রাজনৈতিক তত্ত্ব গঠনে আচরণবাদীদের অবদান উল্লেখ করো।
|
রাজনৈতিক তত্ত্ব গঠনে আচরণবাদ
আচরণবাদের আবির্ভাবের পূর্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সুস্পষ্ট বিজ্ঞানে পরিণত করা এবং সুসংবদ্ধ করার কথা চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু আরেখবাদ মূল্যমান ও নীতি বিষয়ক আলোচনায় গুরুত্ব আরোপ করে সার্বিক বিষয়টিকে পরিবর্তিত করে।
প্রথমত, সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে গ্রাহাম ওয়ালাস তাঁর ‘Human Nature in Politics’ প্রশ্নটিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ দার্শনিক প্রত্যয়কে অস্বীকার করে এক নতুন তত্ত্ব গড়ে তোলেন। তিনি সংখ্যায়নগত উপাদানের ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মনস্তত্ব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নতুন তত্ত্ব নির্মাণ করেন।
দ্বিতীয়ত, ‘The Process of Government’ নামক গ্রন্থে আর্থার কেটলি পরিসংখ্যান, পরিমাপ প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক তত্ত্ব নির্মাণ করেন যেখানে গোষ্ঠী ও তার ক্রিয়াকলাপের মধ্যে এক নতুন উপকরণ বিদ্যমান।
তৃতীয়ত, এই শ্রেণির তাত্ত্বিকদের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল ‘ক্ষমতা’ সম্পর্কিত বিষয়কে তত্ত্বের সঙ্গ্যে যুক্ত করা। হ্যারল্ড লাসওয়েল ও তাঁর সহযোগীরা দেখিয়েছেন যে, রাজনৈতিক জীবনের ক্ষেত্রে মনভ্রাত্বিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়ে এবং নিজেদের সেই ক্ষমতার অধীন করে, তাদের প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণ করা সম্ভব। অর্থাৎ ক্ষমতাকেন্দ্রিক তত্ত্ব রংনার ক্ষেয়ে প্রভাব, প্রভাবশালী, নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির আলোচনা সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে।
চতুর্থত, ডেডিড ইস্টন বলেন, তত্ত্ব হল লক্ষ্যবস্তুকে সচেতন স্তরে উন্নীত করা। তাঁর মতে, তত্ত্বের সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক নির্ধারকগুলিকে চিহিত করা যায় এবং তাদের পারম্পর্য সম্পর্কেও বোঝা যায়। অর্থাৎ রাজনৈতিক গবেষণাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে তত্ত্ব।
উপসংহার:
আচরণবাদ তত্ত্বনির্মাণের ক্ষেয়ে প্রতিষ্ঠান বা মতাদর্শকে গুরুত্ব দেয়নি। এই তত্বে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর মনোভাব তথা তাদের আচরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই তত্ত্ব গবেষণার পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর জোর দিয়েছে এবং একইসঙ্গে অভিজ্ঞতাবাদী নিরীক্ষা, সামাজিক ও মনস্তাত্বিক প্রশ্নগুলিকে ব্যাবহারিক দিক থেকে বিবেচনা করে তার উপযোগী বিষয়গুলিকে তত্ত্বনির্মাণের কাজে ব্যবহার করেছে।