ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের অর্থনৈতিক কারণ উল্লেখ করো

ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের অর্থনৈতিক কারণ উল্লেখ করো

ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের অর্থনৈতিক কারণ উল্লেখ করো
ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের অর্থনৈতিক কারণ উল্লেখ করো

ভূমিকা

পবিত্রভূমি জেরুজালেমের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে প্রায় দুশো বছর ব্যাপী ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানরা ধর্মযুদ্ধের ডাক দিলেও এর পশ্চাতে অন্যান্য কারণও দায়ী ছিল। এইসকল কারণগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক কারণ ছিল অন্যতম।

(1) ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: বহুকাল আগে থেকেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। কিন্তু ইসলামের দ্রুত উত্থান ও প্রসার ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে বিশেষ প্রভাব ফেলে। দশম শতকের মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে খ্রিস্টানদের উৎখাত করে আরবের মুসলমান বণিকরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ভূমধ্যসাগর কার্যত মুসলমান হ্রদ-এ পরিণত হয়। ফলস্বরূপ রোম তথা পাশ্চাত্যের বণিকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ইটালি তথা খ্রিস্টান বণিকরা ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে কর্তৃত্ব বা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ধর্মযুদ্ধে শামিল হয়।

(2) বণিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ: ইটালির নগররাষ্ট্রগুলির বণিকরা একসময় ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত। ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু এই বাণিজ্যে ক্রমশ মুসলমান বণিকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, ইটালির বণিকদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করেছিল। তাই বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে ইটালির বণিকরা বিশেষত ভেনিস, পিসা, জেনোয়ার বণিকরা তাদের রণতরীর সম্ভার নিয়ে ধর্মযুদ্ধের জন্য সমবেত হয়।

(3) অর্থনৈতিক সংকট: খ্রিস্টীয় দশম শতকের পর থেকেই ইউরোপের জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সে হারে বাড়েনি। ফলস্বরূপ ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দিন দিন বেকারত্ব বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় বহু মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য লুঠতরাজ, চুরি ইত্যাদি নানা অসামাজিক উপায় অবলম্বন করতে শুরু করে। এইভাবে ইউরোপের আর্থিক সংকট এক উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই সংকট মোচনের উদ্দেশ্যে পোপ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুকৌশলে ধর্মযুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

(4) সম্পদ বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা: ক্রুসেডের মধ্য দিয়ে ইউরোপের ধনী সামন্ত অভিজাতরা আরও ধনী হতে চেয়েছিল। অপেক্ষাকৃত দুর্বল অভিজাতরাও নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষায় ধর্মযুদ্ধে শামিল হয়েছিল।

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায় যে, খ্রিস্টানরা মুসলমানদের কাছ থেকে তাদের পবিত্রভূমি জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে মূলত ধর্মযুদ্ধে শামিল হলেও এর নেপথ্যে যে অর্থনৈতিক কারণও সক্রিয় ছিল উক্ত আলোচনা থেকে তা স্পষ্ট।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment