মৃত্তিকাই স্বর্গের চেয়ে অধিকতর মধুময় হয়ে ওঠে-প্রবন্ধে উল্লিখিত রবীন্দ্রসংগীতটি কোন্টি ও গানটি অবলম্বনে উক্ত বক্তব্যের সারবত্তা উল্লেখ করো

আলোচ্য রবীন্দ্রসংগীত

রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’-এর ‘বিচিত্র’ পর্যায়ের সাতাত্তর সংখ্যক গানটি সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর বক্তব্যের সহায়করূপে প্রবন্ধে উদ্ধৃত করেছেন।

বক্তব্যের সারবত্তা

সৈয়দ মুজতবা আলীর বিচারে, যে সংগীত শব্দের চয়ন ও সেই শব্দের যথাযথ সংস্থাপনের দ্বারা হৃদয়-মনকে অভাবিত ও কল্পনাতীত আনন্দরসে পরিপূর্ণ করে তুলেছে; তা হল একমাত্র রবীন্দ্রনাথের গান। পরিমিত ভাব, অর্থমাধুর্য, উচ্চাঙ্গ রসের ব্যঞ্জনা দ্বারা অতুলনীয় হয়ে ওঠার সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের আরও একটি গুণ হল, তা শ্রোতাকে, স্বর্গ থেকে মর্ত্যের এক মধুর সফর করাতে সক্ষম। কবি এক অলৌকিক ক্ষমতাবলে, কয়েকটি শব্দ আর একটুখানি সুর দিয়ে শ্রোতাকে স্বর্গসভার মহাঙ্গনে পৌঁছে দেন। আবার পরক্ষণেই বাস্তবের নিদ্রাবিহীন গগনতলে নামিয়ে এনে মানুষকে দেবতার চেয়েও উচ্চস্থানে উপবিষ্ট করান। তবে লক্ষণীয়, কবির গানে স্বর্গীয় সুরকল্পনা যতটা-না প্রকাশ পেয়েছে, তার চেয়ে অধিক স্থান পেয়েছে আমাদের আপন ধরাতলের সুন্নাত, স্নিগ্ধ সুরমাধুরী। তাঁর গানের বাণীর আলো ‘স্বর্গসভার মহাঙ্গনকে’ যত-না আলোকিত করেছে, তার চেয়ে বেশি আলোকমালায় প্রদীপ্ত করেছে ‘শ্যামল মাটির ধরাতল’-কে। তিনি যে গান শুনিয়েছেন তাতে “মন্দ মধুর কানাকানি জলে স্থলে” সুরের সুরধুনী বয়ে নিয়ে যায়। তাঁর গানে “ঘাসে ঘাসে রঙিন ফুলের আলিম্পন” দেখা দেয় মৃত্তিকার হৃদয়ভূমে। তাঁর গানের মধুর ধারায় “বনের পথে আঁধার-আলোয় আলিঙ্গন” পরিলক্ষিত হয়। ‘বিশ্বকর্মা মহাত্মা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এইভাবে তাঁর গানের বাণীর সাধনায় যে অলৌকিক কর্ম সম্পাদন করেছেন, তাতে মৃত্তিকাই স্বর্গের চেয়ে অধিকতর মধুময় হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment