ফটিকের মামির চরিত্র বর্ণনা করো

‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মামি, অর্থাৎ বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রী ছিলেন বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রের ঠিক বিপরীত চরিত্রবিশিষ্ট। তাঁর চরিত্রে ছিল চরম স্বার্থপরতা। সব মায়েদের মতো ফটিকের মামির মধ্যেও ছিল নিজের তিন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ। কিন্তু পরের পুত্রের প্রতি কোনোপ্রকার স্নেহ বা ভালোবাসা তাঁর মধ্যে ছিল না।
ফটিকের কলকাতায় আগমনের মুহূর্তেই ফটিকের মামি ফটিক সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব ধারণ করতে শুরু করেন। অনাবশ্যকভাবে হঠাৎ পরিবার বৃদ্ধি হওয়াতে তিনি বিশেষ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। নিজের ছেলেদের নিয়ে তিনি নিজের নিয়মে ঘরকন্ন্যা করতেন, তার মধ্যে সহসা একটি তেরো-চোদ্দো বছরের অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলেকে ছেড়ে দিলে যে বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হয়, সেই বিপ্লব ঘটে যায়। আর সেই বিপ্লব শুরু হয় ফটিকের মামিকে সামনে রেখেই। ফটিকের স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও ফটিকের মামি সহ্য করতে পারতেন না। ফটিক মামিকে সাহায্য করার চেষ্টা করলেও মামি তা উপেক্ষার সঙ্গে পরিহার করে বলতেন-“ঢের হয়েছে, ঢের হয়েছে। ওতে আর তোমায় হাত দিতে হবে না।”
কলকাতায় মামার বাড়িতে থাকার সময় স্কুলের বই হারিয়ে ফটিক অসহায় হয়ে পড়ে। প্রতিদিন শিক্ষকের হাতে প্রহার ও অপমানিত হয়ে মামিকে বই কিনে দিতে বলে। এই সময় অনাবশ্যক অর্থনৈতিক ক্ষতিতে মামির অধরে বিরক্তির রেখা ফুটে ওঠে। তিনি পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, “আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।”
ভয়ংকর অসুস্থ ফটিককে দুজন পুলিশের লোক গাড়ি থেকে নামালে বিশ্বম্ভরবাবু কোলে করে ফটিককে অন্তঃপুরে নিয়ে যান। কিন্তু এই সময়ে ফটিকের মামি দুঃখ তো দূরের কথা সামান্য সহানুভূতি পর্যন্ত না জানিয়ে বলে ওঠেন-“কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে এ কর্মভোগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।”
পিতৃহীন, হতভাগ্য ফটিক তার মামির কাছ থেকে কখনই সহানুভূতি বা ভালোবাসা পায়নি। প্রকৃতপক্ষে ফটিকের মামি ছিলেন একজন বৈষয়িক, আত্মকেন্দ্রিক, সহানুভূতিহীনা নারী।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো