তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তর (Marks 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE
“কোনো দিকে জনমানব দেখতে পাবেন না।”-কোথায় জনমানব দেখতে পাওয়া যাবে না? কেন জনমানব দেখতে পাওয়া যাবে না?
উত্তর বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য উক্তিটি নেওয়া হয়েছে। তেলেনাপোতা নামের সুদূরবর্তী অখ্যাত একটি গ্রামে যাওয়ার পথে জনমানব দেখতে পাওয়া যাবে না।
কর্মচঞ্চল জনাকীর্ণ কলকাতা শহরের তিন যুবক তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য রওনা দিয়েছিল। তেলেনাপোতা নামের অখ্যাত গ্রাম কলকাতা থেকে বাসে ঘণ্টা দুয়েকের পথ। বাসে দুঘণ্টা যাওয়ার পর আচমকা নেমে পড়তে হবে রাস্তার মাঝখানে। নিচু জলার মতো জায়গায় ওপর দিয়ে লম্বা সাঁকো চলে গেছে। পথের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় তখনো সূর্য ডোবেনি কিন্তু চারিদিক যেহেতু ঘন জঙ্গলাবৃত তাই যেন অন্ধকার নেমে এসেছে। পাখিরাও তখন সভয়ে সেই জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছে। সেখানে একটা ভিজে স্যাঁতসেঁতে ভ্যাপসা আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। তখনই মনে হয় নীচের সেই জলা থেকে একটু নিষ্ঠুর কুণ্ডলী পাকানো জলীয় অভিশাপ ধীরে ধীরে অদৃশ্য ফণা তুলে উঠে আসছে মাটির উপরে। প্রত্যন্ত গ্রামের পথ একেবারে জনমানবহীন কারণ জঙ্গলাকীর্ণ এমন অঞ্চলে রাত্রির অন্ধকার নেমে আসার আগেই মানুষ ফিরে যায় যার যার আপন ঘরে। তাছাড়া এসব অনঞ্চলে জনবসতি প্রায় থাকে না বললেই চলে। সেকারণেই কোথাও জনমানব দেখতে পাওয়া যাবে না।
“সে শব্দে আপনারা কিন্তু প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠবেন।” কার লেখা কোন্ রচনা থেকে উক্তিটি গৃহীত হয়েছে? এবং মূল প্রন্থের নাম কী? কখন কোন্ শব্দে চঞ্চল হয়ে উঠতে হবে?
উত্তর বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে। মূলগ্রন্থের নাম ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’।
■ তেলেনাপোতা নামের গ্রামে যাওয়ার পথ জনমানবহীন, জঙ্গলাকীর্ণ। কলকাতা থেকে অনেক দূরে বাসে ঘণ্টাদুয়েক যাওয়ার পর আচমকা রাস্তার মাঝখানে নেমে এগিয়ে যেতে হবে। সূর্য না ডুবলেও অন্ধকার সেখানে নেমে আসে, কারণ সেখানে চারিদিকে ঘন জঙ্গল। সেই জনমানবহীন পরিবেশে পথের মাঝে লম্বা সাঁকো, জলা, কাদাজলের নালা সবকিছু মিলে রচনা করেছে দুর্গম যাত্রাপথ। কিছুক্ষণ বাদে ঘন অন্ধকারপূর্ণ পরিবেশে পরস্পরের মুখও আর দেখা যায় না। তখন তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে মশাদের ঐকতান। এইসময় বড়ো রাস্তায় পৌঁছে ফিরতি কোনো বাস ধরার চেষ্টার কথা মনে হবে। ঠিক তখনই হঠাৎ যেখানে সেই কাদাজলের নালাটি জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে সেখান থেকে অপরূপ সুন্দর এক শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ পাওয়া যাবে। মনে হবে বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে বার করছে। এই অমানুষিক কান্নার শব্দেই তখন তেলেনাপোতা আবিষ্কার অভিযানের জন্য এগিয়ে চলা কলকাতা মহানগরীর তিনজন যুবক প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠবেন।
“মনে হবে বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে বার করছে।”-উক্তিটির প্রসঙ্গ লেখো। উক্তিটিতে লেখক কী বুঝিয়েছেন তা লেখো।
উত্তর কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে। তেলেনাপোতা নামের গ্রামে যাওয়ার পথ জনমানবহীন অন্ধকারময়, জঙ্গলাকীর্ণ। কলকাতা থেকে অনেক দূরে বাসে ঘণ্টাদুয়েক যাওয়ার পর আচমকা রাস্তার মাঝখানে নেমে এগিয়ে যেতে হবে। লম্বা সাঁকো, জলা, কাদাজলের নালা সবকিছু মিলে রচনা করেছে দুর্গম এক পরিবেশ, কিছুক্ষণ বাদে পরস্পরের মুখ দেখা যায় না, তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে মশাদের ঐকতান। ঠিক তখনই কাদাজলের নালা থেকে যে শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ শোনা যাবে তারই বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য কথাগুলি বলেছেন।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কলকাতা থেকে তিনজন যুবক রওনা দিয়েছিল তেলেনাপোতা গ্রামের উদ্দেশে। দু-ঘণ্টা বাস যাত্রার পর আচমকা পথের মাঝে অগন্তুকরা যেখানে নামেন সেটি একেবারে জনমানবহীন। সেই জায়গাটা যেন এক অন্ধকারময় জলাজঙ্গলে ভর্তি বিরল পৃথিবী বলে তাদের মনে হয়। লম্বা সাঁকো, কাদাজলের নালা, আর মশাদের ঐকতান শোনা যায়। সূর্য ডোবার আগেই নেমে আসে ঘন অন্ধকার, একটা অদ্ভুত শিহরণ জাগায় তিনযুবকের মনে। পাখিরাও সভয়ে সেই স্থান পরিত্যাগ করেছে। একটা স্যাঁতসেঁতে ভিজে ভ্যাপসা আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। বড়ো রাস্তায় উঠে ফিরে আসার বাসের কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কাদাজলের নালা থেকে অপরূপ শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ পাওয়া যায়। মনে হয় বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক কান্না নিংড়ে নিংড়ে ব্যয় করছে। বোবা জঙ্গল থেকে উঠে আসা শব্দ আসলে মশাদের তীব্র ডাকের আওয়াজ। সেই আওয়াজ যেন বেরিয়ে আসছে অমানুষিক প্রচেষ্টার ফলরূপে।
“অনুভূতিহীন কুয়াশাময় এক জগৎ শুধু আপনার চারিধারে। সময় সেখানে স্তব্য স্রোতহীন।”-‘আপনার’ বলতে এখানে কার কথা বলা হয়েছে? কোথায় সময় স্তবক্স এবং স্রোতহীন। কেন সেখানে সময় স্তবক্স ও স্রোতহীন বলে মনে হয়।
উত্তর বাংলা সাহিত্যের দিপাল লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে ‘আপনার’ বলতে এখানে গল্পের নায়কের কথা বোঝানো হয়েছে।
■ আলোচ্য গল্পের তেলেনাপোতা নামক গ্রামে সময় স্তব্ধ ও স্রোতহীন।
■ তেলেনাপোতা নামক গ্রামে সময় স্তত্থ স্রোতহীন হওয়ার কারণ চেনাজগতের ছবি সেখানে মেলে না। চলমান জীবনের ছবি দূরে সরিয়ে রেখে যেন সুদূর অতীতের কুয়াশাচ্ছন্নলোকে সেখানে বিচরণ করা হয়। কলকাতা থেকে তিনজন যুবক তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য তেলেনাপোতার পথে যাত্রা করে। মহানগরী থেকে দু-ঘণ্টা বাসযাত্রা করার পর আচমকা রাস্তার মাঝখানে নেমে জনমানবহীন স্থানে তারা পৌঁছায়। জঙ্গলময় পরিবেশে সূর্যাস্তের আগেই নেমে আসে ঘন অন্ধকার। পাখিরাও যেন সভয়ে সেই জায়গা পরিত্যাগ করে চলে গিয়েছে। একটা স্যাঁতসেঁতে ভিজে ভ্যাপসা আবহাওয়া সেখানে পরিলক্ষিত হয়। লম্বা সাঁকো, কাদাজলের নালা, মশাদের ঐকতান-এসবের মধ্য দিয়েই তিনজন যুবক আবিষ্কারের নেশায় এগিয়ে চলে। এ জগৎ অপরিচিত, জনাকীর্ণ গতিমুখর মহানগরীর জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ। মনে হয় এখানকার জীবজগৎ পরিচিত গতিশীল পৃথিবী থেকে অনেক-অনেক দূরের। শুধু অনুভূতিহীন কুয়াশাময় এক জগৎ দেখা যায় সকলের চারিদিকে। গতিচঞ্চলতা নেই, জনমানবহীন জঙ্গলময় পরিবেশের নিস্তব্ধতার কারণেই সময় সেখানে যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। গল্পের নায়কের কাছে এমন পরিবেশ অনুভূতিহীন কুয়াশাময় এক জগৎ বলেই মনে হবে। চারিদিকের ঘন অন্ধকার তার মনে হবে চেতনার শেষ দীপশলাকাটিও যেন ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। গতিহীন, চঞ্চলতাহীন নতুন এই পৃথিবী তাই স্তন্স ও স্রোতহীন।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামে যাওয়ার যাত্রাপথের বর্ণনা দাও।
উত্তর কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কলকাতা থেকে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাসে উঠেছিলেন। ঘণ্টাদুয়েক বাদে তাঁরা রাস্তার মাঝখানে নেমে পড়েন। সূর্য না ডুবলেও চারিদিক ঘন জঙ্গলে একেবারে অন্ধকার হয়ে এসেছিল। কোনোদিকে জনমানবের চিহ্ন ছিল না। বড়ো রাস্তা থেকে নেমে তাঁরা একটা ভিজে জলার কাছে দাঁড়ান। সন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে এরপর তাঁরা পরস্পরের মুখও দেখতে পাচ্ছিল না। তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছিল মশাদের ঐকতান। তারপর তাঁরা দেখেছিলেন একটি গোরুর গাড়ি জঙ্গলের ভিতর থেকে নালা দিয়ে ধীর মন্থর দোদুল্যমান গতিতে আসছিল। তারপর তারা কালবিলম্ব না করে গোরুর গাড়ির ছইয়ের ভিতর প্রবেশ করেন। কোনোক্রমে গাদাগাদি ঠাসাঠাসি করে সেখানে বসে পড়েন। গোরুর গাড়িতে যেতে যেতে তাদের মনে হয়েছিল নিজেদের চিরপরিচিত পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও চলে এসেছেন।
গল্পকথকদের কেবল মনে হচ্ছিল, অনুভূতিহীন এক কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ তাদের চারিদিকে। সময় সেখানে একেবারে স্তব্ৎ, স্রোতহীন। গাড়ির গাড়োয়ান মাঝে মাঝেই প্রবল উৎসাহে ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছিল। জঙ্গলের বাঘ তাড়ানোর জন্যই এই ক্যানেস্তারার আয়োজন ছিল। এরপর গোবুর গাড়িটি একটি বিশাল মাঠ পার হয়ে যায়। মহানগরী থেকে মাত্র ত্রিশ মাইল দূরে এমন ব্যাঘ্রসঙ্কুল স্থানের অস্তিত্ব কেমনভাবে সম্ভব তা গল্পকথকদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। এইসব ভাবতে ভাবতেই তারা বিশাল মাঠ হয়ে যায়। পথ চলতে চলতেই তাদের চোখে পড়ে প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, কোথাও থাম, কোথাও দেউড়ির খিলান, কোথাও মন্দিরের ভগ্নাংশ। অবশেষে গাড়োয়ান গল্পকথকদের একটা জীর্ণ অট্টালিকার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
“মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেবার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে।”-উক্তিটির প্রসঙ্গ লেখো। আলোচ্য উত্তির মধ্য দিয়ে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন
উত্তর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কলকাতা থেকে তিনজন যুবক প্রস্তুত হয়। তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য বিকালবেলার পড়ন্ত রোদে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি বাসে উঠতে হবে। তারপর দুর্গম পথ চলতে চলতে মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে ব্যাঘ্রসংকুল স্থানের অস্তিত্বের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করতে করতেই গোরুর গাড়িতে বিশাল মাঠ পার হয়ে যাবে। অবশেষে তিনজন যুবকের স্থান হয় এক জরাজীর্ণ অট্টালিকায়। সেই অট্টালিকার ধ্বংসবিশেষের বর্ণনা প্রসঙ্গেই লেখক আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের নেশায় তিনজন যুবক কলকাতা থেকে রওনা দেয় মহানগরী থেকে ত্রিশমাইল দূরত্বের অজানা জায়গায়। সময় সেখানে স্বত্থ, স্রোতহীন। ব্যাঘ্রসংকুল স্থানের সম্ভাবনার বিচার করতে না করতেই গোরুর গাড়ি বিশাল বিশাল একটা মাঠ পার করে ফেলে। কুরুপক্ষের বিলম্বিত চাঁদের স্তিমিত আলোয় বিশাল মৌন সব প্রহরী গাড়ির দু-পাশ থেকে ধীরে ধীরে সরে যায়। প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ কোথাও থাম, দেউড়ির খিলান, মন্দিরের ভগ্নাংশ মহাকালের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য মুখ থুবড়েছে কিন্তু প্রাচীনত্বের নমুনা রয়ে গেছে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে। প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ মনে করিয়ে দেয় অতীত ঐতিহ্যের গরিমা।
“জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনো কুস্তুটিকাচ্ছন্ন স্মৃতিলোকে এসে পড়েছেন বলে ধারণা হবে।”- উক্তিটি যে রচনা থেকে সংকলিত হয়েছে তার লেখক কে? কার এই ধারণা হবে? উক্তিটির বক্তব্য বিষয় আলোচনা করো।
উত্তর আলোচ্য উক্তিটি যে রচনা থেকে গৃহীত হয়েছে তার লেখক হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র।
■ ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নায়কের এই ধারণা হবে।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কলকাতা থেকে তিনজন যুবক তেলেনাপোতা গ্রামের দিকে যাত্রা করে। দু’ঘণ্টা রাস্তার প্রবল ঝাঁকুনির সঙ্গো মানুষের গুঁতো খেতে খেতে বাসযাত্রা করার পর আচমকা পথের মাঝে নেমে পড়তে হবে। তখন আগন্তুকের সামনে জনমানবহীন জায়গাটা অন্ধকারময় জলাজঙ্গলে পরিপূর্ণ এক বিরল পৃথিবী বলে মনে হবে। লম্বা সাঁকো, কাদাজলের নালা, মশাদের ঐকতান আর গভীর জঙ্গলময় পরিবেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই নেমে আসে ঘন অন্ধকার। সময় সেখানে স্বপ্ন স্রোতহীন। মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে জনমানবহীন ব্যাঘ্রসংকুল এক স্থানে পৌঁছে আগন্তুকরা শুনতে পায় ক্যানেস্তারা-নিনাদ। এরকম স্থানে বাঘের অস্তিত্বের কথা ভাবতে ভাবতেই বিশাল মাঠ পার হতে হয়। কুয়পক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদের আবছা আলোয় পথ চলতে চলতে তিনজন যুবক তারপর পৌঁছে যাবে প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষে। সেই জীর্ণ অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষের কোথাও একটা থাম, কোথাও দেউড়ির খিলান, কোথাও কোনো মন্দিরের ভগ্নাংশ পরিবেশকে কৌতূহলপ্রদ ও মোহময় করে। মনে হয় সেই ধ্বংসাবশেষটি যেন মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই তাদের মনে হবে তারা যেন জীবন্ত পৃথিবী অতিক্রম করে অতীতের কোনো কুয়াশাময় স্মৃতিলোকে এসে পড়েছেন। অর্থাৎ চলমান জীবনের চেনা ছবি ছাড়িয়ে অতীতকালের কুয়াশাঘন স্মৃতির জগতে তাদের অবস্থিত হতে হয়েছে।
“তবু কেন দুর্বার আকর্ষণে সমস্ত অগ্রাহ্য করে আপনি ওপরে না উঠে পারবেন না।”- লেখক কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটির অবতারণা করেছেন। উক্তিটির মধ্য দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর কল্লোলীয় লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’ গল্পগ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে। তেলেনাপোতা আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে তিনজন যুবক তেলেনাপোতা গ্রামের অভিমুখে রওনা হয়। দু’ঘণ্টা বাসযাত্রার পর তারা উপস্থিত হয় জঙ্গলময় জনমানবহীন এক স্থানে। অবশেষে ভগ্ন ধ্বংসাবশেষপ্রাপ্ত একটি জরাজীর্ণ অট্টালিকায় স্থান হয় তাদের। গল্পের নায়ক শয্যা পরিত্যাগ করে টর্চ হাতে নিয়ে উপরের ছাদে ওঠার কথা ভাবতে থাকে। যদিও প্রতি মুহূর্তেই ভয় ইট বালি খসে পড়ে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা, তবু এক দুর্বার আকর্ষণের জন্যই সবকিছু ভুলে ছাদে ওঠার প্রবল ইচ্ছার বর্ণনা প্রসঙ্গেই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের প্রবল উন্মাদনায় তিনজন যুবক মহানগরী থেকে তেলেনাপোতা গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। একটি ধ্বংসাবশেষ প্রাপ্ত জরাজীর্ণ অট্টালিকার অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরে তারা নিজেদের স্থান করে নেয়। মশার উপদ্রব, চামচিকার আনাগোনা, পলেস্তরা খসে পড়া দেওয়াল-একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেন। গল্পের নায়ক রাত বাড়ার পর শয্যা ত্যাগ করে টর্চ হাতে নিয়ে উপরের ছাদে ওঠার কথা ভাবে। যে-কোনো মুহূর্তেই ইটবালি খসে পড়ে বিরাট বিপদের সম্ভাবনা তবুও দুর্বার কোনো এক আকর্ষণে সমস্ত অগ্রাহ্য করেই ছাদে ওঠার অদম্য ইচ্ছা নায়ককে চালিত করে। আবিষ্কারের নেশা এমনই-রোমাঞ্চকর পরিবেশে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতিতে নতুন কিছু দেখা ও জানার অপার কৌতূহল কাজ করে। সেকারণেই জরাজীর্ণ অট্টালিকার অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘর থেকে অন্ধকার রাত্রিতে ছাদে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা নায়কের মনে খেলা করে। গল্পের নায়ক অবশেষে ছাদে যায় এবং নতুনতর অভিজ্ঞতার আলোকে সমৃদ্ধ হয়। 9.
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামের এক বিশালায়তন জীর্ণ প্রাসাদের ঘরটিতে গল্পকথকদের কীভাবে রাত কেটেছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথক তেলেনাপোতা গ্রামের বিশালায়তন জীর্ণ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের একটি অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরে রাত্রিতে থাকার ব্যবস্থা করেন। গাড়োয়ান একটি ভাঙা লণ্ঠন এবং এক কলশি জল দিয়ে যায়। সেই ঘরটি ঝুল, জঞ্জাল আর ধুলোতে পুরোপুরি ভর্তি। ছাদ ও দেয়াল থেকে জীর্ণ পলেস্তরা যখন তখন ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা। দু-তিনটি চামচিকা পুরো ঘরের অধিকার নিয়েই সারারাত উৎপাত করে গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের। এরপর ঘরের মেঝেতে শতরঞ্চি পাতা হয়। গল্পকথকের এক বন্ধু শতরঞ্চিতে শুয়ে পড়তে না পড়তেই নাক ডেকে ঘুমোতে থাকেন। অন্য একজন বন্ধু পানপাত্রে নিজেকে নিমজ্জিত করেন।
রাত বাড়তে থাকে। ভাঙা লণ্ঠনের কাচের চিমনি ক্রমে গাঢ় কালো হয়। মশার আক্রমণ ক্রমাগত বাড়ে। বিশেষত অ্যানোফিলিস মশার উপদ্রব বেশি। এরপর গল্পকথক দুর্বার আকর্ষণে ছাদে উঠে পড়েন। ছাদে অজস্র ফাটল, আর সেই ফাটলে একেবারে যেন অরণ্যের সমাগম। কৃরুপক্ষের চাঁদের আলোয় চারিদিক অপরূপ মোহময় হয়ে উঠেছিল। সংকীর্ণ রাস্তার ওপারে ভগ্নস্তূপের জানালায় গল্পকথক এক রহস্যময় ছায়ামূর্তি দেখতে পাবেন। খানিকক্ষণ বাদে তাঁর মনে হবে সেটা চোখের ভুল। এরপর গল্পকথক খুব সাবধানে নীচে নেমে আসেন। দুই বন্ধুর পাশে কোনোরকমে একটুখানি জায়গা করে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন।
“খানিক বাদে মনে হবে, সবই বুঝি আপনার চোখের যম।” উক্তিটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। এখানে লেখর প্রকৃতপক্ষে কী বুঝিয়েছেন আলোচনা করো।
উত্তর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত পাঠ্য ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার গম থেকে আলোচ্য উত্তিটি গৃহীত হয়েছে। তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য মহানগরী কলকাতা থেকে তিনজন যুবক রওনা হয় ভিড়ে ঠাসাঠাসি বাসে, পড়ন্ত বেলায়। মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে ব্যাঘ্রসংকুল স্থানের অস্তিত্বের কথা ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে যায় প্রাচীন অট্টালিকার চাংসস্তূপে। সেই চাংসাবশেষের একটি অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরে। তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। রাত্রি গভীর হয় এবং তারপর সেই ধ্বংসাবশেষের ছাদে গিয়ে গল্পের নায়কের সামনে রহস্যময় ছায়ামূর্তির আগমন ঘটে। গল্পের নায়কের ভাববিহবলতা বর্ণনা করতে গিয়েই লেখক আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য তিনজন যুবক পাড়ি দেয় এক পড়ন্ত বিকালে জিনিসে মানুষে ঠাসাঠাসি বাসে চেপে মহানগর থেকে অনেক দূরের পথে। মহানগরী থেকে ত্রিশমাইল দূরে এক প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষে তাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয়। প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষের ছাদের অধিকাংশ জায়গাতে আলিসা ভেঙে ধুলিসাৎ হয়েছে। ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী ধ্বংসের কাজ এগিয়ে রেখেছে। কুয়পক্ষের ক্ষীণ চাঁদের আলোয় সমস্ত কেমন যেন অপরূপ মোহনায় বলে মনে হয়। গভীর নিশীথরাত্রে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির আবির্ভাবে অদ্ভুত একটা পরিবেশ রচিত হয়- মনে হয় সবই বুঝি চোখের ভ্রম। ধ্বংসপুরীর অতল নিদ্রা থেকে একটা স্বপ্নের বুদ্বুদ ক্ষণিকের জন্য জীবনের জগতে জেগে উঠে আবার মিলিয়ে গিয়েছে। মায়াবী আলোয় রহস্যময় পরিবেশে রহস্যময় ছায়ামূর্তির উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই চোখের ভ্রম বলে মনে হয়।
“মনে হবে এই ধ্বংসপুরীর অতল নিদ্রা থেকে একটি স্বপ্নের বুদবুদ ক্ষণিকের জন্য জীবনের জগতে ভেসে উঠে আবার মিলিয়ে গিয়েছে।” কার একথা মনে হবে? ‘এই ধ্বংসপুরী’ বলতে কোন্ জায়গার কথা বলা হয়েছে। উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন তা আলোচনা করো।
উত্তর বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ কাহিনিতে গল্পের নায়কের একথা মনে হবে।
■ আলোচ্য অংশে ‘এই ফাংসপুরী’ বলতে তেলেনাপোতা গ্রামের এক জরাজীর্ণ অট্টালিকার কথা বলা হয়েছে।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য মহানগরী কলকাতা থেকে তিনজন যুবক তেলেনাপোতা গ্রামের অভিমুখে যাত্রা করে। দু’ঘন্টা বাসযাত্রার পর আচমকা পথের মাঝে নেমে তাদের পথচলা শুরু হয়। জঙ্গলময় জনমানবহীন স্থান, পাখিরাও যেন সভয়ে সে জায়গা পরিত্যাগ করেছে, সূর্যাস্তের আগেই নেমে এসেছে ঘন অন্ধকার। লম্বা সাঁকো, কাদাজলের নালা, মশাদের তীক্ষ্ণ ঐকতানের মধ্যেই তাদের এগিয়ে চলতে হয়। খানিক বাদে ঘনায়মান অন্ধকারে পরস্পরের মুখও দেখা যায় না। অবশেষে জরাজীর্ণ অট্টালিকায় এসে উপস্থিত হয় আগন্তুকের দল, সেই ধ্বংসাবশেষেরই একটা বাসযোগ্য ঘরে তাদের স্থান হয়। ছাদে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ জায়গাতে আলিসা ভেঙে ধূলিসাৎ হয়েছে। ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী অট্টালিকা ধ্বংসের কাজ এগিয়ে দিয়েছে। কুয়পক্ষের ক্ষীণ চাঁদের আলোয় সবই অদ্ভুত মোহময় বলে মনে হয়। অদূরে সংকীর্ণ রাস্তার ওপারে ভগ্নস্তূপের এক জানালায় যে আলোর ক্ষীণ রেখা দেখা যায় সেই আলোর রেখা আড়াল ক’রে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির আবির্ভাব ঘটে। গভীর নিশীথরাত্রে বাতায়নবর্তিনীর কথা ভাবার চেস্টা করেও গল্পের নায়ক কিছু বুঝতে পারেন না। গল্পের নায়কের মনে হবে সবই বুঝি ভ্রম। বাতায়ন থেকে সেই ছায়া সরে যায় এবং আলোর ক্ষীণ রেখা মুছে যায়। নায়কের মনে হয় সেই ধধ্বংসপুরীর অতলনিদ্রা থেকে স্বপ্নের বুদবুদ জীবনের জগতে ভেসে উঠেই মিলিয়ে গেল। অর্থাৎ ঘুমন্ত রাজপুরীতে যেন ভালোবাসার স্পন্দন স্পন্দিত হল, স্বপ্নের একটা আবেশ সৃষ্টি হয়েই মিলিয়ে গেল।
“যখন জেগে উঠবেন তখন অবাক হয়ে দেখবেন, এই রাত্রির দেশেও সকাল হয়, পাখির কলরবে চারিদিক ভরে যায়।”-কে জেগে উঠে অবাক হয়ে এমন দৃশ্য দেখবেন? ‘এই রাত্রির দেশেও’ বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে? উক্তিটির বক্তব্যবিষয় গল্পানুসারে আলোচনা করো?
উত্তর প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটিতে গল্পের নায়ক জেগে উঠে অবাক হয়ে এমন দৃশ্য দেখবেন।
■ এই রাত্রির দেশেও’ বলতে আলোচ্য গল্পে উল্লিখিত তেলেনাপোতা গ্রামের কথা বলা হয়েছে।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কলকাতা থেকে তিন যুবক রওনা দিয়েছিল তেলেনাপোতা গ্রামের উদ্দেশে। দু’ঘন্টা বাস যাত্রার পর আচমকা পথের মাঝে নেমে পড়ে আগন্তুক দল। কোনো দিকে তাকিয়ে তারা জনমানব দেখতে পায় না। অন্ধকারময় জলাজকালে ভর্তি জায়গাটা তাদের কাছে এক বিরল পৃথিবী বলে মনে হয়। লম্বা সাঁকো, কাদাজলের নালা, মশাদের ঐকতান আর গভীর জঙ্গলময় পরিবেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই নেমে আসে ঘন অন্ধকার। সময় সেখানে একেবারে স্তব্ব স্রোতহীন। তিনজন যুবক এরপর পৌঁছে যায় জরাজীর্ণ প্রাচীন এক রাজপুরীতে। সেখানে পৌঁছে জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনো কুদ্ধটিকাময় স্মৃতিলোকে এসে যেন পৌঁছেছে। জরাজীর্ণ অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষের ঘরে ঢুকে তাদের মনে হয় তারা যেন বহুযুগ পরে মনুষ্যজাতির প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে পৌঁছেছে। অট্টালিকার ছাদে গিয়ে কুরুপক্ষের ক্ষীণ চাঁদের আলোয় সবকিছু কেমন যেন মোহময় মনে হয়। ঘরের আনাচে-কানাচে চামচিকার আনাগোনা, ভগ্নপ্রায় সিঁড়ি, ফাটলে ফাটলে দেখা যায় অরণ্যের শিকড়। রাত্রির অন্ধকার আরো ঘনীভূত হয়, মনে হয় এ যেন কালো আঁধার পুরী যেখানে সূর্যাস্ত আছে সূর্যোদয় নেই। পরদিন সকালে জেগে ওঠার পর তাই অবাক দৃষ্টিতে গল্পের নায়ক ও তার দুই বন্ধুর মনে হয় এমন দেশেও রাত্রিশেষে সকাল হয়, পাখিরা চেনা গলায় কিচিরমিচির করে, সূর্যের অমল আলোয় স্নিগ্ধ হয় পৃথিবী।
“আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না।”- এখানে ‘আসল উদ্দেশ্য’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে। সেই উদ্দেশ্য সাধনের সময়কার ঘটনাটি নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে ‘আসল উদ্দেশ্য’ বলতে গল্পকথকের মাছ ধরার বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।
■ মাছ ধরার উদ্দেশ্য সফল করার জন্য গল্পকথক পরদিন ষোড়শপচার আয়োজন করে শ্যাওলা ঢাকা ঘাটের একপাশে বসে পড়েন। পুকুরের সবুজ জলের মধ্যে বঁড়শি নামিয়ে দেন। একটা মাছরাঙা পাখি দেখা যাবে। গল্পকথককে শঙ্কিত করে একটা মোটা লম্বা সাপ ভাঙা খাটের ফাটল থেকে বেরিয়ে ধীরগতিতে পুকুর পার হয়ে অন্য পাড়ে গিয়ে উঠবে। দুটো ফড়িং পাল্লা দিয়ে পাতলা কাচের মতো মাথা নেড়ে ফাতনাটার উপরে বসার চেষ্টা করবে। মাঝে মাঝেই উদাস ঘুঘুর ডাক শোনা যাবে। হঠাৎ জলের শব্দে গল্পকথকের চমক ভাঙবে। জলে ঢেউ ওঠে, ফাতনা দুলতে থাকে মৃদুমন্দভাবে। গল্পকথক দেখতে পান একটি মেয়ে পিতলের ঝকঝকে কলশিতে পুকুরের পানা ঢেউ দিয়ে সরিয়ে জল ভরছিল। মেয়েটি সোজাসুজি গল্পকথকের দিকে তাকিয়েছিল, ফাতনা লক্ষ করেছিল এবং তারপর মুখ ফিরিয়ে কলশিটা কোমরে তুলে নিয়েছিল। কলশি নিয়ে চলে যেতে যেতে সেই মেয়েটি গল্পকথককে বলেছিল বসে না থেকে ছিপটায় টান দিতে। গল্পকথক বিহ্বল হয়ে ছিপে টান দিতে ভুলে যান। তারপর ডুবে যাওয়া ফাতনা ভেসে ওঠার পর তিনি দেখতে পান বঁড়শিতে আর টোপ নেই। মেয়েটি এরপর পুকুর ঘাট ছেড়ে চলে যায়। পুকুরঘাটের নির্জনতা আর ভাঙে না এরপর। একসময় হতাশ হয়েই গল্পকথক মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে উঠে পড়েছিল।
“রাত্রির মায়াবরণ সরে গিয়ে তার ধ্বংসমূর্তি এত কুৎসিত হয়ে উঠতে পারে আপনি ভাবতে পারেন নি।”-‘আপনি’ এবং ‘তার’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক এখানে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে ‘আপনি’ বলতে গল্পের নায়কের কথা বলা হয়েছে। এবং ‘তার’ বলতে তেলেনাপোতা গ্রামের জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে বসবাসকারী কুমারী যামিনীর কথা বলা হয়েছে।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য তিনজন যুবক মহানগরী কলকাতা থেকে তেলেনাপোতার পথে যাত্রা করেছিল। জনমানবহীন জলজঙ্গলাকীর্ণ সেই স্থানে সূর্যাস্তের আগের অন্ধকার নেমে আসে প্রকৃতিতে। সেই স্থান একেবারে জনমানবহীন, এমনকি পাখিরাও যেন সভয়ে সেই জায়গা ছেড়ে চলে যায়। লম্বা সাঁকো, কাদাজলের নালা, মশাদের তীক্ষ্ণ ঐকতান, বাথ তাড়ানোর ক্যানেস্তারা নিনাদ শুনতে শুনতে তারা পৌঁছে যায় জরাজীর্ণ প্রাচীন এক অট্টালিকায় যা পুরোপুরি এক প্রেতপুরী। গভীর নিশীথরাত্রে গল্পের নায়ক সেই অট্টালিকা থেকে দেখেছিল সংকীর্ণ রাস্তার ওপারে ভগ্নস্তূপের জানালায় এক রহস্যময় ছায়ামূর্তি। সেই ভগ্নস্তূপে ক্ষণিকের জন্য সেই ছায়ামূর্তি নায়কের মনে বিস্ময় উৎপাদন করেছিল। ধ্বংসপুরীর অতল নিদ্রা থেকে ক্ষণিকের জন্য যেন এক স্বপ্নের বুদবুদ ভেসে উঠেই মিলিয়ে যায়। কিন্তু দিনের বুঢ় বাস্তবের আলোয় ছায়ামূর্তির শ্রীহীন জীর্ণতা নায়ককে পীড়িত করে। রাত্রির মায়াময় পরিবেশে যা বিস্ময় উৎপাদন করেছিল তাই পীড়িত করল বাস্তবের আলোয়। স্বপ্নের অদ্ভুত ঘোর দূরীভূত হল বাস্তবের কঠিন আলোয় এসে।
“সেই থেকে বুড়ি এই অজগর-পুরীর ভেতরে বসে সেই আশায় দিন গুনছে।”-‘বুড়ি’ বলতে এখানে কার কথা বলা হয়েছে। ‘অজগর-পুরী’ বলতে কোন্ জায়গার কথা বলা হয়েছে। কেন কীসের আশায় বুড়িটি দিন গুনছে?
উত্তর আলোচ্য আংশে ‘বুড়ি’ বলতে বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামের জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে বসবাসকারী কুমারী যামিনীর বৃদ্ধা মায়ের কথা বলা হয়েছে।
■ আলোচ্য অংশে ‘অজগর-পুরী’ বলতে তেলেনাপোতা গ্রামের জরাজীর্ণ ভাঙা অট্টালিকার কথা বোঝানো হয়েছে।
■ তেলেনাপোতা নামের গ্রামে জরাজীর্ণ এক অট্টালিকায় একজন বৃদ্ধ বুকের মধ্যে এক বিশেষ আশা নিয়ে দিন গুনছে। নিরঞ্জন নামে তার দূর সম্পর্কের এক বোনপোর সঙ্গে ছেলেবেলায় তার মেয়ে যামিনীর সঙ্গে বিবাহ সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন। বছর চারেক আগেও সে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে এসে যামিনীকে বিয়ে করবে। সেই বৃদ্ধার হাত-পা পড়ে গিয়েছে, চোখ নেই তবু তিনি পণ করে বসে আছেন কিছুতেই মরবেন না। যামিনীকে পাত্রস্থ করা ছিল অন্ধ বৃদ্ধার একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। জরাজীর্ণ অট্টালিকার আলোবাতাসহীন একটি ঘরে প্রায় ঘরজোড়া একটা ভাঙা তস্তাপোশে ছেঁড়া কাথা জড়িত শীর্ণ কঙ্কালসার মূর্তির অন্ধ অসহায় মায়ের শেষ জীবনের একমাত্র আশা ও স্বপ্ন ছিল যামিনীকে সুপাত্রস্থ করা। সেই আশা নিয়েই তিনি দিন গুনছিলেন।
“না মাসিমা, আর পালাব না।” বক্তা কে? এবং ‘মাসিমা’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? উক্তিটির বক্তব্যবিষয় আলোচনা করো।
উত্তর বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বস্তা হলেন গল্পের নায়ক এবং ‘মাসিমা’ বলতে তেলেনাপোতা গ্রামের কুমারী যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের কথা বলা হয়েছে।
■ তেলেনাপোতা গ্রামের জীর্ণ অট্টালিকায় একজন অন্ধ বৃদ্ধা তার কন্যা যামিনীর জন্য বিবাহসম্বন্ধ স্থির করেছিল নিরঞ্জন নামের এক যুবকের সঙ্গে, যে আসলে তারই দূরসম্পর্কের বোনপো। বছর চারেক আগে সেই যুবক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সে বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে এসে যামিনীকে বিয়ে করবে। সেই থেকেই অসহায় অন্ধ বৃদ্ধা আশায় আশায় সেই অজগর-পুরীর ভিতরে বসে দিন গুনছে। তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য আগন্তুক তিনজন যুবকের মধ্যে যে নায়ক, সে নিরঞ্জন সেজে বৃদ্ধাকে আলোচ্য কথাগুলো বলেছিল। নিরঞ্জন পালিয়ে গেছে কিন্তু গল্পের নায়ক পালাতে চায় না, সে আবার ফিরে আসতে চায় তেলেনাপোতায়। যামিনীর অসহায় বৃদ্ধা মা নায়কের পদশব্দ শুনে ভেবেছিলেন। সেই নিরল্পনই আবার এসেছে। কিন্তু গল্পের নায়ক আবেগমর্মরিত কণ্ঠে বলেছিল “না মাসিমা, আর পালাব না।” রোম্যান্টিক নায়কের রোমান্সরসের অপূর্ব পরিচয় এখানে উজ্জ্বল হয়েছে।
“আমি জানতাম, তুই না এসে পারবি না বাবা। তাই তো এমন করে এই প্রেতপুরী পাহারা দিয়ে দিন গুনছি।”- ‘আমি’ এবং ‘বাবা’ বলতে এখানে কাদের বোঝানো হয়েছে। বত্তা কোন্ প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেছিল?
উত্তর আলোচ্য অংশে ‘আমি’ বলতে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামের জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে বসবাসকারী কুমারী যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের কথাই বলা হয়েছে এবং ‘বাবা’ বলতে তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে আসা গল্পের নায়কের কথা বোঝানো হয়েছে।
তেলেনাপোতার অজগর-পুরীতে অন্য অসহায় বৃদ্ধা তার মেয়ের জন্য দীর্ঘকাল নিরঞ্জন নামের যুবকের ফিরে আসার প্রত্যাশায় দিন গুনছিল। এমন সময় কলকাতা মহানগরী থেকে তিনজন যুবক তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে গিয়েছিল। গল্পের নায়কের মনে যামিনীর প্রতি ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়। গল্পের নায়কের পায়ের শব্দ শুনে সেই বৃদ্ধা জানতে চেয়েছিলেন নিরঞ্জন এসেছে কিনা এবং তারপরই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এবার তো আর এমন করে পালাবি না।” গল্পের নায়ক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আর সে পালাবে না। এরপরেই কথাপ্রসলো সেই বৃন্দা আলোচ্য কথাগুলি বলেন।
“যামিনীকে তুই নিবি তো বাবা। তোর শেষ কথা না পেলে আমি মরেও শান্তি পাব না।”-কে, কাকে কথাগুলি বলেছিলেন? বক্তা কখন এবং কেন কথাগুলি বলেছিলেন?
উত্তর বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা তেলেনাপোতা গ্রামের জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে বসবাসকারী কুমারী যামিনীর অসহায় অন্ধ বৃদ্ধা মা। বক্তা কলকাতা থেকে তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে আসা গল্পের নায়ককে আলোচ্য কথাগুলি বলেছিলেন।
■ আলোচ্য গল্পের নায়ক তেলেনাপোতার ভগ্ন জরাজীর্ণ অট্টালিকায় অন্ধকার ভাঙা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখেছিলেন একটা ভাঙা তত্ত্বাপোষে যামিনী নামের যুবতীর অন্ধ বৃদ্ধা মা কঙ্কালসার দেহ নিয়ে শুয়ে আছেন। বৃদ্ধা তখন ভেবেছিলেন যামিনীর বাগদত্তা সেই নিরঞ্জন এসেছে মনে হয়। নিরঞ্জনকে উদ্দেশ করে কয়েকটি কথা বলার পর বৃদ্ধা গভীর আবেগে বলেছিলেন-“আমি জানতাম, তুই না এসে পারবি না বাবা। তাই তো এমন করে এই প্রেতপুরী পাহারা দিয়ে দিন গুনছি।” গল্পের নায়ক যামিনীকে বিয়ে করার ব্যাপারে অন্ধ অসহায় বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এরপর বৃদ্ধা গল্পের নায়ককে আরও ভরসা দিয়ে জানান যামিনীকে নিয়ে তিনি সুখী হবেন এবং সেই প্রসঙ্গে যামিনীর বিশেষ প্রশংসাও করেন। বৃদ্ধার কথা শুনে গল্পের নায়ক সেই বৃদ্ধার দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহাস পাননি নিজের চোখের জল গোপন রাখতে পারবেন না জেনে। বৃদ্ধা তখনই ছোটো একটি নিশ্বাস ফেলে আলোচ্য কথাগুলো বলেছিলেন।
তেলেনাপোতার জরাজীর্ণ অট্টালিকার অন্ধ অসহায় বৃদ্ধার একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল কন্যা যামিনীকে উপযুক্ত জায়গায় বিয়ে দেওয়া। কন্যার বিয়ের ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়ার কারণেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন। কন্যার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের কারণেই বৃদ্ধার এই আকুতি।
“ম্যালেরিয়াটি কোথা থেকে বাগালেন?”-কে, কাকে কথাগুলি বলেছিলেন। বক্তা কখন কথাগুলি বলেছিলেন?
উত্তর বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বস্তা হলেন কলকাতার একজন ডাক্তারবাবু যিনি তেলেনাপোতা গ্রাম থেকে ফিরে আসা গল্পের নায়কের চিকিৎসায় উপস্থিত হয়েছিলেন। বস্তা তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে যাওয়া গল্পের নায়ককে আলোচ্য কথাগুলো বলেছিলেন।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কলকাতা থেকে তিন যুবক সুদূরবর্তী প্রত্যন্ত তেলেনাপোতা গ্রামে উপস্থিত হয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসে মহানগরীর জনাকীর্ণ আলোকজ্জ্বল রাজপথে এসে পৌঁছানোর পর তেলেনাপোতার স্মৃতি সুদুর অথচ অন্তরঙ্গ তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এরপর বাধা-বিড়ম্বিত কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর গল্পের নায়ক যখন আবার মশা-উপদ্রুত তেলেনাপোতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন তখন হঠাৎই মাথার যন্ত্রণা ও কম্প দেওয়া শীত প্রবলভাবেই তার অনুভূত হয়। তখন থার্মোমিটারের পারা জানিয়ে দেয় একশো পাঁচ ডিগ্রি জ্বর। মাথার যন্ত্রণায় ও কাঁপুনি দেওয়া শীতে গল্পের নায়ককে লেপ-তোশক মুড়ি দিয়ে শুতে হবে। তখনই ডান্তারবাবু এসে নায়ককে লক্ষ ক’রে আলোচ্য মন্তব্যটি করেন।
“মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই।”-কার একথা মনে হবে। তার এই কথা কেন মনে হবে?
উত্তর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথকের একথা মনে হবে।
■ গল্পকথক তাঁর দুই বন্ধুসহ তেলেনাপোতা গ্রামে গিয়েছিলেন এক রাতের জন্য। তেলেনাপোতার জরাজীর্ণ অট্টালিকার একটি অবসবাসযোগ্য ঘরে কোনোরকমে গল্পকথক রাত্রি কাটিয়েছিলেন। সেই গ্রামে যামিনী নামের একটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল এবং তিনি যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহানগর কলকাতায় ফিরে আসেন। মহানগরের। জনবহ্বল আলোকোজ্জ্বল রাজপথে পৌঁছে কথকের মনে তেলেনাপোতা সুদূর এবং অতি অন্তরঙ্গা একটি তারার মতোর। উজ্জ্বল থাকে। এরপর কয়েকটা দিন কেটে যায়। গল্পকথক তেলেনাপোতার ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঠিক তখনই তিনি প্রবল ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন এবং জ্বরের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বহুদিন পর দুর্বল শরীর বাইরের আলো হাওয়ার কাঁপা কাঁপা পায়ে এসে বসার পর গল্পকথক অনুভব করবেন নিজেরই অজ্ঞাতসারে দেহ ও মনের অনেক ধোয়ামোছা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। তেলেনাপোতার স্মৃতি তখন অস্তাচলে যাওয়া তারার মতো ঝাপসা মনে হবে। তখনই গল্পকথাকের মনে হবে তেলেনাপোতা বলে সত্যিই কোথাও কিছু নেই। আর যামিনী নামে সেই মেয়েটিকে মনে হবে তাঁর কোনো দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশা মাত্র। ভয়ংকর ম্যালেরিয়ার কারণেই তেলেনাপোতা গল্পকথকের কাছে ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে আবার চিরন্তন রাত্রির অতল গভীরে ডুবে যাবে।
“একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে।” তেলেনাপোতা কী? উক্তিটির বক্তব্যবিষয় নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। আলোচ্য গল্পে তেলেনাপোতা একটি গ্রাম। যদিও বাস্তব অর্থে তেলেনাপোতা নামে কোনো গ্রাম নেই তবে বাংলাদেশের সমস্ত গ্রামই তেলেনাপোতার মতো।
■ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য মহানগরীর তিন যুবক তেলেনাপোতা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে এবং বেশ কিছুক্ষণ পর জঙ্গলময় এক জনমানবহীন স্থানে পৌঁছায়। অবশেষে তাদের সস্থান হয় নির্জন জরাজীর্ণ এক অট্রালিকায়। সেখানেই গল্পের নায়ক ও তার দুই বন্ধু রাত্রিযাপন করে। রাত্রির গভীর নিস্তত্থতায় নায়কের রোমান্স পাঠককেও আনন্দদান করে। প্রেতপুরীর নির্জন মোহময় পরিবেশে নায়ক যামিনী নামের কিশোরীর মনোলোকে আশা আনন্দের তরঙ্গ তোলে। নায়ক যামিনীর অসহায় অন্ধ বৃন্দা মাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যামিনীকে বিয়ে করার। রোমান্সপ্রবণ পরিবেশে নায়কের রোম্যান্টিক মনোভাবের প্রতিফলন লক্ষ করার মতো। দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় একজন বৃদ্ধা নিরঞ্জনের ফিরে আসার আশায় দিন গোনে। কিন্তু সেই নিরঞ্জন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে যামিনীকে বিয়ে করার। সে আর কখনোই ফিরে আসবে না। যামিনীর মধ্যে প্রতীক্ষার অপার দুঃখ বারে বারে বেজে ওঠে।
গল্পের নায়ক মহানগরীর তিনজন আগন্তুকের একজন। সে দরদি মনের আবেগে ও রোমান্টিকতায় যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ফিরতে পারেনি তেলেনাপোতায়। যামিনীর জীবনে সেও শুধু অপেক্ষার, প্রতীক্ষার কারণ হয়েই থেকেছে। তেলেনাপোতা বলে সত্যি কিছু নেই, সমগ্র বাংলাদেশের সব গ্রামই তেলেনাপোতা। যেখানে জনজীবন গতিহীন, সময় স্ত্য স্রোতহীন, যেখানে চরম দারিদ্র্য আর অসহায় করুণ চোখের চাহনি নিয়েই বেঁচে থাকে শতশত যামিনী ও তার বৃদ্ধা অন্ধ অসহায় মা। ধ্বংসপুরীর ছায়ার মতো যামিনীও যেন কোনো দুর্বল মুহূর্তের কুয়াশামাত্র। রোমান্সরসের প্রগাঢ়তায় গল্পের নায়ক যে স্বপ্ন বিস্তার করেছেন যামিনীর মনোলোকে তা বাস্তবের বুঢ় পরিবেশে বিবর্ণ হয়ে যায়। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার পর তেলেনাপোতা হয়ে গেল স্মৃতি মাত্র। একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে আবার তা চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যায়।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি কার লেখা এবং মূল প্রন্থের নাম কী? তেলেনাপোতা আবিষ্কার একটি কবিত্বরসপূর্ণ রোম্যান্টিক গল্প-আলোচনা করো।
উত্তর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা। মূলগ্রন্থের নাম ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’।
■ আলোচ্য গল্পটি কবিত্বরসপূর্ণ ভাবমূলক গল্প হয়ে উঠেছে লেখকের রোমান্সরস পরিবেশনে। কলকাতা মহানগরীর তিন যুবক তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য বেরিয়ে পড়ে। দুঘন্টা বাদ যাত্রার পর তারা আচমকা জনমানবহীন জঙ্গলময় নির্জন স্থানে পৌঁছায়। তারা অবশেষে আশ্রয় নেয় গ্রামের জরাজীর্ণ ধ্বংসপুরীস্বরূপ অট্টালিকায়। সেখানে বাস করে অসহায় অন্য এক বৃদ্ধা ও তার কুমারী কন্যা যামিনী। গল্পের নায়ক বাদে অন্য দুজনের একজন নিদ্রাবিলাসী ও অন্যজন পানরসিক। প্রেতপুরীসম অট্টালিকায় রাত্রিযাপন করে তিনজন যুবক। গল্পের নায়ক গভীর নিশীথ রাতে যামিনীর শান্ত রূপের মধ্যে অনুরাগের ছোঁয়া পায়। যামিনীও আগে একবার নিরঞ্জন নামে এক যুবকের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিল। এবারও নায়কের অস্তিত্বের মধ্যে রোমান্সের স্বাদ পায়। নায়ক যামিনীর মাকে কথা দেয় “না মাসিমা আমি আর পালাব না।” যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরদিন কলকাতায় ফিরে আসে গল্পের নায়ক। তারপর প্রচণ্ড ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নায়কের স্মৃতিতে ঝাপসা হয়ে যায় তেলেনাপোতার স্মৃতি।
ভাবগত বাঞ্ছনার দিক থেকে গল্পটির দুটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে তেলেনাপোতা গ্রামে উপস্থিত হয়ে রাত্রির বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং অজগর-পুরীতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া। দ্বিতীয় পর্যায়ে কঠোর বাস্তবের ছবি প্রতিফলিত হয় যখন নায়ক ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেন এবং তারপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আবার মহানগরীর জনস্রোতে ভেসে যান।
প্রেমেন্দ্র মিত্র নিজে কবি বলেই কাব্যিক কুশলতায় রোমান্স রসের অপরূপ চিত্র অঙ্কন করেছেন। জনমানবহীন ঘন অন্ধকার পথ, জীর্ণ ধ্বংসপুরী নায়ককে রোমান্বিত করেছে, ভগ্নস্তূপের ছায়ামূর্তি এনেছে বিহ্বলতা। নায়ক-নায়িকা উভয়ের মনেই প্রেমানুভূতি তৈরি হয়েছে। তেলেনাপোতার এক রোমাঞ্চকর মায়াবরণ আগাগোড়াই এক রোমান্টিক ভাবরসে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি গল্পের কাঠামোয় নিখুঁত রোমান্টিক কবিতা বলে মনে হয়।
“তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে যামিনী কে? তার চরিত্রটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে যামিনী হল গল্পের প্রধান চরিত্র।
■ সে তেলেনাপোতা গ্রামের এক দরিদ্র বিধবা-মায়ের অসহায় কন্যা।
যামিনী গ্রামের পরিবেশে বড়ো হওয়া যুবতি। গল্পকথক যখন পুকুরে বঁড়শি ফেলে মাছ ধরছিলেন তখন সে পিতলের ঝকঝকে বলশিতে পুকুরের পানা সরিয়ে জল ভরছিল। সে গল্পকথকের দিকে সোজাসুজি তাকিয়েছিল, ফাতনা লক্ষ করছিল। তার চোখে ছিল অপার কৌতূহল কিন্তু গতিবিধি খুবই সাবলীল, লজ্জামেদুর, কোনো আড়ষ্টতা নেই। আড়ষ্টতাহীন, জড়তামুক্ত যুবতি যামিনী।
যামিনীর মুখে শান্ত করুণ গাম্ভীর্য। তাকে দেখে মনে হয় জীবনের সুদীর্ঘ নির্মম পথ সে পার হয়ে এসেছে। তার ক্ষীণ দীর্ঘ অপুষ্ট শরীর। দরিদ্রতাকে সম্বল করেই জীবনপথের সওয়ারি সে। কলশি নিয়ে ফিরে যেতে যেতে যামিনী গল্পকথককে উদ্দেশ করে বলেছিল-“বসে আছেন কেন? টান দিন।” যামিনীর শান্ত মধুর গম্ভীর কন্ঠস্বরে লেখকের একেবারেই মনে হয়নি কোনো অপরিচিত ব্যক্তি কথা বলছে। যামিনী বাস্তববাদী কঠিন নির্মম জীবন থেকে জীবনশৈলীর সহজ পাঠ গ্রহণ করেছে। তাই জীবনে চলার পথে সে এত সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ।
গল্পকথকদের পরদিন দুপুরের আহারের ব্যবস্থা হয়েছিল যামিনীদের বাড়িতেই। আয়োজন ছিল যৎসামান্য, যামিনী নিজে হাতেই পরিবেশন করেছিল। অনাবশ্যক লজ্জা তার ছিল না, সেবাগুণে সে উজ্জ্বলই ছিল। পরিত্যন্ত জনহীন লোকালয়ের সমস্ত মৌন বেদনা তার মুখে ছায়া ফেলেছিল। সেই বেদনার কারণ নিরঞ্জন নামের এক যুবক তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিয়ে করেনি, তেলেনাপোতায় ফিরে আসেনি। বৃদ্ধা মাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই নিরঞ্জনের প্রত্যাখ্যান পর্বটি নিজের মনের গভীরে অতি সন্তর্পণে গোপন রেখেছিল। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় তার বিচারবোধ ছিল অত্যন্ত গভীর। অন্ধ মায়ের দায়িত্ব সে পালন করেছে সাবলীল ছন্দে। তাই বলা যায়, সেবাপরায়ণা, দায়িত্ববোধ ও বিচারবোধে সে সত্যিই অনন্যা।
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা