নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় বাংলা সেট ১৪

Siliguri Boys’ High School (HS)

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় বাংলা সেট ১৪

১.১ চন্দ্রনাথকে তুলনা করা হয়েছে – (খ) কালপুরুষ নক্ষত্রের সঙ্গে।
১.২ রাধারাণীদের সম্পত্তি ছিল – (ক) প্রায় দশ লক্ষ টাকার। 
১.৩ “বৃদ্ধ থমকে দাঁড়ালেন।” এখানে ‘বৃদ্ধ’ হলেন (ঘ) শোভনের বাবা ।
১.৪ ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কবি জীবন পানে ডাকতে বলেছেন (গ) মৃত্যুকে।
১.৫ “দেবতারে মোরা (ক) আত্মীয় জানি”।
১.৬ “তিনি আমেরিকায় আমার বিশেষ উপকারী বন্ধু ছিলেন।” এখানে ‘তিনি’ হলেন (ঘ) মিসেস বুল।
১.৭ “অবশেষে কারসিয়ং স্টেশনে উপস্থিত হইলাম,” কারসিয়ং-এর উচ্চতা হল – (গ) ৪৮৬৪ ফিট।
১.৮ “আমাদের প্রভুর দেখি খুব বিলম্ব হচ্ছে।”— ‘প্রভু’ হলেন (ঘ) রাজ শ্যালক ।
১.৯ ‘মহম্মদ শা নামে এক প্রতিবেশীর করুণা হলো’- (গ) বুড়ো-বুড়ির জন্য।
১.১০ মহর্ষি কণ্ব তীর্থ থেকে ফিরে এসে আয়োজন করেন। (খ) শকুন্তলাকে পতিগৃহে পাঠানোর।
১.১১ জেরেমি সন্ডার্সের স্ত্রীর নাম হল – (খ) ডরথি। 
১.১২ কারিনহল আগে ছিল – (ক) একটি হান্টিং লজ।
১.১৩ তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি হল – (খ) ড়, ঢ়।
১.১৪ অতসী > তিসি এক্ষেত্রে ধ্বনি পরিবর্তনের যে সূত্র প্রযোজ্য হয়েছে – (গ) আদিস্বরলোপ ।
১.১৫ ‘পঙ্কজ’ শব্দটি হল – (ঘ) যোগরূঢ় শব্দ।
১.১৬ ইনি রাজবিদ্রোহী’ – ‘ইনি’ হল – (ক) নির্দেশক সর্বনাম।
১.১৭ ‘মা শিশুকে চাঁদ দেখায়’ – রেখাঙ্কিত ক্রিয়াটি হল (খ) প্রযোজক ক্রিয়া।
১.১৮ মায়ের সঙ্গে ছেলেটাও কাঁদছে। – রেখাঙ্কিত পদটি – (গ) পদান্বয়ী অব্যয়।
২.১ প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হয়েও ইলিয়াসের জীবনে সুখ, শান্তি ছিল না। কিন্তু তারা যখন অর্থহীন হয়ে যায়, তখনই তারা প্রকৃত সুখের সন্ধান পায় প্রভুর সেবা আর ঈশ্বরের চিন্তা করার মাধ্যমে। ইলিয়াস বুঝেছে মানুষ মোহাসক্ত হয়ে সম্পত্তি হারিয়ে কাঁদে, কিন্তু ঈশ্বর সাধনাই মুক্তি লাভের একমাত্র পথ। এই প্রকৃত সত্যটিকেই মোল্লা জ্ঞানের কথা বলেছে।
.২.২ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘দাম’ গল্পের কথকের মাস্টারমশাইকে নিয়ে লেখা গল্পের মূল কথাটি ছিল অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না। 
২.৩ অতীতের রূপ অন্ধকার কারণ সে আর আলোভরা বর্তমানে ফিরতে পারে না।
২.৪ চণ্ডীর আদেশ পেয়ে বীর হনুমান মঠ, অট্টালিকা ভেঙে খানখান করেছিলেন।
২.৫ কেশবতী কন্যার চুলের চুমা হিজলে, কাঁঠালে, জামে অবিরত ঝরে পড়ে। অর্থাৎ রূপসী বাংলার নীল সন্ধ্যার মায়াময় আবেশ বঙ্গপ্রকৃতির সমগ্র সত্তাকে আবিষ্ট করে।
২.৬ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে হরিমন্ত্রের আবেশে বঙ্গসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে, বাঙালির হৃদয়ে অমৃত মন্থন করতে অর্থাৎ শুভবোধের জাগরণ ঘটাতে নিমাই কায়ারূপ ধারণ করেছেন। 
২.৭ আলোচ্য অংশে সৈয়দ মুজতবা আলী চেষ্টা বলতে বহু হিন্দি সাহিত্যিকের হিন্দি ভাষাকে আরবি, ফার্সি ও ইংরেজি শব্দের প্রভাবমুক্ত করার প্রচেষ্টাকে বুঝিয়েছেন। ২.৮ মিস মুলারের মঠাধ্যক্ষাসুলভ সংকল্পটি যে দুটি কারণে সফল হবে না, তা হল – (ক) তাঁর রুক্ষ মেজাজ এবং (খ) তাঁর অদ্ভুত অস্থিরচিত্ততা।
২.৯ ভুটিয়ানিরা শ্রমশীলা, কার্যপ্রিয়, সাহসী ও সত্যবাদী। 
২.১০ ধীবর নিজের পেশাকে সম্মান জানিয়ে বলেছিল মানুষ যে ‘বৃত্তি নিয়ে জন্মায়, তা নিন্দনীয় হলেও পরিত্যাগ করা উচিত নয়।
২.১১ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশটি বাংলা ভাষায় তরজমা করেছেন সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।
২.১২ সর্বরোগনাশক আশ্চর্য ওষুধ শঙ্কু কোথায় পেলেন এই প্রশ্নের মুখোমুখি তাঁকে বহুবার হতে হয়েছিল আর তিনি বারবার একই মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন যে বাবা মারা যাওয়ার আগে তাঁকে এই ওষুধ দিয়ে গিয়েছিলেন।
২.১৩ আর্গাসের পুরো নাম হল দ্যেমিনগো বার্তেলেমে সারমিয়েতো ।
২.১৪ উপসর্গ ও অনুসার্গর মাধ্য পার্থক্য :
উপসর্গ ধাতু বা শব্দের আগে বসে, কখনোই পরে বসে না।
দু-একটি ক্ষেত্র বাদে অনুসর্গ সাধারণত বিশেষ্য বা সর্বনামের পরে বসে।
২.১৫ Rampurhat High School-এর ৩. ৭-এর দ্বিতীয় অংশ-এর উত্তরটি দেখুন।
২.১৬ তদ্ভব শব্দ : তদ্ভব = তৎ + ভব। তৎ = সংস্কৃত, ভব = জাত বা উৎপন্ন। যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দ পালি-প্রাকৃত-অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে এসে বাংলা ভাষায় নতুন রূপ পেয়েছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলে।
২.১৭ বাক্যালংকার অব্যয় : যা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তা অলংকার।
বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যে অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে আলংকারিক বা বাক্যালংকার অব্যয় বলে। লক্ষ রাখার বিষয় এরা কিন্তু বাক্যে না থাকলেও বাক্যের অর্থ বদল হয় না। কিন্তু থাকার জন্য বাক্যটি সুন্দর ও শোভন হয়। যেমন—আর না, যে, তো, বটে, যেমত ইত্যাদি। বাক্যে প্রয়োগ : যেমত যোগিনী পারা।
২.১৮ দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার মুখ্য ও গৌণ— এই দুটি কর্মই উপস্থিত থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—মাস্টারমশাই ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
৩.১ Chakdah Purbachal Vidyapith (HS)-এর ৩.২-এর অথবা-এর উত্তরটি দেখুন।
৩.২ আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের নামচরিত্র চন্দ্রনাথের মুখাবয়রের কথা বলা হয়েছে।
মোটা নাক, বড়ো বড়ো চোখ, চওড়া কপাল আর কপালের শিরা ত্রিশূলচিহ্নের মতো প্রকট—এইসব নিয়ে গঠিত কিশোর চন্দ্রনাথের অসাধারণ মুখমণ্ডল। সুস্থ সবল দীর্ঘ দেহ। দৃষ্টি নির্ভীক। মনে সামান্য চঞ্চলতা জাগলেই তার অদ্ভুত মোটা নাকের প্রান্ত স্ফীত হয়ে ওঠে। সামান্য উত্তেজনাতেই কপালের মধ্যস্থলে শিরা ফুলে উঠে ত্রিশূলচিহ্নের আকার নেয়।
৪.১ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় নটেগাছ হল সময়ের প্রতীক। যা মানবসভ্যতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া আলোচ্য চরণটিতে প্রকাশিত হয়েছে এক আশ্চর্য সত্য। কবি এ কবিতায় আবহমান কাল ধরে মানুষের পল্লিবাংলায় ফিরে আসার গল্পের কথা বলেছেন। রূপকথার গল্প শেষ হলে তবে নটেগাছটি মুড়িয়ে যায়। আলোচ্য কবিতায় আবহমান কাল ধরে মানুষের ঘরে ফেরার যে গল্প তিনি শোনান তা ফুরোনোর নয় বলেই নটেগাছটি না মুড়িয়ে বুড়িয়ে ওঠে।
৪.২ ‘মানুষের ঠাকুরালি’-র অর্থ মানবদেহে দেবলীলার মহিমা। বাঙালি ঘরের সন্তান গৌরাঙ্গ, রামকৃষ্ণ প্রমুখকে আমরা অবতাররূপে মান্য করি। তাঁরা রক্ত-মাংসের মানুষ হয়েও কর্মগুণে দেবত্ব অর্জন করেছেন। আবার বাঙালির ভক্তি-বিশ্বাসে দেবতা কখনও তাদের সন্তান কখনও সহচর হয়েছেন। সাধারণ মানুষের মতোই ঐশ্বর্যময় দেবতা জীবন অতিবাহিত করেছেন মানুষের সংস্পর্শে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর বাঙালির মহিমা প্রচারক ‘আমরা’ কবিতায় বলেছেন আমাদের কুটিরেই ঈশ্বর স্বয়ং মানুষরূপে আজীবন মানবধর্ম পালন করেছেন।
৫.১ ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন— লেখিকা বেগম রোকেয়া স্বয়ং।
লেখিকা বেগম রোকেয়া ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করায়। তিনি মানুষ বলেই প্রকৃতির অগাধ বৈচিত্র্য আর অপরূপ সৌন্দর্য প্রাণ-মন-মস্তিষ্ক দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন। একদিকে অতলান্ত সমুদ্র, অন্যদিকে উদার পর্বতমালা, সৌন্দর্যময় প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যে তাঁর দর্শনপিপাসা শতগুণ বেড়ে যায়। এই সৌন্দর্য আস্বাদনকালে লেখিকার মন, প্রাণ সমস্বরে বলে ওঠে— ঈশ্বর প্রশংসার যোগ্য। তিনিই ধন্য।’
৫.২ ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী প্রাচীন সব ভাষাকেই আত্মনির্ভরশীল বলেছেন।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র-এর ১০.১-এর দ্বিতীয় অংশ-এর উত্তরটি দেখুন।
৬.১ মহাকবি কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’নাটকের সংক্ষিপ্ত ও অনূদিত নাট্যাংশ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ থেকে গৃহীত উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হল নগর-রক্ষায় নিযুক্ত প্রথম রক্ষী সূচক।
মাছের পেট থেকে রাজার নামাঙ্কিত, রত্নখচিত, বহুমূল্য একটি আংটি পেয়ে সাধারণ ধীবর বিক্রির চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেই সময় নগর-রক্ষায় নিযুক্ত রাজ শ্যালক ও দুই রক্ষী তাকে ধরে এবং বন্দি করে নিয়ে আসে রাজধানীতে। রাজ-শ্যালক ধীবরের আংটি প্রাপ্তির ঘটনা রাজাকে জানালে, প্রমাণ হয় আংটি পাওয়ার ব্যাপারে ধীবর যা বলেছে, তা সত্য। রাজা ধীবরকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং তার সততার জন্য আংটির সমমূল্যের পারিতোষিক প্রদান করেন। ধীবর রাজার এই দানকে, তাঁর অনুগ্রহ বলে স্বীকার করলে, ঈর্ষান্বিত সূচক উপরোক্ত মন্তব্য করেছিল। ধীবরের মুক্তির এবং পুরস্কৃত হওয়ার কথা সূচক মেনে নিতে পারেনি। তাই ধীবরের কথার সূত্রে সে তার মনের ভিতরে থাকা ঈর্ষা উক্ত উক্তিতে প্রকাশ করেছে।
৬.২ Bankura Zilla School -এর ৫.২-এর উত্তরটি দেখুন।
৭.১ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা ব্ল্যাকশার্ট এরিখ ফ্রোম।
এরিখের এক মাস হল এক রোগ দেখা দিয়েছে যার নাম এপিলেপসি অর্থাৎ বাংলায় যাকে বলে মৃগী রোগ। এই রোগ আচমকা আক্রমণ করে। আর তার ফলে মানুষ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও তার এই রোগ সারছে না কারণ এটার চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ। কাজের সময় তার এরকম রোগ দেখা দিলে তার আর চাকরি থাকবে না এই দুশ্চিন্তায় তার ঘুম হচ্ছে না ।
৭.২ সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে প্রহ্লাদের সাহসিকতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শঙ্কু আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। ” সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে প্রোফেসর
শঙ্কু লক্ষ করেছেন কম বুদ্ধির প্রহ্লাদ অনেক সময় না বুঝে সাহসের পরিচয় দিয়ে ফেলেছে। একবার ল্যাবরেটরিতে একটা টিকটিকি শঙ্কুর বাইকর্নিক অ্যাসিডের শিশিটার ওপর পড়ে সেটাকে উলটে দেয়। অ্যাসিডটা গড়িয়ে প্যারাডক্সাইট পাউডারের স্তূপটার দিকে এগিয়ে চলে। দুটোর পারস্পরিক সংযোগে যে ভীষণ বিস্ফোরণ হবে তা ভেবে যখন শঙ্কুর হাত-পা অবশ হয়ে আসে, তখন প্রহ্লাদ ঘরে ঢুকে হাসি মুখে কিচ্ছু না বুঝে হাতের গামছা দিয়ে অ্যাসিডটা মুছে ফেলে। পাঁচ সেকেন্ডের জন্যে বড়ো বিস্ফোরণের হাত থেকে বেঁচে যান প্রোফেসর শঙ্কু।
৮.১ ইতিহাস ও বাস্তব সচেতন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা ‘খেয়া’ কবিতায় মানবসভ্যতার সমস্ত প্রবাহধারার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে তথাকথিত ইতিহাসের কঠোর সমালোচনা করেছেন। নির্জন নদীতটে উদাসী কবির একাকী অনুভবে উঠে এসেছে ইতিহাসের সীমাবদ্ধতা, দ্বন্দ্ব-বিক্ষোভে ভরা খণ্ড ইতিহাস।
সভ্যতার বিবর্তনের নানা পর্যায়ে উত্থান-পতনের বন্ধুর পথ ধরে এগিয়ে চলা মানবের ইতিহাসে কবি দেখেছেন—
‘পৃথিবীতে কত দ্বন্দু, কত সর্বনাশ, নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস’
একদিকে অতীত ঘটনারাজির উন্মাদনা-উন্মত্ততা, অন্যদিকে নিস্পৃহ, নির্মোহ জীবনের স্বাভাবিক চলন—এই দ্বিতীয় পথ ধরেই এগিয়ে চলেছে প্রকৃত মানবসভ্যতা। হিংসা-দ্বেষ-রাগ-রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস যে মানবতার পথে বারবার ‘সর্বনাশ’ ডেকে এনেছে তা কবিহৃদয়কে নিদারুণভাবে পীড়িত করেছে। ইতিহাসের রাজশক্তির দম্ভকে হাস্যকর, অর্থহীন বলে মনে হয়েছে কবির।
ভাবনাটি যথাযথ, কেন-না অতীতচারী কবি ইতিহাসের তথ্য, তত্ত্ব, ঘটনাধারায় শুধু মানবসভ্যতার উত্থান-পতনের তরঙ্গমালাকে অবলোকন করেছেন। সেখানে দেখেছেন কালে কালে যে জীবন উপেক্ষিত সেই সাধারণ নিস্তরঙ্গ জীবনের হাত ধরেই মানবসভ্যতার গতি বহমান। দূর খেয়াঘাটের নির্জনতায় একাকী কবি মনশ্চক্ষে তা লক্ষ করেছেন এবং বলেছেন—
“সভ্যতার নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধা— উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!”
কিন্তু সাধারণের জীবনযাপনে, তাদের কর্ম-উদ্দীপনায়, জীবনের অনন্ত প্রেরণায় মানবসভ্যতার যে ভিত্তিভূমি তৈরি হয়েছে; তা শাশ্বত, চিরন্তন। তাই নদীতটের গ্রাম দুখানি ইতিহাস উদাসীন থেকে নিভৃতে জীবনের পূজায় যাবতীয় উপাচার সাজিয়ে রেখেছে— নদীতট, খেয়াতরি, যাত্রীদল, নদীস্রোত আসলে সভ্যতার তিলোত্তমা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করেছে। সুতরাং সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কিত কবির ভাবনাটি সঠিক।
৮.২ কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি রচিত হয় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। তখন পরাধীন ভারতবর্ষে চলছে অসহযোগ আন্দোলন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন জেলে। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘বাংলার কথা’ প্রকাশের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন স্ত্রী বাসন্তী দেবী। সামাজিক বিপ্লব, রাজনৈতিক অস্থিরতা বরাবর নজরুলের সচেতন কবি মনে তরঙ্গ তুলেছে। অসহযোগ আন্দোলন নজরুলের মনে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল তা তিনি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছেন ‘বাংলার কথা’ পত্রিকায় দেশবন্ধু জায়া তাঁকে লেখার অনুরোধ করলে। বিদ্রোহী কবি আবারও বিপ্লবের মন্ত্রে পরাধীন ভারতবাসীকে উজ্জীবিত করতে লিখে ফেলেছেন ‘ভাঙার গান’।
— কবি বিপ্লবীদের ‘তরুণ ঈশান’ সম্বোধন করে প্রলয় বিষাণ বাজিয়ে, ধ্বংস নিশান উড়িয়ে পরাধীন প্রাচ্যের প্রাচীরকে বিনষ্ট করবার আহ্বান জানিয়েছেন। বিপ্লবীদের গাজনের বাজনা বাজানোর কথা বলেছেন, ‘পাগলা ভোলা’ সম্বোধন করে গারদগুলোকে হ্যাঁচকা টানে ধ্বংস করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কবি বলতে চেয়েছেন বিপ্লবীরা যেন ‘হৈদরী হাঁক’ দিয়ে ‘দুন্দুভি ঢাক’ কাঁধে নিয়ে মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দেয়। সময়ের অপচয় না করে বিপ্লবীরা যেন ভীম কারাগারের ভিত্তিভূমিকে নাড়িয়ে দেয়, ‘যত সব বন্দি-শালা’-য় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সমগ্র কবিতায় কবির প্রতিবাদী ভাবনার বা বিদ্রোহী মানসিকতার পরিচয় পরিলক্ষিত।
৯.১ Bankura Zilla School -এর ৭.১-এর উত্তরটি দেখুন।
৯.২ সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণ পাঠকের কাছে সাহিত্যকে ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলে। সাহিত্যের নামকরণ কখনও বিষয়, কখনও কোনো ঘটনা, কখনও চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। আবার কোথাও নামকরণে ব্যঞ্জনার আশ্রয় নেন লেখক। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পটিও ব্যঞ্জনাবাহী।
‘দাম’ গল্পে বর্ণিত হয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অদ্ভুত আন্তরিকতার কথা। এককালে স্কুলজীবনে যে শিক্ষক ছাত্রদের কাছে বিভীষিকাস্বরূপ ছিলেন, বহুকাল পরে সেই শিক্ষকের স্নেহ-মমতা-ক্ষমার অপরিমেয় রসে দ্রবীভূত হয়ে গেছে ছাত্রের যাবতীয় অভিমান। মাস্টারমশাই তাঁর নাছোড় স্বভাবে যে-কোনো উপায়ে ছাত্রদের শেখাতে চাইতেন অঙ্ক। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে ভয়ংকর শাস্তি ও শাসনে ছাত্রদের কাছে তিনি অঙ্ক বিষয়টিকেই করে তুলেছিলেন ভয়াবহ। কিন্তু অঙ্কের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পৌঁছেছেন কথক। তিনি বর্তমানে একটি কলেজের বাংলার শিক্ষক। একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইকে নিয়ে যে গল্প লিখেছিলেন কথক, তাতে ছিল কল্পনার রং মেশানো এবং উপদেশ দেওয়ার ঔদ্ধত্য। মাস্টারমশায়ের ছাত্র হয়েও জীবনে প্রতিষ্ঠার পর বক্তব্য রাখার বিষয়ে কারসাজি করতেন কথক। সব জায়গাতেই বলা চলে এমন ‘সর্বার্থসাধক’ বক্তৃতা বানিয়ে রেখেছিলেন কথক, যা সারশূন্য ‘ফাঁপা ফানুস’-এর মতো। পত্রিকার লেখা কিংবা বাংলাদেশের কলেজে দেওয়া বক্তৃতা 1 এসব মাস্টারমশাই জেনেছেন অথচ তাঁর ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে কথকের সব অপরাধ মাফ হয়ে গেছে। তাই কথক উপলব্ধি করেছেন মাস্টারমশাইয়ের স্নেহ-মমতা-ক্ষমা— এসব অমূল্য। মাস্টারমশাইকে নিয়ে লেখা গল্প তিনি দশ টাকায় বিক্রি করলেও শেষপর্যন্ত কথকের আত্মানুশোচনা আলোচ্য গল্পের নামকরণকে ব্যঞ্জনাবাহী এবং সার্থক করে তুলেছে।
১১.২ কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা রাজ শ্যালক।
নাট্যাংশের স্বল্প পরিসরে রাজার অস্তিত্ব সামান্য দেখানো হয়েছে। আংটি ফিরে পেয়ে রাজা ধীবরকে যে পরিমাণ পারিতোষিক দিয়েছেন, তা থেকে রক্ষী জানুকের মনে হয়, আংটিটি রাজার ভীষণ প্রিয় ছিল। রাজ-শ্যালক সে প্রসঙ্গে জানান রত্নখচিত বলে যে আংটিটি রাজার কাছে মূল্যবান এমন তার মনে হয়নি। বরং স্বভাব গম্ভীর রাজা আংটি দেখে সাময়িক বিহ্বল হয়ে যান। তার থেকে মনে হয় রাজার কোনো প্রিয়জনের কথা মনে পড়েছিল।
মহর্ষি কম্বের উদ্যোগে পতিগৃহে যাত্রাকালে শকুন্তলা পথে শচীতীর্থে স্নান সেরে অঞ্জলি দেওয়ার সময় আংটি তার হাত থেকে খুলে জলে পড়ে যায়। একটি রুই মাছ সেই আংটি গিলে নেয়। ঘটনাক্রমে সেই মাছ ধীবরের হাতে এলে মাছ কেটে মাছের পেট থেকে বহু মূল্যবান রত্নখচিত রাজ-নামাঙ্কিত সেই আংটি পেয়ে সেটি সে বিক্রির উদ্দেশ্যে জনসাধারণকে দেখায়। এমন সময় রাজ শ্যালক ও তার দুই রক্ষী চোর সন্দেহে তাকে ধরে আনে ও আংটির প্রকৃত সত্য জানার জন্য রাজ-শ্যালক রাজবাড়িতে যান। এইভাবেই রাজা দুষ্মন্ত তার হারিয়ে যাওয়া আংটি ফিরে পান।
১২.১ Contai Model Institution-এর ১২.২-এর উত্তরটি দেখুন।
১২.২ লেখিকা বেগম রোকেয়া তাঁর ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে হিমালয়ের অপরূপ রূপ দেখে ঈশ্বরের অপরূপ সৃষ্টির কথা স্মরণ করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
লেখিকা বেগম রোকেয়ার জগৎস্রষ্টা ঈশ্বর সম্পর্কে এই পরম শ্রদ্ধাপূর্ণ বাক্যটি স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অন্তরের পরম আধ্যাত্মিক উপলব্ধির পরিচয়কে প্রকাশ করে। হিমালয়ের অসামান্য স্বৰ্গীয় সৌন্দর্য দর্শন করে লেখিকা পরম আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েছেন এবং একইসঙ্গে তাঁর অন্তরে জাগ্রত হয়েছে এই অপার সৌন্দর্যের স্রষ্টা জগদীশ্বরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার বোধ। হিমালয়ের প্রতিটি অংশে তিনি ঈশ্বরের অপার মহিমার প্রকৃত প্রকাশ লক্ষ করেছেন। পর্বতের প্রতিটি শৃঙ্গ, ঝরনা সব কিছু মিলিয়ে সমস্তের মধ্য দিয়েই জগৎস্রষ্টা ঈশ্বরের অনন্ত সৃষ্টিক্ষমতার অপরিমেয় মহিমা ধরা পড়ে, যা দর্শনে মানুষ মুগ্ধ হয়, পরিতৃপ্ত হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই সে ঈশ্বরের বন্দনা করে, তাঁর স্তব-স্তুতি করে। কিন্তু লেখিকা মনে করেন সেই বন্দনার কৃত্রিম আঙ্গিক ত্যাগ করে যদি অন্তরের উচ্ছ্বাসে মানুষ এই ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শন করে ঈশ্বরকে স্মরণ করে এবং তাঁর মহিমার কীর্তন করে, তবেই তা যথার্থ হবে। কেন-না সৃষ্টির প্রত্যেক উপাদানের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বরূপ প্রকাশিত হওয়ায় তিনিই ধন্য।’ তাই লেখিকা তাঁকেই আন্তরিক ধন্যবাদ ও প্রণাম জ্ঞাপন করেছেন।
১৩.১ মানুষ মরণশীল, জন্মগ্রহণ করলে জীবের মরণ অনিবার্য এ সত্য অমোঘ। দৈহিক জীবনের পরিসমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় মানুষের জৈবিক অস্তিত্ব। কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ আছে যারা কল্যাণ-কর্মের মাধ্যমে মানুষের মনোজগতে অমর হয়ে থাকেন। সেখানেই তাঁদের মানবজীবনের সার্থকতা।
এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। জীবনের মূল্য নির্ধারিত হয় মানুষের কাজের ওপর। মানবসভ্যতা আজ যে শীর্ষে উঠেছে তার মূলে আছে বহু মানুষের কল্যাণকামী প্রচেষ্টা। মানুষ তার দীর্ঘ ও স্বল্প জীবনের মধ্যেই বহু কর্ম সাধন করতে পারে। খুব স্বল্পায়ু জীবনের অধিকারীরাও বৃহৎ কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এই পৃথিবীর মঙ্গলসাধন করে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ মহান মনীষীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আসলে কল্যাণকর্মের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। কেবল বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে না থেকে প্রত্যেকেরই উচিত কোনো-না কোনো কর্মের মাধ্যমে জীবনকে সার্থক করে তোলা। তার ফলে জীবন শুধু নিষ্ফল সময় অতিবাহন করার নামান্তর হয়ে বৃহত্তর মানবসমাজের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই জীবনের মূল্য কখনও আয়ুর দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না। আমরা পৃথিবীতে যতটুকু সময় কাটাতে পারি তার মধ্যে কতটা কল্যাণকর কার্যে অংশ নিতে পারছি তাতেই নিহিত থাকে মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
১৩.২ জীবনের সকল আন্তরিক প্রচেষ্টা পূর্ণতা পায়। বাগানের না ফোটা ফুল, মরুপথে শুষ্ক হয়ে যাওয়া নদী এ সবের উপস্থিতি যেমন সত্য, তেমনই সত্য সবার পিছনে পড়ে থাকা মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টা, যার দ্বারা তারা একদিন-না-একদিন পূর্ণতাকে স্পর্শ করতে পারবে।
১৩.৩ যথার্থ শিক্ষা হল তা, যা আনন্দের স্পর্শে প্রাণময় হয়ে প্রাণময়তার পাশাপাশি যা পাঠ গ্রহণশক্তি, ধারণশক্তি ও ওঠে। বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কেবলমাত্র পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে শিক্ষাকে গণ্ডিবদ্ধ করলে প্রকৃত শিক্ষা ব্যাহত হবে।

Leave a Comment