ভৌগোলিক অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব কী হয়েছিল

ভূমিকা
পঞ্চদশ শতক থেকে শুরু করে পোর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি যে দুঃসাহসিক ভৌগোলিক অভিযান পরিচালনা করেছিল। ভৌগোলিক অভিযানগুলি ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বের ওপর বহুমুখী প্রভাব ফেলেছিল। ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলাফলগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে-
(1) নতুন বাণিজ্যপথ আবিষ্কার: ভৌগোলিক অভিযানের ফলাফল হিসেবে নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং নতুন নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয়। ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেকার ভূমধ্যসাগরীয় পথের ওপর নির্ভরতা আর রইল না।
(2) ইতালীয় বাণিজ্যে ঘাটতি: ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে মূলত ইতালীয় নগরকেন্দ্রিক (ভেনিস, মিলান, ফ্লোরেন্স) বাণিজ্যই প্রধান ছিল। বিকল্প বাণিজ্যপথ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে ভূমধ্যসাগরীয় পথনির্ভর ইতালীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(3) সোনা-রুপো আমদানি : নব-আবিষ্কৃত আমেরিকা মহাদেশ থেকে সোনা-রুপোর প্রভূত আমদানি ইউরোপের অর্থনীতিকে অত্যন্ত সবল করে তোলে।
(4) ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সৃষ্টি: বহুমুখী বাণিজ্যের বিকাশ ঘটার ফলে ইউরোপের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় আগেকার ‘মহাজনি ব্যবস্থা’-র অবসান ঘটে এবং বণিকদের উদ্যোগে বিভিন্ন যৌথ বাণিজ্যিক সংস্থা গড়ে ওঠে। এগুলি থেকেই ধীরে ধীরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসার ঘটে।
(5) মর্যাদা বৃদ্ধি: ভৌগোলিক অভিযানে যে দেশগুলি সাফল্য লাভ করেছিল, তারা ইউরোপে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়।
(6) ক্রীতদাসে পরিণত করা: নব-আবিষ্কৃত আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য মানুষকে বলপূর্বক ধরে এনে স্পেন, পোর্তুগাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নাবিকরা তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করত। এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং ইউরোপে ক্রীতদাস নিয়ে ব্যাবসা এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়।
(7) মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান: ভৌগোলিক অভিযানের সফলতার হাত ধরে শিল্প-বাণিজ্য-অর্থনীতির বিকাশ ঘটলে এক নতুন শিক্ষিত-উদ্যোগী-সচ্ছল শ্রেণির উত্থান ঘটে। এরা মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণি বলে পরিচিত হয়।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায়, ভৌগোলিক অভিযানগুলির ফলে বহু নতুন নতুন দেশ, মহাদেশ ও জলপথ আবিষ্কৃত হয়। সমুদ্র অভিযাত্রীরা বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস করে, যা মানবতার পক্ষে লজ্জার। এ প্রসঙ্গে কোর্টেসের অ্যাজটেক সভ্যতা ধ্বংস ও পিজারোর ইনকা সভ্যতা ধ্বংসের কথা বলা যায়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর