রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের উপযোগিতা আলোচনা করো। অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন কেন?

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের উপযোগিতা আলোচনা করো। অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন কেন?

ভূমিকা: 

যে-কোনো বিষয়ে পাঠদানের প্রধানত দুটি উদ্দেশ্য থাকে। একটি সেই বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে সাহায্য করা এবং অন্যটি শিক্ষার্থীর আচরণে সাহায্য করা। অ্যারিস্টট্স রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান বলেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল—

জ্ঞানমূলক বিকাশ : 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রধান উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়গুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞানার্জনে সাহায্য করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের দ্বারা শিক্ষার্থীদের বিষয়জ্ঞান ও তার সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন সম্ভব হয় এবং শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। তাই দেখা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-পিপাসা পরিতৃপ্ত করে এবং নানা বিষয়ে তাদের মনকে অনুসন্ধিৎসু ও কৌতূহলী করে তোলে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি : 

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজেই তার বসবাস। সমাজকে কেন্দ্র করেই মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। প্রথমে পরিবার, পরে গ্রাম এবং পরিশেষে রাষ্ট্রের আবির্ভাব। মানুষ বুঝতে শিখেছে রাষ্ট্রের মধ্যেই ব্যক্তি তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটাতে পারে। নাগরিকরা রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রাষ্ট্র সম্পর্কে জ্ঞান : 

রাষ্ট্র ও তার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে জানতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক। রাষ্ট্রের উদ্ভব, উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, কার্যকলাপ, ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়গুলি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করলে সম্যক জানা যায়।

সরকার সম্পর্কে জ্ঞান : 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে কোটি এককেন্দ্রিক সরকার, কোটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার। কোনটি সংসদীয় এবং কোনটি রাষ্ট্রপতি পরিচালিত। তাছাড়া সরকারের উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, ভিত্তি সম্পর্কে আমরা অবহিত হই।

অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা : 

শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করে নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এই সচেতনতা ব্যক্তিসত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশে সাহায্য করে।

সুনাগরিক তৈরি : 

বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন, বিবেকবান, সমাজপ্রেমিক নাগরিকরাই হলেন সুনাগরিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করে সুনাগরিকতা বা আদর্শ নাগরিকের গুণাবলির বিকাশ ঘটানো যায়। বস্তুত রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তি সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে সুনাগরিকের গুরুদায়িত্ব পালন করতে তৎপর হতে পারে।

দেশপ্রেম জাগরণ : 

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে জাতীয় চরিত্র গঠন ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাতৃভূমির জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য গর্ববোধ করে। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি, সংবেদনশীলতা, ভালোবাসা গড়ে ওঠে।

গণতন্ত্রের প্রসার সাধন : 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতাবোধ ও ন্যায়বোধ জাগ্রত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যবোধ বৃদ্ধি করে। ধর্মীয় ও জাতিগত কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে।

তুলনামূলক আলোচনা : 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করে বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে তুলনা করা সম্ভব হয়। তুলনার মধ্য দিয়ে সরকারের জ্ঞানার্জন করা সম্ভব হয় ।

নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা বৃদ্ধি : 

আজকের দিনের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যাতে শিক্ষার্থীরা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করতে পারে, সমাজকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং সরকার প্রদত্ত অধিকার ভোগ ও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে পারে। সেজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের একান্ত প্রয়োজন।

উপসংহার : 

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, একজন শিক্ষার্থীকে তার ভবিষ্যতের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মূল্য অপরিসীম। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মধ্য দিয়ে একজন সচেতন ব্যক্তি আরও প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারে।

Leave a Comment