পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রসংগীতে শব্দচয়ন ও শব্দ সংস্থাপনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন

শব্দচয়ন ও রূপনির্মাণ

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, রবীন্দ্রসংগীত কেবল সুরের দিক দিয়ে বিচার্য নয়-সুরের অপূর্ব প্রয়োগ ছাড়াও কথার মাধুর্য ও ব্যঞ্জনা রবীন্দ্রনাথের গানকে বিশ্বের দরবারে অতুলনীয় করে তুলেছে। শব্দের চয়ন এবং বিশেষ স্থলে সেগুলিকে সংস্থাপিত করা রবীন্দ্রসংগীতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অভাবিত, অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয় নতুন শব্দ এবং তার ভাব, অর্থ, মাধুর্য যখন গানকে সমাপ্তিতে পৌঁছে দেয় তখন মনে হয় গানটি তার যথার্থ এবং শ্রেষ্ঠ রূপই ধারণ করেছে-সেই রূপটি ব্যতীত আর অন্য কোনো রূপ তা ধারণ করতে পারত না। রবীন্দ্রসংগীতের চূড়ান্ত রূপটিই তার সর্বোৎকৃষ্ট রূপ।

শব্দ সংস্থাপন নটরাজের ভঙ্গির সমতুল্য

সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রগানের এই রূপায়ণকে নটরাজের মূর্তির মুদ্রা সংস্থাপনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতিটি শব্দ যেন নটরাজের প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গির মতোই যথার্থ এবং পরিমিত। আর এই পরিমিত সুর ও শব্দ বোধের কারণেই রবীন্দ্রনাথ মাত্র কয়েকটি শব্দ আর একটু সুর দিয়ে মর্ত্য ও স্বর্গের মধ্যে মধুর সেতুপথ রচনা করেন। মানুষকে দেবতার চেয়ে মহৎরূপে প্রতিপন্ন করেন। এইসকল কারণবশত, নটরাজের চিরাচরিত ভঙ্গিমার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গানগুলির শব্দচয়নের মিল খুঁজে পান সৈয়দ মুজতবা আলী।

Leave a Comment