নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ভূগোল সেট ৮ (২০২৩)

Burdwan Town School

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় ভূগোল সেট ৮ (২০২৩)

বিভাগ – ক

(i) সর্বপ্রথম পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির কথা বলেন – (a) পিথাগোরাস। 
(ii) প্রথম যে ভারতীয় বিজ্ঞানী সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের কথা বলেন, তিনি হলেন- (a) আর্যভট্ট।
(iii) পৃথিবীর প্রমাণ সময় ধরা হয় যে দ্রাঘিমার সময়কে, তা হল – (a) ০°।
(iv) ভারতের যে নদী গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, তা হল – (d) নর্মদা ।
(v) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এক সময় অবস্থান করত – (a) টেথিস সাগর
(vi) মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রথম সৃষ্টি হয় – (b) রিল । 
(vii) শিলায় মরচে পড়ে যে প্রক্রিয়ায় তা হল – (c) অক্সিডেশন।
(viii) 1° অন্তর উত্তর গোলার্ধে অক্ষরেখা টানা সম্ভব – (b) ৪৭টি। 
(ix) সুনামি সৃষ্টির মূল কারণ সমুদ্র তলদেশে – (b) ভূমিকম্প।
(x) একটি সর্বব্যাপ্ত সম্পদ হল- (a) জল।
(xi) মুরশিদাবাদে যে কারণে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে, তা হল – (c) ঐতিহাসিক স্থান।
(xii) তিলপাড়া ব্যারেজ যে নদীর ওপর অবস্থিত তা হল – (d) ময়ূরাক্ষী।
(xii) যে জেলায় সবচেয়ে বেশি শহর আছে, তা হল – (b) উত্তর 24 পরগনা। 
(xiv) প্রগৌণ ভাগ থাকে যে স্কেলে তা হল (b) ডায়াগোনাল স্কেল।

বিভাগ – খ

(i) গ্রিক পণ্ডিত হোমার পৃথিবী সমতল আকৃতির মত পোষণ করেন।
(ii) কলকাতায় আবর্তন বেগ লন্ডনের থেকে বেশি।
(iii) সমাক্ষরেখাগুলি পরস্পর সমান্তরাল হলেও নিরক্ষরেখার সঙ্গে অসমান্তরাল।
(iv) তুহীন খণ্ডীকরণে সৃষ্ট শিলাখণ্ডগুলিকে ‘স্ত্রী’ বা ‘ট্যালাস’ বলে।
(v) দ্বারকেশ্বর ও শিলাবতীর মিলিত প্রবাহের নাম হলদি। 
(vi) রাজারহাট পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্র।
(vii) স্কেচ হল একধরনের মানচিত্র।
(B) (i) পৃথিবীতে জলবিষুব হয় 23 সেপ্টেম্বর তারিখে।
(ii) ভঙ্গিল পর্বত গিরিজনি আলোড়নের ফলে সৃষ্টি হয়। 
(ii) আবহবিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হল মুক্তিকা সৃষ্টি।
(iv) পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হল বন্যা। 
(v) যে যন্ত্র সূর্য ও মেরু নক্ষত্রের সর্বোচ্চ উন্নতি কোণ পরিমাপ করে, তাকে সেক্সট্যান্ট বলে।
(vi) পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে উষ্ণতা হ্রাস পায় ।
(vii) কুলটি-হিরাপুর বার্নপুর (IISCO) ভারতের কয়লাভিত্তিক প্রাচীনতম ইস্পাত কারখানা। 
(C) (i) ভারতীয় জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেন।
(ii) নিম্ন অক্ষাংশ যে তাপ বলয়ের অন্তর্গত তা হল উষ্মমণ্ডল।
(iii) ভারতের একটি সবিরাম আগ্নেয়গিরি হল ব্যারেন।
(iv) নগ্নীভবনের হার সবচেয়ে কম মরু জলবায়ু অঞ্চলে।
(v) পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম জেলা হল দক্ষিণ 24 পরগণা। 
(vi) পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে উর্বর মাটি হল পলিমাটি।
(vii) পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায় বনভূমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দার্জিলিং (74.62%)।
(D)
(i) সাতপুরা (c) স্তূপ পর্বত
(ii) মিলিয়ন টোপোশিট (a) বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র
(iii) জলদাপাড়া (d) অভয়ারণ্য
(iv) ডানকুনি (b) ফুডপার্ক

বিভাগ – গ

3 (i) বামন গ্রহ (Dwarf Planet) : 2006 সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) প্রদত্ত সংজ্ঞানুসারে – যে-সকল জ্যোতিষ্ক একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘোরে, অথচ তারা উপগ্রহ নয়, ও জ্যোতিষ্কটি পর্যাপ্ত ভরযুক্ত এবং প্রায় গোলাকার, কিন্তু ও জ্যোতিষ্কটি নিজ কক্ষপথের নিকটস্থ অঞ্চল থেকে কোনো মহাজাগতিক বস্তুকে সরিয়ে দিতে অক্ষম, তারাই বামন গ্রহ নামে পরিচিত।
উদাহরণ : সৌরজগতে আপাতত বামন গ্রহের সংখ্যা ইরিস, সেরেস, প্লুটো, হাউমিয়া এবং ম্যাকম্যাক ।
অথবা, রবিমার্গ (Ecliptic) : Bankura Christian Collegiate School-এর 3. (i)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) পেডিপ্লেন (Pediplain) : শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ও নদীর মিলিত প্রভাবে ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে পেডিমেন্টগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে পুরো ভূভাগকে প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত করে, যাকে ভূবিজ্ঞানী এল সি কিং পেডিপ্লেন নামে চিহ্নিত করেছেন।
বৈশিষ্ট্য : এটি মৃদুঢাল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। মরুভূমির মাঝে মাঝে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলাগুলি অনেকসময় ইনসেলবার্জ গঠন করে। উদাহরণ— আলজিরিয়ার পাথুরে রেগ, সাহারার বালিময় আর্গ, হামাদা।
অথবা, ক্রোনোমিটার (Chronometre) : ক্রোনোমিটার হল সময় নির্ণয়কারী এক বিশেষ ধরনের ঘড়ি, যা জাহাজের নাবিকদের কাজে লাগে। এই ঘড়ি গ্রিনিচের সময়কেই সূচিত করে, তবে এটি যে-কোনো দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময় অনুসারে ঠিক করা যায়। সাধারণত নাবিকরা এর সাহায্যে গ্রিনিচের সময় জেনে জাহাজের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন।
(iii) নাক্ষত্র বছর ( Sideral Year) : নাক্ষত্র দিনের হিসেবে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর যে সময় লাগে, তাকে নাক্ষত্র বছর বলে। একটি নাক্ষত্র বছরের সময়কাল হল 365 দিন 6 ঘণ্টা 9 মিনিট 9.5 সেকেন্ড। একটি নাক্ষত্র বছর সৌরবছর অপেক্ষা 21 মিনিট 4 সেকেন্ড বেশি হয়ে থাকে।
অথবা, জৈবিক আবহবিকার (Organic Weathering) : Baghbazar Multipurpose Girls’ School (Govt Spons)-এর 4. (ii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) পশ্চিমবঙ্গের যে দুটি জেলা খরাপ্রবণ তা হল – পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া।
অথবা, PMR : বিপর্যয় ব্যবস্থাপনাকে মূলত তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হয়। যথা— বিপর্যয়ের পূর্ববর্তী কার্যকলাপ, বিপর্যয় চলাকালীন কার্যকলাপ, বিপর্যয় পরবর্তী কার্যকলাপ। এই তিনটি পর্যায়কে একত্রে PMR পর্যায় বলে। অর্থাৎ, P – Preparedness বা প্রস্তুতিকরণ, M – Mitigation বা প্রশমন, এবং R – Recovery বা পুনরুদ্ধার।
(v) সাংস্কৃতিক সম্পদ (Cultural Resource) : যে উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে মানুষ, প্রকৃতি প্রদত্ত নিরপেক্ষ উপাদানগুলিকে সম্পদে পরিণত করে থাকে, সেই গুণাবলিগুলিকে সাংস্কৃতিক সম্পদ বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য : এই সম্পদটি মানুষের নিজস্ব সৃষ্টি। এই সম্পদ সৃষ্টিতে প্রকৃতি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে না। উদাহরণ : মানুষের শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রযুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি হল সাংস্কৃতিক সম্পদ।
অথবা, নীল সোনা (Blue Gold) : স্বাদু জলকে নীল সোনা বা Blue Gold বলা হয়, কারণ স্বাদু জল একটি অতি মূল্যবান সম্পদ। এই প্রাকৃতিক সম্পদটির বিস্তার পৃথিবীর সব জায়গায় সমপরিমাণে দেখতে পাওয়া যায় না। বিশ্বের বেশ কিছু স্থানে এই মিষ্টি জলকে সোনার মতো মূল্যবান বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই কারণে এই স্বাদু বা মিষ্টি জলকে নীল সোনা বা Blue Gold বলা হয়। 
(vi) পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের দুটি সমস্যা : Baghbazar Multipurpose Girls’ School (Govt Spons)-এর 4. (iv)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
অথবা, ভারতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী শহরের যে-কোনো দুটি সূচক : 1961 সালের ভারতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী কোনো জনপদকে শহর বলা হবে, যদি — প্রদত্ত অঞ্চল মিউনিসিপ্যালিটি, কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বা নোটিফায়েড টাউন এলাকার কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। (a) অঞ্চলটির ন্যূনতম জনসংখ্যা 5000 জন হয়। (b) অঞ্চলটির জনঘনত্ব 400 জন/বর্গকিমি হয়। (c) অঞ্চলের বসবাসকারী কর্মক্ষম পুরুষের 75% বা তার বেশি অংশ অকৃষিকাজে নিযুক্ত থাকেন।

বিভাগ – ঘ

4 (i) নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটলে সময় পরিবর্তন এবং মূলমধ্যরেখা বরাবর জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণ : 
নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটলে সময় পরিবর্তনের কারণ :
একজন পর্যটক যদি নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটতে থাকে, তাহলে তাকে দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করে যেতে হবে। পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার আবর্তন করতে সময় নেয় 1 দিন বা 24 ঘণ্টা। অর্থাৎ, 360° ঘুরতে পৃথিবী সময় নেয় (24 × 60) = 1440 মিনিট। সুতরাং, 1° দ্রাঘিমা অতিক্রম করতে পৃথিবী সময় নেয় = (1440 ÷ 360) = 4 মিনিট। তাই নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটলে প্রতি 1° দ্রাঘিমা অতিক্রম করলে 4 মিনিট করে সময়ের পার্থক্য হবে। পর্যটকটি যদি পূর্বদিকে এগোতে থাকে তাহলে 1° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময় 4 মিনিট করে এগিয়ে যাবে এবং পশ্চিমদিকে এগোতে থাকলে একই কারণে 4 মিনিট করে সময় পিছিয়ে যাবে।
মূলমধ্যরেখা বরাবর হাঁটলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ : 
মূলমধ্যরেখা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত এবং প্রতিটি অক্ষরেখাকে সমকোণে ছেদ করেছে। আমরা জানি, অক্ষরেখার পরিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে, কারণ নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে বলে উয়তা নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে ক্রমশ কমতে থাকে। তাই নিরক্ষরেখা থেকে যে-কোনো দ্রাঘিমারেখা বা মূলমধ্যরেখা বরাবর মেরু অঞ্চলের দিকে কোনো পর্যটক এগোতে থাকলে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করবে। অর্থাৎ, সে অধিক উয় জলবায়ু অঞ্চল থেকে অধিক শীতল জলবায়ু অঞ্চলে পৌঁছাবে।
অথবা, ভারতে শীতকালে কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আন্টার্কটিকায় গ্রীষ্মকালে বড়োদিন পালিত হবার কারণ : নিউজিল্যান্ড, আন্টার্কটিকা বা অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ডিসেম্বর মাসে সূর্যের দিকে হেলে অবস্থান করায় দক্ষিণ গোলার্ধের ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুস্তর তুলনামূলকভাবে উত্তপ্ত হয়ে আন্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে গ্রীষ্মকালের সূচনা করে। কিন্তু ভারত তথা সমগ্র উত্তর গোলার্ধের দূরত্ব এই সময়ে সূর্য থেকে অধিক হওয়ায় এখানে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুস্তর কম উত্তপ্ত হয়ে শীতকালের সূচনা করে। তাই 25 ডিসেম্বর ভারতে শীতকাল বিরাজ করে এবং বড়োদিন বা খ্রিস্টমাস পালিত হয়। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করায় আন্টার্কটিকা বা অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা গ্রীষ্মকালে বড়োদিন উৎসব পালন করেন।
অথবা, রকি ও আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি গড়ে উঠে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেঘনার সৃষ্টির কারণ  Bantra MSPC High School-এর 3. (i)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
সৃষ্টির কারণ : মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর অভিসারী পাতসীমান্তের অবস্থানের কারণে এই আগ্নেয় মেখলা সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব উপকূলে আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষের কারণে রকি ও আন্দিজের মতো ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ঘটেছে এবং অসংখ্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরি গড়ে উঠেছে, ফলে এই আগ্নেয় মেঘলা অঞ্চল বরাবর সবসময়ই অগ্ন্যুৎপাত ঘটে চলেছে।
(iii) দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের পার্থক্য : AC Institution, Malda-এর 4. (ii)-এর উত্তরটি দ্যাখো। 
অথবা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা : Baghbazar Multipurpose Girls’ School (Govt Spons)-এর 4. (ii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) পশ্চিমবঙ্গে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতির তিনটি কারণ : Bantra MSPC High School-এর 5. (ii)-এর অথবা-র উত্তরটি দ্যাখো।
5 (A) (i) চিত্রসহ পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতির প্রমাণ ব্যাখ্যা : সাধারণভাবে আমরা পৃথিবীর আকৃতি গোলকাকার বললেও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা এবং মহাশূন্য থেকে তোলা ছবি থেকে জানা গেছে যে পৃথিবীর আকার ঠিক গোলকাকার নয়, এর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু প্রদেশ চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত।
আমরা জানি, যেসব গোলাকার বস্তুর উত্তর ও দক্ষিণ দিক সামান্য চাপা এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিক সামান্য স্ফীত তাকে অভিগত গোলক বলে। সুতরাং পৃথিবীর আকৃতিও অভিগত গোলকের ন্যায়। এর সপক্ষে প্রধান প্রমাণগুলি হল –
পৃথিবীর নিরক্ষীয় ও মেরু ব্যাস : হিসাব করে দেখা গেছে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস 12,757 কিমি এবং মেরু ব্যাস 12,714 কিমি। এর থেকে প্রমাণ হয় যে উত্তর-দক্ষিণে মেরু অঞ্চল অপেক্ষা পূর্ব-পশ্চিমে নিরক্ষীয় অঞ্চল (12757 – 12714 = 43 43 কিমি বেশি স্ফীত।
কোনো বস্তুর ওজনের পার্থক্য : পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলক বলে মেরু অঞ্চল নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের নিকট অবস্থিত। সেইজন্য মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় বেশি। আর এই কারণেই কোনো বস্তুকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ওজন করার পর তাকে আবার মেরু অঞ্চলে ওজন করলে বস্তুর ওজন নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় বেশি হয়।
পৃথিবীর আবর্তন গতি : কোনো নরম গোলাকার বস্তুকে (যেমন—মাখা ময়দা, কাদার মণ্ড) খুব জোরে ঘোরালে কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তির প্রভাবে গোলকটির মধ্যভাগ স্ফীত ও উপর-নীচ দুই তল সামান্য চাপা হয়ে থাকে। জন্মলগ্নে পৃথিবী যখন উত্তপ্ত নমনীয় অবস্থায় ছিল তখন আবর্তন গতির প্রভাবে পৃথিবীর আকৃতিও অভিগত গোলকের রূপ নিয়েছে।
নক্ষত্রের উন্নতি কোণের পার্থক্য : নিরক্ষরেখা থেকে কোনো নক্ষত্রকে আকাশের যে স্থানে দেখা যায়, উত্তরে বা দক্ষিণে 111 কিমি অগ্রসর হলে সেই নক্ষত্রকে 1° সরতে দেখা যায়। কিন্তু মেরু বিন্দু থেকে যে-কোনো দিকে ওই একই দূরত্ব অগ্রসর হলে কোনো নক্ষত্রকে 1°-এর কম সরতে দেখা যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চল সামান্য চাপা । 
ঘড়ির সময়ের পার্থক্য : 1671 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী জন রিচার্ড তাঁর 1.5 মিটার লম্বা পেন্ডুলামযুক্ত ঘড়িটি যা প্যারিস শহরে (49° উত্তর) সঠিক সময় দিত সেটিকে নিয়ে যখন নিরক্ষীয় অঞ্চলের কেইন দ্বীপে (0°) যান তখন লক্ষ করেন ঘড়িটি 2½ মিনিট ধীরে চলছে। ঘড়িটির সময় ঠিক করতে তিনি পেন্ডুলামটিকে » ইঞি ছোটো করে দেন। এই ঘটনার 16 বছর পর নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে এই বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের কেইন দ্বীপে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব প্যারিস শহরের তুলনায় কম হওয়ায় ঘড়িটি ধীরে চলত। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কম এবং মেরুর দিক ক্রমশ চাপা তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বেশি।
পৃথিবীর বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য : 1736-37 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ‘রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ কুইটো শহর (0° অক্ষাংশ), প্যারিস (49° উত্তর অক্ষাংশ) এবং ল্যাপল্যান্ড (66½° উত্তর অক্ষাংশ) – এই তিনটি স্থানে পৃথিবীর পরিধির এক একটি নির্দিষ্ট চাপের (Arc – of Diameter) দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে। দেখা যায়,কুইটো শহরে এই চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং অন্য দুই শহরে চাপের দৈর্ঘ্য ক্রমান্বয়ে বেশি। ল্যাপল্যান্ডে চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণ হল, মেরু অঞ্চল অপেক্ষাকৃত চাপা এবং কুইটো শহরে চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম হওয়ার কারণ হল নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত। পরিমাপ করে দেখা গেছে কোনো দ্রাঘিমারেখার ওপর 1 ডিগ্রি অক্ষাংশের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নিরক্ষীয় অঞ্চলে 110.57 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে 111.7 কিমি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, পৃথিবীপৃষ্ঠের বক্রতা নিরক্ষীয় অঞ্চলে বেশি, মেরু অঞ্চলে কম।
কৃত্রিম উপগ্রহের প্রদক্ষিণ : কৃত্রিম উপগ্রহগুলির প্রদক্ষিণ থেকেও লক্ষ করা গেছে যে প্রদক্ষিণকালে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি নিরক্ষরেখার উপর এলে তা প্রদক্ষিণ বৃত্তের বাইরে চলে যায় এবং মেরু অঞ্চলে প্রদক্ষিণ বৃত্তের ভিতরে ঢুকে পড়ে। পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার হলে এরূপ হত না ।
উপরিউক্ত প্রামাণ্য তথ্যগুলির সাহায্যে আমরা জানতে পারি পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মতো।
(iii) চিত্রসহ তিনটি প্রধান মালভূমির উৎপত্তি : Balurghat High School-এর 5. (A) (ii)-এর © ও ও ও ‘সৃষ্টির কারণ’ দ্যাখো।
(iv) মাটি সংরক্ষণের কৃষিজ পদ্ধতি সম্পর্কে বিবরণ : Baghbazar Multipurpose Girls’ School (Govt Spons)-এর 5. (A) (ii)-এর উত্তরটি দ্যাখো ।
(B) (i) পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় বালুকাময় সমভূমির ভূপ্রকৃতি এবং নদনদী :
পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের বালুকাময় সমভূমি :
অবস্থান : পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার অন্তর্গত হল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের বালুকাময় সমভূমি অঞ্চল। এই সমভূমি উত্তর-দক্ষিণে 5 – 10 কিমি চওড়া এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 50 কিমি দীর্ঘ। সমগ্র অঞ্চলটির ক্ষেত্রমান প্রায় 1,352 বর্গকিমি। এই অঞ্চলের উত্তরে ওড়িশা উপকূল, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে হলদি নদী এবং পশ্চিমে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা অবস্থিত।
ভূপ্রকৃতি : এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি প্রায় সমতল এবং উপকূলের দিকে এটি ঢালু। দীর্ঘদিন ধরে উপকূলভাগের তটভূমিতে সমুদ্রতরঙ্গ, বায়ুপ্রবাহ, জোয়ারভাটা দ্বারা বালি সঞ্চিত হয়ে বালিয়াড়ি গঠন করেছে। বালিয়াড়িগুলি উপকূলের সমান্তরালে বিস্তৃত হয়েছে। এই অঞ্চলে দুটি শ্রেণিবদ্ধ বালিয়াড়ি দেখা যায়; যথা – ও কাঁথি বালিয়াড়ি, ও দিঘা বালিয়াড়ি।
কাঁথি বালিয়াড়ি : সমুদ্রের উপকূল থেকে প্রায় 9 – 10 কিমি ভিতর দিকে কাঁথি মহকুমার কাছে যে শ্রেণিবদ্ধ বালিয়াড়ি অবস্থান করছে, তাকে কাঁথি বালিয়াড়ি বলে। এই বালিয়াড়ি পুরোনো এবং বর্তমানে স্থায়ী বালিয়াড়িতে পরিণত হয়েছে। এখানকার বালিয়াড়িগুলি প্রায় 15-25 মিটার উঁচু হয়ে থাকে।
দিঘা বালিয়াড়ি : পশ্চিমবঙ্গের দিঘার নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়িসমূহকে দিঘা বালিয়াড়ি বলে। এই বালিয়াড়ি অপেক্ষাকৃত নবীন ও আলগা ধরনের। সমুদ্রক্ষয়ের ফলে পশ্চিম দিকে দিঘা তটভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং পূর্বদিকে সঞ্জয়কার্যের ফলে জুনপুটের কাছে নতুন তটভূমি গড়ে উঠেছে। বালিয়াড়িগুলি প্রায় 50 – 75 মিটার চওড়া ও প্রায় 10-12 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে।
নদনদী : উপকূলের বালুকাময় সমভূমি অঞ্চলে কোনো উল্লেখযোগ্য বড়ো নদী নেই। এখানকার প্রধান নদী রসুলপুর। এ ছাড়া উপকূলের মধ্যভাগে পিছাবনী, যাত্রা প্রভৃতি ছোটো নদী দেখা যায়। নদীগুলির জল লবণাক্ত হয় কারণ নদীগুলি জোয়ারের জলে পুষ্ট। নদীগুলি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। নদীগুলি একে অপরের সঙ্গে খাঁড়ির মাধ্যমে যুক্ত তাই এদের উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন।
(ii) পশ্চিমবঙ্গের আর্দ্র পর্ণমোচী উদ্ভিদ :
অবস্থান বা বণ্টন : উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুরশিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, নদিয়া, হুগলি, হাওড়া প্রভৃতি জেলায় এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। ও উদ্ভিদসমূহ : আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, বট, নিম, অশ্বত্থ প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য : অধিক উয়তা ও আর্দ্রতার জন্য এখানে আর্দ্র পর্ণমোচী ও কিছু কিছু চিরহরিৎ বৃক্ষ জন্মায়। ও গাছগুলি মাঝারি দৈর্ঘ্যের, পুরু ও অমসৃণ ছালযুক্ত, বড়ো বড়ো পাতা যুক্ত হয়। ও বর্তমানে সমভূমি অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বসতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের উদ্ভিদের পরিমাণ কমছে। © সমভূমি অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে।
ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ : Balurghat High School-এর 5. (B) (iv)-এর ‘ম্যানগ্রোভ বা বদ্বীপ অঞ্চলের উদ্ভিদ’ পয়েন্টটি দ্যাখো।
(ii) পশ্চিমবঙ্গের পাট চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ : Balurghat High School-এর 4. (iv)-এর অথবা-র উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) কলকাতা বন্দরের সহযোগী বন্দররূপে হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠার কারণ : Bantra MSPC High School-এর 5. (iv)-এর অথবার ‘হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠার কারণ’ অংশটি দ্যাখো ।

Leave a Comment