নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ইতিহাস সেট ৬

Burdwan Raj Collegiate School

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ইতিহাস সেট ৬

1 (i) ফ্রান্সে ক্যাপিটেশন ছিল – (d) উৎপাদন কর
(ii) রোবসপিয়র ছিলেন – (a) জেকোবিন।
(ii) জেকোবিন দলের সদস্য ছিলেন – (b) টিপু সুলতান।
(iv) ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসন শুরু হয় (b) ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে।
(v) সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র ছিল – (d) ইটালিতে।
(vi) মহাদেশীয় অবরোধের পালটা ছিল – (b) অর্ডারস ইন-কাউন্সিল। 
(vii) ন্যায্য অধিকার নীতির ফলে ফ্রান্সে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – (d) বুরবোঁ রাজবংশ।
(viii) ফ্রান্সে ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – (b) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে।
(ix) হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন (c) লুই কসুথ ।
(x) শিল্পবিপ্লবের ফলে তৈরি হওয়া শ্রেণি দুটি ছিল (b) পুঁজিপতি-শ্রমিক।
(xi) রাশিয়ার পার্লামেন্টের নাম – (a) ডুমা ।
(xii) ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’-এর মাধ্যমে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ হয়েছিল – (b) রাশিয়ায়।
(xiii) ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন’ বলা হত (b) ভারতকে।
(xiv) প্যারিস সম্মেলনে মোট চুক্তি হয়েছিল – (b) পাঁচটি। 
(xv) চোদ্দো দফা নীতি ঘোষণা করেন। (c) উড্রো উইলসন।
(xvi) ‘দাস ক্যাপিটাল’ লিখেছিলেন – (d) কার্ল মার্কস।
(xvii) ‘বলশেভিক’ কথার অর্থ হল (a) সংখ্যাগরিষ্ঠ
(xviii) শেষ রুশ জার ছিলেন – (d) দ্বিতীয় নিকোলাস ।
(xix) ‘Flying Shuttle বা ‘উড়ন্ত মাকু’ আবিষ্কার করেন (a) জন কে।
(xx) ‘বিশ্বের কারখানা’ বলা হয় – (a) ইংল্যান্ডকে।

বিভাগ-খ

2.A (i) করভি ছিল ফ্রান্সে প্রচলিত একপ্রকার কর, যাতে বাধ্যতামূলকভাবে বিনা পারিশ্রমিকে বেগার খাটতে হত।
(ii) কার্লসবাড ডিক্রি জারি করেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিখ।
(iii) ‘ইয়ং ইটালি’ বা ‘নব্য ইটালি’ দল প্রতিষ্ঠা করেন জোসেফ ম্যাৎসিনি।
(iv) ‘রিসর্জিমেন্টো’ শব্দের অর্থ নবজাগরণ বা পুনরুত্থান।
B. (i) জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা নিয়েছিলেন গ্যারিবল্ডি। – মিথ্যা। 
(ii) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে মহামন্দা দেখা দেয়। – সত্য। 
(iii) বিসমার্ক তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। – সত্য।
(iv) রাশিয়ার কৃষকশ্রেণি পরিচিতি ছিল ‘কুলাক’ নামে । মিথ্যা। 
C. ক-স্তম্ভের সঙ্গে খ-স্তম্ভের মিলকরণ :
(i) কার্বোনারি (b) গুপ্ত সমিতি
(ii) কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো (d) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ
(iii)  জন হে (a) উন্মুক্ত দ্বার নীতি
(iv) তিন সম্রাটের চুক্তি (c) বিসমার্ক
E (i) ব্যাখ্যা (b) দার্শনিকরা ফরাসি সমাজ-অর্থনীতি প্রভৃতির সমালোচনা করেছিলেন।
(ii) ব্যাখ্যা (a) ফরাসি অর্থনীতি ছিল সামন্ততান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক।
(iii) ব্যাখ্যা – (a) ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করার জন্য। 
(iv) ব্যাখ্যা – (a) নভেম্বর বিপ্লবের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল বলশেভিক দল এবং বিপ্লবে তারাই জয়লাভ করে।

বিভাগ-গ

3 (1) Balurghat High School -এর 6. (xiii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) Bankura Zilla School -এর 3. (v)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 3. (ii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্রে -এর 3. (iii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(v) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 3. (iv)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(vi) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ভার্সাই সন্ধির (১৯১৯ খ্রি) শর্তানুযায়ী জার্মানি ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের রাষ্ট্রপতি হারবার্ট ক্লার্ক হুভার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এক ঘোষণার দ্বারা এক বছরের জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব থেকে জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিকে অব্যাহতি দেন। এটি হুভার মোরাটোরিয়াম’ বা ‘হুভার স্থগিতকরণ’ নামে পরিচিত।
(vii) প্রাশিয়ার সম্রাট প্রথম উইলিয়ম যখন ‘এমস’ নামক স্বাস্থ্যনিবাসে অবস্থান করছিলেন সেই সময় ফরাসি রাষ্ট্রদূত কাউন্ট বেনেদিতি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রথম উইলিয়ম এই সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে বিসমার্ককে যে টেলিগ্রাম প্রেরণ করেন তা ইতিহাসে ‘এমস টেলিগ্রাম’ নামে খ্যাত।
(viii) স্বাধীনতা লাভের পর গ্রিসের লক্ষ্য ছিল বলকান অঞ্চলে গ্রিক ভাষাভাষী বিভিন্ন অঞ্চলগুলিকে নিজের অধীনে আনা। সার্বিয়া, মোলদাভিয়া, ওয়ালাচিয়া অর্ধ-স্বাধীন রাজ্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। বলকান অঞ্চলে অধিকাংশ অ-তুর্কি জনগণই ছিল শ্লাভ জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। রাশিয়াও ছিল শ্লাভ জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। সুতরাং রাশিয়ার সঙ্গে এদের এক ধরনের ঐক্যবোধ গড়ে ওঠে, ফলে রাশিয়ার সাহায্যে প্যান-শ্লাভ আন্দোলন এবং মোলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়ার নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদ বলকান অঞ্চলের সমস্যাকে জটিলতর করে তোলে।
(ix) রাশিয়া ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের মোলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া নামক স্থান দুটি দখল করে নিলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া মিলিতভাবে ওই স্থান দুটি ত্যাগ করতে রাশিয়াকে অনুরোধ করে। রাশিয়া সেই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যা ‘ক্রিমিয়ার যুদ্ধ’ নামে খ্যাত (১৮৫৪ খ্রি)।
(x) চিনা ভূখণ্ডে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ স্থাপন রোধ করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জন হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মুক্তদ্বার নীতি’ ঘোষণা করেন। এর দ্বারা চিনের অখণ্ডতা রক্ষা এবং চিনা ভূখণ্ডে যে-কোনো দেশের বণিক বা বণিকগোষ্ঠীকে অবাধে বাণিজ্য করার অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে চিনদেশে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখাই ছিল ‘মুক্তদ্বার নীতি’ ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এই নীতিকে ‘অদৃশ্য সাম্রাজ্যবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
(xi) আফ্রিকা মহাদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ বলা হয়। আফ্রিকা মহাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে কাছে হলেও এর অন্তর্ভাগ ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত ইউরোপবাসীর কাছে ছিল অজ্ঞাত ও অনাবিষ্কৃত। আফ্রিকার শ্বাপদসংকুল গহন অরণ্য, দুর্গম পর্বত ও খরস্রোতা নদীসমূহ, ঊষর মরুভূমি, অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু ও আদিম অধিবাসীদের প্রতিকূলতার কারণে মহাদেশটি ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ নামে পরিচিত।
(xii) আফ্রিকার মরক্কোয় ফরাসিদের প্রভাব ছিল। মরক্কোয় জার্মান স্বার্থ সুরক্ষিত করবার জন্য কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম মরক্কোর অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং মুসলিম স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা ‘মরক্কো সংকট’ নামে পরিচিত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে আলজেসিরাস সম্মেলনে মরক্কো সংকটের সাময়িক সমাধান হয়।
(xiii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 3. (ix) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xiv) ইসক্রা’ কথার অর্থ ‘স্ফুলিঙ্গ’। নির্বাসনকালে সুইটজারল্যান্ড থেকে লেনিন এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে ইসক্রার মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে বলশেভিক দল গড়ে ওঠে।
(xv) ইটালিতে ফ্যাসিস্ট দলের সদস্যরা কালো পোশাক পরে আধা-সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ করত। এই কারণে ফ্যাসিস্টরা ‘কালো কোর্তা’ নামে পরিচিত হয়।

বিভাগ-ঘ

4 উপবিভাগ : A
(i) প্রাক্-বিপ্লব যুগে ফ্রান্সে প্রচলিত কর ব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক। ফরাসি সমাজের প্রথম দুই সম্প্রদায় সমস্ত রকমের কর থেকে অব্যাহতি পেত; অন্যদিকে সাধারণ কৃষক সম্প্রদায়কে প্রায় ৯৬ ভাগ অর্থাৎ সমস্ত করের বোঝা বহন করতে হত। এ কারণে অ্যাডাম স্মিথ ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন।
কর ব্যবস্থা : ফ্রান্সে প্রচলিত কর ব্যবস্থাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – @ প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ কর।
প্রত্যক্ষ, কর : ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ কর ছিল তিনটি • টেইলি বা সম্পত্তি কর, ও ভ্যাঁতিয়েম বা আয়কর, ও ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর। এই করগুলি বহন করত তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ।
পরোক্ষ কর : এগুলি ছাড়াও তৃতীয় সম্প্রদায়কে যেসব পরোক্ষ কর বহন করতে হত সেগুলি হল – গ্যাবেল বা লবণকর, টাইথ বা ধর্মকর, এডস্ বা মদ ও তামাক জাতীয় পণ্যের ওপর কর, করভি বা বাধ্যতামূলক শ্রমকর, বানালিতে বা শস্য ভাঙানোর জন্য প্রদেয় কর, জীবজন্তু ও মাছ শিকারের অধিকারের জন্য প্রদেয় কর ‘দ্রোয়া দ্য কলবিয়ে এ দ্য শাস’, পথ, সেতু, খেয়াঘাটের ওপর নির্ধারিত কর ‘পেয়াজ’, ম্যানরের ভূমিচাষের জন্য সামন্তপ্রভুকে কৃষকরা দিত বার্ষিক কর, উৎপাদিত শস্যের ওপর, মৃত্যু বা জমি বিক্রি সংক্রান্ত কর; এগুলি হল যথাক্রমে সঁস, শঁপার, লঁদ-এ-ভঁত প্রভৃতি। এগুলি সবই ছিল বাধ্যতামূলক কর।
এই সমস্ত কর প্রদান করে তৃতীয় সম্প্রদায় বিশেষ করে কৃষক সমাজের কাছে যা অবশিষ্ট থাকত, তাতে তাদের সারা বছরের ভরণপোষণ হত না। শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত ও দিনমজুরদের, সাঁকুলোৎ বা চালচুলোহীন দরিদ্রশ্রেণির কষ্টের সীমা ছিল না। ঐতিহাসিক লারুস তাই বলেছেন, “অষ্টাদশ শতকে ফরাসি কৃষকরা ছিল সর্বাপেক্ষা শোষিত’।
(ii) বাস্তিল দুর্গের পতন : ফ্রান্সে বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজাদের স্বৈরাচারী শাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে নিরপরাধ ফরাসিদের বন্দি করে রাখা হত। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই প্যারিসের উত্তেজিত জনতা কারারক্ষীদের অধিকর্তা দ্যলুনেকে হত্যা করে বাস্তিল দুর্গ দখল করে। 
বাস্তিল দুর্গ পতনের কারণ  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি : ফ্রান্সে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম থেকেই সমস্ত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যের অভাব, বেকারত্ব বৃদ্ধি, সরকারের বৈষম্যমূলক করনীতির মাধ্যমে জনগণের মনে সরকারের কাজকর্মের প্রতি ভীষণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। 
রাজার পদক্ষেপ : ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই পদচ্যুত করে দেশত্যাগের নির্দেশ দিলে এবং ভার্সাই ও প্যারিসে সৈন্য মোতায়েন করলে ফ্রান্সের জনগণ রাজার প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ও বুর্জোয়ার কাছে নতি স্বীকার : ষোড়শ লুই বুর্জোয়াদের প্রবল চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশন ও মাথাপিছু ভোটের দাবি মেনে নিলে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের মনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এমতাবস্থায় ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই প্রায় ৭-৮ হাজার জনতা, বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এবং বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করে বন্দিদের মুক্ত করে দেয় এবং দুর্গের অস্ত্রশস্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিস লুঠ করে নিয়ে যায়।
বাস্তিল দুর্গ পতনের গুরুত্ব : স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ও মধ্যযুগীয় স্বৈরতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও তার পতন ছিল রাজশক্তির বিরুদ্ধে সফল প্রতিবাদ। ঐতিহাসিক গুডউইন তাঁর ‘ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশন’ গ্রন্থে বলেন বাস্তিলের পতনের মতো আর কোনো বিপ্লবের ঘটনায় এত বহুমুখী সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল না। এই দিনটিকে ফরাসিরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। বাস্তিল দুর্গের ধ্বংসের পর রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয় আইনসভা। ফ্রান্সে পৌরবিপ্লবের সূচনা ঘটলে, বিপ্লবীরা প্যারিসের পৌরশাসনের ভার নিজেদের হাতে তুলে নেয় এবং প্যারি কমিউন নামে এক অস্থায়ী পৌরপরিষদ গড়ে তোলে। প্যারিস নগরীর শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গঠিত হয় ‘ন্যাশনাল গার্ড’ নামে এক জাতীয় রক্ষীবাহিনী। ফলে সাধারণ মানুষের শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
উপবিভাগ : B
(iii) প্রথম কনসাল হিসেবে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেও নেপোলিয়ন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, বিপ্লবের ফলে ফরাসিদের মনে যে উচ্চাশার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে না পারলে খুব বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই তিনি নিজেকে ‘বিপ্লবের সন্তান’ রূপে তুলে ধরেন। তিনি স্বাধীনতা ছাড়া বিপ্লবের অপর দুটি আদর্শ ‘সাম্য’ ও ‘মৈত্রী’-কে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
নেপোলিয়নের রাজপদে উত্থান : নেপোলিয়ন নিজে ছিলেন সাম্যের প্রতীক। অতি সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী না হয়েও ফ্রান্সের সম্রাট পদে আসীন হন জনগণের ভোটের দ্বারা। বিপ্লবের সাম্যবাদী আদর্শই জনগণের দ্বারা তাঁর উত্থানকে সম্ভবপর করেছিল।
বিপ্লবকালীন ফ্রান্সে সংবিধান সভা কর্তৃক প্রচলিত নিয়মগুলি বহাল রাখা : সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট সামন্তপ্রথা, ভূমিদাসপ্রথা, সামন্তকর, করভি বা বেগার খাটা, টাইথ বা ধর্মকর ইত্যাদির বিলোপসাধন করেছিল। নেপোলিয়ন এইসব বিপ্লবী নিয়মগুলিকে বহাল রেখে বিপ্লবকে সম্মান জানিয়েছিলেন।
আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা : নেপোলিয়ন ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আইনগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রণয়ন করেন। এর ফলে ফ্রান্সে আইনের চোখে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সব বিপ্লবের স্থায়িত্ব প্রদান : বিপ্লবী ফ্রান্সকে রক্ষা করার জন্য নেপোলিয়ন একাধিকবার প্রতিক্রিয়াশীল বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ফ্রান্স ও বিপ্লব উভয়কেই রক্ষা করেছিলেন।
ইটালি, জার্মানি-সহ ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রেও নেপোলিয়ন ইউরোপে বিপ্লবের আদর্শ প্রসার : ফ্রান্সের পাশাপাশি বিপ্লরের আদর্শের প্রসার ঘটান। তাঁর শাসনাধীনে ওইসব দেশে সামন্তপ্রথার অবসান হয় এবং আইনের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর শাসনকালে আইনের সাম্য, সামন্ততান্ত্রিক শোষণের অবসান, আইনবিধি প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে বিপ্লবের ধারক ও বাহকরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লবের মধ্য দিয়েই তাঁর উত্থান ঘটেছিল। কাজেই তিনি ছিলেন ‘বিপ্লবের সন্তান’।
(iv) ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে নেপোলিয়নের কাছে পরাজিত হয়ে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ফ্রান্সের সঙ্গে টিলসিটের সন্ধি’ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন ।
গুরুত্ব : টিলসিটের সন্ধির ফলে ফ্রান্সবিরোধী তৃতীয় শক্তিজোট ভেঙে যায়। নেপোলিয়ন রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রাখতে সক্ষম হন। পূর্ব সীমান্তে নেপোলিয়নের আর কোনো ভয় না থাকায় তিনি সমস্ত শক্তি পশ্চিম প্রান্তে নিয়োগ করতে পেরেছিলেন। নেপোলিয়নের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। টিলসিটের সন্ধিতে রাশিয়ার বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে প্রাশিয়াকে তার রাজ্যের অর্ধাংশ হারাতে হয়। প্রাশিয়ার দুটি অংশে দুটি নতুন রাজ্য গঠিত হয়, যথা ওয়েস্টফেলিয়া ও গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ।
টিলসিটের সন্ধি হল নেপোলিয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতার অভিব্যক্তি। এই সন্ধি স্বাক্ষরের ফলে প্রায় সমগ্র ইউরোপ তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। তিনি ইউরোপের ভাগ্যবিধাতা হয়ে ওঠেন এবং ফলস্বরূপ পেনিনসুলার ও রুশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এর পরিণামে তাঁর পতন ঘটে। তাই ঐতিহাসিক রাইকার (Rikar) যথার্থই বলেছেন, “টিলসিটের সন্ধি, একদিক থেকে নেপোলিয়নের সৌভাগ্যের অবসান সূচনা করে’। (Tilsit was in a sense, the turning point of his fortunes.)
উপবিভাগ : C
(v) ভিয়েনা সম্মেলনের নীতিসমূহ : ভিয়েনা সম্মেলনে তিনটি মূল নীতি গৃহীত হয়েছিল। এগুলি হল- ন্যায্য অধিকার নীতি, ক্ষতিপূরণ নীতি এবং ও শক্তিসাম্য নীতি।
ন্যায্য অধিকার নীতি : এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি বিপ্লবের পূর্বেকার স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। এই নীতি অনুসারে ফ্রান্সে বুরবোঁ (Bourbon) রাজবংশ, হল্যান্ডে অরেঞ্জ (Orange) রাজবংশ, স্পেন, সিসিলি, নেপলস-এ বুরবোঁ বংশ এবং অস্ট্রিয়ায় হ্যাপসবার্গ বংশ, স্যাভয়, জেনোয়া, পিডমন্ট ও সার্ডিনিয়ায় স্যাভয় বংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
ক্ষতিপূরণ নীতি অনুসারে ক্ষতিপূরণ নীতি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলিকে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের অংশ থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই নীতি অনুসারে ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইডেন প্রভৃতি রাষ্ট্র লাভবান হয়েছিল। অস্ট্রিয়া : অস্ট্রিয়া উত্তর ইটালিতে পায় লম্বার্ডি, ভেনেসিয়া, টাইরল প্রভৃতি প্রদেশ। মধ্য ইটালিতে পার্মা, মডেনা ও টাসকানির ওপর অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ বংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়া : রাশিয়া পায় পোল্যান্ডের বৃহদংশ, ফিনল্যান্ড ও তুরস্কের বেসারাবিয়া। @ প্রাশিয়া : প্রাশিয়া পায় স্যাক্সনির উত্তরাংশ, পোজেন, থর্ন, ডানজিগ, পশ্চিম পোমেরানিয়া ও রাইন নদীর বাম তীরবর্তী অঞ্চল। ইংল্যান্ড : ইংল্যান্ড ঔপনিবেশিক স্বার্থে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেয় ভূমধ্যসাগরের মাল্টা দ্বীপ, মরিসাস, হেলিগোল্যান্ড, সিংহল প্রভৃতি।
শক্তিসাম্য নীতি : এই নীতিটি শক্তির ক্ষেত্রে সমতা আনার জন্য রচিত হলেও এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সের সামরিক শক্তি ভেঙে তাকে দুর্বল করে দেওয়া, যাতে ফ্রান্স ভবিষ্যতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে। ফ্রান্সকে বিপ্লব পূর্ববর্তী সীমানায় ফিরিয়ে আনা হয়। ফ্রান্সের সেনাবাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। বছরের জন্য ফ্রান্সে মিত্রপক্ষের সেনা মোতায়েন রাখার ব্যবস্থা করা হয়। মিত্রপক্ষের এই সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার ফ্রান্সকে বহন করতে হয়। মিত্রপক্ষকে ৭০ কোটি ফ্রাঙ্ক ক্ষতিপূরণ দিতে ফ্রান্সকে বাধ্য করা হয়।
ফ্রান্সের চারপাশে শক্তিশালী রাষ্ট্রবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। ফ্রান্সের পূর্বসীমান্তে রাইন অঞ্চলকে প্রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বে লুক্সেমবুর্গ ও বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ফ্রান্সের দক্ষিণে স্যাভয় ও জেনোয়াকে সার্ডিনিয়ার সঙ্গে এবং ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে সুইটজারল্যান্ডের সঙ্গে কয়েকটি অঞ্চল যুক্ত করা হয়। সুইটজারল্যান্ডকে নিরপেক্ষ দেশ’ বলে ঘোষণা করা হয়।
ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত এই তিনটি নীতিকে বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে প্রাক্-ফরাসি বিপ্লব অবস্থাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল।
(vi) ইউরোপের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ফ্রান্সে সংঘটিত ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লব। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ফরাসি রাজা দশম চার্লসের বিরুদ্ধে উদারপন্থী নেতা থিয়ার্সের নেতৃত্বে ফরাসিবাসী এই বিদ্রোহ করেছিল।
বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ : দশম চার্লসের মন্ত্রীদের অত্যাচারে যখন সমগ্র ফ্রান্সে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তখন রাজা দশম চার্লস ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের সনদ বাতিল করে দেন এবং ২৬ জুলাই পলিগন্যাকের মাধ্যমে নিম্নলিখিত চারটি প্রতিক্রিয়াশীল আইন জারি করেন- প্রতিনিধি সভাকে ভেঙে দেওয়া হয়, ভোটদাতাদের সংখ্যা হ্রাস করা হয়, ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয় এবং জাতীয় সভাকে নতুন করে নির্বাচনের আদেশ দেওয়া হয়।
এই অর্ডিন্যান্স জারির সঙ্গে সঙ্গে থিয়ার্সের নেতৃত্বে প্যারিসের জনসাধারণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত (১৮৩০ খ্রি-এর ৩০ জুলাই) দশম চার্লস সিংহাসনচ্যুত হন এবং অর্লিয়েন্স বংশীয় লুই ফিলিপ রাজপদে অধিষ্ঠিত হন। 
উপবিভাগ : D
(vii) ইটালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির ভূমিকা :
‘কার্বোনারি’ আন্দোলন ফলপ্রসূ না হওয়ায় ইটালির ঐক্য আন্দোলনের নেতৃত্বের দায়িত্ব চলে যায় জোসেফ ম্যাৎসিনি (১৮০৫-৭২ খ্রিস্টাব্দ)-এর হাতে। তিনিই ছিলেন ইটালির ঐক্য আন্দোলনের প্রাণপুরুষ।
ম্যাৎসিনির আদর্শ : ইটালির ঐক্য আন্দোলনকে গুপ্ত সমিতি, গুপ্ত হত্যার মতো ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে বাইরে এনে এক বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ দেন ম্যাৎসিনি।
যুবশক্তিতে আস্থা : ম্যাৎসিনি ইটালিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইটালির যুবশক্তির ওপরই আস্থা রাখেন।
বিদেশি সাহায্যের প্রতি অনাস্থা : দেশকে পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য কোনো বিদেশি সাহায্য নয়, জাতীয়তাবাদে উদ্‌বুদ্ধ দেশের আত্মনির্ভরশীল যুবকরাই এই কাজে সক্ষম বলে তিনি মনে করতেন।
জনগণের অংশগ্রহণ : দেশের জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো আন্দোলন সম্ভব নয় – জনগণের দ্বারাই বিপ্লব সংগঠিত হবে এরূপ ধারণা তিনি পোষণ করতেন।
প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন : স্বাধীন ইটালিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, রাজতন্ত্র নয় – এটাই ছিল ম্যাৎসিনির স্বপ্ন।
ইয়ং ইটালি প্রতিষ্ঠা : নিজের আদর্শকে সামনে রেখে ম্যাৎসিনি একটি যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তার নাম ‘ইয়ং ইটালি’ বা ‘নব্য ইটালি’। চল্লিশ বছর পর্যন্ত যে-কোনো ব্যক্তি এর সদস্য হতে পারত। শিক্ষা, প্রচার, আত্মত্যাগ, চরিত্রনিষ্ঠার দ্বারা জাতীয়তাবোধ সঞ্চার করা এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল।
(viii) Bantra MSPC High School-এর 4. (iv)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
উপবিভাগ : E
(ix) মানবসভ্যতার ইতিহাসে যেসব বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের সেরাজেভো হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন বলেছেন যে, ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে যে ঘটনাবলির সূচনা হয়, তার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
কারণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলিকে আমরা দু-ভাগে ভাগ করে আলোচনা করতে পারি প্রত্যক্ষ কারণ ও পরোক্ষ কারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড।
প্রত্যক্ষ কারণ ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’ : সেরাজেভো হল বসনিয়ার রাজধানী। অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দ ও তাঁর পত্নী সোফিয়া সেরাজেভো শহর পরিভ্রমণে এসেছিলেন। এখানে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন শ্লাভ বিপ্লবী সংগঠন ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’ (Black Hand)-এর সদস্য গাব্রিলো প্রিন্সিপ (Gavrilo Princip) যুবরাজ ও যুবরানিকে হত্যা করে। এই ঘটনা ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত।
এই ঘটনার জন্য অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং এক চরমপত্র দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার শর্তপূরণ করতে বলে। কিন্তু সার্বিয়ার পক্ষে সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
এতে অস্ট্রিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সার্বিয়ার পক্ষে রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ার পক্ষে জার্মানি, তুরস্ক, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশ যোগদান করলে উক্ত যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়।
(x) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্রে -এর 4. (vii)-এর উত্তরটি দ্যাখো ।
উপবিভাগ : F
(xi) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্রে -এর 4. (ix)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xii) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় চোদ্দো দফা নীতির ভূমিকা : মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন আমেরিকাকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে যুদ্ধে যোগদান করলেও তিনি বারবার শান্তি স্থাপনের ওপর জোর দেন। বিশ্বে দীর্ঘকালীন শান্তির ভিত্তি হিসেবে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা’ নীতি ঘোষণা করেন।
উইলসনের আদর্শ : উড্রো উইলসন পৃথিবীতে অশান্তির কারণ হিসেবে গোপন কূটনীতি, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে পদানত করে রাখা ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রকে দায়ী বলে মনে করতেন। তাঁর মতে, বিশ্বশান্তির জন্য প্রত্যেকটি জাতির স্বাধীনতা জরুরি। বিশ্ববাসীর সামনে তিনি কয়েকটি বিকল্প পথের সন্ধান দেন। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমস্যা ও বিবাদের সমাধান করতে হবে। প্রত্যেক পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিতে হবে। প্রত্যেকটি স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তন করতে হবে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা হবে। কোনো ঔপনিবেশিক শক্তির ঔপনিবেশিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সময় সেখানকার জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হবে। অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণ কমাতে হবে।
উইলসনের আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে এবং পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। তাঁর চোদ্দো দফা নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই আন্তর্জাতিক বিরোধ-মীমাংসা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যে উইলসনের আদর্শবাদ বিশ্বকে এক নতুন মূল্যবোধের সন্ধান দিয়েছিল।

বিভাগ-ঙ

5 (i) বাংলায় একটি প্রবাদ আছে – ‘অসির চেয়ে মসি বড়ো’। অর্থাৎ অস্ত্র বা তরবারির অপেক্ষা কলম বা বুদ্ধির জোর অনেক বেশি। যে-কোনো বিপ্লবে মানসিক প্রস্তুতির দরকার হয়। ফ্রান্সের রাজাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের ছিল না। ফরাসি দার্শনিকরা তাঁদের লেখনী (কলম) দ্বারা জনসাধারণের এই বিপ্লবের মানসিকতা তৈরি করেছিলেন। তাঁরা রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বা সাহস জুগিয়েছিলেন।
মন্তেস্কু : মন্তেস্কু ছিলেন একজন ফরাসি দার্শনিক। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক অর্থাৎ তাঁর মতে রাজা নয় জনগণই মূল ক্ষমতার উৎস। তাঁর বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ হল (a) দ্য পার্সিয়ান লেটার্স, (b) দ্য স্পিরিট অফ লজ। ‘দ্য পার্সিয়ান লেটার্স’ গ্রন্থে তিনি সমাজের ও রাজতন্ত্রের বিভিন্ন ভুলত্রুটি তুলে ধরেছিলেন। অপরদিকে ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থে রাজার ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থে তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ তিনি শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে পৃথক করার কথা বলেছিলেন।
ভলতেয়ার : ফরাসি বিপ্লবের একজন রসিক দার্শনিক ছিলেন ভলতেয়ার। তিনি ব্যঙ্গ করে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা মানুষের কাছে তুলে ধরতেন। তাঁর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল চার্চ বা গির্জা। তাঁর মতে গির্জা হল সমাজের দুর্নীতির একটি প্রধান কারণ। যাজক, বিশপরা গির্জাতে বিলাসী জীবনযাপন করে। অথচ ফ্রান্সে বহু মানুষ নিরন্ন অবস্থায় দিন কাটায়। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘ওই জঘন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দাও’। তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ হল – (a) কাঁদিদ, (b) লেতর ফিলজফিক। এই দুটি গ্রন্থে তিনি ফরাসি সমাজের বহু দোষ-ত্রুটি তুলে ধরেছিলেন।
রুশো : ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক ছিলেন রুশো। তাঁকে ‘ফরাসি বিপ্লবের জনক’ বলা হয়। তাঁর দুটি গ্রন্থ হল (a) অসাম্যের সূত্রপাত, (b) সামাজিক চুক্তি (Social Contract)। অসাম্যের সূত্রপাত গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন · মানুষ সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। কিন্তু স্বার্থপর সমাজে সে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। সামাজিক চুক্তি মতবাদে তিনি বলেছেন – জনগণই সমস্ত ক্ষমতার উৎস। জনগণের চুক্তি অনুসারে রাজা সিংহাসনে বসে। রাজা অন্যায় করলে জনগণ তাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দিতে পারে।
বিশ্বকোশ রচয়িতা : আলোচ্য সময়ে দুজন ব্যক্তি (দেনিস দিদেরো এবং দ্য এলেমবার্ট) বিশ্বের বিভিন্ন যুক্তিবাদী লেখা সংগ্রহ করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন যা বিশ্বকোশ (Encyclopedia) নামে পরিচিত। এই বিশ্বকোশের যুক্তিবাদী লেখা পড়ে ফ্রান্সের মানুষ সমাজব্যবস্থার দোষ-ত্রুটি বুঝতে পারেন।
ফিজিওক্র্যাটস : আলোচ্য সময়ে ফিজিওক্র্যাটস নামে ফ্রান্সে নতুন অর্থনীতিবিদদের আবির্ভাব ঘটে। তারা অর্থনীতি ও ব্যাবসাবাণিজ্যের সম্পর্কে নতুন কথা বলেন। তাঁরা একচেটিয়া ব্যাবসার বিরোধিতা করেন। তাঁরা লেসেজফেয়ার তত্ত্বে অর্থাৎ অবাধ বাণিজ্যনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এই নীতির মূল প্রবক্তা ছিলেন কুয়েসনে।
মূল্যায়ন : ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আছে এ বিষয়ে দার্শনিকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। রাইকার, তেইন-এর মতে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আছে। দার্শনিকদের প্রভাব না থাকলে ফরাসি বিপ্লবই হত না। তেইন বলেছেন, ‘ফ্রান্স দার্শনিকদের বিষ পান করেছে।
অপরদিকে লেফেভর, মুনিয়ের বলেছেন ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের কোনো অবদান নেই। কারণ সাধারণ মানুষ তাদের লেখা পড়তে পারত না। কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারে একথা বলা যায় যে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।
(ii) Baita MN High School (HS)-এর 5. (ii) -এর প্রথম অংশের-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii)
(iii) ভূমিকা : শিল্পবিপ্লব বলতে বোঝায় শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি বা আমূল পরিবর্তন। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭৬০-১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয়েছিল।
ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার কারণ : ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব হওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল। — 
অনুকূল পরিবেশ : ইংল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সেখানকার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার নিরিখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা, বায়ুশক্তি ব্যবহারের সুযোগসহ কয়লা, লোহা প্রভৃতি খনিজ দ্রব্যের প্রাচুর্য সেখানে শিল্পবিকাশের সহায়ক হয়েছিল।
কাঁচামালের জোগান : অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে কৃষিবিপ্লবের ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় প্রচুর কাঁচামাল উৎপাদিত হতে থাকে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, ভারত ও আমেরিকা থেকে সস্তায় নিয়মিত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।
সুলভ শ্রমিক : অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার বৃদ্ধির দরুন শ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাছাড়া কারখানায় কাজ করার জন্য প্রচুর মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসতে থাকে। সেই কারণে সেই সময় ইংল্যান্ডে খুব সহজে এবং কম মজুরিতে শ্রমিকের জোগান ছিল, যা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল।
মূলধনের প্রাচুর্য : ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা এই সময় নানা দেশে ব্যাবসাবাণিজ্য করে এবং ভারত, আমেরিকা ইত্যাদি দেশ থেকে নানাভাবে অর্থ শোষণ করে ইংল্যান্ডের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল, যার ফলে ইংল্যান্ডে শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের কোনো অভাব হয়নি। সর্বোপরি, ইংল্যান্ডের জাতীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড’ (Bank of England) শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর ঋণ দিয়ে শিল্পবিপ্লবে সাহায্য করেছিল।
বিশ্বব্যাপী বাজার : ইংল্যান্ড নিজের দেশে বিক্রির পর তার উদ্‌বৃত্ত শিল্পদ্রব্য বিভিন্ন উপনিবেশের বাজারগুলিতে বিক্রির সুযোগ পেয়েছিল। এই উপনিবেশিগুলি পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত শিল্পদ্রব্যের একচেটিয়া বাজারে পরিণত হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : ইংল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান, শক্তিশালী নৌবহর ইত্যাদি কারণও সেদেশে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লবে সাহায্য করেছিল। ইংল্যান্ডের সুবিস্তৃত সমুদ্র উপকূল, উন্নত নৌশক্তি ও বন্দর প্রভৃতির ফলে শিল্প উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিভিন্ন দেশ থেকে জলপথে সহজেই ইংল্যান্ডে আনা হত। আবার শিল্পোৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বোঝাই ব্রিটিশ জাহাজগুলি অনায়াসে সব দেশে যাতায়াত করতে পারত। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে খাল ও নদীপথে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা ছিল যথেষ্ট উন্নত।
বাণিজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি : সপ্তদশ শতকের মধ্যেই ইংল্যান্ড কৃষিনির্ভর রাষ্ট্র থেকে বাণিজ্যনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ফলে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তারা শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পায় ।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার ক্ষেত্রে শিল্প সহায়ক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের আবিষ্কার ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পিনিং জেনি, উড়ন্ত মাকু ওয়াটার ফ্রেম, মিউল, পাওয়ার লুম, বাষ্পীয় ইঞ্জিন, নিরাপত্তা বাতি, ব্লাস্ট ফার্নেস প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে বস্ত্রশিল্পের উন্নতির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থারও অগ্রগতি ঘটে।
রাজনৈতিক স্থিরতা : অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক স্থিরতা আসে, যা ইংল্যান্ডে শিল্প বিকাশে সহায়তা করে। সর্বোপরি ব্রিটিশ সরকার দেশে শিল্পের প্রসারে বণিক ও শিল্পপতিদের নানাভাবে সহায়তা করে।
উপসংহার : শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান ইংল্যান্ডে ছিল বলে সেদেশে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটেছিল। সুতরাং, সার্বিকভাবে বলা যায় যে, শিল্পসহায়ক বিভিন্ন পরিস্থিতিই ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছিল।

Leave a Comment