বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানগুলির প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো। |
বায়ুমণ্ডলের মূল তিনটি উপাদানই জীবজগতের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
গ্যাসীয় উপাদান :
নাইট্রোজেনের (78.08%) গুরুত্ব :
(i) নাইট্রোজেন উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করে। (ii) নাইট্রোজেন রাসায়নিক সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। (iii) নস্টক, অ্যানাবিনা নামক নিম্নশ্রেণির শৈবাল এবং ক্লস্ট্রিডিয়াম ও রাইজোবিয়ামের মতো ব্যাকটেরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেনকে সংগ্রহ করে নাইট্রোজেন যৌগ গঠন করে, যা মাটির উর্বরা শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে।
অক্সিজেনের ( 20.94%) গুরুত্ব :
(i) জীবজগতের শ্বসনকার্য চালানোর জন্য অক্সিজেনের গুরুত্ব অপরিহার্য। (ii) অক্সিজেন, অক্সিডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোহায় মরচে সৃষ্টি করে। (iii) একমাত্র অক্সিজেনের মাধ্যমেই আগুন জ্বালানো সম্ভব হয়। (iv) অক্সিজেনের প্রভাবেই প্রাণীদেহে উত্তাপ বৃদ্ধি পায় ও শক্তির বিকাশ ঘটে।
কার্বন ডাইঅক্সাইডের (0.033%) গুরুত্ব :
(i) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ জগতের খাদ্য তৈরির জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রয়োজন হয়। (ii) কার্বনজাতীয় ও চুনজাতীয় খনিজ গঠনের জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিশেষ ভূমিকা আছে। (iii) বায়ুমণ্ডলে তাপের বণ্টনে ও নিয়ন্ত্রণে এই গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
ওজোনের গুরুত্ব :
(i) সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশে বাধা দান করে জীবমণ্ডলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে। (ii) নিম্ন বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। (iii) ওজোনকে তেল ও মোম শিল্পে রঞ্জক হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব :
ঘনীভবন (মেঘ) ও জলচক্রকে সচল রাখে। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে বাষ্পীভবনের হার কমে যায়। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির হারের ওপর জলবায়ু নির্ধারিত হয়।
ধূলিকণা বা অ্যারোসলের গুরুত্ব :
ধূলিকণা অতি সূক্ষ্ম জলকণাকে সহজেই আকর্ষণ করতে পারে, যাদের জলাকর্ষী কেন্দ্রাণু বলে। এগুলি ঘনীভবন ঘটাতে সক্ষম। সূর্যালোক ও সৌরতাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে উয়তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অ্যালবেডো ঘটায়। সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে ঊষা ও গোধূলির সৃষ্টি করে আকাশকে বর্ণময় করে তোলে।