পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
ভূমিকা :
আকাশ, বাতাস, জল, গ্রহ, উদ্ভিদ, প্রাণী নিয়ে এই বিশাল জগৎ। মানুষ হল এরই একটি ক্ষুদ্র অংশ। এগুলি নিয়েই তৈরি মানুষের পরিবেশ। কিন্তু প্রকৃতি আজ নানা কারণে মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আশ্রয় না হয়ে কারাগার হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি আজ গভীরভাবে দূষিত।
পরিবেশদূষণের কারণ :
পরিবেশদূষণের মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ। পৃথিবী গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সঙ্গে রয়েছে বহু বাধাবিঘ্ন, ঝড়ঝঞ্ঝা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, খরা, মহামারি। আবহাওয়ার কারণে ঘটে নানা বিপর্যয়। সমুদ্রে সৃষ্ট নিম্নচাপ প্রায়শ প্রবল ঝড়, সাইক্লোন, আয়লা, সৃষ্টি করে। এ ছাড়া অতিরিক্ত বৃক্ষছেদন ও বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
বায়ুদূষণ ও তার প্রতিক্রিয়া :
প্রকৃতি ও পদ্ধতির ভিন্নতা অনুযায়ী দূষণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে একটি হল ‘বায়ুদূষণ’। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ জটিল জৈব যৌগ নিউক্লীয় আবর্জনা, তেল, কয়লা ইত্যাদি পুড়িয়ে কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া, নাইট্রাস অক্সাইড, আলোক রাসায়নিক ধোঁয়াশা, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদির পরিমাণ বায়ুতে বেড়ে যাওয়া। ফলে অকাল বর্ষণ, ঝড়-জল, কুয়াশা যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হচ্ছে।
জলদূষণ ও তার প্রতিক্রিয়া :
জলদূষণ আধুনিক সভ্যতার আর- এক অভিশাপ। প্রতিদিন ভারী ধাতু; হ্যালোজেন নিষিক্ত হাইড্রোকার্বন, পেট্রোলিয়াম, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা, দূষিত তরল আবর্জনা শহরের নির্গম নালি দিয়ে নদী ও সমুদ্রে এসে মিশছে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল থেকে ক্ষার, অ্যামোনিয়া, সায়ানাইড, ন্যাপথলিন, ফিনল ও বিবিধ রাসায়নিক জলদূষক উৎপাদন এসে নদনদীতে মিশছে। এই জল আবার খাল দিয়ে কৃষিজমিতে মিশে ভূমিকেও দূষিত করছে। ছড়িয়ে পড়ছে নানান সংক্রামক রোগ।
শব্দদূষণ ও তার প্রতিক্রিয়া :
শহরের বুকে শব্দদূষণের মাত্রা সর্বাধিক। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যন্ত্রচালিত গাড়ির হর্ন, কলকারখানার উচ্চ শব্দ, বাজিপটকার শব্দ, মাইক্রোফোনের আওয়াজ, উৎসবের মত্ততা সব মিলিয়ে চলছে অপস্বর সৃষ্টির প্রতিযোগিতা। এর ফলে শ্রবণ ক্ষমতার লোপ, মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, অনিদ্রা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, স্নায়বিক অস্থিরতা নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মাটিদূষণ ও তার প্রতিক্রিয়া :
বর্তমানে বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে কৃষিক্ষেত্রে এসেছে সবুজ বিপ্লব। দোফসলি থেকে তিনফসলি চাষ হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করা হচ্ছে রাসায়নিক আর কীটনাশক ওষুধ। ফলে মাটি স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে এবং মাটি দূষিত হয়ে পড়ছে।
পরিবেশদূষণের প্রতিকার :
পরিবেশদূষণের বিষয়টি সারা পৃথিবীর সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য দূষণের সম্ভাব্য উৎসগুলিতেই দূষণনিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, জলদূষণ কমাতে তরল বর্জ্য যেগুলি জলের উৎসে মেশে তাকে নির্বিষ করা, শব্দদূষণ কমাতে শ্রোতার কানে উচ্চ শব্দ যাওয়ার আগে আটকে দেওয়া। গাছ লাগানো, মাটিদূষণ কমাতে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমানো, সর্বোপরি মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
উপসংহার :
পরিবেশদূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। মানবসভ্যতার অস্তিত্বই এখানে বিঘ্নিত বা গভীর সংকটের মুখোমুখি। বিজ্ঞান যত উন্নত হোক, প্রযুক্তি যত উন্নত হোক-না কেন, মানুষ যদি না বাঁচে তার ফলে কার লাভ? মানুষকে বাঁচতে হবে, পরিবেশকে বাঁচাতে হবে এবং তার জন্য মানুষকেই ভাবতে হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) পরিবেশ রক্ষার সমস্যা, (২) সমাজজীবন ও পরিবেশ।