তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু
মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে নায়ক দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একদিনের ছুটি পেয়ে ঘণ্টা-দুয়েকের বাসযাত্রার পর জঙ্গলাকীর্ণ নালাপথে গোরুর গাড়িতে চেপে তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিভিন্ন অন্ধকারময়, অস্বাভাবিক বন্ধুর পথে নালা- নর্দমা পেরিয়ে সে গাড়ি গিয়ে থামে এক পানাপুকুরের ধারে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই পুকুরের কাছেই রয়েছে জীর্ণ এবং ভগ্নপ্রায় এক অট্টালিকা। এই অট্টালিকার অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরে তাদের থাকতে হয়। ঘরে পৌঁছেই একজন শতরঞ্জি পাতা না হতেই তার উপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, আর একজন পান-পাত্র নিয়ে বসে যায়। বন্ধুদের অচেতন অবস্থা দেখে নায়ক অট্টালিকার ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গিয়ে পৌঁছয়। অদূরে জানালায় একটি আলোকরেখা দেখা যায় আর তা আড়াল করে এসে দাঁড়াল একটি ছায়ামূর্তি। কিছুক্ষণ পরে ছায়ামূর্তি সরে গেলে নায়ক নীচে নেমে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকালে শ্যাওলা-ঢাকা ভাঙা ঘাটের একদিকে বসে জলে ছিপ ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা চলে। বেলা বাড়তে থাকার সময়ে একটি মেয়ে পুকুরের পানা সরিয়ে ঘড়ায় করে জল নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ছিপটি টেনে তুলতে বলে। মেয়েটির আচরণে কোনো লজ্জা বা আড়ষ্টতার ছাপ নেই। তারপর মেয়েটি চলে যায়।
মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসে নায়ক জানতে পারে মেয়েটির নাম যামিনী এবং আজ দুপুরে আহারাদির ব্যবস্থা তাদেরই বাড়িতে হয়েছে। সেখানে যে যৎসামান্য আয়োজন, তা যামিনী নিজেই পরিবেশন করল। এরপর যামিনীর মায়ের কথা জানতে পারে নায়ক।
কোনো একসময়ে যামিনীর মায়ের দূরসম্পর্কের এক আত্মীয় নিরঞ্জন সেখানে এসেছিল এবং কথা দিয়ে গিয়েছিল ফিরে এসে সে যামিনীকে বিয়ে করবে। কিন্তু সে ফিরে আসেনি। মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধা অধীর অপেক্ষায় দিন গোনে। নিরঞ্জন অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পেতেছে-এ খবর যামিনী জানলেও বৃদ্ধার কাছে তা অজ্ঞাত। নায়ক ও তার বন্ধু যামিনীর মায়ের কাছে যায়। পদশব্দে অন্ধ বৃদ্ধা মনে করে নিরঞ্জন এসেছে। তাই নিরঞ্জন ভেবে তাকে জিজ্ঞাসা করে সে আবার আগের মতো চলে যাবে কি না। নায়কের বন্ধুকে বাধা দিয়ে নায়ক বলে ওঠে-“না মাসিমা, আর পালাব না।” কিন্তু সে তো ছলনামাত্র। তাদের ফিরে আসতেই হবে মহানগরের ভিড়ে।
নায়ক যখন মহানগরে ফিরে আসবে, তখন তেলেনাপোতার স্মৃতি যেন সুদূর অথচ অন্তরঙ্গ মনে হবে। ক্রমশ সেই স্মৃতি হয়ে আসবে আবছা। তবু সে যখন আবার তেলেনাপোতায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে, ডাক্তার এসে জানায়, নায়ক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত, ফলত অসুখ, শয্যালগ্ন অবস্থায় বহুদিন কেটে যায়। যখন একটু সুস্থ হবেন, দুর্বল শরীরে নায়কের মনে হবে সবই ছিল স্বপ্ন-তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর