কোন্ কোন্ অনুকূল উপাদান পোর্তুগালের নৌ-অভিযানের সহায়ক হয়েছিল

কোন্ কোন্ অনুকূল উপাদান পোর্তুগালের নৌ-অভিযানের সহায়ক হয়েছিল

কোন্ কোন্ অনুকূল উপাদান পোর্তুগালের নৌ-অভিযানের সহায়ক হয়েছিল
কোন্ কোন্ অনুকূল উপাদান পোর্তুগালের নৌ-অভিযানের সহায়ক হয়েছিল

পোর্তুগালের নৌ-অভিযানে সহায়ক উপাদানসমূহ 

ইউরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে পোর্তুগাল সামুদ্রিক অভিযান এবং ভৌগোলিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পোর্তুগাল ১৩৮৫ খ্রিস্টাব্দে অ্যাভিস (Avis) রাজবংশের নেতৃত্বে সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে। অ্যাভিস বংশীয় প্রথম জন (John 1) ছিলেন আধুনিক পোর্তুগালের প্রতিষ্ঠাতা। একাধিক অনুকূল উপাদান পোর্তুগালের নৌ-অভিযানের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল, যথা-

(1) ভৌগোলিক অবস্থান: পোর্তুগাল ছিল আটল্যান্টিক মহাসাগরমুখী দেশ। আইবেরীয় উপদ্বীপে তার অবস্থান ভৌগোলিক দিক থেকে পোর্তুগালকে পশ্চিম মুখাপেক্ষী করেছে। ভৌগোলিক কারণেই পোর্তুগাল ও স্পেন লিসবন, কাদিজ ও সেভিল অঞ্চলকে তাদের সামুদ্রিক অভিযানের সূচনাকেন্দ্র (Starting Point) হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছিল।

(2) রাজনৈতিক স্থিতি: অন্যান্য আটল্যান্টিকমুখী দেশ, যেমন- স্পেনেরতুলনায় পোর্তুগালের রাজনীতিতে অনেক বেশি স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য ছিল (পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতক)। তাছাড়া সামুদ্রিক অভিযান সফল করার জন্য যে শান্তির পরিবেশ ও পরিকল্পনার প্রয়োজন তা পোর্তুগালের ছিল।

(3) বুর্জোয়া বণিক শ্রেণির অস্থিত্ব: শক্তিশালী ও ধনী বণিক সম্প্রদায়ের সাহায্য এবং সমর্থন পোর্তুগালের সমুদ্র অভিযানে সহায়ক হয়েছিল। এই সময় পোর্তুগালের রাজনীতি ও আইনসভায় নির্বাচিত বুর্জোয়াদের অনেকেই বাণিজ্যকর্মে লিপ্ত ছিলেন।

(4) কিউটা অভিযানের সাফল্য: ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত কিউটা (Ceuta) দখল পোর্তুগিজদের বৃহত্তর সামুদ্রিক অভিযানের প্রেরণা দেয়। এক্ষেত্রে পোর্তুগালের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সম্পদশালী ও বিশাল মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার উপর প্রাধান্য বিস্তার। মীনাক্ষী ফুকনের মতে, কিউটা দখলের ফলে পোর্তুগিজ বণিকেরা মরক্কো এবং ভূমধ্যসাগরীয় মুর (Moors) অধ্যুষিত জিব্রাল্টার অঞ্চল দখলের প্রেরণা পায়। আবার এখান থেকেই আফ্রিকার ভিতরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে সেখানকার বাণিজ্যের দখল নেওয়া সহজ ছিল। পোর্তুগিজরা এখান থেকেই পায় স্বর্ণভান্ডারের সন্ধান, যা তাদের সামুদ্রিক অভিযানের প্রেরণাকে শতগুণে বাড়িয়ে দেয়।

(5) ধর্মীয় প্রেরণা: কেউ কেউ মনে করেন, ধর্মীয় প্রেরণা সমুদ্র অভিযানের পশ্চাতে সক্রিয় ছিল। খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার এবং প্রেস্টার জন (Prester John)-এর কাল্পনিক খ্রিস্টরাজ্যের উদ্ধার এই অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। কিন্তু এই প্রসঙ্গে মীনাক্ষী ফুকন মন্তব্য করেছেন যে, আটল্যান্টিকের উপকূলভাগ এবং আফ্রিকায় পোর্তুগিজদের ভৌগোলিক অন্বেষণের পশ্চাতে ধর্মের ভূমিকা ছিল গৌণ। আসলে অর্থনৈতিক লক্ষ্য, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ব্যক্তিগত উদ্যোগ ইত্যাদির সমন্বিত ফল ছিল সামুদ্রিক অভিযান।

(6) সমুদ্রের সঙ্গে যোগ: পোর্তুগালের ছিল এক প্রসারিত সমুদ্র উপকূল। জনগণের গরিষ্ঠ অংশ ছিলেন মৎস্যজীবী এবং সমুদ্রযাত্রায় দক্ষ। এ ছাড়া ছিল সামন্ততান্ত্রিক বন্ধন থেকে মুক্ত বণিক শ্রেণি। এই সকল ইতিবাচক উপাদান পোর্তুগিজ বণিকদের আটল্যান্টিক বাণিজ্যের অভিমুখ মদ, মাছ এবং লবণ থেকে সোনা, মশলা এবং দাসসংগ্রহের লাভজনক বাণিজ্যে রূপান্তরিত করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। পোর্তুগাল বিভিন্ন উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় পণ্যসামগ্রী, যেমন- মোম, মধু, তেল, শস্য ও লেবুজাতীয় ফল ইত্যাদি নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে। তাই বলা যায়, প্রথম থেকেই পোর্তুগিজরা সামুদ্রিক বিস্তার এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রতি মন দিয়েছিল।

(7) প্রযুক্তিগত উন্নতি: পোর্তুগালের প্রকৌশল বা Technology-র প্রায় তিনটি শাখা যথা- ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যা, জাহাজ নির্মাণ এবং নৌ- কামানবিদ্যায় যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়েছিল, যা ছিল সামুদ্রিক অভিযানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment