করেন এবং ত্রিশ বছর গুজরাটে অবস্থান করে শত্তারি দর্শন প্রচার করতে থাকেন।
  • শেখ বুরহান: এ ছাড়া দাক্ষিণাত্যে শেখ বুরহান ছিলেন এই মতবাদের বিশিষ্ট সংগঠক। তিনিও চিন্তিদের মতোই সুফিদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তির সান্নিধ্য থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন।
  • আদর্শ ও কৃতিত্ব: শত্তারি সাধকেরা উদারতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। তাঁরা জীবিকানির্বাহের জন্য কায়িক শ্রম করার পক্ষপাতী ছিলেন। পার্থিব সুখস্বাচ্ছন্দ্য পরিহার করে শত্তারিরা অতীন্দ্রিয় সাধনা ও জনহিতকারী কাজকর্মের প্রতি আত্মনিয়োগ করেছিলেন। শুধু ধর্মপ্রচারই নয়, এই গোষ্ঠীর সাধকেরা শিক্ষাপ্রসারেরও কাজ করতেন। শত্তারি সিলসিলার শেখ মহম্মদ তাহির ও পণ্ডিত শেখ ইশা যথাক্রমে তফসির মজনুলবিহার ও রিসালা-ই-অকুদ গ্রন্থ দুটি রচনা করেছিলেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment