![]() |
চার্বাক নীতিতত্ত্বের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো |
চার্বাকদের নীতিতত্ত্বকে সোজা কথায় সুখবাদী নীতিতত্ত্বরূপে উল্লেখ করা যায়। তাঁরা নীতি বলতে মানুষের সুখী জীবননীতিকেই বুঝিয়েছেন। মানুষের জীবন সম্পর্কে চার্বাকদের নীতি হল পুরোপুরিই জড়বাদী এবং ভোগ-সুখবাদী। এঁরা ইন্দ্রিয়সুখকেই চরম পুরুষার্থরূপে উল্লেখ করেছেন।
(খ) চরম পুরুষার্থ হিসেবে কাম
পুরুষার্থ হল মানবজীবনের চরম ও পরম কাম্য বস্তু। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ-এই চারটিকে পুরুষার্থরূপে গণ্য করা হয়। ভারতীয় দর্শনের বহু সম্প্রদায়ই এদের মধ্যে মোক্ষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষার্থরূপে মনে করে। কিন্তু চার্বাকগণ চরম পুরুষার্থরূপে মোক্ষকে স্বীকার করেন না। তাঁদের মতে, একমাত্র কাম তথা ইন্দ্রিয়সুখ-সম্ভোগই হল চরম ও পরম পুরুষার্থ। সে কারণেই তাঁরা বলেন, “যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচবে, ঋণ করে ঘি খাবে।” এ ছাড়া অর্থকে সুশিক্ষিত চার্বাকগণ গৌণ পুরুষার্থরূপে উল্লেখ করেছেন, কারণ অর্থ কামের সহযোগী।
(গ) মোক্ষের ধারণায় অবিশ্বাস
চার্বাকগণ আরও বলেন যে, মোক্ষের ধারণা অলীক কল্পনামাত্র। কারণ, তাঁরা নিত্য-আত্মাকে স্বীকার করেন না। আর নিত্য- আত্মা স্বীকৃত না হলে, মোক্ষের বিষয়টি একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ে। সে কারণেই ঈশ্বর, স্বর্গ-নরক, পাপ-পুণ্য, পরজন্ম-এই সমস্ত ধারণাগুলি তাঁদের কাছে একেবারেই অসার কল্পনামাত্র। চার্বাক মতে, এগুলি ধূর্ত পুরোহিতদের ভ্রান্ত প্রচার মাত্র। পুরোহিতরা তাঁদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই সমস্ত বিষয়ে মানুষের বিশ্বাস উৎপাদনে সচেষ্ট থাকেন এবং যাগযজ্ঞের মাধ্যমে ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নের মিথ্যা আশ্বাস দেন।
(ঘ) নৈতিকতা হিসেবে দৈহিকসুখের কামনা
একমাত্র দৈহিক সুখই হল চার্বাক দর্শনসম্মত নৈতিকতা। সে কারণেই মানুষের উচিত কাজ হল সুখ অন্বেষণ করা ও তা অর্জন করা এবং পাশাপাশি দুঃখকে সর্বতোভাবে পরিহার করা। চার্বাকদের নীতিতত্ত্ব তাই অমার্জিত আত্মসুখবাদেরই নামান্তর। পাশ্চাত্যের অ্যারিস্টিপ্লাসও এরূপ নীতি-তত্ত্বেরই প্রচারক।