বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের সংলাপ সৃষ্টিতে নাট্যকারের কৃতিত্বের দিকটি আলোচনা করো।
বাংলা গণনাট্যের পুরোধা বিজন ভট্টাচার্যের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘আগুন।’ পাঁচটি দৃশ্যসম্বলিত এই একাঙ্কিকায় নাট্যকার সংলাপ রচনায় মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
শিক্ষক পিতার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে থাকার সময় তিনি গ্রামের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা দিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। জনজীবনের এই প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের ভাব-ভাষা, রীতিনীতি আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন।
মন্বন্তরপীড়িত মানুষের আশানিরাশা, ব্যথা-বেদনার জীবন্ত দলিল ‘আগুন।’ গ্রামীণ অথচ প্রাঞ্জল, সর্বজনবোধ্য, হৃদয়গ্রাহী সংলাপের প্রতিফলন-
“তাতেও আবার কথা আছে, চাল পাবা কি পাবা না। হয় তো পালেই না।”-পুরুষ।
কিংবা “তারপর কলেকষ্টে এই চৈতেলির ফসলগুলো মাচায় তুলতি পারলি হয়, কিছুদিনের মত নিশ্চিন্দি,“-কৃষাণ।
সংলাপ সহজ, সরল, প্রাণবন্ত। কাহিনি ও চরিত্রানুযায়ী সংলাপ রচনা করে নাট্যকার চরিত্রগুলিকে তাদের নিজনিজ স্বভাবধর্মে সমুজ্জ্বল করে তুলেছেন। নাট্যকার তাঁর প্রত্যক্ষ জীবনাভিজ্ঞতা সূক্ষ্ম সমাজদৃষ্টি, আন্তরিকতা, সহানুভূতি ও সংলাপের সাবলীল প্রয়োগে চরিত্র, বিষয়বস্তু ও তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটকে জীবন্ত করে তুলেছেন।
সিভিক গার্ড। “থাক, তোকে আর দালালি করতে হবে না। যা ভাগ ভাগ।”
৪র্থ পুরুষ। “(অপমানিত হয়ে)। আমি কুকুর নই।”
সিভিক গার্ড। “মানুষ নাকি!”
সংলাপ নাটকের প্রাণ, শিল্পসার্থকতার অন্যতম চাবিকাঠি। ‘আগুন’ নাটকে ছোটো ছোটো বাক্যের প্রয়োগ-‘টুকরো কথার মনোলোগ তৈরি করে নেয়।’ সংলাপের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় চরিত্রের অন্তর্জগৎ, বিষয়বস্তু, নাট্যিক দ্বন্দু-সংঘাত-উৎকণ্ঠা আর এসবের উত্তম প্রয়োগে নাট্যকারের মুনশিয়ানা অপরিসীম।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো