Ramakrishna Mission Vidyapith, Purulia
১.১ “কিন্তু পাঠাতে সাহস হয়নি।” – (ঘ) চিঠি পাঠাতে সাহস হয়নি।
১.২ ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে যে ঋতুর কথা বলা হয়েছে (খ) শীত ।
১.৩ “হারায় না তার বাগান থেকে…” – (ঘ) কুন্দ ফুলের হাসি হারায় না।
১.৪ “সঘনে চিকুর পড়ে….” – ‘চিকুর’ শব্দের অর্থ— (ক) বিদ্যুৎ।
১.৫ ‘সর্বোপরি তোমার ধমনিতে প্রবাহিত’ মিস নোবল-এঁর ধমনিতে প্রবাহিত যে রক্তের কথা বলা হয়েছে—(গ) কেল্টিক।
১.৬ হিমালয় রেল রোড আরম্ভ হয়েছে (ক) শিলিগুড়ি থেকে।
১.৭ শকুন্তলার প্রকৃত পিতা হলেন (ক) বিশ্বামিত্র।
১.৮ মহাকাশ থেকে দেখা মঙ্গল গ্রহের সরু সরু লাল সুতোগুলি হল (ঘ) বয়ে চলা নদী।
১.৯ গ্রিক উপকথায় আর্গাসের সর্বাঙ্গে ছিল – (গ) সহস্র লোচন।
১.১০ স্বর্ণপর্ণীর কেমিক্যাল অ্যানালিসিসে প্রাপ্ত উপাদানগুলির সঙ্গে প্রোফেসর শঙ্কু মিল পেয়েছিলেন (ক) রসুনের।
১.১১ যে উপভাষায় অপিনিহিতির প্রভাব লক্ষ করা যায় – (ক) বঙ্গালী।
১.১২ মধ্যস্বরলোপের অপর নাম (খ) সম্প্রকর্ষ।
১.১৩ নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনির উদাহরণ হল (ক) অ্যা।
১.১৪ গৃহিণী > গিন্নি – এটি যে সমীভবনের দৃষ্টান্ত – (ক) পরাগত ।
১.১৫ . উপসর্গকে যে ক’টি ভাগে ভাগ করা হয় – (খ) তিন।
১.১৬ প্রত্যয়ের ব্যবহারে যা তৈরি হয় (খ) নতুন শব্দ ।
১.১৭ ‘দেশলাই’ উৎসগতভাবে যে শ্রেণির শব্দ তা হল – (গ) তদ্ভব।
১.১৮ রেবা ভাইকে চিঠি লিখছে – রেখাঙ্কিত ক্রিয়াটি হল (খ) সকর্মক ।
২.১ চন্দ্রনাথ তার চিঠিতে হীরুকে প্রথমে প্রিয়বরেষু লিখেও কেটে দিয়ে প্রীতিভাজনেষু বলে সম্বোধন করেছিল।
২.২ ‘দাম’ গল্পে কথকের শৈশবকালের স্কুলের বিভীষিকা অঙ্কের মাস্টারমশাই তাকে সুকুমার বলে ডাকলে তার গলার স্বর শুনে কথক চমকে উঠেছিলেন।
২.৩Bankura Zilla School-এর ২.২-এর উত্তরটি দেখুন।
২.৪ বাংলা মায়ের দেহ পদ্ম, অতসী, অপরাজিতা ফুলে ভূষিত ।
২.৫ আর্য ইরানি ভাষা ও সেমিতি আরবি ভাষার সংঘর্ষে নবীন ফার্সি ভাষা জন্মগ্রহণ করেছিল।
২.৬ হিমালয় পার্বত্য প্রদেশে প্রতিদিনই অস্তায়মান সূর্য মেঘ ও বায়ুর মধ্যে রূপসৌন্দর্য রচনা করে। লেখিকা বেগম রোকেয়া মেঘেদের আলো ছায়ার খেলায় বিমোহিত হয়ে আর কোনো কাজ করতে পারেন না।
২.৭ কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন দ্বিতীয় রক্ষী জানুক।
২.৮ আবিষ্কারক হিসেবে প্রোফেসর শঙ্কুর স্থান টমাস অ্যালভা এডিসনের পরেই।
২.৯ Haldibari High School (HS)-এর ২.১৩-এর উত্তরটি দেখুন।
২.১০ প্রোফেসর শঙ্কুর ছাত্রটির নাম ছিল কর্ভাস।
২.১১ ‘প্রত্যয়’ শব্দটির সাধারণ অর্থ হল ‘বিশ্বাস’।
২.১২ ঘরোয়া খাবার শরীরের জন্য উপকারী – এখানে ‘ঘরোয়া’ হল পদান্তরিত বিশেষণ। ঘর > ঘরোয়া ।
২.১৩ ব্যথায় পা দুটো টনটনিয়ে উঠল। রেখাঙ্কিত পদটি হল ক্রিয়াবিশেষণ।
২.১৪ বিয়োজক অব্যয় : যেসব পদ দুই বা তার বেশি পদ বা বাক্যকে পৃথক করে একটিকে নির্বাচন করে, তাকে বিয়োজক অব্যয় বলে। যেমন— অথবা, বা, না ইত্যাদি। তুমি অথবা আমি যাব।
২.১৫ ‘কর্তব্য’ শব্দটির প্রকৃতি-প্রত্যয় হল – কৃ + তব্য।
২.১৬ চলিত বাংলায় ড় ও ঢু হল তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি।
২.১৭ উদ্ধার = উৎ + হার।
২.১৮ অত্যাবশ্যক = অতি + আবশ্যক।
৩.১ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটির বক্তা নায়েবমশাই।
শোভনকে অনুরোধ করা হয়েছিল, মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের সঙ্গে তার ‘হারানো ছেলে’ হয়ে একবার দেখা করার জন্য। নায়েবমশাই ভেবেছিলেন অসুস্থ মায়ের নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে ছেলের চেহারার পার্থক্য ধরা পড়বে না। তাঁকে বোঝাতে হবে, যে তাঁর ছেলে বেঁচে আছে এবং সে ঘরে ফিরে এসেছে। মৃত্যুপথযাত্রীকে এই শেষ সান্ত্বনাটুকু দেবার জন্যে জমিদার নিজে তাঁকে কাতর অনুরোধ জানায়। সে প্রসঙ্গেই আলোচ্য উদ্ধৃতিটি করা হয়েছে।
৩.২ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে বাঙালি কিশোর রঘুনাথ শিরোমণির কথা বলেছেন।
নব্যন্যায়ের প্রবর্তক গঙ্গেশ উপাধ্যায়ের ছাত্র সুতার্কিক পক্ষধর মিশ্রকে (জয়দেব মিশ্র) তাঁরই কিশোর ছাত্র বাঙালি রঘুনাথ শিরোমণি তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত একে ‘পক্ষধরের পক্ষশাতন’ বলেছেন। কিন্তু রঘুনাথের যশলাভ কেবল এতেই শেষ হয়নি। পরাজিত পক্ষধর রঘুনাথকে মিথিলা থেকে বাংলায় কোনো পুথি আনতে দেননি। রঘুনাথ ন্যায়ের সমস্ত পুথি কণ্ঠস্থ করে বাংলার নবদ্বীপে ফিরে নব্যন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।
৩.৩ সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে কথাটি হল “রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।”
প্রাবন্ধিক উদাহরণ দিয়েছেন শংকরদর্শনের আলোচনায় ভাষা সংস্কৃত শব্দবহুল বা তৎসম শব্দবহুল। পক্ষান্তরে মোগলাই রেস্তোরার ভাষা হয় হুতোমধর্মী অর্থাৎ অতৎসম, বিদেশি, প্রাদেশিক শব্দসমৃদ্ধ কথপোকথনের ঢঙে চলিত গদ্যে। ‘বসুমতী’-র সম্পাদকীয় ভাষায় যে গাম্ভীর্য দেখা যায়, ‘বাঁকাচোখের ব্যঙ্গরচনার ভাষা ততটাই চটুল। তিনি দেখিয়েছেন এভাবেই বিষয় রচনার ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৩.৪ Barlow Girls’ High School (HS)-এর ৭.২-এর উত্তরটি দেখুন।
৩.৫ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা প্রোফেসর শঙ্কু।
প্রোফেসর শঙ্কু যখন যন্ত্র তৈরির কাজ করছিলেন এমন সময় একটা খচ খচ শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন একটি আধখোলা দেশলাই বাক্স থেকে কাঠি বের করে কাকটি ঘষছিল। কাকটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর সেটি উড়ে গিয়ে জানলায় বসে কিছু শব্দ করেছিল যার সাথে কাকের স্বাভাবিক কা কা শব্দের কোনো সাদৃশ্য ছিল না। হঠাৎ শুনলে মনে হবে কাকটি হাসছে।
৪.১ প্রখ্যাত গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ ছোটোগল্পে গল্পকথকের বন্ধু সোমেশের কথানুযায়ী, শোভন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন একটি বিজ্ঞাপন বেরোয়, যা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন নয়, সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস। বিজ্ঞাপনের লেখায় কান পাতলে সেখানে যেন কাতর আর্তনাদ শোনা যাবে।
বিজ্ঞাপনে প্রথমেই বের হয় পুত্রহারা শোকার্ত মায়ের ছেলের প্রতি কাতর অনুরোধ ফিরে আসার জন্য। সোমেশের ভাষায়- “অস্পষ্ট আড়ষ্ট ভাষা, কিন্তু তার ভিতর দিয়ে কী ব্যাকুলতা যে প্রকাশ পেয়েছে তা না পড়লে বোঝা যায় না।” এরপর ধীরে ধীরে মায়ের কাতর অনুরোধ হতাশ দীর্ঘশ্বাসের মতো খবরের কাগজের পাতায় মিলিয়ে যায়।
তারপর শোনা যায় পিতার গম্ভীর স্বর, একটু যেন কম্পিত তবু ধীর ও শান্ত— “শোভন ফিরে এসো। তোমার মা শয্যাগত। তোমার কি এতটুকু কর্তব্যবোধও নেই!” পিতার স্বর ক্রমশ ভারী হয়ে আসে, ক্রমশ তাঁর স্বরে শোনা যায় শুধু কাতরতা, একান্ত দুর্বলতা— “শোভন, জানো না আমাদের কেমন করে দিন যাচ্ছে! এসো, আর আমাদের দুঃখ দিও না।”
বিজ্ঞাপন ক্রমশ হতাশা, হাহাকারে ভরে ওঠে। তারপর পুরোপুরি বদলে যায়। তা সাধারণ বিজ্ঞপ্তিতে পরিণত হয়। চেহারা ও বয়সের পরিচয় দিয়ে ঘোষণা করা হয়, কেউ সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। বলা হয়—‘দোহারা ছিপছিপে একটি বছর ষোলো-সতেরোর ছেলে। পরিচয়-চিহ্ন ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটি বড়ো জড়ুল। জীবিত না মৃত— এইটুকু কেউ সন্ধান দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে।
এইভাবে প্রায় দু-বছর ক্লান্তভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায় এইভাবে— “শোভন, তোমার মার সঙ্গে আর তোমার বুঝি দেখা হলো না। তিনি শুধু তোমারই নাম করছেন এখনো।” এমনই এক হতাশ হাহাকারভরা বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান সোমেশ শুনিয়েছিল গল্পকথককে।
অথবা, Bankura Zilla School-এর ৭.১-এর উত্তরটি দেখুন।
৪.২ Bankura Zilla School-এর ৬.২-এর উত্তরটি দেখুন।
অথবা, সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কখনও চরিত্র, কখনও বিষয় আবার কখনও সাহিত্যে নিহিত ব্যঞ্জনাকে কেন্দ্র করে নামকরণ তৈরি হয়। এই নামকরণ প্রাথমিকভাবে সাহিত্যের সঙ্গে পাঠকের যোগসূত্র গঠন করে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আধুনিক এবং আঙ্গিকসচেতন কবি। ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যের ‘আবহমান’ কবিতায় বঙ্গদেশের গ্রামজীবনের অনাবিল সৌন্দর্য এবং সেই সৌন্দর্যে যুগ যুগ ধরে মুগ্ধ মানুষের হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসার চিরায়ত গল্পকথাটি ফুটিয়ে তুলেছেন। আলোচ্য কবিতায় কবি প্রথম স্তবকটি চারবার ব্যবহার করে গ্রামবাংলার শান্ত-স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহমানতাকে তুলে ধরেছেন। আঙ্গিক সচেতন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আলোচ্য স্তবকটিতে সামান্য পরিবর্তন এনেছেন শেষবার। ‘ছোট্ট একটা ফুল দুলছে’–এর পরিবর্তে ‘এখনও সেই ফুল দুলছে’-র ব্যবহারে কবিতার নামকরণকে সার্থক করে তুলেছেন।
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ বাংলার গ্রামগুলি বুক ভরে যে অকৃত্রিম আনন্দের উপাদান সাজিয়ে রেখেছে বহুকাল ধরে, তার । আকর্ষণেই মানুষ বারবার ফিরে আসে এই বাংলায়। কবি লিখেছেন “কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে, এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালোবাসে।”
কবি আলোচ্য কবিতায় দেখিয়েছেন বাংলার নিসর্গসৌন্দর্য উপভোগের বাসনা বাঙালির ফুরোয় না বলে এই বাংলায় তার যাওয়া-আসা অব্যাহত থাকে। গ্রামজীবনের সঙ্গে তথা প্রকৃতির সঙ্গে লগ্ন হয়ে মানুষের বেঁচে থাকার স্বাদ এবং সাধ ফুরোয় না। সূর্যের উদিত হওয়া কিংবা আড়াল হয়ে যাওয়া, নদীর বয়ে চলার যেমন বিরাম নেই, তেমনই বঙ্গজনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, যন্ত্রণা-উন্মাদনাও পুরোনো হয় না কখনও। বহমান কাল ধরে জন্মভূমিতে ফিরে আসার ইচ্ছে মানুষের অটুট থাকে। বাংলার গ্রামজীবনের, প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের নিবিড় অন্বয়ের, ভালোবাসার টানে মানুষের ঘরে ফেরার যে গল্প কবি শোনান, তা শেষ হওয়ার বা থামার নয়। তাই ‘আবহমান কবিতার ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণটি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।
৪.৩ ভাষাবিদ, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে নব্য ভারতীয় আর্যভাষা ‘বাংলা’ সম্পর্কে এক মনোজ্ঞ আলোচনা উপস্থিত করেছেন। বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল ভাষা নয়। ফলত ‘বাংলার ভাষাপ্রবাহকে সচল রাখার জন্য প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ভিনদেশি ভাষার সাহায্য বাংলাকে নিতে হয়েছে। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য সে পরভাষার মুখাপেক্ষী। জন্মসূত্রে সংস্কৃত ভাষার মতোই রাজনৈতিক, সামাজিক কারণে, ব্যাবসা-বাণিজ্যের জন্য বাংলা ইংরেজি ভাষার প্রভাবপুষ্ট। সংস্কৃতের পাশাপাশি আধুনিককালে ইংরেজিও বাংলার এক প্রধান খাদ্য।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগে, ইউরোপীয় দেশগুলোর রীতিনীতি, ইতিহাস-সংস্কৃতিকে জানতে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগে, বিশেষ করে দর্শন, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি জ্ঞান ও ততোধিক প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানের শব্দের জন্য ইংরেজিই প্রধান ভরসা। টেকনিক্যাল শব্দের প্রয়োজন মেটাতেও ইংরেজি অদ্বিতীয়। তাই লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, বাংলা ভাষাতে ইংরেজি ভাষা চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।
অথবা, বেগম রোকেয়া রচিত ‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশে লেখিকা শিলিগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে হিমালয় রেল রোড থেকে হিমালয়ান রেলগাড়ির আরোহী হয়ে হিমালয় দর্শনের জন্য যাত্রা শুরু করেন। ক্রমে রেলগাড়ি সমুদ্র থেকে তিন হাজার ফিট উপরে ওঠে। প্রায় তিন হাজার ফিট উপরে উঠেও লেখিকার শীত বোধ হয় না, কিন্তু চারপাশ মেঘ এসে ঘিরে থাকে। নীচু উপত্যকায় কুয়াশাকে লেখিকা নদী ভেবে ভুল করেন মাঝে মধ্যে। সেখানকার গাছ, লতা, ঘাস সবই মনোহর বলে লেখিকা মনে করেন। সেখানকার এত বড়ো বড়ো ঘাস লেখিকা আগে দেখেননি। হিমালয়ের কোলে পাহাড়ের ঢালু অংশে চায়ের ক্ষেত্রগুলি অবস্থিত। সবুজ রঙের এই ক্ষেত্রগুলি প্রাকৃতিক শোভাকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে। দূরে সারি সারি চা ক্ষেত্রগুলি অত্যন্ত সুন্দর। মাঝে মাঝে মানুষ চলাচলের জন্য সংকীর্ণ পথ। এই পথগুলি যেন ধরণির সীমন্ত। নিবিড় শ্যামল বন যেন বসুমতীর ঘন কেশপাশ এবং পথগুলি যেন আঁকাবাঁকা সিঁথি। সবুজ চা গাছগুলি যেন অরণ্যের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রেলপথে যাত্রাকালে জলপ্রপাত বা নির্ঝর লেখিকার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এইগুলি ধরণির কোনো এক প্রান্ত থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রচণ্ডবেগে ধাবিত হয়ে, প্রস্তর হৃদয় বিদ্ধ করে আবার অনন্তের দিকে ছুটে চলেছে। এই গতির শেষ বা বিরাম বলে কিছু নেই। লেখিকার রেলগাড়ি জল পরিবর্তনের জন্য সেখানে কিছু সময় থেমেছিল। তিনি প্রাণভরে তখন জলপ্রপাতের সেই সৌন্দর্যরূপ দর্শন করেন।
৪.৪ কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃত উক্তিটিতে ‘প্রভু’হলেন নগর-রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক।
চুরির অপবাদ দিয়ে ধীবরকে ধরে আনার পর রাজ-শ্যালক ও দুই রক্ষী তাকে নানাভাবে পীড়ন করেছিল। আংটি সংক্রান্ত বিষয়ে জেরার নামে হেনস্তা করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু রাজাদেশে মুক্তির আনন্দের মাঝেও ধীবর সংসার অতিবাহিত করার দুশ্চিন্তায় শঙ্কিত হয়েছিল। এরপর রাজ-শ্যালক যখন জানান তাকে রাজা আংটির অর্থমূল্যের সমান পারিতোষিক দিয়েছেন, তখন ধীবর ‘প্রভু’র প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল।
ধীবরকে রক্ষীদ্বয় যেভাবে মৃত্যুভয় দেখিয়েছে তাতে অশিক্ষিত অতিসাধারণ ধীবরের পক্ষে জীবনীশক্তি বজায় রাখাই দুরূহ ছিল। তার পক্ষে এত অপমান, লাঞ্ছনার পরেও রাজার দয়া পাওয়া কিংবা পারিতোষিক লাভ ছিল অকল্পনীয়। সে মনে মনে ভেবে নিয়েছিল তার ভবিষ্যৎ কঠিন শাস্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে। অথচ অর্থপ্রাপ্তির কথা শুনে সে যেমন চমকে ওঠে, তেমনি কৃতজ্ঞতায় সে রাজ-শ্যালকের প্রতি বিনয় প্রকাশ করে।
অথবা, Bankura Zilla School-এর ৮.১-এর উত্তরটি দেখুন।
৪.৫ চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের কল্পবিজ্ঞানমূলক গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’-তে প্রোফেসর শঙ্কুর যে অভিযানের বর্ণনা আছে, তা মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশে। শঙ্কু তাঁর তিন সঙ্গী, যথাক্রমে পরিচারক প্রহ্লাদ, পোষা বিড়াল নিউটন এবং নিজের সৃষ্টি রোবট তথা ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট বিধুশেখরকে নিয়ে এই অভিযানে যান। মঙ্গলের নরম রবারের মতো মাটিতে অবতরণ করে সেখানকার জীবের অস্তিত্ব টের পান। প্রথমে একটা আঁশটে গন্ধ ও সঙ্গে একটা অদ্ভুত শব্দ ‘তিন্তিড়ি তিন্তিড়ি’ অনুসরণ করে যে প্রাণীটিকে দেখতে পান, তা অদ্ভুত দর্শনের। সেটা মানুষও নয়, জন্তুও নয়, মাছও নয় কিন্তু এই তিনের সঙ্গেই তার কিছু কিছু মিল রয়েছে। প্রায় তিন হাত লম্বা এই প্রাণীর হাত নেই, সে স্থানে রয়েছে মাছের মতো ডানা। মাথাটি বিরাট আর রয়েছে মুখজোড়া দন্তহীন হাঁ। এরই মধ্যস্থানে প্রকাণ্ড একটা চোখ, যা সবুজ রঙের। তার সর্বাঙ্গে মাছের মতো আঁশ, যা সকালের রোদে চিকচিক করছে, তবে জন্তুটা ভালো ছুটতে পারে না, পদে পদে হোঁচট খায়।
এই বিকটদর্শন জন্তুটি প্রথমে প্রহ্লাদকে তাড়া করে কিন্তু গতি শ্লথ বলে তার নাগাল পায় না, সে রকেটে উঠে পড়লে বিধুশেখর জন্তুটার পথ আটকায়। শঙ্কু দেখেন প্রায় দু-তিনশো জন্তু রকেটের দিকে এগিয়ে আসছে। প্রহ্লাদ জন্তুটার তাড়া খেয়ে পরিত্রাহী চিৎকার করে নিউটনকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ে রকেটে ওঠে। কিন্তু বিধুশেখরকে নিয়ে বিপদে পড়লেন শঙ্কু। মনে হচ্ছিল সে মঙ্গলের সব সৈন্যকে একাই আক্রমণ করবে, শঙ্কু কোনোমতে বিধুশেখরকে অচল করে, তার কোমরের কবজা খুলে, তাকে দু-ভাগ করে কোনোমতে টেনে-হিঁচড়ে রকেটে তুললেন। মঙ্গলীয়রা তখন আরও কাছে, ক্যাবিনের দরজা বন্ধ করার ঠিক আগে পায়ে একটা ঠান্ডা স্যাতস্যাতে ঝাপটা তিনি অনুভব করেন মঙ্গলীয়দের স্পর্শে। দরজা বন্ধ করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন প্রোফেসর শঙ্কু।
অথবা, Balurghat High School-এর ৮.২-এর উত্তরটি দেখুন।
৫. সব ধর্মেরই মূল কথা এক – – মানুষকে ভালোবাসা। তবু এক ধর্মের মানুষ যখন অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে হানাহানিতে মত্ত হয়, তখন তা আর ধর্ম থাকে না, তা হয় এক ধরনের ধর্মান্ধতা। তখন তা সৃষ্টি করে এমন এক সর্বনাশা মোহ, যার প্রভাবে মানুষ তার বিবেক-বুদ্ধিকেও বিসর্জন দেয়।
প্রকৃতপক্ষে মানুষমাত্রই ঈশ্বরের সন্তান। সেদিক থেকে মানুষমাত্রই আমাদের আপন ভাই। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মানুষের অগ্রগতি হয়েছে সহযোগিতার হাত ধরে। এইভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে, ঐক্যের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে শ্বাপদসংকুল আদিম পৃথিবীতে হিংস্র জন্তুর আক্রমণ প্রতিরোধ করে মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষা করেছে এবং সমাজ গঠন করেছে। আর আজও মানুষ তার যে সভ্যতার, যে প্রগতির গর্ব করে, তারও মূলে আছে এই সহযোগিতার শক্তি। এরই ফলে মানুষ একে অপরের সুখে আনন্দ উপভোগ করেছে, দুঃখে করেছে বেদনাবোধ। এই ঐক্যবোধই মানুষের মনুষ্যত্বের মূল সূত্র। তবু একথাও বাস্তব সত্য যে, মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় মানুষ, মানুষের রক্তে কলঙ্কিত হয় মানুষের হাত। সেই যুদ্ধ থেকে বিরত হলে এই পৃথিবীতেই নেমে আসবে শান্তি-সুখের স্বর্গ।
অথবা, দরজা বন্ধ করে রেখে যদি ভ্রমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়, তবে সত্যের অবাধ প্রবেশ ঘটবে কীভাবে। তার পথও তো অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।
জীবনের অর্থ পথ চলা, আর সেই চলার পথে থাকে নানান অভিজ্ঞতার আনাগোনা। মানবজীবনে সত্য, মিথ্যা এবং ভ্রম নামক বস্তু আসে আর যায়। মানুষের মর্মের ভিতর উঁকি দেয় সকল ভাবনা । অনেক সময় কঠিন, কঠোর সত্যকে আড়াল করতে অথবা সত্যের সম্মুখে দাঁড়াতে ভীত হয়ে কেউ কেউ মনের দ্বার রুদ্ধ করে ভ্রমকেই সত্যের নাম দেয়। এ যেন নিজেকে নিজের ছলনা, কিন্তু সত্য, সে যত কঠোর হোক তবুও এর বৈশিষ্ট্য সর্বদা নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটানো। তবুও মানবচিত্তের দুর্বলতায় মানুষ ভ্রমের আড়ালে সত্যের আত্মপ্রকাশকে বাধা দিতে চায়। কিন্তু মর্মদ্বার রুদ্ধ করলেও সত্য নিজের প্রকাশবৈশিষ্ট্যে অনড় হয়ে থাকে। সত্য তখন আপন আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে নেয়। আর সে কারণেই দুর্বলতাকে দূরীভূত করে সত্যের আলোকে সত্যকে আত্মপ্রকাশের পথ করে দিলে মানবমনের আঁধার দূরীভূত হয়, মানবজীবন প্রকৃত সার্থকতা লাভ করে। ভ্রমের মোহজালে আবদ্ধ মানুষেরা সত্যের প্রকৃত আস্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। আর সেই মোহজাল ছিন্ন হলে তবেই সত্যের তাৎপর্যে মানবমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।