Haldibari High School (HS)
১.১ স্রোতের বিদ্রুপ শুনি – (গ) প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।
১.২ কামরাঙা-লাল মেঘ – (ক) মৃত মনিয়ার মতো।
১.৩ পত্রিকার গল্প লিখে ‘দাম’ গল্পের লেখক পেয়েছিলেন (ঘ) দশ টাকা।
১.৪ শোভন – (গ) প্রাচীন জমিদার বাড়ির সন্তান।
১.৫ স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোকে চিঠিটি লিখেছিলেন (ঘ) আলমোড়া থেকে।
১.৬. ভুটিয়ানিরা নিজেদের (গ) পাহাড়নি বলে।
১.৭ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’নাট্যাংশে শকুন্তলার পতি হলেন—(খ) দুষ্মন্ত।
১.৮ এ অবশ্যই গোসাপ খাওয়া জেলে হবে।’ – কথাটা বলেছিলেন (ঘ) রাজ শ্যালক।
১.৯ ধীবরের বসতি ছিল – (ঘ) শক্রাবতারে।
১.১০ প্রোফেসর শঙ্কু নতুন যে গ্রহে পৌঁছেছিলেন তার নাম (ক) টাফা।
১.১১ চিলি দেশের মুদ্রাকে বলা হয় – (গ) এসকুড়ো।
১.১২ আইনস্টাইন জাতিতে ছিলেন – (খ) ইহুদি।
১.১৩ ‘জ’, ‘ঝু’হল – (ঘ) খৃষ্টধ্বনি।
১.১৪ স্পর্ধা > আস্পর্ধা হল – (গ) স্বরাগম।
১.১৫ উপসর্গগুলি ধাতু বা শব্দের (ঘ) আগে বসে।
১.১৬ মোদের পায়ের তলায় মুচ্ছে তুফান এখানে সর্বনামটি হল – (ক) ব্যক্তিবাচক।
১.১৭ স্বরসংগতি – (খ) তিন প্রকার।
১.১৮ পিশাচ > পিচাশ – এটি – (গ) বিপর্যাস।
১.১৯ লোকটি অত্যন্ত দাম্ভিক। – এটি একটি—(ক) বিশেষণ পদ।
১.২০ প্র, পরা – এই দুটি – (খ) সংস্কৃত উপসর্গ।
২.১ বাঙালি জাতি বঙ্গভূমিতে হিংস্র বাঘ ও বিষধর সাপের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
২.২ গজারোহী, অশ্বারোহী, রথারোহী ও পদাতিক এই চার প্রকার সৈন্য নিয়ে গঠিত সৈন্যদলকে চতুরঙ্গ (চতুঃ + অঙ্গ) বলে।
২.৩ বণিকের মানদণ্ড পরিত্যাগ করে চতুর ইংরেজ ভারতবর্ষের রাজদণ্ড ছিনিয়ে নিয়েছে। ভারতবর্ষকে করে রেখেছে পরাধীন। পরাধীন ভারতবর্ষের শৃঙ্খলমোচনে যেসব বিপ্লবী লড়াই করেছে, তাদের করেছে বন্দি। তাই কবি কারাগারের লৌহ-কপাট ভেঙে তাদের মুক্তি ঘটাতে বলেন।
২.৪ শোভনের নিরুদ্দেশ-এর বিজ্ঞাপন খবরের কাগজে দেখে দুজন প্রতারক শোভনের মিথ্যে পরিচয় দিয়ে শোভনের বাড়িতে এসেছিল। দুই বছর পরে যখন শোভন নিজের বাড়িতে ফেরে তাকে চিনতে না পেরে নায়েবমশাই শোভনের বাবাকে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। তারা মনে করেছিলেন। আগের দুবার-এর মতো এবারও মিথ্যে শোভন পরিচয়ে কেউ এসেছে।
২.৫ Falakata High School (XII)-এর ২.১৪-এর উত্তরটি দেখুন।
২.৬ পাঠ্য ‘রাধারাণী’ উপন্যাসের অন্তর্গত অংশে, মাহেশের রথের মেলায় রথের টান অর্ধেক হতে না হতে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় এবং মেলা ভেঙে যায়। বৃষ্টি আর না কমায় কেউ আর রাধারাণীর থেকে মালা কেনেনি।
২.৭ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে বায়ু পরিষ্কার ও হালকা। তাই বাতাস এসে মেঘকে একদিক থেকে আর একদিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। বায়ু ও মেঘ-এর এই লুকোচুরি খেলা দেখতে চমৎকার বলে লেখিকা জানিয়েছেন।
২.৮ বিবেকানন্দ তাঁর ‘চিঠি’ প্রবন্ধে বলেন, মিস মুলার চমৎকার মহিলা, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ছোটোবেলা থেকে তিনি এই ধারণা নিয়ে রয়েছেন যে, তিনি আজন্ম নেত্রী এবং অর্থই পৃথিবীর সমস্ত পরিবর্তনের একমাত্র উপায়। তাই মিস নোল্-এর পক্ষে তাঁর সঙ্গে বনিয়ে চলা অসম্ভব হবে।
২.৯ স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতার প্রকৃত নাম হল— মিস মার্গারেট ই নোব্ল্
২.১০ ঋষি দুর্বাসা ছিলেন কোপন প্রকৃতির। রাজা দুষ্মন্তের চিন্তায় অন্যমনস্ক শকুন্তলা তপোবনে আসা দুর্বাসাকে লক্ষ করেনি। সামান্য আশ্রমকন্যার উপেক্ষা সহ্য করতে না পেরে ক্রোধান্বিত ও অপমানিত হয়ে ঋষি দুর্বাসা শকুন্তলাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন।
২.১১ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশটি সংস্কৃত সাহিত্যের মহাকবি কালিদাসের রচনা। রচনাটির মূল ভাষা সংস্কৃত। এটি বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
২.১২ প্রোফেসর শঙ্কুর আবিষ্কৃত ‘এয়ারকন্ডিশনিং পিল’-এর বিশেষত্ব হল -এটা জিভের তলায় রাখলে শরীর শীতকালে গরম আর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা রাখে।
২.১৩ ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প অনুসারে কসৌলি থেকে তিন ক্লোশ উত্তরে এক ভগ্ন চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে অবস্থিত ঝরনার পাশে পাওয়া যায় স্বর্ণপর্ণীর গাছ।
২.১৪ অব্যয় : অব্যয় শব্দের অর্থ যার ব্যয় নেই। তিনটি লিঙ্গ, সমস্ত বিভক্তি ও প্রত্যয়, বচন বা পুরুষ কিছুতেই যে নামপদের রূপবদল বা পরিবর্তন হয় না বা নিজের রূপ ত্যাগ করে না, তাকে অব্যয় পদ বলে।
২.১৫ দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার মুখ্য ও গৌণ – এই দুটি কর্মই উপস্থিত থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন— মাস্টারমশাই ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
২.১৬ বিশেষণের বিশেষণ : যে বিশেষণ অন্য কোনো বিশেষণের দোষ, গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি, সংখ্যা ইত্যাদি বোঝায়, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে ।
যেমন— প্রচণ্ড দ্রুত বেগে লোকটি দৌড়াচ্ছে।
২.১৭ নামপদ চারপ্রকার। যথা (ক) বিশেষ্য, (খ) সর্বনাম, (গ) বিশেষণ, (ঘ) অব্যয়
২.১৮ উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর আগে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে।
২.১৯ অভিশ্রুতির একটি উদাহরণ হল – রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে।
২.২০ ধ্বনি পরিবর্তনের দুটি কারণ হল (ক) ভৌগোলিক – পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রভাব, (খ) সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব।
৩: ১ আলোচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে। নিমাই হলেন নদিয়ার নবদ্বীপের জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর কনিষ্ঠ পুত্র।
‘অমিয় মথিয়া’ শব্দের অর্থ হল – ‘অমৃত মন্থন’। তৎকালীন মুসলমান শাসকের অত্যাচার, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বহু মানুষ চৈতন্যদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ধর্মের বিভেদ মুছে তিনি উদাত্তকণ্ঠে বলে উঠেছিলেন – ‘চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তি পরায়ণম। সেদিনের বঙ্গসমাজের নিপীড়িত বাঙালির অন্তঃসত্ত্বা থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর স্পর্শে ষোড়শ শতাব্দীতে বঙ্গ সমাজে যেমন একতা ফিরে এসেছিল, তেমনি বাংলা সাহিত্য-শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। কবি চৈতন্যদেবকে বাঙালির শুভ বোধের চিরন্তন প্রতীকরূপে দেখিয়েছেন। ‘আমরা’ কবিতায় তাই ‘নিমাই’ হলেন বাঙালির হৃদয়ামৃতের মূর্ত বিগ্রহ।
অথবা, ‘ভাঙার গান’ কবিতায় ভারতবর্ষের পরাধীনতার প্রেক্ষাপটে বিপ্লবীদের উদ্দেশে উজ্জীবনের গান গেয়েছেন নজরুল। এ কবিতায় কবি ভারতবর্ষের বীর বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেবাদিদেব মহাদেবের প্রলয়ংকর তেজ প্রত্যক্ষ করেছেন। কবি বিশ্বাস করেন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মনে মনে লালন করে পরাধীন ভারতবাসী কোনো অপরাধ করেনি। ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্নকে ‘সাজা’ দেওয়ার ক্ষমতা কোনো ‘মালিক’ বা ‘রাজা’র নেই। ভগবানকে ফাঁসি দেওয়ার ভাবনা যেমন অবান্তর, হাস্যকর, সর্বনাশা তেমনি ভারতের শত-সহস্র বীর-বিপ্লবীকে ধ্বংস করার চেষ্টাও বৃথা হবে ব্রিটিশ সরকারের। এই ভাবনাতেই কবির হাসি পেয়েছে এবং তার ফলে ‘ভগবান পরবে ফাঁসি?’ – তথ্যটিকে তিনি ‘সর্বনাশী’ এবং ‘হীন’ বলেছেন।
৩.২ Contai Model Institution (HS)-এর ৪.১-এর উত্তরটি দেখুন।
অথবা, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ কাহিনির নামচরিত্রটি চেহারায় ও স্বভাবে ছিল বলিষ্ঠ। কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলীর খঙ্গধারী বিশাল আকৃতির মতো চন্দ্রনাথের চেহারা ও ভঙ্গিমা ছিল দৃপ্ত। অন্ধকার অসীম আকাশের বুকে কালপুরুষ যেমন নিঃসঙ্গ, তেমনি জীবনের পথে চন্দ্রনাথও একা দৃপ্ত পদক্ষেপে পাড়ি দিয়েছিল। তাই তার সহপাঠী তথা আলোচ্য কাহিনির কথক নরেশ কালপুরুষ নক্ষত্রের সঙ্গে চন্দ্রনাথের তুলনা করে আনন্দ পেয়েছে।
Balurghat High School-এর ৬.২-এর উত্তরটি দেখুন।
অথবা, প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলতে ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতাকে বুঝিয়েছেন। ভাষা আত্মনির্ভরশীল হলে তার থাকে উন্নত ও বিপুল শব্দভাণ্ডার। কোনো নতুন চিন্তা, অনুভূতি, কিংবা বস্তুর জন্য নবীন শব্দের প্রয়োজন হলে অন্য ভাষার কাছে ঋণ করতে হয় না, নিজের শব্দভাণ্ডারেই রসদ পায় কিংবা নিজের শব্দভাণ্ডারে থাকা ধাতু বা শব্দকে অদল-বদল করে প্রয়োজনীয় শব্দটি গড়ে নিতে পারে।
” লেখকের মতে, প্রাচীন যুগের সব ভাষাই যেমন সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং ঈষৎ পরবর্তী যুগে আরবিও আত্মনির্ভরশীল ভাষা।
৪.২ মহর্ষি কণ্ব তীর্থে যাওয়ার পর পুরুবংশীয় রাজা দুষ্মন্ত শিকারে ক্লান্ত হয়ে আশ্রয় গ্রহণের জন্য তপোবনে এসেছিলেন। সেখানে অতিথি সেবায় নিযুক্ত কম্বের পালিতা কন্যা শকুন্তলার রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি শকুন্তলাকে গাবমতে বিবাহ করেন। এরপর, তিনি রাজধানীতে ফিরে যান। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোনো দূত তপোবনে না আসায় রাজা দুষ্মন্তের চিন্তায় অন্যমনস্ক শকুন্তলা তপোবনে আসা দুর্বাসাকে লক্ষ করেনি। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে দুর্বাসা মুনি শকুন্তলাকে অভিশাপ দেন যে, যার চিন্তায় সে মগ্ন, সেই ব্যক্তি শকুন্তলাকে ভুলে যাবেন। শেষপর্যন্ত শকুন্তলার সখী প্রিয়ংবদার অনুরোধে দুর্বাসা শকুন্তলার শাপমুক্তির উপায় হিসেবে বলেন যে, শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্তকে তাদের সম্পর্কের কোনো নিদর্শন বা প্রমাণ দেখালে তবেই রাজার সব মনে পড়বে। শকুন্তলাকে দেওয়া রাজার নিজ নামাঙ্কিত, রত্নখচিত, বহুমূল্য আংটিটি ছিল এক্ষেত্রে একমাত্র নিদর্শন। মহর্ষি কম্বের উদ্যোগে পতিগৃহে যাত্রাকালে শচীতীর্থে স্নানের পর অঞ্জলি দেওয়ার সময় তার হাত থেকে আংটিটি খুলে পড়ে যায়। রাজধানীতে পৌঁছে কোনো রাজনিদর্শন দেখাতে না পারায় দুর্বাসার অভিশাপ অনুযায়ী রাজা দুষ্মন্তের মন থেকে শকুন্তলার স্মৃতি মুছে গিয়েছিল।
অথবা, DH Bharat Sevasram Sangha Pranab Vidyapith (HS)-এর ৭.২-এর উত্তরটি দেখুন।
৪.৩ সানতিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে বক্তৃতা করার সময় প্রোফেসর শঙ্কু কর্ভাসকে খাঁচা থেকে বের করে প্রকাণ্ড লম্বা মেহগনির টেবিলে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন, বক্তৃতা চলাকালীন কর্ভাস এক পাও নড়েনি। মাঝে মাঝে ঘাড় কাত করে ও মাথা উপর নীচ করে বুঝিয়ে দিয়েছে সে মনোযোগের সঙ্গে বক্তৃতা শুনছে এবং বুঝতে পারছে। বক্তৃতা শেষ হবার পর শ্রোতাদের হাততালির শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠোঁট দিয়ে টেবিলে আওয়াজ করে কর্ভাস শঙ্কুকে অবাক করে দিয়েছিল।
প্রোফেসর শঙ্কু দু-মাস ধরে কর্ভাসের মস্তিষ্ক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যা আবিষ্কার করেছেন পাখিটিসহ তা “ডিমন্সট্রেট’ করায় সকলেই অবাক হয়ে গেছে। কর্ভাস গত দু-মাসে যা শিখেছে সবই দেখিয়েছে অভ্যাগতদের সামনে। সকলেই শঙ্কুর এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সাধুবাদ জানিয়েছে। এমন অকল্পনীয় ঘটনার খবর প্রকাশ করেছে ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’-র সান্ধ্য সংস্করণ। মোটকথা বিজ্ঞানের নতুন একটি দিক উন্মোচন করে শঙ্কু বন্দিত হয়েছেন পক্ষীবিজ্ঞানীসহ সমগ্র বিশ্বে।
অথবা, হাইনরিখ স্টাইনার ছিলেন একজন ভারততাত্ত্বিক, সঙ্গে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক। তিনি মনে করতেন সংস্কৃত ভাষার যে ঐশ্বর্য, তা আর বিশ্বের কোনো ভাষায় পাওয়া যাবে না। বেদ, উপনিষদকে তিনি নতুন করে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। শঙ্কুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে তিনি জার্মানির মানুষ হয়েও সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেছেন। তাছাড়া, ভারতীয় শিল্প-সাহিত্যের প্রতি জার্মানদের শ্রদ্ধা বিগত দুশো বছর আগে থেকে ক্রিয়াশীল। শঙ্কুর মনে হয়েছিল তিনি একজন সত্যিকার ভারতপ্রেমিক ছিলেন। তাই এত বড়ো একজন ভারততাত্ত্বিককে মৃত্যুর কবল থেকে উদ্ধার করতে পারলে শঙ্কুর পিতার আত্মা শান্তি পাবে। শঙ্কুর বারবার মনে হয়েছে তার বাবা বেঁচে থাকলে বলতেন “তুই যা রে তিলু। একজন মনীষীর ত্রাণকর্তা হতে পারলে তোর জীবন ধন্য হবে।”
Bankura Zilla School-এর ৬.২-এর উত্তরটি দেখুন।
অথবা, কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ গীতিকাটি মূলত পরাধীন ভারতবর্ষের বিপ্লবীদের প্রেরণার মূলমন্ত্র । কবি নজরুল একবার বলেছিলেন ‘বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এরই অভিযানে সেনাদলের তূর্যবাদকের একজন আমি।’ সৈনিক কবি নজরুল তাঁর কাব্যবীণাকে ‘অগ্নিবীণা’য় এবং প্রেমের বাঁশিকে “বিষের বাঁশি তে রূপান্তরিত করেছিলেন। স্বজাতি ও স্বদেশের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তাঁর ছিল প্রবল। এমনিতেই দেশপ্রেম তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি। দেশমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতা তাঁর কাছে ছিল জন্মগত অধিকার। ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি তাঁর স্বদেশপ্রেমের সাবলীল ভাষ্য।
স্বদেশপ্রেমিক নজরুল স্বদেশের শৃঙ্খলমোচনে তাই ইংরেজদের কারাগারে বন্দি স্বদেশবাসীকে বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে বলেছেন – ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ ভেঙে ফেল, করবে লোপাট”
স্বদেশপ্রেমিক নজরুলের এ এক ভিন্ন মূর্তি, বিপ্লবী মনোভাব। আসলে কবি জানেন যে, অত্যাচারী ইংরেজদের শান্তির ললিত বাণী শোনানো পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। তাই নিজ অধিকার ছিনিয়ে নিতে কবি যেমন ‘তরুণ ঈশান রূপী বিপ্লবীকে আহ্বান করেছেন, তেমনই আহ্বান করেছেন ‘পাগলা ভোলা’রূপী বিপ্লবীদের। এরাই পারে ধ্বংস নিশান ওড়াতে, এরাই পারে প্রলয় দোলাতে কারাগারের গারদগুলোকে ভেঙে ফেলতে। বিপ্লবীদের কাছে জীবনমৃত্যু পায়ের ভৃত্য ছাড়া আর কিছু নয়। তাই কবি বলেছেন—
“ডাক ওরে ডাক
মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে ! ”
তাই চুপচাপ সময় না কাটিয়ে তিনি বিপ্লবীদের ইংরেজদের ভীম কারাগারের ভিত্তি নাড়িয়ে বন্দিশালায় আগুন জ্বালাবার কথা বলেছেন। অর্থাৎ ভারতমাতার পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের কথা বলেছেন তিনি। সমগ্র কবিতাটি যেন স্বদেশপ্রাণ নজরুলের অকৃত্রিম দেশবন্দনার বাণীরূপের প্রকাশ স্বরূপ।
৫.২ আধুনিক ছোটোগল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ” গল্পে বাড়ির কর্ত্রী অসুস্থ এবং মৃত্যুপথযাত্রী হওয়ায় শোভনকে, শোভন সেজে সান্ত্বনাটুকু দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে নায়েবমশাই তার হাতে টাকাটা গুঁজে দেন।
গল্পে আমরা দেখি অভিমানের ফলে শোভন তার বাড়ি থেকে নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যায়। পরে যখন বাড়িতে ফিরে আসে তখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটে গেছে। তার মৃত্যুপথযাত্রী মা শোভনকে দেখবার আশায় দিন গুনে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া শোভন বাড়িতে ফিরেই অন্দরে ঢুকতে চাইলে বাধা আসে নায়েবমশাই-এর কাছ থেকে। তিনি জানান শোভনের মৃত্যুসংবাদ তারা পেয়েছেন আগেই, তাই তাকে একপ্রকার অস্বীকার করে নিজের বাবা থেকে বাড়ির সকলে। সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলে একসময় নায়েবমশাই এসে তার হাতে নোটের তাড়াটা গুঁজে দিয়ে বলেন তাকে শোভন সেজে অভিনয় করতে হবে। শোভন বুঝতে পারে তার অস্তিত্ব এদের কাছে এতটাই ফিকে যে তার নামে তাকেই জীবনের মঞ্চে আজ দাঁড়াতে হবে নিজের মৃত্যুপথযাত্রী মাকে শেষ আশ্বাসটুকু দেবার জন্য। সে ফিরে এসেও চিরকালের জন্য নিরুদ্দিষ্ট রয়ে গেছে তার পরিবারের কাছে। শোভন কখনই ভাবতে পারেনি তার চলে যাওয়াটা নিজের ইচ্ছায় হলেও ফিরে অসাটা এত কঠিন হবে। এই পরিস্থিতিতে তাই সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তার অভিমানের জন্য ক্ষণিক বিরতির খেসারত যে এইভাবে তার জীবনে ট্রাজিক পরিণতি নিয়ে আসবে তা ছিল তার কল্পনারও অতীত। কল্পনার মানসচক্ষে ঘটনাটিকে স্মরণ করলে বুঝতে পারি শোভন অর্থাৎ সোমেশের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়েছিল, তাই চুলগুলো মুঠি করে ধরে সে বসে পড়েছিল।
অথবা, ‘সত্য বলতে কী, চন্দ্রনাথ ও হীরুতে অনেক প্রভেদ!’— তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে হীরু ও চন্দ্রনাথ উভয় চরিত্রই বেশ আকর্ষণীয়। পাঠ্যাংশের কেন্দ্রে চন্দ্রনাথ থাকলেও হীরুও কোমল স্বভাবের দীপ্তি নিয়ে স্বমহিমায় আসীন। পাঠ্যাংশে দুটি চরিত্রের বিপরীতধর্মীতা বোঝাতে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি উল্লিখিত হয়েছে।
আকৃতি : কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলীর খাধারী বিশালাকৃতির মতো চন্দ্রনাথের চেহারা ও ভঙ্গিমা ছিল দৃপ্ত। অন্ধকার অসীম আকাশের বুকে কালপুরুষ যেমন নিঃসঙ্গ, তেমনি জীবনের পথে চন্দ্রনাথ একা দৃপ্ত পদক্ষেপে পাড়ি দিয়েছিল। অন্যদিকে হীরু চরিত্র মহিমায় আকাশে শুকতারার মতোই প্রদীপ্ত অথচ তার কোমল স্বভাবের জন্য সবাই মুগ্ধ।
চরিত্র : মেধাবী ছাত্র চন্দ্রনাথ দরিদ্র। জীবনে সে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হওয়ার স্বাদ পায়নি, তাই স্কুলের অন্তিম পরীক্ষায় হীরুর প্রথম হওয়া সে মেনে নিতে পারেনি। প্রধান শিক্ষককে পত্র লিখে দ্বিতীয় পুরস্কার সে প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে হীরু ধনীর সন্তান হয়েও তার কোনো অহংকার নেই। চন্দ্রনাথের প্রতিবছর প্রথম হওয়ার রেকর্ড সেই-ই প্রথম ভেঙেছিল। নরেশের কথানুযায়ী হীরু যদি চন্দ্রনাথের খাতা থেকে অঙ্ক ঢুকে থাকেও, তা বাদে আর কোনো অসৎকার্য সে করেনি। তার কাকা স্কুলের সেক্রেটারি হওয়ার কারণে সহকারী শিক্ষক যদি পক্ষপাতিত্ব করেন, তবুও হীরুকে দোষ দেওয়া যায় না। হীরু ফার্স্ট হয়েও সহপাঠী চন্দ্রনাথের প্রতি কোনোরূপ বিরূপ আচরণ করেনি। বরং চন্দ্রনাথের শেষ চিঠিকে সে বন্ধুর ‘স্মৃতিচিহ্ন’ হিসেবে যত্ন করে তুলে রেখেছে।
আত্মাভিমান : অতিরিক্ত আত্মসচেতনতা এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস চন্দ্রনাথকে অহংকারী ও উদ্ধৃত করে তুলেছিল। তাই প্রধান শিক্ষক ডেকে পাঠালেও সে দেখা করেনি। সে মনে করে –‘গুরুদক্ষিণার যুগ আর নেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও হীরুর প্রথম হওয়া এবং স্কলারশিপ পাওয়াকে চন্দ্রনাথ সহজভাবে মেনে নেয়নি। তাই হীরুর বাড়ির উৎসবের দিনই গ্রাম ছেড়ে নিরুদ্দিষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে, হীরু নিজের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে মাস্টারমশাই, হেডমাস্টার ছাড়াও নরেশদের মতো সহপাঠীকে সে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। অকপটে সে নরেশকে মনের কথা জানিয়ে বলে – “রিলেতে যাবার আমার বড়ো সাধ, নরু।” তার বন্ধুপ্রীতির আরো পরিচয় পাওয়া যায়, যখন সে নরেশের সাহিত্যকৃতির কথা মাস্টারমশাইকে জানায়। উৎসবের সমারোহের মধ্যেও হীরু কিন্তু চন্দ্রনাথের মতো অভিমানী বন্ধুকে ভোলেনি। তাই চন্দ্রনাথের গন্তব্য ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সে চিন্তিত হয়। তার স্মৃতিচারণার মধ্যে দিয়েই উঠে আসে চন্দ্রনাথ ও হীরুর প্রকৃতিগত পার্থক্যের সুস্পষ্ট চিত্রটি।
৬.১ মানুষের ন্যায়বোধের দ্বারা চালিত হয় পৃথিবীর ন্যায়ধর্ম। আবার মানুষের হাতেই বিনষ্টিসাধন ঘটে এর। পরস্পরবিরোধী কথা হলেও এটাই বাস্তব। মানবসমাজের কল্যাণের জন্য ন্যায়নীতির অস্তিত্ব এবং তা রক্ষা করার দায়িত্বও মানুষের। যখন সেই নীতির অস্তিত্ব লঙ্ঘিত হয় তখন জন্ম হয় অপরাধের।
যে মানুষ অন্যায় করে সে অপরাধী। কিন্তু যারা ন্যায়ের অপমান দেখেও চুপ করে থাকে সমান অপরাধী তারাও। পৃথিবীর এক শ্রেণির মানুষ নিজের ক্ষমতার স্বার্থে, লোভের বশবর্তী হয়ে সমাজের ন্যায়নীতিকে পরোয়া না করে একের পর এক অন্যায় করে চলেন। কিন্তু তাকে যদি বাধা না দেওয়া হয়, বা প্রশ্রয় দেওয়া হয় তাহলে সেই অন্যায়ের মাত্রা বেড়ে যাবে ভয়ংকরভাবে এবং সমাজের চরম অমঙ্গল ছাড়া আর কিছুই সাধিত হবে না। এই দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা দরকার সামাজিক স্বার্থে; কারণ প্রতিবাদকারীও সামাজিক মানুষ। কিন্তু চুপ করে অন্যায় সহ্য করলে অন্যায়কারীর সঙ্গে সঙ্গে অন্যায়কেও প্রশ্রয় দেওয়া হবে। ভয়ে, ভক্তিতে বা উদাসীনতায় যারা অন্যায়কারীকে সমর্থন করে তারাও সমান দোষী। তাই অন্যায়কারী একা নয় অন্যায়ের সমর্থনকারীরও দণ্ডিত হওয়া উচিত। আমাদের কাছে তারা দুপক্ষই হবে সমান ঘৃণার পাত্র।
৬.২ বহু ব্যয় করে মানুষ পর্বত, সমুদ্র দেখে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে হলে ঘরের কাছেই দেখা মিলবে শিশিরবিন্দু হয়তো ধানের শিষের ওপর পড়ে থাকবে। অর্থাৎ মানুষের যে মন সুদূর-পিয়াসী সৌন্দর্য আকণ্ঠ পান করতে চায়, সে ভুলে যায় সৌন্দর্যের উপলব্ধিকে। তাই ঘরের কাছেই যা সহজে উপভোগ করা যায় তাকে অবহেলা করে, দূর হতে দূরে ধাবিত হয়। মানুষের মনই সৌন্দর্য উপভোগ করার পরম সম্পদ। সার্থকতা সেখানেই পূর্ণ হয় যার দেখার মতো উপযুক্ত মন আছে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র-এর ১৩.২-এর রচনাটি দেখুন।