জনঘনত্ব অনুযায়ী ভারতকে কয়টি অঞ্চলে ভাগ করা যায় এবং জনঘনত্বের কারণগুলি উল্লেখ করো।

জনঘনত্ব অনুযায়ী ভারতকে কয়টি অঞ্চলে ভাগ করা যায় এবং জনঘনত্বের কারণগুলি উল্লেখ করো।
জনঘনত্ব অনুযায়ী ভারতকে কয়টি অঞ্চলে ভাগ করা যায় এবং জনঘনত্বের কারণগুলি উল্লেখ করো।
জনঘনত্বের তারতম্য অনুযায়ী ভারতকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

A অত্যধিক জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল (1001-এর বেশি):

আঞ্চলিক বিস্তৃতি: পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, দিল্লি, চন্ডিগড়, পুদুচেরি, দমন-দিউ ও লাক্ষাদ্বীপ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। 
জনঘনত্বের কারণ: (i) পশ্চিমবঙ্গের মাটি খুবই উর্বর কারণ এই অঞ্চলটি গাঙ্গেয় পলি দ্বারা গঠিত, এ ছাড়া হুগলি নদীর উভয় তীরে গড়ে ওঠা প্রাচীন শিল্পাঞ্চল থাকায় এবং কৃষিকাজের সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের কারণে জনঘনত্ব খুব বেশি। (ii) দিল্লি, চন্ডিগড় প্রভৃতি অঞ্চলগুলি কেন্দ্রশাসিত এবং শিল্প প্রশাসনিক ও বাণিজ্যের কারণে জনঘনত্ব বেশি।

B অধিক জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল (501-1000):

আঞ্চলিক বিস্তৃতি: উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও তামিলনাড়ু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত দাদরা, নগর হাভেলি এই অঞ্চলের অন্তর্গত। 

জনঘনত্বের কারণ: (ⅰ) কেরালার উপকূল অঞ্চলের মাটি উর্বর যা বাগিচা ফসল চাষের উপযুক্ত। এ ছাড়া মাছ ধরার সুবিধা থাকায় জনঘনত্ব খুব বেশি। (ii) উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানার সমভূমি উর্বর পলিসমৃদ্ধ যা কৃষিকাজে খুবই উন্নত। এমনকি কৃষিনির্ভর শিল্পেও উন্নত। এ ছাড়া কৃষিতে কাজ করার জন্য প্রচুর মানুষ এখানে আসে। (iii) পলিসমৃদ্ধ তামিলনাড়ুর কাবেরী অববাহিকা উপকূলীয় সমভূমি কৃষিতে খুব উন্নত। এ ছাড়া এই সমভূমি অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই অঞ্চলের জনবসতি খুবই নিবিড় হয়।

C মধ্যম জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল (251 -500): 

আঞ্চলিক বিস্তৃতি: অসম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গোয়া, গুজরাট, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের জনঘনত্ব। 
জনঘনত্বের কারণ: (ⅰ) মালভূমি এবং সমভূমির সমন্বয়ে গঠিত ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক সমভূমি কৃষিতে ও মালভূমি খনিজে সমৃদ্ধ। (ii) ঝাড়খণ্ড হল ভারতের খনিজ ভাণ্ডার এবং শিল্পে উন্নত। (iii) প্রথম সারির শিল্পোন্নত রাজ্য হলেও গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মালভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত এবং গুজরাটের উত্তরাংশ মরুভূমির অন্তর্গত, তাই এখানে জনসংখ্যা মাঝারি। (iv) গোয়া পর্যটন শিল্পে উন্নত এবং সমুদ্র থেকে মাছ ধরার সুবিধা থাকায় এখানকার জনসংখ্যা মাঝারি ধরনের হয়।

D স্বল্প জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল (101 – 250): 

আঞ্চলিক বিস্তৃতি: মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ইত্যাদি। 
জনঘনত্বের কারণ: (i) উত্তর-পূর্বের পার্বত্য রাজ্য, উত্তর ভারতের দুর্গম পর্বতময় রাজ্য (হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাঞ্চল), প্রতিকূল জলবায়ু, বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, অনুন্নত কৃষি প্রভৃতি কারণে জনবসতি কম, (ii) মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ভূপ্রকৃতি বন্ধুর ও মৃত্তিকা ল্যাটেরাইট জাতীয় যা কৃষির অনুপযুক্ত, ফলে জনসংখ্যা কম। (iii) রাজস্থানের মরুভূমিতে অবস্থিত অঞ্চলগুলি চরম প্রকৃতির জলবায়ুর অন্তর্গত হওয়ায় ও মাটি অনুর্বর হওয়ায় জনঘনত্ব বেশ কম।

E অতি স্বল্প জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল (100-এর কম): 

আঞ্চলিক বিস্তৃতি: অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্য আন্দামান ও নিকোবর এই অঞ্চলের অন্তর্গত। 
জনঘনত্বের কারণ: (i) অতিবন্ধুর ভূপ্রকৃতি, প্রতিকূল জলবায়ু, গভীর অরণ্য, অনুন্নত কৃষিপদ্ধতি প্রভৃতি কারণে জনবসতির ঘনত্ব অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম, জম্মু-কাশ্মীরে খুব কম। (ii) আন্দামান ও নিকোবর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন, তাই জনসংখ্যা কম।

Leave a Comment