ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু
ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

কাহিনীসংক্ষেপ বা বিষয়সংক্ষেপ

প্রকৃতির উদার অসীমতায় মুক্তিলাভের ইচ্ছায় কাতর এক গৃহবন্দি বালকের অসহায় বেদনা ‘ছুটি’ গল্পে রূপায়িত হয়েছে। গল্পের শুরুতেই দেখা যায় নদীর ধারে এক প্রকাণ্ড শালকাঠ মাস্তুলে পরিণত হওয়ার জন্য রাখা ছিল। দুরন্ত কিছু ছেলের দল সেই শালকাঠ নিয়ে মজার খেলায় রত। ছেলের দলের সর্দার ফটিক-এর মাথা থেকে প্রসূত এই মজার খেলায় যোগদান করতে রাজি হয়নি তারই আপন ভাই মাখন। এই খেলার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করবার আসায় মাখন সেই কাঠের গুঁড়ির ওপর বসে থাকে। কিন্তু দুরন্ত ছেলেদেরকে দমানো যায় না। তারা নতুন উপায় বের করে মাখনসহ কাঠের গুঁড়িকে ঠেলতে থাকে। অনিবার্য ফলস্বরূপ মাখন মাটিতে পড়ে গেলে অপমানে, রাগে ফটিককে অন্ধভাবে মারতে থাকে, এবং মায়ের কাছে নালিশ জানাতে বাড়ি চলে যায়। খেলা ভেঙে যায়, ছেলের দল চলে গেলেও ফটিক নদীর ধারে বসে প্রকৃতিকে প্রাণ ভরে উপলব্ধি করতে থাকে।

ফটিকের মামা বহুদিন বাদে তার বিধবা বোনের খোঁজখবর নিতে গ্রামে আসে। এখানে এসে তিনি ফটিকের মায়ের কাছে ফটিকের দুরন্তপনা, অবাধ্যতার কথা জানতে পারেন। এবং উলটো দিকে মাখনলালের সুন্দর স্বভাব গুণের কথা শুনে, ফটিককে কলকাতায় নিজের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। বিধবা বোনের সাহায্য ও ফটিককে মানুষ করবার জন্য বিশ্বম্ভরবাবুর ফটিককে কলকাতায় নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেন। ফটিক কলকাতা যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। বাস্তবজ্ঞান শূন্য হয়ে মাকে ছেড়ে যেতে তার খুব একটা দুঃখ হয় না। উপরন্তু অতিরিক্ত আগ্রহে তার সব খেলার সরঞ্জাম সে মাখনকে দিয়ে দেয়। কলকাতায় কবে যাবে এই চিন্তায় তার রাত্রের ঘুম উঠে যায়।

অবশেষে মা, ভাই-এর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে মামার সঙ্গে ফটিক কলকাতায় মামার বাড়িতে এসে পৌঁছায়। মামি ও তার মামাতো ভাইয়েরা ফটিককে দেখে মোটেই খুশি হতে পারেনা। তার মামি, এই তেরো বছরের অপরিচিত, অশিক্ষিত পাঁড়াগায়ের ছেলেকে নিজের সংসারে বালাই ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারেননি। মামাবাড়িতে আন্তরিকতার, মায়া মমতার অভাব ফটিক প্রতিমুহূর্তে উপলব্ধি করতে থাকে। বয়ঃসন্ধির এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে একটি ছেলের সবচেয়ে বড়ো আশ্রয় হল তার মা। সেই মায়ের স্নেহের আঁচল থেকে বহুদূরে এক অমানবিক, ভালোবাসাহীন পরিবেশে ফটিকের অবস্থা করুণ থেকে করুণতর হয়ে ওঠে। শহরের চার দেয়ালে আবদ্ধ মুক্তপ্রাণা ফটিক নিজের গ্রামে, নিজের মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মামার কাছ থেকে জানতে পারে পুজোর ছুটির সময় সে বাড়ি যেতে পারবে। এইরূপ পরিস্থিতিতে আবার স্কুলের সবচেয়ে নির্বোধ বালক হিসাবে শিক্ষকের অমানবিক আচরণ ফটিককে দিশেহারা করে তুলেছিল। খাঁচায় আবদ্ধ পাখির মতো ছটফট করতে করতে ফটিক শহরের ইট-কাঠে আবদ্ধ হয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছিল। তার চেতন-অবচেতন মনের একটাই বাসনা ছিল এই পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া। কিন্তু সশরীরে মায়ের কাছে তার আর ফিরে যাওয়া হয়নি। কারণ বই হারিয়ে সে মামির কাছে নিষ্ঠুরভাবে ভর্ৎসনার শিকার হয়ে ভয়ে প্রবল বর্ষার মধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। দুই দিন বাদে ফটিককে উদ্ধার করা হয় তখন সে প্রবল জ্বরে আক্রান্ত। ডাক্তার তার জবাব দিয়ে গেলে গ্রাম থেকে ফটিকের মাকে ডেকে পাঠানো হয়। রোগশয্যার চারপাশে অবুঝ বোবা দৃষ্টি নিয়ে সে খুঁজে ফিরেছে মাকে। কঠিন দেয়ালে বাধা পেয়ে শিশু ফটিকের আশা ফিরে এসেছে শূন্যতায়। অবশেষে যেদিন তার মা এসে পৌঁছায় তখন তার স্বাভাবিক চেতনা লুপ্ত। মায়ের আকুল আহ্বানে ফটিক কেবল বলতে পেরেছে-‘এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ শেষ পর্যন্ত ফটিকের জীবনের ছুটির মধ্যে দিয়েই গল্পের করুণ সমাপ্তি ঘটেছে।

আরও পড়ুন – ‘বই কেনা’ রচনার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে লেখো

Leave a Comment