রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান আলোচনা করো

রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান আলোচনা করো

রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান আলোচনা করো
রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান আলোচনা করো

ভূমিকা

রেনেসাঁ যুগের একজন কালজয়ী শিল্পী এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। চিত্রকলা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, বিজ্ঞান, নৌবিদ্যা, শারীরতত্ত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি সমগ্র বিশ্বকে উপহার দিয়ে গেছেন অবিস্মরণীয় কিছু শিল্পকীর্তি।

(1) চিত্রশিল্পে অবদান : মানুষের দুঃখ, আনন্দ, যন্ত্রণা, অভিমান, রোমান্টিকতা মুখমণ্ডলের ওপর যে প্রভাব ফেলে, তাকে চিত্রের সাহায্যে অনন্যভাবে ফুটিয়ে তোলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। মানবদেহের সঠিক গঠনের অনুপাত, অভিব্যক্তি ও পারিপার্শ্বিকের বিষয়ের ওপর গুরুত্বদান-তাঁর চিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য।

  • দ্য লাস্ট সাপার (The Last Supper): ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লা গির্জার ভোজনশালার দেয়ালে তিনি এই ছবিটি আঁকেন। উচ্চ বা পরিণত রেনেসাঁ (High Renaissance) যুগের প্রথম ‘figure composition’ এটি। যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে শেষ সায়মাশ-এর কাহিনির ওপর ভিত্তি করে আঁকা এই ছবিতে ১৩টি চরিত্রের অভিব্যক্তি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে এবং আলোছায়ার বিন্যাস ও শিল্পীর তুলির জাদুময়তায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
  • ভার্জিন অফ দ্য রক্স: ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত এই ছবিটিতে মাতা মেরি ও শিশু যিশু গুহার ভিতরে বসে আছে। মাতা মেরির স্নিগ্ধতা ও আশীর্বাদী ভঙ্গি ছবিটিকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পবিত্র মাতৃমূর্তিতে পরিণত করেছে।
  • মোনালিসা : ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত এই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সর্বাধিক চর্চিত ও কালজয়ী চিত্র হল ‘মোনালিসা’। জীবন্ত নারী শরীরের সমস্ত পরিপূর্ণতা নিয়ে, ঠোঁটে স্ফিত হাসিসহ এক রমণী যেন দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আছেন। মোনালিসা চিত্রটিতে শিল্পীর অসামান্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।

(2) স্থাপত্যশিল্পে অবদান : কোনো বিশেষ সম্পূর্ণ স্থাপত্য দ্য ভিঞ্চির সৃষ্টি বলে অভিহিত করা যায় না, কারণ তিনি স্থপতি হিসেবে কাজ করার চেয়ে নকশা (design) ও পরিকল্পনা (planning) বা ব্লুপ্রিন্ট করতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। তিনি সমকালীন ইটালির বিভিন্ন শহরের প্রাসাদ, গির্জা প্রভৃতির নির্মাণে পরামর্শ ও নকশা রচনা করেছিলেন।

(3) ভাস্কর্যে অবদান : ব্রোঞ্জের তৈরি অশ্বারোহী মূর্তি ‘ফ্রান্সেসকো ফোর্জা’ (Francesco Sforza) নির্মাণে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ৫ বছর ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তিনি এটি সমাপ্ত করেননি।

(4) বিজ্ঞান জগতে অবদান : এক্ষেত্রে তাঁর সর্বাধিক অবদান হল অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যা চর্চা। মানব-মানবীর চিত্র অঙ্কন ও ভাস্কর্য  সৃষ্টিতে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি শারীরবিদ্যা চর্চার অনুশীলন করতেন। সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি গবেষণা করেছেন। পাখির উড়ান থেকে তিনি যন্ত্রচালিত আকাশযানের কল্পনা ও নকশা করেছিলেন।

মূল্যায়ন 

মানবজীবন ও সভ্যতার এমন কম দিকই আছে, যেখানে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কোনো গবেষণা বা সৃষ্টি নেই। রেনেসাঁ যুগের অতুলনীয় সম্পদ এই মহান ব্যক্তিত্ব নিঃসন্দেহে সমকালীন সময়ের থেকে মানসিকতায় ও দূরদর্শীতায় অনেক গুণ এগিয়েছিলেন। পরবর্তীকালের স্থপতি, ভাস্কর, চিত্রকর, বিজ্ঞানীরা তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment