রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প ‘ছুটি’-তে মানুষ ও প্রকৃতি কীভাবে একাকার হয়ে গেছে, তা আলোচনা করো

রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প ‘ছুটি’-তে মানুষ ও প্রকৃতি কীভাবে একাকার হয়ে গেছে, তা আলোচনা করো

রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প 'ছুটি'-তে মানুষ ও প্রকৃতি কীভাবে একাকার হয়ে গেছে, তা আলোচনা করো
রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প ‘ছুটি’-তে মানুষ ও প্রকৃতি কীভাবে একাকার হয়ে গেছে, তা আলোচনা করো

রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পগুলিকে কালানুক্রম অনুযায়ী তিনটি পর্বে বিভক্ত করা যায়। প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথ বিচিত্র স্বাদের গল্পরচনা করেছেন। এই পর্যায়ে রচিত ‘ছুটি’ গল্পটিতে প্রকৃতি ও মানবজীবন একাকার হয়ে গেছে। ‘ছিন্নপত্রাবলী’র একটি পত্রে জানা যায়- “আমার এই চেতনায় প্রবাহ প্রত্যেক ঘাসে। গাছের শিকড়ে শিকড়ে, শিরায় শিরায় ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে।” এর কারণ বাংলাদেশে শিলাইদহের তীরে তিনি ভ্রমণ করেছেন পদ্মা, গোরাই, ইছামতী প্রভৃতি নদীতে। তিনি নৌকো করে ঘুরে বেড়ানোর সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে উপলব্ধি করেছেন বা করতে পেরেছেন। এরই প্রতিফলন দেখা যায় ‘ছুটি’ গল্পটিতে।

‘ছুটি’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ বালকদের সঙ্গে সর্দার ফটিকের সম্বন্ধ এবং তাদের সঙ্গে প্রকৃতির নিগূঢ় সম্পর্কটি তুলে ধরেছেন। পিতৃহীন ফটিক শৈশবে কলকাতায় বসবাসকারী মামার গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল এবং মামাবাড়িতে বিশেষ করে মামির নিকটে অশেষ নির্যাতন সহ্য করে অবশেষে একদিন মারা যায়। ফটিকের চরিত্রের সঙ্গে প্রকৃতির একাত্মতা বোঝাবার অভিপ্রায়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-“সেই নদীতীর, ….সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী সেই সব দলবল, উপদ্রব, স্বাধীনতা।”

রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পগুলির মতো ‘ছুটি’ গল্পটিতেও প্রকৃতির সমগ্রতা ও পরিপূর্ণতা ঘটেছে মানুষের সাহচর্যে। এখানে প্রকৃতি ও মানুষ পরস্পরের পরিপূরক। এই গল্পে প্রকৃতি এসেছে ফটিক চরিত্রের সামগ্রিকতা প্রকাশের উদ্দীপনরূপে, মনস্তত্ত্বের উদ্বোধক হিসাবে। ফেলে আসা গ্রামীণ প্রকৃতি, প্রকৃতির সন্তান ফটিককে আকুল করে তুলেছে শহরের বন্দিজীবন। গল্পের শেষে দেখা যায়, ফটিক প্রকৃতি থেকে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা লাভ করেছে। রবীন্দ্রনাথ ‘ছুটি’ গল্পটিতে দেখালেন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেই মৃত্যু। সরল আনন্দের স্বর্গ থেকে একবার ভ্রষ্ট হলে আর ফিরে আসবার পথ নেই। ফটিকও আর ফিরে আসতে পারেনি। এইভাবে ‘ছুটি’ গল্পে মানুষ ও প্রকৃতি একাকার হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো

Leave a Comment