Contai Model Institution (HS)
১.১ ‘যাদের নাম অবিনশ্বর’ তারা হলেন (গ) বিট্পাল ও ধীমান।
১.২ ‘ভাঙার গান’ গীতিকাটির কাব্যগ্রন্থ হল – (ক) ‘ভাঙার গান’।
১.৩ ‘শোভনের বুকে ছুরির মতো বিঁধল।’ – (ক) বাবার মুখের – বেদনাময় বিমূঢ়তা।
১.৪ চন্দ্রনাথের মুখের মধ্যে যে অংশ প্রথমেই চোখে পড়ে (খ) মোটা নাক।
১.৫ ‘বিভু’ কথাটির অর্থ হল – (ক) পরমেশ্বর।
১.৬ আরবি-ফার্সি শব্দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা ‘আহাম্মুখী’ বলে মনে করতেন – (খ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
১.৭ দুই রক্ষী ধীবরকে বলেছিল – (গ) গাঁটকাটা ।
১.৮ ‘ফ্রয়ালাইন’ শব্দের অর্থ – (খ) মিসেস ।
১.৯ ‘পিগম্যালিয়ন’ নাটকটির লেখক – (গ) বার্নড শ ।
১.১০ এরিখের ব্যারাম ছিল – (গ) মৃগী।
১.১১ . প্রাতিপাদিক গঠিত হয় – (গ) ধাতু + প্রত্যয়।
১.১২ স্ত্রী প্রত্যয় মূলত – (খ) তদ্ধিত প্রত্যয়।
১.১৩ বিশেষ্যের অপর নাম – (খ) সংজ্ঞা।
১.১৪ পূরণবাচক বিশেষণ (ঘ) সংখ্যার ক্রম বোঝায়। –
১.১৫ “নদী আপন বেগে পাগল পারা” – নিম্নরেখ পদটি হল – (ক) আত্মবাচক সর্বনাম।
১.১৬ “মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের খেলা হবে” – নিম্নরেখ পদটি হল – (ক) সংযোজক অব্যয়।
১.১৭ কার্য-সংগঠনমূলক পদকে বলা হয় – (ঘ) ক্রিয়া।
১.১৮ ‘পড়’ ধাতুর মধ্যম পুরুষের ঘটমান অতীতের তুচ্ছার্থের রূপ হল – (ঘ) পড়তেছিলি।
২.১ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি অস্তমিত সূর্যের আভায় কামরাঙা ফলের মতো লাল হয়ে যাওয়া মেঘকে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে একটু একটু করে ডুবে যাওয়া মৃত মনিয়া পাখির সাথে তুলনা করেছেন।
২.২ সংসারে আবদ্ধ মানুষগুলির জীবনে দুঃখ-যন্ত্রণার শেষ না থাকলেও জীবনের প্রতি তাদের দুরন্ত আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যায় না। গ্রামজীবনের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে লগ্ন হয়ে মানুষের বেঁচে থাকার স্বাদ এবং সাধ ফুরোয় না কখনও। তাদের বাগানে কুন্দফুলের হাসি যেমন সত্য, তেমনি সত্য তাদের এই দুঃখময় জীবনের পথ চলা ।
২.৩ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পের কথক তার অঙ্কের মাস্টারমশাইকে নিয়ে লেখা গল্প একটি সাহিত্য পত্রিকায় দশ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু সেই তিনিই পরিণত বয়সে এসে অনুভব করেন মাস্টারমশাইয়ের কাঠিন্যের আড়ালের অপার স্নেহকে। অনুতপ্ত সুকুমার তার এ অপরাধকে লজ্জা বলে মনে করেছেন।
২.৪ ঘর ঝাঁট দিতে গিয়ে রাধারাণী পথিকের ফেলে যাওয়া একখানি নোট কুড়িয়ে পায়। নোটটিকে কেউ যাতে চোরা নোট বলতে না পারে, সেজন্য পথিক রুক্মিণীকুমার রায় তাতে নিজের এবং রাধারাণীর নাম লিখে রেখে গিয়েছিলেন।
২.৫ হিমালয়ের কোলে পাহাড়ের ঢালু অংশে সবুজ রঙের সারি সারি চায়ের ক্ষেত্রগুলি অত্যন্ত সুন্দর। চা খেতের মধ্যবর্তী মানুষের চলাচলের জন্য যে সংকীর্ণ পথ তাকেই লেখিকা ধরণীর সীমন্ত বলেছেন। নিবিড় শ্যামল বন যেন বসুমতীর ঘন কেশপাশ এবং পথগুলি যেন আঁকাবাঁকা সিঁথি।
২.৬ মুরশিদিয়া বা মুরশিদি ইসলাম ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কিত সাধনগীতি। দেহাত্মবাদী ও গুরুবাদী সাধনা এই গানের মূল বিষয়। মানবদেহ, তার জন্ম এবং এই দেহকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্রিয়াকৌশল বিষয়ক নানা তত্ত্ব, বিশ্বাস ও মিথ এই ধারার গানের মূল বিষয়।
২.৭ রাজার কাছ থেকে ঘুরে এসে রাজ শ্যালক জানান যে আংটি পাওয়ার বিষয়ে ধীবরের সমস্ত কথা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে, ফলে রাজা ধীবরকে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাছাড়াও মহারাজ খুশি হয়ে আংটির মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ ধীবরকে দিয়েছেন বলেও রাজ শ্যালক জানান ৷
২.৮ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পের মূল চরিত্র শঙ্কু বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক, চোদ্দোয় আইএসসি আর ষোলোয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন।
২.৯ হাইনরিখ স্টাইনার জার্মানির একজন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি, যিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতের অধ্যাপনা করেন। তিনি বেদ, উপনিষদ নতুন করে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন।
২.১০ কারিনহল হল গোয়রিং-এর স্ত্রী কারিনের স্মৃতিসৌধ এবং গোয়রিং-এর কান্ট্রি হাউস। কারিনহল আগে ছিল একটা হান্টিং লজ, পরে গোয়রিং এটা কিনে নিয়ে এটিকে প্রাসাদে পরিণত করেন।
২.১১ ব্যবহার অনুযায়ী অনেক শব্দ ভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত হয়। ‘দিয়া’ এমন একটি শব্দ যা বাক্যে প্রয়োগকালে ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন—“যতন দিয়া কাজটি সম্পূর্ণ করিও” – এখানে “দিয়া” শব্দটি ‘দ্বারা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আবার “উহাকে বইটি দিয়া আসিও” এখানে ‘দিয়া’ শব্দটি ‘প্রদান করা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
২.১২ ‘জিজ্ঞাসা’ শব্দটির প্রত্যয় হল জ্ঞা + সন্ + অ + আ – ‘ব্যাঙাচি’ শব্দটির প্রত্যয় হল – ব্যাঙ + আচি।
২.১৩ অজ্ঞাতমূল শব্দ : যেসব দেশি শব্দগুলির উৎস প্রাচীন তা উপলব্ধি করা গেলেও, তাদের মূল খুঁজে পাওয়া যায় না, তাদের অজ্ঞাতমূল শব্দ বলে। যেমন কোপাই, কাঁসাই, রিষড়া ইত্যাদি।
২.১৪ রূঢ় শব্দ ও যোগরূঢ় শাব্দর মাধ্য পার্থক্য :
রূঢ় শব্দ যেসব সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও প্রচলিত অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয় তাদের রূঢ় শব্দ বলে। যেমন— গবাক্ষ (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ গোরুর চোখ, ব্যাবহারিক বা | প্রচলিত অর্থ—জানলা)।
যোগরুঢ় শব্দ যেসব সাধিত শব্দ একাধিক ব্যুৎপত্তিগত অর্থের যে-কোনো একটিকে বোঝায় তাকে যোগরুঢ় শব্দ বলে। যেমন— পঙ্কজ (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যা পাঁকে জন্মায়)। পাঁকে অনেক কিছুই জন্মায় কিন্তু পঙ্কজ শব্দটির ব্যাবহারিক অর্থ কেবল পদ্মফুলকেই বোঝায়।
২.১৫ অব্যয়জাত বিশেষণের বাক্যে প্রয়োগ করে পাই – আচমকা চিৎকার শুনলাম। এখানে ‘আচমকা’ বিশেষণটি অব্যয়পদ থেকে জাত ৷
২.১৬ যৌগিক সর্বনাম বাক্যে প্রয়োগ করে পাই। – যে কেউ এই কাজটি করতে পারবে। এখানে ‘যে’ আর ‘কেউ’ সর্বনামদুটি একটি সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২.১৭ নিত্য সম্বন্ধী অব্যয়’: কতকগুলি অব্যয় আছে, যেগুলি জোড়ায় জোড়ায় ব্যবহৃত হয়। একটি ভিন্ন অপরটি একা ব্যবহৃত হয় না বলে এগুলিকে নিত্য সম্বন্ধী অব্যয় বলা হয় । যেমন— অনিতা যেমন মেধাবী তেমনই বিনয়ী।
২.১৮ অপূর্ণ ক্রিয়া : যেসব ক্রিয়াকে সব কালে ও ভাবে ব্যবহার করা চলে না তাদের বলা হয় অপূর্ণ ক্রিয়া বা পঙ্গু ক্রিয়া। যেসব ধাতু থেকে এই ক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাদের পঙ্গু ধাতু বা অপূর্ণ ধাতু বলে। ‘বট্’ ধাতুর বর্তমান ছাড়া অন্য কোনো কাল নেই । যেমন— একা দেখি কুলবধূ কে বট আপনি ।
৩.১ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বিরচিত ‘আবহমান’ কবিতায় ‘উঠান’ হল বঙ্গভূমির প্রতীক।
আলোচ্য কবিতায় কবি প্রবাসী বঙ্গবাসীদের গ্রামবাংলায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন। গ্রামের পরিচিত উঠোনে লাউমাচায় থাকা ছোট্ট লাউফুল সন্ধ্যার বাতাসে দোদুল্যমান। কবি গ্রামবাংলার এই প্রকৃতিলগ্ন জীবনের কাছাকাছি দাঁড়াতে বলেছেন–
“যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে ।
ছোট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল সন্ধ্যার বাতাসে।”
৩. ২ Bantra MSPC High School-এর ৩.৫-এর উত্তরটি দেখুন।
৪.১ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ উপন্যাসের অন্তর্গত ‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশে রাধারাণী নিতান্তই এক বালিকা, তার বয়স একাদশ পূর্ণ হয়নি। একজন পরিণত, বিচক্ষণ মানুষের সচেতনতাবোধ এই এগারো বছর বয়সি বালিকার যে থাকা সম্ভব নয় তার ইঙ্গিত দেওয়ার জন্যই লেখক ‘ক্ষুদ্র বুদ্ধিটুকু’ বলেছেন।
বৃষ্টিভেজা অন্ধকার রাতে অকস্মাৎ এক অচেনা, অজানা লোক রাধারাণীর ঘাড়ের উপর পড়ায় রাধারাণী ভয় পেয়ে উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে শুরু করে। কিন্তু পরে কণ্ঠস্বর শুনে সে অনুধাবন করে লোকটির কোনো মন্দ উদ্দেশ্য নেই, বরং লোকটি দয়ালু। কাহিনির পরবর্তী পর্যায়গুলিতে আমরা আগন্তুকের দরদি মনের প্রকাশ পাই।
৪.২ ছোটোগল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে দু-বছর পর বাড়ি ফিরে শোভন নায়েবমশাইয়ের কাছে বাবা-মায়ের সঙ্গে একবার মাত্র দেখা করবার কাতর অনুরোধ করে। তখন নায়েবমশাই তাকে বলেন যে, শোভন সাতদিন আগে মারা গেছে এবং সেই মৃত্যুসংবাদ তারা পেয়েছেন।
নিজের মৃত্যুসংবাদ শুনে শোভন একদিকে হতাশ হয়, অন্যদিকে সে হেসে ফেলে। নায়েবের কাছে বিদ্রুপ করে জানতে চায় যে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। তাতে নায়েবমশাই জানান গাড়ি চাপা পড়ে অপঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে, তবে নাম-ধাম পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। হাসপাতালে খোঁজ নেওয়ায় ডাক্তারের বর্ণনাতেও তার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। এভাবেই শোভন তার নিজের মৃত্যুসংবাদ শোনে।
৫.১ হিমালয় পার্বত্য প্রদেশে বসবাসকারী স্ত্রীজাতিকে ভুটিয়ানি বলা হয়। তারা নিজেদের ‘পাহাড়নি’ বলে আখ্যা দেয়। স্বভাবতই তারা শ্রমশীলা, কর্মঠ, সৎ ও সাহসী। তারা বন্য প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠে। বন্যপ্রাণীকে ভয় না পেলেও জোঁকের উপদ্রব থেকে তাদের নিস্তার নেই। ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া লিখেছেন ভুটিয়ানিরা সাত গজ লম্বা কাপড় ঘাঘরার মতো করে পরে, কোমরে এক খণ্ড কাপড় জড়ানো থাকে। গায়ে জ্যাকেট এবং বিলাতি শাল দিয়ে মাথা ঢাকা থাকে। পিঠে এক মন বোঝা নিয়ে অনায়াসে উঁচুতে উঠতে পারে তারা, আবার একইভাবে তারা নীচেও যায়।
৫.২ বাংলা ভাষায় আগত আরবি-ফারসি শব্দগুলোকে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনায় ‘জীবনৃত’ শব্দ বলেছেন।
আত্মনির্ভরশীল না হওয়ায় জন্মগত ও অন্যান্য সূত্রে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় শাসন ও সামাজিক পটবদলের কারণে আরবি ফারসি শব্দ একসময়ে বাংলার শব্দভাণ্ডারে স্থান পেলেও বর্তমানে চর্চার অভাবে এদের ব্যবহার কম এবং নতুন শব্দের আগমনের সম্ভাবনা প্রায় নেই। তাই বর্তমানে এই ভাষাগুলির কম শব্দ ব্যবহারের নিরিখে লেখক এদের ‘জীবন্থত’ বলেছেন।
৬.। Barlow Girls’ High School (HS)-এর ৭.২-এর উত্তরটি দেখুন।
৬.২ রাজা দুষ্মন্তের কর্মচারী, নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালকের সঙ্গী প্রথম রক্ষীর নাম সূচক ।
ধীবর নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে চাইলে তাকে নানাভাবে ব্যঙ্গ, অপমান, কটূক্তি ও হেনস্তা করেছে প্রথম রক্ষী। সে ধীবরকে ব্যঙ্গাত্মক শেষে ‘সদ ব্রাহ্মণ’ বলে অপমান করে। আবার ধীবরকে হত্যা করার পৈশাচিক লালসায় বলে – “একে মারার আগে এর গলায় যে ফুলের মালা পরানো হবে, তা গাঁথতে আমার হাত দুটো (এখনই) নিশপিশ করছে।”
রাজা দুষ্মন্ত আংটির সমমূল্য পারিতোষিক ধীবরকে দিলে সূচক তা মেনে নিতে না পেরে বলেছে ধীবরকে যেন শুল থেকে নামিয়ে একেবারে হাতির পিঠে বসানো হল।
৭.১ টিড়ীবাবার জানা ছিল সোনেপত্তীর গাছ কোথায় আছে। যুবা বয়সে যখন তিনি কাশীতে ছিলেন, তখন তাঁর একবার খুব কঠিন পাণ্ডুরোগ হয়েছিল, আর তখন গুরুদেবের কাছ থেকে এই ‘সোনেপত্তী’র নাম প্রথম শোনেন টিক্ড়ীবাবা।
টিকড়ীবাবা যোগী পুরুষ। উশ্রীর ওপারে একটা গ্রামে গাছতলায় বসে তিনি ধ্যান করেন। চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে তিনি চিকিৎসার জন্য এসে ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কঠিন পীড়া অনুভব করে ‘সোনেপত্তী’ বা স্বর্ণপর্ণী নামক এক গাছড়ার কথা বলেন। তিনি যখন যুবা বয়সে কাশীতে থাকতেন, তখন তাঁর একবার কঠিন পাণ্ডুরোগ হলে তাঁর গুরু সোনেপত্তীর দুটো শুকনো পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাঁকে খাইয়ে দেন। টিক্ড়ীবাবার ভাষায় – “রাতমে সোনে কা পহলে গটগট পী লিয়া, আউর সুবহ রোগ গায়ব! উপশম!” 1 এইভাবে স্বর্ণপর্ণী টিক্ড়ীবাবার জীবনে কাজে লাগে ।
৭.২ হিটলারের সামরিক বাহিনীর অন্যতম নেতা হের্ গোয়রিং গ্রন্থি সংক্রান্ত জটিল রোগে ভুগছিল।
“গোয়রিং তার ব্যাধিমুক্তির জন্য নানারকম চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রমও করত। যেমন- হাঁটা, টেনিস খেলা ইত্যাদি। যদিও যার সঙ্গে খেলত তাকে সে বলে দিত বলকে তার নাগালের মধ্যে রাখতে, কারণ সে দৌড়োতে পারত না। এছাড়া সে নিয়মিত শিকারও করত।
গোয়রিং-এর খাওয়ার প্রতি এতটাই লোভ যে, সে স্থূলকায় অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে না। দিনে চারবার খেয়েও তার ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় না বলে তাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্যান্ডউইচ, সসেজ, বিয়ার খেতে হয়। অতিরিক্ত চর্বির কারণে সে অত্যন্ত ঘামে।
৮.১ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ বলেছিলেন। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাতেও প্রকাশিত হয়েছে প্রকৃতির অপরূপ চিত্রময়তা। আলোচ্য কবিতায় কবি সান্ধ্যকালীন পরিবেশে বঙ্গপ্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও বিচিত্র গন্ধের বর্ণনা প্রসঙ্গে নানা চিত্রকল্প প্রয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা নানান তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনুষঙ্গ জীবনানন্দ কবিতায় সৃষ্টি করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশের যে নিসর্গসৌন্দর্য দেখেছেন, তাকে কবিতায় চিত্রকল্পের সাহায্যে ব্যঞ্জিত করেছেন। তাঁর চোখে সন্ধ্যার মেঘের বর্ণ অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলোয় হয়েছে কামরাঙা-লাল। কবির কল্পনায় অন্ধকারে ডুবে যাওয়া মেঘ যেন মৃত মুনিয়া পাখির মতো দৃশ্যময় হয়ে ওঠে। আবার বাংলাদেশের সান্ধ্যসৌন্দর্যের মায়াবী মেদুরতাকে প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি নীল বর্ণের ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ তুচ্ছ বস্তুকেও তিনি কবিতায় ব্যবহার করেছেন। বঙ্গপ্রকৃতির স্নিগ্ধ গন্ধ তিনি অনুভব করেছেন নরম ধানের গন্ধে, কলমির ঘ্রাণে, কখনও বা হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে। নিতান্তই সাধারণ শব্দগুচ্ছের ব্যবহারে কবি এ কবিতায় নির্মাণ করেছেন অসাধারণ কিছু চিত্রকল্প। কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস বা পাকা বটের ফলের ব্যথিত গন্ধ, রূপসী বাংলার যে অনন্যতা সৃষ্টি করে কবি সেই রূপ সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্য কোনোখানে খুঁজে পাননি।
‘কালের পুতুল’ গ্রন্থে বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের শিল্পসৃষ্টি সম্পর্কে বলেছিলেন “ছবি আঁকতে তাঁর নিপুণতা অসাধারণ। তার উপর ছবিগুলো শুধু দৃশ্যের নয়, গন্ধেরও স্পর্শেরও বটে, বিশেষভাবে গন্ধের ও স্পর্শের।” “আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটিও জীবনানন্দের সেই শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় বহন করেছে।
৮.২ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিমানস গঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পটভূমিকায়। তবে তাঁর বিদ্রোহ কেবল রাজশক্তির বিরুদ্ধে নয়, ‘প্রচলিত অবস্থার বিরুদ্ধে, স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে।’
রক্তাক্ত বিপ্লবের আহ্বান : ‘ভাঙার গান’ কবিতাটিতে কবি নজরুলের সেই বিদ্রোহী মানসিকতার পরিচয় আমরা পাই। কবিতাটির শুরুতেই কবি উদাত্ত কণ্ঠে রক্তাক্ত বিপ্লবের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ‘কারার ওই লৌহ-কপাট / ভেঙে ফেল, কররে লোপাট / রক্ত-জমাট /
শিকল পুজোর পাষাণ-বেদী! এ আত্মবলিদান : এ কাজের দায়িত্ব বর্তাবে তরুণ সম্প্রদায়ের উপর। প্রয়োজনে দেশমাতৃকার চরণে আত্মবলিদান দিতে হবে, ‘ডাক ওরে ডাক / মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে!”
তরুণ ঈশান : কবি তরুণ সম্প্রদায়কে ‘তরুণ ঈশান’ বলে সম্বোধন করেছেন। মহাদেব যেমন ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক, এই তরুণরাও মহাদেবের মতো ‘প্রলয় বিষাণ’ বাজিয়ে ধ্বংস নিশান ওড়াতে পারবে।
ঈশ্বরের কাছে প্রশ্ন : কবি চান গাজনের বাজনা বাজিয়ে প্রলয় আসুক সমগ্র দেশে। সেই বাজনার তালে তালে প্রশ্ন উঠে আসবে – “কে মালিক? কে সে রাজা ? / কে দেয় সাজা / মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?’
এর শৃঙ্খল মুক্তির আহ্বান : কবি তরুণদের ‘পাগলা ভোলা’ বলে সম্বোধন করে শৃঙ্খল মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তারাই পারে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো প্রলয় দোলায় গারদগুলি কাঁপিয়ে দিতে, ভীমকারার ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে, বন্দিশালার তালা ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে দিতে। তাই কবি বলেছেন *আগুন জ্বালা, / আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি!’
কবির প্রত্যাশা : ইংরেজ শাসন-শোষণ অত্যাচারে পীড়িত দেশবাসী একদিন রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে দেখতে পাবে মুক্তির সূর্যালোক। এইভাবে কবি নজরুল ইসলামের বিপ্লবী চেতনা প্রকাশিত হয়েছে।
৯.১ আধুনিক ছোটোগল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র সোমেশ গল্পকথককে বিজ্ঞাপনের একটি সত্যকার ট্র্যাজিডির কথা শুনিয়েছেন, যা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন ছিল না, ছিল সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস।
গল্পকথক গল্পের প্রথমাংশে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সাতটি নিরুদ্দেশের প্রসঙ্গে সোমেশকে বলেন :- ‘নিরুদ্দেশ’-এর এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে কিন্তু আমার হাসি পায়।” এরপর নিরুদ্দেশের একটি হাস্যরসাত্মক কাহিনি শোনালে সোমেশ তাকে নিরুদ্দেশের এক সত্য কাহিনি শোনান যার প্রধান চরিত্র শোভন।
প্রাচীন জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী শোভন বাড়ি ছেড়েছিল নেহাত খেয়ালের বশে। বিষয়াসক্তি ছিল না বলে সে মুক্তির স্বাদ পেতে নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এদিকে সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন শোভনের নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বেরোতে লাগল। সোমেশের কথায়— “সে বিজ্ঞাপন নয়, সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস।” প্রথমে ছেলেকে ফিরে আসার অনুরোধ করে মায়ের আর্তনাদ, পরে বাবার কাতর অনুরোধ। এরপর ঘোষিত হয় যে, শোভনের সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে, ঘোষিত হয় শোভন জীবিত কিংবা মৃত – এ খবর জানালেও পুরস্কৃত করা হবে। এইভাবে প্রায় দু-বছর ধরে বিজ্ঞাপন চলতে চলতে হঠাৎ বন্ধ হয় এই বলে— “শোভন, তোমার মার সঙ্গে আর তোমার বুঝি দেখা হলো না। তিনি শুধু তোমারই নাম করছেন এখনো।”
হঠাৎ করে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুই বছর পর উদাসীন শোভন বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু বাড়ি ফিরলে তাকে সেরেস্তার কর্মচারীসহ তার বাবাও চিনতে পারেন না। কারণ, তার মৃত্যুর ভুল খবর ইতিমধ্যে বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল। এদিকে স্বয়ং জমিদারের অনুরোধে কিছু টাকার বিনিময়ে শেষপর্যন্ত তাকে অসুস্থ মায়ের কাছে হারানো ছেলের অভিনয় করতে হয়। শোভনের এমন করুণ পরিণতি পাঠকের মনকে বিষাদগ্রস্ত করে।
৯.২ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে তিনটি চিঠির সরাসরি উল্লেখ থাকলেও, মোট ছয়বার চিঠির প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে।
কাহিনি অনুযায়ী প্রথম চিঠিটির প্রেরক চন্দ্রনাথ স্বয়ং। সে সেই বছর প্রথমবার পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় সেকেন্ড প্রাইজ গ্রহণ করবে না জানিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পূর্বে স্কুলকে চিঠি দেয়। সেই চিঠির অভিঘাতে বিদ্যালয়ে আলোড়ন পড়ে যায়। এমনকি এই চিঠির কারণে তার দাদা নিশানাথেরও ভাইয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান পত্র ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শেষ অবধি দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
এরপর এক উল্লেখযোগ্য চিঠি হল হীরুর কলকাতা থেকে পাঠানো দীর্ঘ চিঠি। সেই চিঠি থেকে জানা যায় ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার ফলাফল, অদ্ভুতভাবে যা চন্দ্রনাথের অনুমানের সঙ্গে প্রায় মিলে যায় । দশজন অকৃতকার্য, নরুর তৃতীয় বিভাগে পাস ও চন্দ্রনাথের পাঁচশো-পঁচিশের কম নম্বর পাওয়া। এই চিঠি থেকে আরও জানা যায় পুনরায় হীরু সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক হয়ে চন্দ্রনাথকে পিছনে ফেলে দিয়েছে, হীরু স্কলারশিপও পাবে।
সর্বশেষ চিঠিটির প্রেরক চন্দ্রনাথ। সে হীরুর বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পেরে এই চিঠি দিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষার অক্ষমতার কারণ জানায়। তবে চিঠির সম্বোধনে সে হীরুকে বন্ধুত্বের আন্তরিকতার বন্ধনে না বেঁধে প্রথাগত মানুষের ন্যায় সম্বোধন করে। “প্রিয়বরেষু” কেটে লেখে ‘প্রীতিভাজনেষু’। সেই চিঠি থেকে জানা যায় সে প্রথমে অনুষ্ঠানে না থাকার কারণে মার্জনা চায়। হীরুর সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করে। পাশাপাশি স্কলারশিপের জন্য এত বড়ো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় এ মতও প্রকাশ করে। এরপর সে যাত্রা করে সকলের অজানা গন্তব্যে।
এভাবেই যেন চিঠি এ গল্পের কাহিনিতে কখনও আলোড়ন তুলেছে, কখনও চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে।
১০.১ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’নাট্যাংশের মুখ্য চরিত্র ধীবর নিজের পরিচয়পূর্বক সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাজ শ্যালককে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
Bankura Zilla School-এর ৮.১-এর উত্তরটি দেখুন।
১০.২ কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে উল্লিখিত মহর্ষি কম্বের আশ্রমে অতিথি পরিচর্যার দায়িত্ব ছিল আশ্রম কন্যা শকুন্তলার ওপর। মহামুনি দুর্বাসা তপোবনে এলে শকুন্তলা আত্মচিন্তায় মগ্ন থাকায় মুনির উপস্থিতি বুঝতে পারেনি। শকুন্তলার এই উপেক্ষায় অত্যন্ত কুপিত হয়ে শকুন্তলাকে ঋষি দুর্বাসা অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, যার চিন্তায় শকুন্তলা আত্মমগ্ন, সেই ব্যক্তিকে তার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও তিনি শকুন্তলাকে চিনতে পারবেন না ।
কণ্বমুনির আশ্রমে গান্ধবর্মতে বিবাহকালে রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে বহুমূল্য, রত্নখচিত, নিজ নামাঙ্কিত একটি আংটি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে দুর্বাসার অভিশাপ খণ্ডনের কথা ভেবে শকুন্তলার সখীরা মনে করেছিলেন এই আংটি হতে পারে রাজা ও শকুন্তলার পরিচিতির স্মারক। স্বামী গৃহে যাওয়ার সময় শচীতীর্থের জলে স্নানের পর অঞ্জলি দিতে গিয়ে সেই আংটি পড়ে যায় এবং একটি রুই মাছ তা খেয়ে ফেলে।
শক্রাবতারের এক দরিদ্র ধীবর জাল, বড়শি সহযোগে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। জালে ধরা পড়া রুই মাছের পেট কেটে সে রাজার নামাঙ্কিত বহুমূল্যবান আংটিটা পেলে, সে সেটি বিক্রির জন্য নগরের লোকজনকে দেখাতে থাকে। নগররক্ষার দায়িত্বে থাকা রাজ-শ্যালক ও দুই রক্ষী চোর সন্দেহ করে আংটিসমেত ধীবরকে আটক করে রাজসভায় নিয়ে আসে। নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক আংটি নিয়ে সত্যতা যাচাই করার জন্য রাজার কাছে গেলে জানতে পারে ধীবর নিরপরাধ। আংটি পাওয়া গেলে রাজা ধীবরকে মুক্তি দেন ও সমমূল্যের উপহারে পুরস্কৃত করেন। শাস্তি না পেয়ে পুরস্কৃত ধীবরকে দেখে রক্ষীরা ঈর্ষান্বিত হলে উদারমনস্ক ধীবর তার নিজের প্রাপ্য থেকে অর্ধেক দিয়ে দেন তাদের। সত্যবাদী সৎ ধীবরের আচরণে খুশি হয়ে রাজ-শ্যালক তাকে তার প্রিয় বন্ধুর মর্যাদা দেন।
‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’-এর কাহিনি নির্যাস এই নাট্যাংশে আংটির প্রসঙ্গে ঘনীভূত হয়েছে। ওই আংটি রাজ শ্যালক রাজাকে দেখালে রাজার হৃদয় পরিবর্তন হয়। শকুন্তলার ওপর থাকা অভিশাপ খণ্ডিত হয় এবং বিস্মৃত ঘটনা স্মরণে এলে, রাজা দুষ্মন্ত বিহ্বল হয়ে পড়েন। রাজার স্মৃতি ফিরে আসাই শকুন্তলার সঙ্গে তার মিলনের সূচক। এখানেই মূল নাটকের সুখ সমাপ্তির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
১১.১ কলকাতায় শঙ্কু প্রোফেসারির কাজ নেওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই ইংরেজি ভাষার বিজ্ঞান বিষয়ক সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রিকা ‘নেচার’-এর গ্রাহক হন। ওই পত্রিকায় জীবতত্ত্ব সম্বন্ধে একটা চমৎকার প্রবন্ধ পড়ে তিনি জনৈক জীবতত্ত্ববিদ জেরেমি সন্ডার্সকে চিঠি লেখেন এবং তাদের মধ্যে পত্রবন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রায় আট মাস এয়ারমেলের মাধ্যমে উভয়ের কথোপকথন চলার পর হঠাৎই সন্ডার্সের উত্তর আসা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আকস্মিকভাবেই বিলেত থেকে চিঠি আসে সন্ডার্সের স্ত্রী ডরথির। শঙ্কু সেই চিঠি থেকে সন্ডার্সের যকৃতে ক্যানসার হওয়ার সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই এয়ারমেলে দশটা মিরাকিউরলের বড়ি পাঠিয়ে দেন। ঘটনার প্রায় দেড়মাস পর মিরাকিউরলের চমৎকারিত্বের প্রমাণস্বরূপ সন্ডার্স সশরীরে শঙ্কুর গিরিডির বাড়িতে এসে হাজির হন। সন্ডার্স তাঁর কাছে মিরাকিউরল সম্পর্কে যাবতীয় কথা জানার পর ওই বড়ির রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য ও বিজ্ঞানীমহলে শঙ্কুর পরিচিতি প্রদানের জন্য তাঁকে বিদেশে নিয়ে যান। সেখানে সন্ডার্স নিজের চেষ্টায় মিরাকিউরলের কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করান এবং লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে শঙ্কুর “ডিসকভার’ বিষয়ে বক্তৃতার আয়োজন করেন। ক্যাক্সটনে প্রদত্ত বক্তৃতা সমগ্র ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করে। লন্ডন থেকে শঙ্কু ভারততাত্ত্বিক হাইনরিখ স্টাইনারের শুশ্রুষা করতে বার্লিন যান। সেখানে নাৎসিদের মুখোমুখি পড়ে শঙ্কু সন্ডার্সের চালাকি ও নিজবুদ্ধির দ্বারা মুক্তি পেতে সক্ষম হন। সন্ডার্সের কর্কট রোগের চিকিৎসা ও সন্ডার্সের সহায়তায় ইংল্যান্ডে যাওয়ার ঘটনাই শঙ্কুর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
১১.২ ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পের একেবারে শেষ অংশে উক্ত মন্তব্যের বক্তা স্বয়ং প্রোফেসর শঙ্কু । শঙ্কু তাঁর যৌবনে আবিষ্কার করেন ‘মিরাকিউরল’ বা ‘সর্বরোগনাশক বড়ি’, যদিও এই কৃতিত্ব তিনি একা দাবি করেন না। মিরাকিউরল সংক্রান্ত গবেষণা তাঁকে ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু থেকে টি শঙ্কুতে পরিণত করে। বিশ্বের দরবারে তাঁর নাম ছড়িয়ে যায়। ফলস্বরূপ বন্ধু সন্ডার্সের সঙ্গে লন্ডন গেলেও সেখান থেকে ভারততাত্ত্বিক ইহুদি হাইনরিখ স্টাইনারের রোগমুক্তির জন্য জার্মানি যেতে হয়। এ খবর পৌঁছে যায় হিটলারের পার্শ্বচর গোয়রিং-এর কাছে। গোয়রিং নিজের রোগমুক্তির জন্য শঙ্কুকে অপহরণ করেন। গোয়রিং হাইনরিখ স্টাইনারকে প্যারিস যেতে বাধা দেবে না—এই শর্তে প্রোফেসর শঙ্কু চারটি মিরাকিউরল বড়ি গোয়রিং ও এরিখকে দেন। চারটে মিরাকিউরলের বড়ি খেয়ে তারা দু-জন ঘুমিয়ে পড়লে শঙ্কু পালাতে সমর্থ হন। তবে শঙ্কু নিজে মোটেও খুশি হননি। তাঁর আবিষ্কৃত মিরাকিউরল খেয়ে দুই পাষণ্ডের রোগমুক্তি ঘটবে— এই ভেবে তাঁর মন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছিল।
বন্ধু সন্ডার্সের বাড়িতে ফিরে শঙ্কু জানান নাৎসিদের খপ্পরে পড়ে তাঁর অবস্থার কথা। সেইসঙ্গে জানান গোয়রিং ও এরিখ মিরাকিউরল খেয়ে হয়তো রোগমুক্তি লাভ করেছে। এ কথা শুনে সন্ডার্সের ঠোটের কোণে হাসি দেখা দেয়। কারণ শঙ্কুর তৈরি মহৌষধ বিশ্বের হীনতম প্রাণীর উপকারে আসবে, এটা সন্ডার্স চায়নি। তাই শঙ্কুর বাক্স খুলে শিশি থেকে ‘মিরাকিউরল’ বার করে তার জায়গায় অব্যর্থ ঘুমের ওষুধ ‘সেকোন্যালের বড়ি ভরে দিয়েছিল সন্ডার্স। এতে যে নাৎসিদের কোনো উপকারই হয়নি তা জেনে শঙ্কুর মন থেকে সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়। এই কারণে বন্ধু সন্ডার্সকে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
১২.১ ‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশের লেখিকা বেগম রোকেয়া শিলিগুড়ি থেকে হিমালয়ান রেলগাড়ির যাত্রী হয়ে কার্সিয়াং-এ এসে পৌঁছেছিলেন। কার্সিয়াং-এর বায়ু পরিষ্কার, হালকা এবং স্বাস্থ্যকর। সেখানে বাতাস ও মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখে লেখিকা অত্যন্ত আনন্দ পান। বাতাস যেন মেঘেদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাড়িয়ে নিয়ে চলে। সেই সঙ্গে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় মেঘমণ্ডল সৌন্দর্যের রাজ্য রচনা করে। সূর্যের লাল আভায় পশ্চিম গগনের পাহাড়ের গা দেখে মনে হয় যেন তরল সোনা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। “অতঃপর খন্ড খন্ড সুকুমার মেঘগুলি সুকোমল অঙ্গে সুবর্ণ মাখিয়া বায়ুভরে ইতস্তত ছুটাছুটি করিতে থাকে।” মেঘেদের এই তামাশা দেখতে দেখতেই তাই লেখিকার সময় কেটে যেত।
কার্সিয়াং-এর জল আবহাওয়া লেখিকাকে অত্যন্ত মুগ্ধ করেছিল। তিনি এই জায়গায় এসে খুব আরাম ও শান্তি পেয়েছিলেন। তাঁর লেখা থেকে জানতে পারি সেখানে শীত বা গরম কোনোটিই খুব বেশি না থাকায় তিনি যেন ‘পার্বত্য বসন্তকাল’-এর পরিবেশ লাভ করেছেন। ঝরনার জল দেখতে খুব পরিষ্কার ও স্বচ্ছ এবং সেই জল স্পর্শেও আসে প্রশান্তি। স্নিগ্ধ শীতল বাতাসের স্পর্শও অত্যন্ত আরামদায়ক। হালকা বাতাসের ছোঁয়ায় মেঘ ভেসে যায় এবং অস্তগামী সূর্যের আলোয় পাহাড়ের গায়ে মেঘের শোভা লেখিকাকে আত্মহারা করে দেয়। কার্সিয়াং-এ পৌছে লেখিকা পার্বত্য প্রকৃতির অসামান্য সৌন্দর্য দর্শন করে বিমোহিত হয়েছেন। কার্সিয়াং-এর জল এবং আবহাওয়া যে সবদিক থেকেই লেখিকাকে অত্যন্ত আনন্দ ও তৃপ্তি দিয়েছিল, তা তাঁর প্রদত্ত বর্ণনা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
১২.২ মানবজাতির একটিই ধর্ম মানবতা। কিন্তু কালের নিয়মে ‘ধৃ’ ধাতু থেকে উৎপন্ন ‘ধর্ম’ অর্থাৎ, ধৃ + ম = ধর্ম শব্দটি ধারণকারী হয়ে থাকেনি। বরং দেশজাতি বিশেষের পরকাল বিশ্বাস, অলৌকিকতায় আস্থা এবং উপাসনা পদ্ধতি মেনে সে হয়ে উঠেছিল হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদির ধর্ম। সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর নিব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে বাঙালির চরিত্র মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনে ধর্মপ্রসঙ্গ এনেছেন। ‘ধর্ম” বলতে তিনি হিন্দু ও ইসলাম এই দুই ধর্মকে বুঝিয়েছেন।
বাঙালি উদারস্বভাব। পরকে আপন করা তার সহজাত বৈশিষ্ট্য। আবার বাঙালি চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান। রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য যেখানেই বাঙালি সত্য-শিব-সুন্দরের সন্ধান পেয়েছে তা গ্রহণ করেছে। গতানুগতিকতা বা প্রাচীন ঐতিহ্যের অনুকরণ সে কখনও মেনে নেয়নি। এদের দোহাই দিয়ে আবদ্ধতা সৃষ্টি করতে চাইলে বাঙালি বিদ্রোহী হয়েছে। আবার সে বিদ্রোহ উচ্ছৃঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহী হয়েছে।
বিদ্রোহী স্বভাব বাঙালির প্রাণের ধর্ম। হিন্দু বাঙালি, মুসলমান বাঙালি পরিচয় সেখানে গৌণ। ধর্মের পরিচয় সেখানে মানবিকতায় উজ্জ্বল। তাই ধর্ম বদল মিশ্র বাঙালি জাতির চরিত্র বদল ঘটাতে কখনও সক্ষম হবে না। একথা বোঝাতেই প্রাবন্ধিকের মূল্যায়ন — “এ বিদ্রোহ বাঙালি হিন্দুর ভিতরই সীমাবদ্ধ নয়। বাঙালি মুসলমানও এ কর্মে তৎপর। ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।”
১৩.১ যারা কখনও বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেয়নি, সেই মৃত্যুতে মানুষ কখনও কোনো সম্মান দেয়নি। প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষকে একদিন মরতেই হবে। আর সেই মৃত্যুকে ‘প্রাণ দেওয়া’ বলে না। নিজের জীবন যখন অপরের স্বার্থে সমর্পিত হয় তখনই ভবিষ্যতের পাতায় তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে যায়।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। মানুষ একা কখনোই বাঁচতে পারে না। তাই নিজেদের স্বার্থ ছেড়ে যখনই তারা মহৎ কাজে নিজেদের সমর্পণ করেন তখনই সকল দেশের সকল মানুষের কাছে দৃষ্টান্তযোগ্য এক নমুনা হয়ে ওঠেন। যেমন—ইংরেজদের রাজত্বকালে এদেশের স্বাধীনতা আনার জন্য যে মানুষগুলি শহিদ হয়েছিল, তারা আজও অবিস্মরণীয় রয়ে গেছেন। তাই কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মানবজীবনের বৃহত্তর স্বার্থের কল্যাণের মন্ত্রটি।