জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় টাইকো ব্রাহের অবদান কী

ভূমিকা
রেনেসাঁ কালপর্বে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার অগ্রগতিতে যাঁদের ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন টাইকো ব্রাহে। ডেনমার্কের এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারেরও আগে খালি চোখে মহাকাশের নানা জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি খালি চোখেই আকাশে নানা তারকা বা জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি এর রহস্যভেদের নিরলস প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি ডেনমার্কের তদানীন্তন রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের কাছ থেকে অর্থিক আনুকূল্য লাভ করেন এবং ভেন দ্বীপে উরানিবর্গ নামে ইউরোপের প্রথম বৃহৎ মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলেন।
(1) বই প্রকাশ : ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে টাইকো ব্রাহে দে নোভা স্তেলা (De Nova Stella) নামে গ্রন্থরচনা করে অ্যারিস্টলের স্থির ও অপরিবর্তনীয় পৃথিবীর তত্ত্বকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেন। ‘Nova’ তিনি বলতে তাঁর আবিষ্কৃত নতুন নক্ষত্রকে বুঝিয়েছেন। বর্তমানে আমরা এটিকে সুপারনোভা বলে জানি, যা পৃথিবী থেকে ৭৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। টাইকো ব্রাহের অপর গ্রন্থ হল ‘Introduction to the New Astronomy’ (১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দ)।
(2) পৃথিবীর আবর্তন সম্পর্কে মত: টাইকো ব্রাহে কোপারনিকাসের তত্ত্বের সূর্যকেন্দ্রিক গ্রহগুলির আবর্তনের মতকে মেনে নিলেও পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে আবর্তনকে অস্বীকার করেন। কারণ তিনি মনে করতেন, বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে সূর্য নয়, পৃথিবী অবস্থিত। তাঁর এই তত্ত্ব টাইকোনিয়ান মডেল নামে খ্যাত।
(3) বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গঠন সম্পর্কে নতুন মত: তিনি এক জটিল মতবাদ প্রকাশ করেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের গঠন সম্পর্কে। এটি হল পৃথিবী ছাড়া অন্যান্য গ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং সূর্যসহ সমস্ত ঘূর্ণায়মান গ্রহগুলি আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। ধূমকেতু সম্পর্কেও তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল প্রাচীন ধারণার বিপক্ষে। তিনি বলেন, ধূমকেতু পৃথিবীর বিনাশের জন্য সৃষ্টি হয়নি, এটিও একটি মহাজাগতিক বস্তু যা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলমান।
মূল্যায়ন
টাইকো ব্রাহের বিশ্বব্রহ্মান্ডে সম্পর্ক তত্ত্ব আংশিক ভুল হলেও, তাঁর সহযোগী কেপলার পরবর্তীকালে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ও যুক্তিগ্রাহ্য ধারণা দিতে সক্ষম হন।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর