নব্য রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো

নব্য রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো

নব্য রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ

নব্য রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(i) জাতীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা: নব্য রাজতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জাতীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা। ইংল্যান্ডের টিউডর বংশীয় শাসকরা পার্লামেন্টের সহায়তায় নানা আইন (যেমন- Act of Superemacy) পাস করেন- যেখানে ইংল্যান্ডের চার্চের উপর থেকে রোমের পোপের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে এবং রাজার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে ইংল্যান্ডকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

(ii) পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা: সপ্তম হেনরি ও তাঁর উত্তরসূরি অষ্টম হেনরির আমলে পার্লামেন্টে নানাবিধ আইন প্রণয়ন করা হয়। এগুলির সাহায্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সামন্ত-অভিজাতদের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। পাশাপাশি এই আইনগুলিকে জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা শুরু হলে পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

(iii) প্রাতিষ্ঠানিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা রূপায়ণ: নব্য রাজতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল প্রাতিষ্ঠানিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা রূপায়ণ যার শুভ সূচনা হয়েছিল ইংল্যান্ডরাজ সপ্তম হেনরির আমলে। তবে অষ্টম হেনরির রাজত্বকালে বিশেষ করে ক্রমওয়েলের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে (১৫৩২- ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ) প্রশাসনিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হয়। তিনি প্রশাসনের ক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় কাঠামোর অবসান ঘটিয়ে জাতীয় আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর উপর প্রশাসনকে দাঁড় করান।

ক্রমওয়েল জাতীয় প্রশাসন থেকে হাউসহোল্ড বিভাগের বিচ্ছেদকে সম্পূর্ণ করেন এবং প্রশাসনকে বেশকিছু আমলাতান্ত্রিক ও কেন্দ্রীয় বিভাগ দ্বারা সংগঠিত করেন। আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর সরকার রাজার উপর নির্ভরশীল হলেও, রাজা বা তাঁর পারিষদবর্গের ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকত। তাছাড়া রাজার ব্যক্তিত্বের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতার বিপদ দূরীভূত হলে প্রশাসন স্বাধীন ও স্থায়ী হয়।

(iv) বিচার বিভাগের সুসংগঠন: নব্য রাজতন্ত্রে বিচার বিভাগকে সুসংগঠিত করা হয়, যা নব্য রাজতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ইংল্যান্ডে কাউন্সিল বিচারালয় হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করত। অন্যদিকে অষ্টম হেনরির আমলে ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় কোর্ট অফ রিকোয়েস্টস (Court of Requests) যার ফলে দরিদ্র মানুষরাও কম খরচায় দ্রুত বিচারের সুযোগসুবিধা লাভ করে।

(v) অর্থবিভাগের সংস্কার: অষ্টম হেনরির আমলে আর্থিক বিভাগের সংস্কার করে ক্রমওয়েল রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধি (National Income) করেন। এসময় আর্থিক বিষয় দেখাশোনার জন্য মোট ছ’টি স্বতন্ত্র বিভাগ প্রবর্তন করা হয়।

(vi) জাতীয় রাষ্ট্র: টিউডর শাসকদের আমলে জাতীয় রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট রচিত হয়। জাতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা, চার্চের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন, পার্লামেন্টীয় আইনের প্রবর্তন, আর্থিক-প্রশাসনিক বিভাগের পুনর্গঠন-এই সবকিছুর প্রভাবে ইংল্যান্ড এক জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে পরবর্তীকালে আত্মপ্রকাশ করে।

আরও পড়ুন – কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কী ছিল

Leave a Comment