“মা, আমাকে মারিস নে মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করিনি।”-কোন্ পরিস্থিতিতে বক্তা এরূপ মন্তব্য করেছে? বক্তার এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কোন্ মানসিকতা উদ্ঘাটিত হয়েছে?
উক্তির পরিস্থিতি
আলোচ্য অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
বই কেনা নিয়ে মামির কাছে অপমানিত হওয়ার পর ফটিকের ভীষণ জ্বর আসে। কিন্তু ফটিক মামিকে চেনে, জ্বরের কথা বললে তিনি দারুণ বিরক্ত হবেন। হয়তো আবার ফটিকের উপর অপমানের দু-চার কথা বর্ষণ – করবেন। সেই কারণে ফটিক মামাবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। সেদিন আবার রাত্রি থেকে মুশলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়ছে। বিশ্বম্ভরবাবু বাধ্য হয়ে পুলিশে খবর দিলেন। সন্ধেবেলা নিদারুণ অসুস্থ অবস্থায় এক হাঁটু জল – পেরিয়ে দুজন পুলিশের লোক অসুস্থ ফটিককে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর নিকট উপস্থিত করেন।
ফটিকের আপাদমস্তক ভেজা, সারা গায়ে কাদা, চোখ-মুখ লাল টকটক করছে। সে থরথর করে কাঁপছে। বিশ্বম্ভরবাবু তাকে কোলে করে অন্তঃপুরে নিয়ে গেলেন। দেখতে দেখতে ফটিকের জ্বর অত্যন্ত বাড়ে। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকতে শুরু করে। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসক নিয়ে আসেন। ফটিক তার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করে মামাকে জিজ্ঞেস করে তার ছুটি হয়েছে কিনা। তারপরে ফটিক বিড়বিড় করে উপরোক্ত কথাগুলি বলতে থাকে।
বক্তার মানসিকতা
প্রকৃতপক্ষে ফটিকের মন তখন কলকাতার দমবন্ধ করা স্নেহ-মায়াবর্জিত পরিবেশ ছেড়ে ফেলে আসা স্বগৃহে ফিরে গেছে, যে গৃহে তার কনিষ্ঠ মাখনলালের সঙ্গে তার নিত্যদিন স্নেহ-মায়া মাখা সংঘাত-দ্বন্দু লেগেই থাকত। কখনো-কখনো মাখনলালের মিথ্যে কথার উপর ভিত্তি করে মা তাকে মারধোর করত। কিন্তু পিতৃহীন ফটিকের কাছে তার মা-ই ছিল তার অভাব-অভিযোগ জানানোর নির্ভরযোগ্য স্থান। তাই দুর্দিনে, অবচেতন মনে মাকে স্মরণ করে অভিযোগ জানায় ফটিক। মায়ের কাছে তাঁরই বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সঠিক বিচার করার অনুরোধ করে সে। ফটিকের এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তার নিষ্পাপ সরল মানসিকতা উদ্ঘাটিত হয়েছে।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো