বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE
বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর (Marks 2)
1. ‘বই কেনা’ গল্পটি কার লেখা? এটির মূলগ্রন্থের নাম লেখো।
‘বই কেনা’ গল্পটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা।
এটির মূলগ্রস্থের নাম হল ‘পণ্যতন্ত্র’।
2. সৈয়দ মুজতবা আলী কী কী ছদ্মনামে লিখতেন?
উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে লিখতেন।
3. ‘মাছি-মারা-কেরানি’ কাদের বলা হয় এবং কেন?
উত্তর সাধারণত বাঙালি সরকারি কর্মচারী যাঁরা কলমের কাজ করেন তাঁদেরকে মাছি-মারা-কেরানি বলা হয়। এঁরা নকল করতে তৎপর এবং অফিসের মুহুরি বা মুন্সি হিসেবেই কাজ করেন।
এই কর্মচারীদের ব্যঙ্গ করে মাছি-মারা-কেরানি বলা হত। তাঁরা অত্যন্ত নির্বোধ এবং নকলে ওস্তাদ তাই তাঁদেরকে এই নামে অভিহিত করা হয়।
4. মাছির চোখের বৈশিষ্ট্য কী? এই ধরনের চোখকে কী বলে?
উত্তর মাছির অসংখ্য চোখ। তার সমস্ত মাথা জুড়ে গাদা গাদা চোখ আছে। চতুর্দিকে চক্রাকারে এই চোখ বসানো বলে মাছি একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়।
এই ধরনের চোখকে পুঞ্জাক্ষি বলা হয়।
5. আনাতোল ফ্রান্স দুঃখ করে কী বলেছেন?
উত্তর আনাতোল ফ্রান্স দুঃখ করে বলেছেন যে, তাঁর যদি মাছির মতো পুঞ্জাক্ষি থাকত তাহলে তিনি গোলাকার পৃথিবীর
দিগন্তবিস্তৃত সৌন্দর্যকে একই সময় একই সঙ্গে দেখতে পেতেন।
6. আনাতোল ফ্রান্স তাঁর পুঞ্জাক্ষি না থাকার দুঃখ কীভাবে পূরণ করেছেন?
উত্তর আনাতোল ফ্রান্স বলেছেন, তাঁর মনের চোখ অসংখ্য এবং তা বাড়ানো কমানো তাঁর নিজের হাতে। তাই তিনি বই পড়ে বা নানাভাবে জ্ঞানবিজ্ঞান আয়ত্ত করে নিজের মনের চোখ ফোটান এবং পৃথিবীকে জানতে পারেন।
7. পৃথিবীর সকল সভ্য জাত নিজেদের চোখ বাড়ালেও বাগুলি কী করে?
উত্তর পৃথিবীর সকল সভ্য জাত নিজেদের মনের চোখ বাড়াতে চাইলেও বাঙালি আরব্য উপন্যাসের এক-চোখা দৈত্যের মতো যৌৎ ঘোঁৎ করে আর নিজেরা অজ্ঞই থেকে যায়।
8. চোখ বাড়াবার মূল পন্থা কী?
উত্তর চোখ বাড়াবার মূল পন্থা দুটি। প্রথমত, বইপড়া এবং দ্বিতীয়ত তার জন্য বই কেনার ইচ্ছা তৈরি।
9. বারট্রান্ড রাসেল মনের চোখ বাড়ানোর প্রয়োজন কেন বলেছেন?
উত্তর বরট্রান্ড রাসেল মনের চোখ তৈরি করে নিজের ভুবন তৈরি করার কথা বলেছেন। কারণ আপন ভুবন সৃষ্টি করে তারে ডুব দিলে সংসারের জ্বালা-যন্ত্রণাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়।
10. অসংখ্য ভুবন তৈরি করার উপায় কী?
উত্তর অসংখ্য ভুবন তৈরি করার উপায় হয় বই পড়া এবং দেশভ্রমণ করা।
11. ‘কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা’- কথাগুলি কে বলেছেন? কেন বলেছেন?
উত্তর প্রশ্নে উল্লিখিত কথাগুলি বলেছেন ওমর খৈয়াম তথা সৈয়দ মুজতবা আলী।
কারণ, ওমর খৈয়াম তাঁর রচনায় স্বর্গের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে বইকে ভোলেননি। বই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাঁর কাছে।
12. বাঞ্জলি নাগর ধর্মের কাহিনি শোনে না কেন?
উত্তর আসলে বাঙালি হল অত্যন্ত কৃপণ প্রকৃতির। তাই বই কিনতে পয়সা খরচ করতে চায় না। এই কারণেই ধর্মের কাহিনি শোনে না সে।
13. বই কিনে সত্যিই কি কেউ দেউলে হয়? কারণ লেখো।
উত্তর বই কিনে সত্যিই কেউ দেউলে হয় না। কারণ, বই কিনলে এবং বই পড়লে মনের চোখ ফোটে, জ্ঞানের ভুবন তৈরি হয়। এর ফলে একজন মানুষ জ্ঞানসম্পদে সমৃদ্ধ হয়।
14. একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে কীভাবে একাধারে ‘Producer’ এবং ‘Consumer’ হয়ে ওঠে?
উত্তর একজন ব্যক্তি যখন তামাকের মিকশ্চার দিয়ে সিগারেট বানায় তখন সে একজন ‘Producer’। আর যখন সে নিজেই সেই সিগারেট খায় তখন সে ‘Consumer’। অর্থাৎ সে একাধারে নিজেই বানায় এবং নিজেই কেনে-উৎপাদক এবং ক্রেতা।
15. মার্ক টুয়েন কীভাবে তাঁর লাইব্রেরি বানিয়েছিলেন?
উত্তর মার্ক টুয়েন তাঁর লাইব্রেরি বানিয়েছিলেন কিছু বই কিনে আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার করে সেগুলো আর ফেরৎ না দিয়ে।
16. ‘জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর’। একথা কে বলেছেন? লেখক কোন্ শব্দগুচ্ছ দ্বারা এই বক্তব্যের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন?
উত্তর ‘জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর’। একথা বলেছেন জনৈক আরব পণ্ডিত।
এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর বক্তব্যের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন একটি ল্যাটিন শব্দগুচ্ছ দ্বারা। সেটি হল QED, অর্থাৎ ‘যা প্রদর্শন করা হবে।’
17. ‘জগ্রনের বাহন’ কী? প্রকৃত মানুষ কী করে?
উত্তর ‘জ্ঞানের বাহন’ হল পুস্তক।
তাই প্রকৃত মানুষ এই পুস্তক জোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের মানুষ।
18. বইয়ের প্রকৃত সম্মান করে কারা? কীভাবে সেই সম্মান তারা বজায় রাখে?
উত্তর বইয়ের প্রকৃত সম্মান করে ফ্রান্স। ফ্রান্স যদি কাউকে অপমান করতে চায় তাহলেও তা সহ্য করা যায়, কিন্তু যদি দেশকে অপমান করে তাহলে তা ভীষণভাবে দংশন করে। ফ্রান্স সেই দংশনজ্বালা মেটায় বইকে মাধ্যম করে। উদাহরণ হিসেবে ফরাসি লেখক আঁদ্রে জিদের নাম করা যায়।
19. ‘সেখানে গিয়ে অবস্থা দেখে সকলেরই চক্ষুস্থির।’-কাদের চক্ষুস্থির হয়েছিল এবং কেন?
উত্তর ফরাসি লেখক আঁদ্রে জিদে বন্ধুদের শিক্ষা দেবার জন্য তাঁর পুরো লাইব্রেরিখানা নিলাম করেছিলেন। সেই কথা শুনে তাঁর বন্ধুরা সেখানে ছুটে যান এবং তাঁদের চক্ষু স্থির হয়ে যায়। কারণ তাঁরা দেখেন যেসকল বই তাঁরা জিদকে স্বাক্ষর করে উপহার দিয়েছিলেন সেই সকল বই তিনি জন্মাল হিসেবে বেচে দিচ্ছেন।
20. প্যারিসের লোকের অট্টহাস্য কে কোথায় বসে কীভাবে শুনতে পেয়েছিল?
উত্তর প্যারিসের লোকের অট্টহাস্য ‘বই-কেনা’ গল্পের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ভূমধ্যসাগরের মধ্যিখানে বসে অর্থাৎ জাহাজে ভ্রমণকালে শুনতে পেয়েছিলেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল রয়টার্স বা রয়টার নামক সংবাদসংস্থার মাধ্যমে।
21. জিদের বন্ধুরা অপমানিত হওয়ার পর কী করেন?
উত্তর আঁদ্রে জিদের লেখক বন্ধুরা অপমানিত হওয়ার পর ডবল বা তিন ডবল দামে নিজের নিজের বই লোক পাঠিয়ে তড়িঘড়ি কিনে নিয়েছিলেন কারণ সেই খবর যত কম লোকে জানতে পারবে ততই মঙ্গল।
22. ‘এরকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ আমি ভূ-ভারতের কোথাও দেখিনি।’ কথাগুলি কে কাদের সম্পর্কে বলেছেন? কেন বলেছেন?
উত্তর প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাগুলি ‘বই-কেনা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালিদের সম্পর্কে বলেছেন।
বাঙালির মধ্যে লেখক প্রবল জ্ঞানতৃয়া দেখেছেন, কিন্তু বই কেনার বেলায় সে কৃপণ। অথচ ফুটবল খেলা বা সিনেমা দেখার জন্য লাইন দিয়ে টিকিট কাটতে তাদের কোনো দ্বিধা নেই।
23. বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে লেখকের কী মনে হয়?
উত্তর বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে লেখকের মনে হয়, বাঙালি আরব্যোপন্যাসের রাজার হেকিমের বই চুরির গল্পটা জেনে গেছে। তাই তারা মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। রাজার যেমন বই চুরি করতে গিয়ে হেকিমের কৌশলে মৃত্যু হয়েছিল, বাঙালির মধ্যেও সেই মৃত্যুভয় প্রবেশ করেছে।
বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর (Marks 3)
মাছি মারা-কেরানি বলে মানুষকে ব্যঙ্গ করা হলেও মাছি ধরা শত্রু কেন?
উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই-কেনা’ গল্পে লেখক বলেছেন মাছি ধরা যে কত শক্ত তা সকলেই জানেন। কারণ, মাছির রয়েছে পুঞ্জাক্ষি অর্থাৎ তার সমস্ত মাথা জুড়ে গাদা গাদা চোখ বসানো আছে। তাই সে চতুর্দিকে চক্রাকারে একই সময়ে একই সঙ্গে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়। ফলে মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যাওয়া হোক না কেন, সে ঠিক সময়ে উড়ে পালিয়ে যায়। এই কারণেই মাছি ধরা খুব শক্ত।
আনাতোল ফ্রাঁসের সঙ্গে সাধারণ লোকের তফাত কোথায়?
উত্তর মাছির পুঞ্জাক্ষির কথা ভেবে সকলের আপশোশ হয়। কিন্তু ফরাসি ঔপন্যাসিক তাঁর পুঞ্জাক্ষি না থাকার অভাব মিটিয়ে নেন মনের চোখ বাড়িয়ে। অর্থাৎ তিনি বই পড়েন এবং নানাভাবে জ্ঞানবিজ্ঞান আয়ত্ত করেন। এর ফলে
তিনি সমস্ত ধরনের সৌন্দর্য এবং অজানা রহস্যকে জানতে পারেন এবং তাঁর অসংখ্য চোখ ফুটতে থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষ শুধু হা-হুতাশ করে, নিজের মনের চোখ বাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করে না। তারা বই পড়ে না, জ্ঞানবৃদ্ধি হয় না তাদের এবং অসংখ্য চোখ তাদের তৈরি হয় না। এভাবেই আনাতোল ফ্রাঁস এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাত তৈরি হয়।
‘কিন্তু প্রশ্ন, এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কী প্রকারে?’-অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? অসংখ্য ভুবন সৃষ্টির উপায় কী?
উত্তর প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থটির ‘বই কেনা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
অসংখ্য ভুবন তৈরির উপায় হিসেবে লেখক দুটি পশ্চতি দেখিয়েছেন। একটি বইপড়া এবং অন্যটি হল দেশত্রমণ। কিন্তু দেশভ্রমণ করার মতো সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্য সকলের থাকে না। ফলে শেষ পর্যন্ত বই পড়াই একমাত্র অবলম্বন ভুবন সৃষ্টি করার জন্য।
ওমর খৈয়াম কে? তাঁর লেখা একটি কবিতাংশ উদ্ধৃত করো, যেখানে তিনি বইয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
উত্তর ‘বই কেনা’ গল্পের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর অন্যতম ছদ্মনাম ওমর খৈয়াম।
ওমর খৈয়ামের একটি কবিতাংশ হল-
"Here with a loaf of bread beneath the bough, A flask of wine, a book of verse and thou, Beside me singing in the wilderness And wilderness is paradise enow."
এই কবিতাংশটিতে কবি বইকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
বিভিন্ন ধর্মে বইকে কীভাবে দেখা হয়েছে?
উত্তর ওমর খৈয়াম তথা সৈয়দ মুজতবা আলী স্বর্গের সরঞ্জাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে কেতাব বা বইকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ঠিক সেভাবেই তিনি দেখিয়েছেন বিভিন্ন ধর্ম বই বা পুস্তককে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। যেমন-মুসলমানদের সর্বপ্রথম কেতাব বা বই হল কোরান। হজরত মহম্মদ কোরানের যে প্রথম বাণী শুনেছিলেন আল্লার কাছে তা হল ‘আল্লামা বিল কলমি’। অর্থাৎ আল্লা মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন ‘কলমের মাধ্যমে’। আর কলমের আশ্রয়ই হল পুস্তক।
‘বাইবেল ‘কেও খ্রিস্টধর্মে সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক বলা হয়েছে। ‘বাইবেল’ শব্দের অর্থ হল ‘বই’-বই par excellence. অর্থাৎ ‘The Book হিন্দু ধর্মেও সকল কাজের শুরুতে বাধাবিপদ দূর করেন যিনি, সেই গণপতি বা গণেশের পুজা করা হয়। ইনি জনসাধারণের দেবতা। তিনি আমাদের বিরাটতম গ্রন্থ মহাভারত মহাকাব্য লেখার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
“তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র।”-‘অচ্ছেদ্য চক্রটি’ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ গল্পটিতে লেখক বাঙালির দাম দিয়ে বই না-কেনা আর প্রকাশকের বইয়ের দাম না-কমানোর মধ্যে যে একটি চক্র তৈরি হয়েছে, তাকেই ‘অচ্ছেদ্য চক্র’ বলা হয়েছে।
বাঙালির মধ্যে জ্ঞানতৃয়া থাকলেও পয়সা খরচ করে বই কিনতে তার বড়ো অনীহা। তাই বাঙালি চায় প্রকাশক বইয়ের দাম কমাক। তাহলে তারা বই কিনতে পারবে। আবার, প্রকাশকের বক্তব্য বই যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি না হলে দাম কমানো যায় কীভাবে? ফলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না। এটাই হল অচ্ছেদ্য চক্র। ফরাসি ক্রেতা ও প্রকাশক এই ভয় পায় না। তারা বই কেনে এবং প্রকাশক কম দামে বেশি বই ছাপায়। কিন্তু ভীতু বাঙালি এই ঝুঁকি নিতে নারাজ। তাই কে ভাঙবে এই অচ্ছেদ্য চক্র প্রশ্ন থেকেই যায়।
“এক আরব পণ্ডিতের লেখাতে সমস্যাটার সমাধান পেলুম।”-কোন সমস্যার কথা বলা হয়েছে? কী সমাধান পেলেন?
উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী এক বিশেষ সমস্যার কথা বলেছেন। যে মানুষ নিজের গলা কেটে ফেললেও অন্যের জিনিস ছোঁবে না, সেই মানুষই কিন্তু বইয়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিবেকবর্জিত এবং নীতিজ্ঞানহীন। সে অনায়াসেই অন্যের বই ‘কেড়ে দেওয়া’-তে ওস্তাদ।
লেখক জনৈক আরব পণ্ডিতের লেখায় এর সমাধান পেয়েছেন। ধনীরা বলে পয়সা উপার্জন সবথেকে কঠিন। আর জ্ঞানীরা বলেন জ্ঞানার্জন সবচেয়ে কঠিন। কোন্টা সঠিক? আরব পন্ডিত বলেছেন, আসলে ধনীরা পরিশ্রম করে পায় টাকা। এই টাকা পেলে জ্ঞানীরা অনেক উন্নত পদ্ধতিতে তা খরচ করে। কিন্তু জ্ঞানচর্চার ফল বইতে থাকে এবং ধনীর হাতে যদি সেই বই তুলে দেওয়া হয়, তবে, তা তারা খুলেও দেখে না। এখানেই প্রধান পার্থক্য তাই জ্ঞানার্জন ধনার্জনের থেকে শ্রেষ্ঠ।
‘অথচ এই বই জিনিসটার প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স।”-গল্পানুসারে লেখকের বক্তব্যটির ব্যাখ্যা করো।
উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পণ্যতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ গল্পে বলেছেন যে, বইয়ের প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স। কারণ ফ্রান্স বই পড়তে ভালোবাসে এবং বই কেনে। কাউকে মারাত্মক অপমান করতে হলেও বই দিয়েই করে। যেমন-দেশের প্রতি ভক্তি ভালোবাসার জন্য ফরাসি সাহিত্যিক আঁদ্রে জিদ সোভিয়েট রাশিয়ার বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী সমালোচনামূলক বই লেখেন। এতে প্যারিসের ডালিনীয়রা জিদের পিছনে লাগা শুরু করে। কিন্তু তখন তাঁর কোনো বন্ধু তাঁর পাশে দাঁড়াননি। তখন জিদ খুব ঠান্ডা মাথায় তাঁর বন্ধুদের দেওয়া উপহারের বইগুলি সব নিলাম করে দেয়। সব জন্মাল তিনি বেচে দেন। এই ঘটনায় বন্ধুদের চক্ষুস্থির হয়ে যায়। তাঁরা চরম অপমানিত বোধ করেন।
“বাঙালি যদি হটেনটট হত, তবে কোনো দুঃখ ছিল না।”-কে কথাগুলি বলেছেন? কেন বলেছেন?
উত্তর কথাগুলি বলেছেন ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ গল্পের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী।
লেখক বাঙালির মধ্যে নানান সংমিশ্রণ দেখে কথাগুলি বলেছেন। হটেনটট হল দক্ষিণ আফ্রিকার অ-বান্টুভাষী আদিবাসী যাযাবর উপজাতি। বাঙালি যদি তাদের মতো হত তাহলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু বাঙালির কেউ কেউ বলে, বাঙালির পয়সার অভাব। কিন্তু তারা এতটাই নির্লজ্জ যে, ফুটবল খেলার মাঠ বা সিনেমার টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলে। বাঙালির এই মিশ্র চরিত্রের কারণে লেখক কথাগুলি বলেছেন।
“সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।”-‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কোন্ গল্প জেনে সে বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে?
উত্তর ‘সে’ বলতে এখানে বাঙালির কথা বলা হয়েছে।
এক জ্ঞানপিপাসু রাজা তাঁর হেকিমের একখানা বই হস্তগত করার জন্য তাঁকে খুন করেন। তারপর গোগ্রাসে তিনি সেই বই পড়তে থাকেন। বইয়ের পাতা এমন জুড়ে গেছিল যে, রাজাকে বারবার আঙুল দিয়ে মুখের থুথু নিয়ে বইয়ের পাতা ছাড়াতে হয়। হেকিম জানতেন তাঁর পরিণতির কথা। তাই তিনি প্রতিশোধের ব্যবস্থাও করে যান। রাজা বইয়ের শেষ পাতায় গিয়ে জানতে পারেন, হেকিম পাতার কোণায় কোণায় বিষ মাখিয়ে রেখেছেন। জ্ঞানের সঙ্গে রাজা সেই বিষও আত্মস্থ করেছেন। সেটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আলী সাহেব মনে করেন, এই গল্পই হয়তো বাঙালি জেনে গিয়েছিল। তাই বই কেনা এবং বই পড়া সে ছেড়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা