ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করো

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্ব
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি আলোচনা করতে হলে তার ইতিহাস, অর্থ, মূল কথা, প্রবক্তাগণ, বাস্তব প্রয়োগ, প্রয়োজনীয়তা এইগুলি আলোচনা করা দরকার, যা নিম্নে আলোচনা করা হল-
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ইতিহাস
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ধারণাটি অত্যন্ত প্রাচীন। অ্যারিস্টট্লের রচনায় প্রথম এই নীতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এরপর রোমান চিন্তাবিদ সিসেরো ও পলিবিয়াসের রচনাতেও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়। এ ছাড়া ষোড়শ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক জাঁ বোঁদা, ব্রিটিশ দার্শনিক মন্তেস্কু, চিন্তাবিদ লক্ ও হ্যারিংটন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে যথেষ্ট সমর্থন জানিয়েছিলেন।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সংজ্ঞা
যে-কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ) যখন স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ কার্যসম্পাদন করে, তখন তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Theory of Separation of Power) বলা হয়।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল-
- সরকারের যে বিভাগের যা কাজ, তা সেই বিভাগেরই করা দরকার।
- এক বিভাগের কাজ আর এক বিভাগের করা উচিত নয়।
- এক বিভাগের কাজ অন্য বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াও উচিত নয়।
- • একই ব্যক্তির একাধিক বিভাগের সঙ্গে জড়িত থাকা উচিত নয়।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তাগণ
পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইতালির চিন্তানায়ক ম্যাকিয়াভেলি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতিকে সমর্থন করেন। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে একটি বলিষ্ঠ তত্ত্ব বা মতবাদ হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন অষ্টাদশ শতাব্দীর খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মন্তেস্কু। তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে ব্যক্তিস্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে প্রচার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক মৌলিক নীতি প্রবর্তন করেন। ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘The Spirit of Laws’ গ্রন্থে তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ তাত্ত্বিক রূপ দান করেন।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, চিন, কানাডা প্রভৃতি দেশে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা
মন্তেস্কু মনে করতেন স্বৈরাচারী শাসনে জনগণের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত হয়ে পরে কারণ, একই ব্যক্তির হাতে সরকারের একাধিক বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়। এর ফলস্বরূপ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায়, এই নীতি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, কারণ এই নীতি কার্যকর হলে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে অযথা বাধা সৃষ্টি করবে ফলে সরকার অচল হয়ে পড়বে। তা সত্ত্বেও এই নীতির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই বলা যায়, মন্তেস্কু-এর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সংযমী শাসনেরই এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর