ভারতের দেশপ্রেমের ঐতিহ্য প্রবন্ধ রচনা

ভারতের দেশপ্রেমের ঐতিহ্য প্রবন্ধ রচনা

ভারতের দেশপ্রেমের ঐতিহ্য প্রবন্ধ রচনা
ভারতের দেশপ্রেমের ঐতিহ্য প্রবন্ধ রচনা

“ও আমার দেশের মাটি, তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা। তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।।”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জীবজগতে সৃষ্ট সব প্রাণীই তার নিজ নিজ দেশ, নিজ মাতৃভূমি, নিজ বাসস্থানকে ভালোবাসে। মানুষও ভালোবাসে তার দেশকে। দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। দেশপ্রেম হল স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি। কিন্তু দেশ মানে শুধুমাত্র একটা বিস্তৃত ভূমিখণ্ড নয়, আবার দেশ শুধুমাত্র সীমান্ত দিয়ে ঘেরা বিভাজিত স্থান নয়। দেশ হল তার ভৌগোলিক অবস্থান, তার প্রাকৃতিক সম্পদ ও সেখানের মানুষের জীবনযাত্রা। দেশের প্রকৃত পরিচয় নিহিত রয়েছে তার বিচিত্র ভাবরূপ ও মানুষের জীবনচেতনার মধ্যে। তাই তো রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-“দেশ মাটি দিয়ে গড়া নয়, মানুষ দিয়ে গড়া।” জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে দেশের মানুষকে ভালোবাসার অর্থ হল দেশপ্রেম।

ভারতবর্ষ বহু ভাষাভাষির দেশ। বহু বর্ণ-ধর্ম-সংস্কৃতির দেশ হলেও আমাদের একটাই পরিচয় আমরা ভারতবাসী। একই জাতীয় পরিচয় দ্বারা আবদ্ধ বিভিন্ন সংস্কৃতির সহাবস্থান ভারতবর্ষ। ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান। বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’ ভারত ‘বসুধৈব কুটম্বকম’ ধারণায় বিশ্বাস করে যার অর্থ পৃথিবী একটি পরিবার। ভারতীয়রা হাজার হাজার বছর ধরে এই দর্শন অনুসরণ করে আসছে। সেজন্য ভারত সারা বিশ্ব থেকে আসা অতিথিদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্বাগত জানিয়েছে। ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।’ ভারতে হাজার বৈচিত্র্য থাকলেও হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত এই বিরাট ভূ-খণ্ডে এক গভীরতর ঐক্য বিরাজমান।

মানুষ হিসাবে যে কেউ তার স্বদেশ ও স্বজাতিকে অন্য কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসে। নিজের দেশকে রক্ষা করার জন্য বহু মানুষ নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে। ভারতবাসীও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশের বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল ঐক্যের ফসল। দেশপ্রেমিকরা জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্বদেশের জয়গান করেছেন, জয়গান করেছেন মানবকল্যাণে। ব্রিটিশ শাসকের হাত থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করার জন্য শত শত নির্ভীক ভারতবাসী বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে গোরা সৈন্যের সঙ্গে। হাসতে হাসতে গলায় পরেছে ফাঁসির দড়ি।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে, আমরা পৌঁছেছি একবিংশ শতাব্দীতে। বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে চারিদিকে। জাতীয় ক্ষেত্রে অসংহতির অন্যতম কারণ হল ধর্মীয় সংকীর্ণতা। ধর্মীয় সংকীর্ণতা বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার বীজবপন করেছে। ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের অপপ্রচারে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত। ভারতীয় বহু ধর্মীয় সমাজের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা অত্যন্ত প্রয়োজন। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য রাখলে চলবে না। বর্তমানে ভারতবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে না হলে হয়তো একদিন আবার পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, কোনো বিভ্রান্তকর প্ররোচনার ফাঁদে পা দিলে হবে না। তাহলে ‘ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।’

স্বদেশ প্রেম বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। দেশকে ভালোবাসা মানে দেশের মানুষকে ভালোবাসা। দেশের মানুষকে ভালোবাসলে পৃথিবীর সকল মানুষকে ভালোবাসা যায়। স্বদেশ প্রেমের মাধ্যমে বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও বিশ্বমানবতা জাগ্রত হয়। দেশপ্রেম মানুষের জীবনের অন্যতম মহৎ চেতনা। কোনো লোভ বা লোভের বশবর্তী হয়ে দেশকে ভালোবাসা যায় না। দেশের জনগণের কাছে দেশের মঙ্গল একমাত্র কাম্য হওয়া উচিত।

“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালোবেসে।”

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment