রেনেসাঁ শিল্পকলার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

ভূমিকা
খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতক থেকে শুরু করে ষোড়শ শতক পর্যন্ত রেনেসাঁ পর্বে ইউরোপীয় ইতিহাস সবদিক থেকেই যুগান্তরের সাক্ষী। ধর্ম, সমাজ, রাজনীতির পাশাপাশি ইউরোপে শিল্পের ক্ষেত্রেও অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। প্রাচীন ধ্রুপদি গ্রিক ও রোমান শিল্পের অনুপ্রেরণায় রেনেসাঁ যুগে চিত্রশিল্প, ভাস্কর্য, স্থাপত্য প্রভৃতি শিল্পকলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক নতুন ধারার জন্ম হয়।
(1) মানবকেন্দ্রিকতা: রেনেসাঁ শিল্পে মানুষকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়। মধ্যযুগীয় নানা বিধিনিষেধ ও ধর্ম ঈশ্বরকেন্দ্রিক ভাবনাকে দূরে সরিয়ে এই সময়ে মানবদেহের সৌন্দর্য্য ও শারীরিক গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়াও মানুষের দৈনন্দিন জীবনচর্চাও শিল্পে স্থান পায়।
(2) বাস্তবতাবাদ: রেনেসাঁ শিল্পীরা তাঁর শিল্পকর্মে মানবদেহের বাস্তব চিত্রায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। মানব-মানবীকে এ যুগে একদম স্বাভাবিক করে চিত্রায়িত করা শুরু হয়। মানবদেহের নিখুঁত গঠন ও সঠিক অনুপাত এ যুগে শিল্পের অপর আর-এক বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ‘ডেভিড’ এবং রাফায়েলের ‘ম্যাডোনা’ চিত্রের কথা বলা যায়।
(3) ধর্মনিরপেক্ষতা: মধ্যযুগে শিল্পকলার মুখ্য বিষয় ছিল ধর্ম বা ঈশ্বরকেন্দ্রিক ভাবনা। রেনেসাঁ যুগে প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ শিল্পচর্চার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। তবে ধর্মীয় বিষয়কে পুরোপুরি বর্জন না-করে পৌরাণিক কাহিনি, ঐতিহাসিক দৃশ্য প্রভৃতির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দৃশ্য, মানব-মানবীর শরীর ও জীবনযাত্রা রেনেসাঁ শিল্পের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।
(4) পুনরুজ্জীবন ও সৃজনশীলতা: নবজাগরণের চিত্রকর এবং শিল্পীদের সৃজনকর্মে এক নতুন চেতনা মূর্ত হয়ে ওঠে। প্রাচীন পুথি থেকে নতুন করে আবিষ্কৃত চরিত্রগুলি নিয়ে শিল্প সৃষ্টি হতে থাকে নতুন আঙ্গিকে। প্রাচীন রোমের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার অনুকরণ করেছেন শিল্পী ও চিত্রকররা। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান স্থাপত্যরীতির পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় নতুন নতুন স্থাপত্য গড়া হয়।
(5) প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন: রেনেসাঁ শিল্পকলার অপর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। তেল-রঙের ব্যবহার, সূক্ষ্ম মার্বেল খোদাই, আনুপাতিক হিসাবের ব্যবহার, ত্রিমাত্রিক বোধ জ্যামিতিক হিসাব ও সঠিক কোণের হিসাবের ব্যবহার ইত্যাদি রেনেসাঁ যুগের শিল্পকে অন্য মাত্রা দেয়।
মূল্যায়ন
সবশেষে বলা যায় যে, রেনেসাঁর একটি স্থায়ী অবদান হল শিল্পকলার বিকাশ। রেনেসাঁ শিল্পের ওপর মানবতাবাদের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যেসব ধনী অভিজাত ও বণিক শ্রেণি ছিলেন, তাঁদের দ্বারাও শিল্পের শৈলী ও বিষয়বস্তু প্রভাবিত হয়েছিল। ইটালির ফ্লোরেন্স, ভেনিস প্রভৃতি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মেদিচি পরিবারের মতো ধনী শাসকশ্রেণি শিল্পীদের প্রচুর চিত্র ও মূর্তি তৈরির বরাত দিতেন। তাই শিল্পীদের পক্ষে স্বাধীনভাবে নতুন চিন্তার প্রয়োগ ঘটানোরও সুযোগ ছিল।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর