ক্রুসেডের পশ্চাতে সামাজিক কারণ ব্যাখ্যা করো

ক্রুসেডের পশ্চাতে সামাজিক কারণ ব্যাখ্যা করো

ক্রুসেডের পশ্চাতে সামাজিক কারণ ব্যাখ্যা করো
ক্রুসেডের পশ্চাতে সামাজিক কারণ ব্যাখ্যা করো

ভূমিকা

খ্রিস্টীয় একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত প্রায় দুশো বছর ব্যাপী খ্রিস্টানরা তাদের পবিত্রভূমি জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ-এ শামিল হয়েছিল। মূলত ধর্মীয় কারণে ক্রুসেড সংগঠিত হলেও এর পশ্চাতে নানা সামাজিক কারণও সক্রিয় ছিল। এগুলি হল- 

(1) সামাজিক অস্থিরতা: সামন্ততান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী পিতার সম্পত্তিতে কেবল জ্যেষ্ঠ পুত্রের অধিকারই স্বীকৃত ছিল। পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্ররা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা বিদ্রোহ কিংবা লুঠতরাজের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করত। সম্পত্তিগত কারণে সামন্তপ্রভুদের পুত্রদের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দু ও কলহ লেগেই থাকত। ফলে ইউরোপে এক সামাজিক অস্থিরতা তথা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এই অস্থিরতা মোচনের জন্য পোপ ও রাজন্যবর্গ তাদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে শামিল করতে উদ্যোগী হন। তাই অধ্যাপক আরনেস্ট বার্কার বলেছেন, “সামন্তপ্রথা হল ক্রুসেডের একটি অন্যতম কারণ।”

(2) দাসত্ব থেকে মুক্তি: পোপ প্রচার করেন যে, ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করলে ভূমিদাসরা যুদ্ধের পর সামন্তপ্রভুর নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। হাজার হাজার ভূমিদাস দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষায় ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

(3) দরিদ্র শ্রেণির প্রত্যাশা: ইউরোপের সাধারণ দরিদ্র শ্রমজীবী ও ভবঘুরে শ্রেণির মানুষদের জীবন ছিল দুর্বিষহ ও একঘেয়ে। ক্রুসেড তাদের মনে এক নতুন প্রত্যাশার জন্ম দেয়। তাদের মধ্যে এই ভাবনা জাগ্রত হয় যে, নতুন জয় করা দেশগুলিতে বসবাস করে তারা সুখী জীবনের আস্বাদ পাবে। ঋণগ্রহীতারাও ঋণের জাল থেকে মুক্তির আশায় ধর্মযুদ্ধে শামিল হয়েছিল।

(4) পুণ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা: পোপ দ্বিতীয় আরবান ক্লেরমন্ট-এর সভায় ঘোষণা করেন যে, জেরুজালেম পুনরুদ্ধারে অংশগ্রহণ করলে সকল পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা হবে। এমনকি ধর্মযুদ্ধে শহিদ হলে প্রতিটি ধর্মযোদ্ধা স্বর্গলাভের পুণ্য অর্জন করবে। পোপের এইসকল প্রচার  সাধারণ মানুষ ও ভূমিদাসদের ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণে আগ্রহী করে তোলে।

মূল্যায়ন

সবশেষে বলা যায় যে, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সামন্তপ্রভু, ভূমিদাস, ঋণগ্রহীতা, শ্রমজীবী, ভবঘুরে দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা মুক্তি এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। আর এইসকল সামাজিক শ্রেণিকে পোপ সুকৌশলে ধর্মীয় আবেগে উদ্বুদ্ধ করে ধর্মযুদ্ধে শামিল করেছিলেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment