মানচিত্র অঙ্কন কীভাবে পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানে সহায়ক হয়েছিল

মানচিত্র অঙ্কন কীভাবে পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানে সহায়ক হয়েছিল

মানচিত্র অঙ্কন কীভাবে পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানে সহায়ক হয়েছিল
মানচিত্র অঙ্কন কীভাবে পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানে সহায়ক হয়েছিল

পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানে মানচিত্র অঙ্কনের ভূমিকা

পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে মানচিত্র অঙ্কন সামুদ্রিক অভিযানে তথা ভৌগোলিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।

(1)  উদ্ভবের ইতিহাস: মানচিত্র অঙ্কনের অগ্রদূত হিসেবে গ্রিস দেশকে গণ্য করা হয়। জানা যায় যে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে সমগ্র পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম অঙ্কন করেন অ্যানেক্সিম্যান্ডার (Anaximander) নামক এক গ্রিক দার্শনিক। হিকেটিউস (Hecataeus) নামক এক ব্যক্তি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এই মানচিত্রকে আরও উন্নত রূপ প্রদান করেন। আবার অনেকে বলেন যে, সুইটজারল্যান্ডের সেন্ট গল (Saint Gall) মঠের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত মানচিত্রটি (সপ্তম শতক) হল সবথেকে প্রাচীন মানচিত্র। এতে ইউরোপ-এশিয়া-আফ্রিকা ছাড়াও সম্পূর্ণ অজানা জনমনুষ্যহীন একটি অংশ দেখা যায়। মহাপ্লাবনের পরে নোয়ার তিন পুত্র এই তিনটি মহাদেশে বসবাস করত বলে মানচিত্রে উল্লিখিত ছিল।

(2) ভৌগোলিক দিক সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ: মানচিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে টলেমি, প্লিনি, স্ট্যাবো প্রমুখ অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় রাখেন। দ্বাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের এক পান্ডুলিপিতে প্রথম ইউরোপের আলাদা একটি মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়, যা ছিল সম্ভবত লামবেয়র (Lambert)-এর অঙ্কিত মানচিত্র। এখানে নোয়ার পুত্রদের মধ্যে পৃথিবী বণ্টনের কোনও উল্লেখ মেলে না। টলেমির লেখা ভূগোল পুনরাবিষ্কৃত হলে প্রথম সঠিক মানচিত্র আঁকা সম্ভব হয়। ইতিপূর্বে নাবিকেরা তাঁদের পরিভ্রমণ করা স্থানগুলির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ‘চার্ট’ তৈরি করতেন, যা পোর্তোলান (Portolan) মানচিত্র নামে পরিচিত ছিল।

টলেমির রচনাকে ভিত্তি করে চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রেগোরাস (Gregorus) প্রথম ইউরোপের একটি মানচিত্র আঁকেন। একই সূত্র ব্যবহার করে আন্দ্রে ওয়ালসপারজার (Andreas Walsperger) প্রস্তুত করেন একটি বিশ্বমানচিত্র (১৪৪৮ খ্রিস্টাব্দ)। যদিও কয়েক শতক আগেই অল ইদ্রিসি (Muhammad Al Idrisi) সিসিলিতে অবস্থানকালে একটি মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। এই সকল মানচিত্রগুলির সাহায্যে ভৌগোলিক জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের অভিযান এবং নতুন বাণিজ্যপথ আবিষ্কারের দিকগুলি উন্মুক্ত হয়।

(3) নতুন ভূখন্ড আবিষ্কারের প্রতিফলন: অজানা, অচেনা সমুদ্রপথে পাড়ি দিয়ে অভিযাত্রীদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারের প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় মানচিত্রগুলিতে। এ প্রসঙ্গে ক্যানটিনো মানচিত্রটির (Cantino Planisphere or Cantino World Map) কথা বলা যায়। ক্যানটিনো (Alberto Cantino) ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগাল ও স্পেনের সামুদ্রিক অভিযানের বিবরণ-সহ ক্যানটিনো মানচিত্র প্রকাশ করেন।

(4) প্রথম আধুনিক মানচিত্র অঙ্কন: আধুনিক মানচিত্র তৈরির ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব গারহার্ডাস মার্কেটর (Gerardus Mercator) অঙ্কিত বিশ্বমানচিত্র সমুদ্রযাত্রার পরম সহায়ক ছিল। ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে এই মানচিত্রটি তিনি নাবিকদের জন্য প্রস্তুত করেন, যা ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। মার্কেটর চার্ট বস্তুত সমুদ্র অভিযানের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

(5)  নাবিকদের অনুপ্রেরণা দান: উইলিয়েম ব্লেয়ু (Willem Blaeu)-র মানচিত্র এবং অ্যাস্ট্রোল্যাব, কম্পাস প্রভৃতির ব্যবহার সমুদ্র অভিযাত্রীদের বিশেষ প্রেরণা জোগায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে কার্ডিনাল পিয়ের দেয়ির (Pierre d’Ailly) ইমাজো মুন্ডি (Imago/Ymago Mundi)-তে গ্রিক, ল্যাটিন ও আরব সূত্র থেকে প্রাপ্ত বহু ভৌগোলিক তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছিল। পরবর্তীতে এই গ্রন্থ কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রায় বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment