নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 2, 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

Table of Contents

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 2, 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 2)

“আমরা তো অল্পে খুশি।”-‘আমরা’ কারা এবং কখন তারা এই কথাগুলো বলেছে?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় ‘আমরা’ বলতে সমাজের হতদরিদ্র বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে। সমাজের নীচুতলার দরিদ্র মানুষদের দিন কাটে সাধারণ ভাতকাপড়ে। তাদের জীবনে কোনো আড়ম্বর নেই, প্রাচুর্য নেই, বিলাস নেই। অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যেই তারা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। জীবনধারণের অতি সামান্য

উপকরণেই তারা খুশি থাকে, তাই দুঃখবোধকে দূরে সরিয়েই দিন কাটায় তারা। অভাবগ্রস্ত জীবনের কথা বলতে গিয়েই আলোচ্য পঙক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

“বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা।”-উক্তিটির প্রসঙ্গ লেখো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য পঙক্তিটি সংকলিত হয়েছে।

নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষের জীবন কাটে চূড়ান্ত অভাব-অনটনে, তারা অল্পেতেই খুশি থাকে, সাধারণ ভাতকাপড়েই তাদের চলে যায়। সামান্য অসুখবিসুখেও তাদের ধারদেনা করতে হয়, দৈনন্দিন জীবনযাপনের গ্লানি ভুলতে গাঁজার নেশায় ডুবে যায়। আর্থিক অভাবের জন্যই প্রতিদিন তারা বাজার করতে পারে না, আবার হাতে টাকাপয়সা এলে মাত্রাছাড়া বাজার করে। মাত্রাছাড়া বাজার করার প্রসঙ্গেই গোলাপচারা কিনে আনার প্রসঙ্গটি এসেছে।

“কিন্তু পুঁতব কোথায়।”- কোন প্রসঙ্গে কবির এই উক্তি?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবি দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার ছবি অঙ্কন করেছেন। অভাবগ্রস্ত জীবনের বাঁকে বাঁকে যে কত যন্ত্রণা, কত বাথা-বেদনা বা ঘাত-প্রতিঘাতের ঢেউ আছড়ে পড়ে দরিদ্রদের জীবনে তা কবি গভীর সহানুভূতির সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ অল্পেতেই খুশি। অভাবগ্রস্ত জীবনে কোনো বর্ণময় স্বপ্ন তাদের থাকে না। রোজ ঠিকঠাক বাজার করার সামর্থ্য থাকে না, কিন্তু যেদিন বাজার করার সামর্থ্য হয় সেদিন তা হয় মাত্রাছাড়া। সেদিন শখ করে বাজার থেকে গোলাপের চারা কিনে আনে। গোলাপচারা কিনে ফেরার পথে কবিতার কথকের মনে যে সংশয় দেখা দেয় তা বর্ণনা প্রসঙ্গেই এই উক্তি।

“আমরা তো এতেই খুশি, বলো আর অধিক কে চায়।”-কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘মুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য মন্তব্যটি সংকলিত হয়েছে।

নিম্নবিত্ত বঞ্চিত হতদরিদ্র মানুষগুলো আর্থিক অনটনের জন্য প্রতিদিন বাজার করতে পারে না। আবার হাতে টাকাপয়সা এলে বাজার করে মাত্রাছাড়াভাবে এবং বাড়িতে ফেরার পথে স্বপ্ন সৌন্দর্যের প্রতীক গোলাপচারা কিনে আনে। কিন্তু গোলাপচার লাগানোর জায়গার সংস্থান বা তাতে ফুল ফুটবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় দেখা দেয় তাদের মনে। সেই গ্লানি ভুলতেই গাঁজার নেশায় ডুব দেয়। নিজেদের এই সংকটময় পরিস্থিতি বর্ণনা প্রসঙ্গেই কবিতার কথকের এই উক্তি।

“মাঝে মাঝে চলেও না দিন।”-‘চলেও না দিন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় আলোচ্য উক্তিটির বস্তা দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথক। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ দিন আনে দিন খায়, প্রতিদিন তাদের কঠিন পরিশ্রম করতে হয় খাদ্যের সংস্থানের জন্য। তাদের যাপিত জীবনে কখনও কখনও উপার্জন হয় না, তখন তাদের অভুক্ত থাকতে হয়। ‘চলেও না দিন’ বলতে খাদ্যের সংস্থান করতে না পারার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

“রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি।”- কার কখন মাথায় রাগ চড়ে যায়?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ দুপুররাতে বাড়ি ফেরে। তারপর খেতে বসে সে দেখতে পায় তার ঠান্ডা ভাতে নুনটুকু পর্যন্ত নেই। খাবারের পাতে সামান্য নুনটুকু না পেয়েই তখন তার মাথায় রাগ চড়ে যায়।

“করি তো কার তাতে কী।”-‘করি তো’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে এবং কখন এই কথা বলেছে?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় ‘করি তো’ বলতে দুপুররাতে বাড়ি ফিরে বাপব্যাটা মিলে সারাপাড়া মাথায় করার কথা বলা হয়েছে।

দরিদ্র নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি কবিতার কথক মাঝরাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে প্রচণ্ড রেগে যায়। বেপরোয়া ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বাপব্যাটা দুইজন মিলে সারাপাড়া মাথায় করে। সমাজের ‘সামান্য লোকে’র এই চিৎকারে সমাজের মানুষের কী প্রতিক্রিয়া হয় সেই ব্যাপারে তারা ভাবিত নয়। সেই প্রসঙ্গেই এই উক্তিটির অবতারণা ঘটেছে।

‘আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”-বক্তা কে? কার কাছে এই দাবি?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় হতদরিদ্র বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের বক্তব্য এটি।

সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে তথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাছেই তাদের এই দাবি।

“রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে।”-কোন প্রসঙ্গে বত্তার এই উক্তি?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘মুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য পক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার অতি প্রয়োজনীয় উপকরণটুকু পেয়েই অল্পে খুশি থেকে দিন কাটায়। তারা বাধ্য হয়েই তাদের চাহিদা সীমায়িত রাখে, তাই তাদের দুঃখবোধও থাকে না। তাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে। সামান্য অসুখবিসুখেও তাদের হাত পাততে হয় অন্যের কাছে। জীবনের অভাব, যন্ত্রণা, দুঃখ সাময়িকভাবে ভুলে থাকার জন্য নেশার ঘোরে ডুবে যায়। আর্থিক সংকটজনিত কারণে জীবনের যন্ত্রণাগুলো বোঝানোর প্রসঙ্গেই এই উক্তি।

“বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি।” কী পরিস্থিতিতে এই উক্তির অবতারণা ঘটেছে?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য পঙক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

হতদরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষ চূড়ান্ত আর্থিক অনটনের মধ্যে থাকে বলে মাঝে মাঝেই তাদের দিন চলে না। দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে প্রচণ্ড ক্রোধে উন্মত্ত হয় কবিতার কথক। বেপরোয়া রাগে অন্ধ হয়ে তখন বাবা-ছেলে দুজনে মিলে সারাপাড়া মাথায় করে। নিম্নবিত্ত দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষের ক্ষুধার জ্বালাযন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ বর্ণনা প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

“আমরা তো সামান্য লোক।”-কারা ‘সামান্য লোক’ এবং কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য পড়স্তিটি গৃহীত হয়েছে।

দরিদ্র নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি কবিতার কথক মাঝরাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে প্রচন্ড রেগে যায়। বেপরোয়া ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বাপব্যাটা দুইজন মিলে সারাপাড়া মাথায় করে। সমাজের ‘সামান্য লোকে’র এই চিৎকারে সমাজের মানুষের কী প্রতিক্রিয়া হয় সেই ব্যাপারে তারা ভাবিত নয়। সেই প্রসঙ্গেই এই উক্তিটির অবতারণা ঘটেছে।

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 3)

“আমরা তো অল্পে খুশি।”- ‘অল্পে খুশি’ মানুষদের জীবনযন্ত্রণার যে ছবি পাঠ্যকবিতায় ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় ‘অল্পে খুশি’ মানুষগুলোর জীবনযন্ত্রণার ছবি কবি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অতিসাধারণ নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষদের জীবনে অতিরিক্ত কোনো চাহিদা একেবারেই নেই, সাধারণ ভাতকাপড়েই তারা তাদের জীবন কাটিয়ে দেয়। তাদের দিন কাটে অসুখে ধারদেনাতে। আর্থিক অনটনের কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবন কষ্টকর, যন্ত্রণাদায়ক। আর্থিক অভাবের জন্য প্রতিদিন তারা বাজার করতে পারে না, আবার হাতে টাকাপয়সা এলে মাত্রাছাড়া বাজার হয়। মাত্রাছাড়া বাজার করার দিনেই ফেরার পথে কিনে আনে গোলাপচারা। ক্ষুধার যন্ত্রণা ও দৈনন্দিন গ্লানিময় জীবনে গোলাপচারা কিনে আনার মধ্য দিয়ে তাদের সৌন্দর্যবোধ ও স্বপ্নময় জীবনের ইঙ্গিত মেলে। যদিও সেই স্বপ্ন ধূসর হয় গোলাপচারা পোঁতার জায়গার অনিশ্চয়তা ও ফুল ফোটার কষ্টকর সম্ভাবনার জন্য। তবুও তারা হেসে খেলে কষ্ট করে দিন কাটিয়ে দেয়। দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না থাকার জন্য তারা প্রচন্ড রেগে যায়, বেপরোয়া রাগে প্রায় উন্মত্ত হয়ে বাপব্যাটা দুজনে মিলে প্রচণ্ড চিৎকারে সারা পাড়া মাথায় করে।

অল্পে খুশি থাকা মানুষগুলোর জীবনযন্ত্রণার ছবি এভাবেই কবি তুলে ধরেছেন এখানে।

“আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।”- ‘সাধারণ ডাতকাপড়ে’ দিন চলে যাওয়া মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনের পরিচয় দাও।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ আলোচ্য কবিতায় কবি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় তুলে ধরেছেন। তাদের দিনলিপি হল শুধুমাত্র জীবনে টিকে থাকার অদম্য লড়াই। অভাব-অনটনের জন্যই নিজেদের চাহিদাকে এরা সীমাবদ্ধ রাখে। সামান্য অসুখবিসুখে তাদের ধারদেনা করতে হয়, দৈনন্দিন জীবনের গ্লানি ভুলতে গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। প্রতিদিন বাজার করার আর্থিক সামর্থ্য তাদের থাকে না। আবার দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষগুলোর হাতে টাকাপয়সা এলে মাত্রাছাড়া বাজার করে, বাজার করে ফিরে আসার সময় কিনে আনে স্বপ্নসারে গোলাপগচারা। সুন্দর স্বপ্নময় জীবনের আশার ঘোরে সৌন্দর্যের প্রতীক গোলাপচারা কেনার পর সংশয় জাগে সেটাকে কোগাছ গৌতা হবে বা তাতে ফুল হবে কিনা সেই বিষয়ে। গভীররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে বেপরোয়া রাগে ফেটে পড়ে কবিতার কথক। অন্য ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে বাপব্যাটা দুজন মিলে প্রচন্ড চিৎকারে সারাপাড়া মাথায় করে। সাধারণ ভাতকাপড়েই তাদের একমাত্র চাহিদা, তাদের জীবনে আর কোনো স্বপ্ন নেই। এই কবি এখানে তুলে ধরেছেন।

‘চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে।”- কেন তাদের এভাবে দিন ‘চলে যায়’ তা আলোচনা করো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যে, চিরবঞ্চিত দরিদ্র মানুষের দিন কাটে সাধারণ ভাতকাপড়ে। জীবনে বেঁচে থাকার অতি সাধারণ উপকরণটুকু পেলেই তারা খুশি থাকে। সমাজের উঁচুতলার মানুষ সম্পদের বেশির ভাগ অংশটুকু নিঃশেষিত করে দেয়। উন্নয়নের চুঁইয়ে পড়া তত্ত্বানুসারে (Trickle down effect of development, সম্পদের বেশির ভাগ অংশটুকু পৌঁছে যায় ধনী শ্রেণির কাছে আর চুঁইয়ে পড়া বাকি সামান্য অংশে দিনযাপন করতে হয় নীচুতলার মানুষকে। তার ফলে দরিদ্র মানুষের কপালে জোটে শুধু বঞ্চনা ও প্রবল অনটন। সাধারণ ভাতকাপড়ে দিনযাপন করতে করতে সামান্য অসুখবিসুখে তাদের হাত পাততে হয় অন্যের কাছে। পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাই বলেছেন-

"তৃষ্ণা ওদের মেটে না তামাম দুনিয়ার ঐশ্বর্যেও
ওরা চায় তাই টাকার পাহাড় তুলতে।"

সম্পদের চূড়ায় বসে থাকা মানুষের অর্থলোলুপতার কারণেই নীচুতলার মানুষের যাপিত জীবনে কেবলই অভাব ও হাহাকার পরিলক্ষিত হয়। তাই তারা অল্পে খুশি হয়ে সীমায়িত চাহিদার বৃত্তে জীবন কাটায় এবং সামান্য অসুখবিসুখে ও অন্যের দুয়ারে হাত পাততে হয়।

“বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা।”-উক্তিটির অন্তর্নিহিত বক্তব্যবিষয় নিজের ভাষায় লেখো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। দরিদ্র নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষগুলো আর্থিক অনটনের মধ্যে তাদের চাহিদা সীমায়িত রাখে, ‘অল্পে খুশি’ হয়েই তারা দিন কাটায়। তাদের দিন কাটে সাধারণ ভাতকাপড়ে, সামানা অসুখবিসুখেও তাদের হাত পাততে হয় অন্যের দুয়ারে। প্রতিদিন বাজার করার আর্থিক সামর্থ্য থাকে না। তাই হাতে টাকাপয়সা এলে বেহিসেবি মাত্রাছাড়া বাজার করে। জীবনের পরতে পরতে গভীর অভাব, যন্ত্রণা আর গ্লানির মধ্যেও স্বপ্নপূরণের জন্য কিনে আনে গোলাপচারা। নিদারুণ অনটনে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর অন্তরে ঘুমিয়ে থাকা স্বপ্ন পাখা মেলে উড়তে চায় গোলাপের সৌন্দর্য আহরণে। এইসব মানুষও সুন্দরের পুজারি, তারাও সুন্দরের স্তবগান গাইতে ভালোবাসে। তাই গোলাপচারা পোঁতার স্থানের সংশয় এবং ফুল ফোটার অনিশ্চয়তার মধ্যেও গোলাপচারা কিনে আনে। অভাব, অনটনের মধ্যেও তাদের স্বপ্নের ও সৌন্দর্যবোধের মৃত্যু ঘটে না। দরিদ্র অসহায় মানুষের কণ্টকর জীবনেও সুন্দরের প্রতি ভালোবাসাকেই কবি অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

‘কিন্তু পুঁতব কোথায়।”-বক্তা কেন এই কথাগুলো বলেছেন?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ খুশি অল্পেতেই, বেঁচে থাকার জন্য অতিসাধারণ প্রয়োজনীয় উপকরণটুকু পেলেই এদের আর কোনো আশা বা অভিযোগ থাকে না। অভাবগ্রস্ত জীবনে কোনো স্বপ্ন থাকে না, কেননা অসুখবিসুখে ধারদেনাতেই তাদের দিন চলে যায়। দুঃখ ঘোচানোর কারণেই বাপব্যাটা মিলে গাঁজায় টান দেয়। প্রতিদিন তাদের বাজার করার সামর্থ্য থাকে না, কখনও বা আবার বাজার হয় মাত্রাছাড়া। তখন বাজার করার পথে গোলাপের চারাও কিনে নিয়ে আসে। সুন্দরের উপাসনায় বিভোর কথক গোলাপচারাকে নিয়েই বিচরণ করে এক স্বপ্নের রাজ্যে। কিন্তু সেই স্বপ্নের রাজ্যে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। সেই স্বপ্নে ঘেরা পৃথিবীটা ধূসর এবং ম্লান হয়ে যায় ক্ষুধার আঘাতে। দুবেলা ঠিকঠাক নিজেরাই যেতে পায় না, তাই তার মনে সংশয় ও ভাবনা হয় গোলাপ চারাটাকে কোথায় পুঁতবে বা তাতে ফুল হবে কিনা। ফলে দরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথক অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এই সংশয়ের কথা উচ্চারণ করে।

“সে অনেক পরের কথা। টান দিই গঞ্জিকাতে।”- আলোচ্য পঙক্তিটিতে কোন্ জীবনসত্য ফুটে উঠেছে?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। সম্পদের অসম বণ্টনের কারণে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আর্থিক শ্রেণিবিভাজনের প্রকট ছবি দেখা যায়। একশ্রেণির মানুষ সম্পদ ও ঐশ্বর্যের শিখরে অবস্থান করে। আর এক শ্রেণির মানুষ দিন কাটায় চরম অনাহারে অনটনে। আলোচ্য কবিতার কথক নিম্নবিত্ত দরিদ্র শ্রেণির প্রতিনিধি। তাদের জীবনে প্রবল আর্থিক অভাবের জন্য তারা জীবনের অতিসামান্য উপকরণটুকু পেয়ে অল্পেই খুশি থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাধারণ ভাতকাপড়ে তাদের দিন কাটে, চাহিদাও সীমায়িত তাদের। অবশ্য সামান্য অসুখবিসুখেও তাদের হাত পাততে হয় অন্যের কাছে। আর্থিক দীনতার জন্য তারা প্রতিদিন বাজার করতে পারে না, আবার হাতে টাকাপয়সা এলে মাত্রাজ্ঞানহীনভাবে বাজার করে। এমনকি, স্বপ্নসাধের গোলাপচারাও কিনে আনে। অভাব-অনটনের প্রতিনিয়ত চাপে ক্ষতবিক্ষত তারা। তবু থেকে যায় সুন্দরের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের ইচ্ছাপূরণের জন্যই গোলাপচারা কিনে আনে। কিন্তু সেই গোলাপচারা কোথায় পোঁতা হবে বা ফুল তাতে হবেই কিনা, এইসব নানা প্রশ্নে মন দোলায়িত হয়। কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হয়েই গাঁজার নেশায় ডুব দেয় কবিতার কথক। হতদরিদ্র মানুষের দিনলিপিতে কেবলই হাহাকারের ছবি দেখা যায়। তারই মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের স্বপ্নভঙ্গের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

“আমরা তো এতেই খুশি; বলো আর অধিক কে চায়?”-আলোচ্য পঙ্ক্তিটির কাদের জীবনের কথা কেমনভাবে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় অসহায় দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে। হতদরিদ্র মানুষের জীবনে অর্থ এলে মাত্রাছাড়া বাজার করে দীর্ঘকালের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণের আশায়। তাই বাজার থেকে ফেরার পথে স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের প্রতীক গোলাপচারা কিনে আনে। কিন্তু একটা সংশয় কাজ করে তাদের মনে। কারণ সেই গোলাপচারা পোঁতার জায়গা বা তাতে ফুল হবে কিনা সেই নিয়ে দ্বিধান্বিত হয় তারা। সেকারণেই স্বপ্নের মোহময়তা কেটে গিয়ে কঠোর বাস্তবের নিদারুণ আঘাত ভুলে যাওয়ার জন্য গাঁজার নেশায় ডুবে যায়। নেশার সাময়িক সুখে ডুব দিয়ে আস্বাদ করে নিতে চায় জীবনের যাবতীয় চাওয়াপাওয়া। সমাজের কাছে তারা বেশি প্রত্যাশা করতে পারে না বলেই জীবনের অতি প্রয়োজনীয় সামান্য উপকরণের মধ্যেই খুশির রসদ খুঁজে নিয়ে বেঁচে থাকে। আর্থিক শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সম্পদের অতি-অতি সামান্য উপকরণই বরাদ্দ থাকে। তাই কোনোক্রমে বেঁচে থাকার উপকরণের অধিক তাদের কপালে জোটে না। সীমায়িত চাহিদার মধ্যেই তাদের রোজনামচা অতিবাহিত হয়। তাই ক্ষুধা আর অনাহারের আঁচল জড়ানো গায়ে এভাবেই চিত্রিত হয় তাদের দিনলিপি।

“মাঝে মাঝে চলেও না দিন।”-কাদের জীবনকথা কবি এখানে কীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের হতদরিদ্র জীবনের ছবি তুলে ধরেছেন। নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষের রোজনামচা হল কোনোক্রমে জীবনে টিকে থাকা। অভাব-অনটনের মধ্যেই তারা বেঁচে থাকে, সামান্য অসুখবিসুখেও তাদের হাত পাততে হয় অন্যের দুয়ারে। উচ্চবিত্ত মানুষ অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব শক্তিশালী বলেই সমাজের সব দাবি তারা মিটিয়ে নিতে পারে। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত মানুষ অসহায়, চিরবঞ্চিত, চিরনির্যাতিত। অর্থের অভাবে নিম্নবিত্ত সম্প্রদায় জীবনের অতিসাধারণ চাহিদাগুলোও সময়মতো মেটাতে পারে। না। অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী, প্রতিদিনের এই অনটনের যন্ত্রণা ও গ্লানি ভুলে থাকতে তারা নেশার মধ্যে ডুবে থাকে। কঠিন কঠোর বাস্তব থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য তারা গঞ্জিকাতে টান দেয়। চরম আর্থিক অনিশ্চয়তার অভিশাপ তাদের জীবনের সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে জড়িয়ে আছে বলেই তাদের দিন চলে না কখনো-কখনো। তাই গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় বাপব্যাটা দুজনেরই মধ্যে। তারা সমাজের ‘সামান্য লোক’, উঁচু লোকেদের সব দাবির কাছে তাদের সামান্য চাহিদাগুলোও একেবারে মূল্যহীন ও উপেক্ষিত। অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নিম্নবিত্ত মানুষের দুর্বল ও পঙ্গু অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে অসহায় অভাব-অনটনগ্রস্ত মানুষগুলোর কোনোরকমে টিকে থাকার দিনলিপি অঙ্কন করেছেন সমাজসচেতন কবি।

“রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি।”- কার রাগ চড়ে যায় এবং তারপর কী ঘটে?

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় কথকের রাগ চড়ে যায়। দরিদ্র নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি কবিতার কথক প্রচন্ড রেগে যায় দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পাওয়ায়। অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভক্ত সমাজে দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষ সমাজের বুকে টিকে থাকে অতি সাধারণভাবে। কারণ জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ ভাতকাপড় ছাড়া আর কিছুই তারা জোটাতে পারে না। অভাব-অনটন-দারিদ্র্য তাদের জীবনের সহচর, সর্বহারা হয়ে বেঁচে থাকাটাই তাদের নিয়তি সমাজের উচুতলার মানুষের বিলাসবৈভব আড়ম্বরপ্রিয়তার মাঝে দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের চরম বঞ্চনা ও অভাব তাদে ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। তাই গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে তাদের মাথায় রাগ চড়ে যায়। সেই বেপরোয়া রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাপব্যাটা দুজন মিলে প্রচন্ড চিৎকারে সারা পাড়া মাথায় করার মধ্য দিয়ে। দৈনন্দিন জীবনের সেই আর্থিক দুর্নশ তাদের জীবনে যে ভয়াবহ গ্লানি ও অসহায়তা আনে তা থেকেই জন্ম নেয় বেপরোয়া রাগ। তাই রাগ চড়ে যাওয়ার পর বাগব্যাটা দুজন মিলে প্রচণ্ড চিৎকারে সারাপাড়া মাথায় করে। তারা যেহেতু সমাজের সামনে ‘সামান্য লোক’ তাই তাদের চিৎকারে সমাজের কী প্রতিক্রিয়া হয় তা তারা ভাবে না।

“করি তো কার তাতে কী। আমরা তো সামান্য লোক।”- কাদের কোন্ বক্তব্য এখানে প্রতিফলিত তা নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভক্ত সমাজে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ‘সামান্য লোক’ বলেই বিবেচিত হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে একেবারে পঙ্গু বলে এই শ্রেণির মানুষের কোনো মর্যাদা বা সম্মানের আসন থাকে না। সমাজের প্রতি কোনো অধিকারও তারা অর্জন করতে পারে না। আলোচ্য কবিতায় দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে বেপরোয়া রাগে উন্মত্তের মতো সারাপাড়া মাথায় করে বাপব্যাটা মিলে। তাদের এই ক্রোধ প্রকৃতপক্ষে সুদীর্ঘ বঞ্চনা ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ। অল্পে খুশি থাকা ও সাধারণ ভাতকাপড়ে বেঁচে থাকা শ্রমজীবী মানুষ কোনোরকমে দিনযাপন করে। ক্ষুধার সামান্য অথচ অতি প্রয়োজনীয় উপকরণটুকু না পেলে তাদের এই রাগের বিস্ফোরণ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কবি প্রকৃতপক্ষে সমাজের এইসব অসহায় বিপর্যস্ত মানুষের ব্যথাবেদনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের লাগামহীন ক্রোধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। ‘সামান্য লোক’ হয়েই বঞ্চিত নির্যাতিত সমস্ত মানুষের জন্য তারা সোচ্চার দাবি করে তাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা করার জন্য।

“আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”- কাদের কেন এই দাবি তা ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের অভাবগ্রস্ত জীবনের করুণ ছবি তুলে ধরেছেন। শ্রেণিবিভক্ত সমাজের একদল মানুষ ঐশ্বর্যের মিনারে বসে বিলাস বৈভবে দিন কাটায়, আর এক শ্রেণির মানুষ কেবল ভাবতেই থাকে দিনটা কীভাবে কাটাবে।

"তুমি তো প্রহর গোনো 
ওরা মুদ্রা গোনে কোটি কোটি"

বঞ্চিত, সর্বহারা মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে, অসুখ-বিসুখে ধারদেনাতে কোনোক্রমে বেঁচে থাকে। তারা অল্পেই খুশি, কেন-না তাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে। নিদারুণ অর্থের অভাবে সবদিন বাজার হয় না, কখনও কখনও দিন আর চলে না, কখনও বা মাত্রাছাড়া বাজার হয়, স্বপ্নময় কবি বাজার থেকে কিনে আনেন গোলাপচারা। কিন্তু সেই নানা রঙের স্বপ্নরূপ বাস্তবের প্রচণ্ড অভিঘাতে তছনছ হয়ে যায়, তখন ভবঘুরে কবি বলেন-‘টান দিই গঞ্জিকাতে।’ গভীর রাতে বাড়ি ফিরে খেতে বসে তাঁর রাগ চড়ে যায়, কেন-না-‘নুন নেই ঠান্ডা ভাতে।’ কবি প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হন, রাগ চড়ে যায় মাথায়, তিনি চড়েন রাগের মাথায়, তার পর বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করেন। ঘরেতে প্রচন্ড অভাব, ঠান্ডা ভাতে নুন নেই, পৃথিবীটা মনে হয় কালো ধোঁয়া-সারা পাড়া চিৎকারে মাত করার পরে লজ্জা বোধ হয় না, কেন-না তারা যে সাধারণ মানুষ। যাদের প্রতিদিন প্রতিটা মুহূর্ত কাটে অভাব আর সংকটের মাঝে, তাদের অনুভবে ও উপলব্ধিতে কেবলই সংকট নিবারণের প্রবলতম চেষ্টা। তাই তো কবি সমস্ত অসহায়, সম্বলহীন মানুষের হয়ে রাষ্ট্রের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন-‘আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।’ অভাবের তাড়নায় অস্থির মানুষের এ দাবি আসলে অর্থনৈতিক অসামা, চূড়ান্ত সামাজিক অবস্থানগত বিভেদের বিরুদ্ধেই সোচ্চার আঘাত।

“রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে।”- আলোচ্য পঙক্তিটির বক্তব্যবিষয় নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী দরিদ্র বঞ্চিত মানুষের জীবনের বিশেষ দিকটি তুলে ধরেছেন। হতদরিদ্র চিরবন্বিত মানুষ জীবনের অতি সাধারণ উপকরণটুকু পেয়েই খুশি থাকে। তাদের চাহিদা সীমায়িত রাখে, সাধারণ ভাতকাপড়ে দিন কাটায়। অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নীচুতলার মানুষের আর্থিক অভাবের স্বাভাবিক চিত্রই আমাদের সমাজে দেখা যায়। উন্নয়নের চুঁইয়ে পড়া তত্ত্ব অনুসারে (Trickle down effect of development) সম্পদের বেশির ভাগ আশই ভোগ করে সমাজের উঁচুতলার মানুষ। নীচুতলার মানুষগুলোকে দিনযাপন করতে হয় বাদবাকি সামান্য অংশে। তাই

সাধারণ ভাতকাপড়ে দিনযাপন করতে করতে সামান্য অসুখবিসুখেও তাদের ধারদেনা করতে হয়। তাদের জীবন কাটে ঘোর দুর্বিপাকে। দৈনন্দিন জীবনযাপনের এই গ্লানি থেকে সাময়িক মুক্তিলাভের জন্য তারা বাবা-ছেলে মিলে গাঁজার নেশায় ডুবে যায়। ক্ষুধাতুর মানুষের জীবনযন্ত্রণা ও তা থেকে সাময়িক মুক্তিলাভের দিনলিপি অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে আধুনিক কবির কলমে।

“বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি।”-উদ্ধৃতাংশটিতে কাদের জীবনের কোন ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় কবি হতদরিদ্র বঞ্ছিত শ্রমজীবী মানুষের জীবনের ছবি তুলে ধরেছেন। দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষ সমাজের বুকে টিকে থাকে অতি সাধারণভাবে। কারণ জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ ভাতকাপড় ছাড়া আর কিছুই তারা জোটাতে পারে না। জীবনের স্বল্প উপকরণেই হেসে খেলে কষ্ট করেই তারা দিন কাটায়। সামান্য অসুখেও ধারদেনা করে বেঁচে থাকতে হয়। নিত্য অভাব যাদের জীবনের পরতে পরতে তারা দৈনন্দিন জীবনের গ্লানি ভোলার জন্য নেশার আশ্রয় নেয়, গঞ্জিকাতে টান দেয়। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে তাদের মাথায় রাগ চড়ে যায়। সেই বেপরোয়া রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাপব্যাটা দুজন মিলে প্রচণ্ড চিৎকারে সারাপাড়া মাথায় করার মধ্য দিয়ে। ঠান্ডা ভাতে নুন না থাকা পরিবারের চরম আর্থিক দুর্দশাকেই ফুটিয়ে তোলে। দৈনন্দিন জীবনের আর্থিক দুর্দশা, গ্লানি ও অসহায়তা থেকেই জন্ম নেয় বেপরোয়া রাগ। তাই রাগ চড়ে যাওয়ার পর বাপব্যাটা দুজন মিলে প্রচন্ড চিৎকারে সারাপাড়া মাথায় করে।

“আমরা তো সামান্য লোক।”-‘সামান্য লোক’দের ব্যথা-বেদনা কবিতা অবলম্বনে ব্যাখ্যা করো।

আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় সমাজের দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ‘সামান্য লোক’ বলেই বিবেচিত হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে একেবারে পঙ্গু বলে এই শ্রেণির মানুষের কোনো মর্যাদা বা সম্মানের আসন থাকে না। সমাজের প্রতি কোনো অধিকারও তারা অর্জন করতে পারে না। আলোচ্য কবিতায় দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেয়ে বেপরোয়া রাগে বাপব্যাটা উন্মত্তের মতো সারা পাড়া মাথায় করে। তাদের এই ক্রোধ প্রকৃতপক্ষে চরম আর্থিক দুর্দশার ও গ্লানিরই বিস্ফোরণ। দরিদ্র মানুষগুলো খুব অল্পেতেই খুশি থাকে। ক্ষুধার সামান্য অথচ অতি প্রয়োজনীয় উপকরণটুকু না পেলে তাদের এই রাগের বিস্ফোরণ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তাই বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে কবিতার কথক বাবা-ছেলে একেবারেই পরোয়া করে না তাদের চিৎকারে সারাপাড়ার মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। ‘সামান্য লোক’ হয়েই তারা সোচ্চার দাবি করে তাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা করার জন্য। তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে জেগে ওঠে সুতীব্র বঞ্চনার অভিশাপ।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment