লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন ও উত্তর ( Marks 2)
লালন ফকির কে? তিনি কবে কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
বাউল সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান ও খ্যাতিমান বাউলসাধক হলেন লালন ফকির।
তিনি ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে নদিয়া জেলার চাপড়া অঞ্চলের অন্তর্গত ভাঁড়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হরিনাথ মজুমদারের মতে তাঁর জন্ম হয় কুষ্টিয়ার ঘোড়াই গ্রামে। আবার অনেকের মতে, যশোহর জেলার ফুলবাড়িতে তাঁর জন্ম হয়।
উচ্চমাধ্যমিক সংসদ কর্তৃক সংকলিত লালন শাহের পাঠ্য কবিতাটির নাম কী? এটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উচ্চমাধ্যমিক সংসদ কর্তৃক সংকলিত লালন শাহের পাঠ্য কবিতাটির নাম হল ‘লালন শাহ ফকিরের গান’।
কবিতাটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত (১৯৫৮ খ্রি.) ড. মতিলাল দাশ ও পীযূষকান্তি মহাপাত্র সম্পাদিত ‘লালনগীতিকা’ গ্রন্থের ৩৯১ সংখ্যক পদটি নেওয়া হয়েছে।
‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটিতে কবি কীসের ভজনা করতে বলেছেন?
‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটিতে কবি মানুষের ভজনা বা উপাসনা করতে বলেছেন। কারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্যা, সম্মান, ভালোবাসা এবং মানবিকতা থাকলে তবেই একজন মানুষ সোনার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। মনুষ্যত্বগুণে সে হয়ে উঠবে সকলের শ্রেষ্ঠ। তাত্ত্বিক সাধক ও মানবতাবাদী কবির ভাবনায় মনুষ্যত্বের শ্রাবণধারাপাতে মানুষই হয়ে ওঠে ভালোবাসার, শ্রদ্ধার সর্বোত্তম দিশারি।
কে তার মূল হারাবে? কেন?
উত্তর মানুষ তাঁর মূল হারাবে।
কারণ মানুষ যদি মানুষকে ছেড়ে অন্য কিছুর পূজা করে তাহলে সে তাঁর শিকড় হারিয়ে ফেলবে। মনুষ্যত্বই মানুষের মূল পরিচয়। মনুষ্যত্ব না থাকলে মানুষকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
‘মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে’-‘ক্ষ্যাপা’ শব্দের অর্থ কী? ‘ক্ষ্যাপারে’ কাকে বলা হয়েছে?
‘ক্ষ্যাপা’ শব্দের অর্থ পাগল বা উন্মাদ। মোহহীন মানুষ।
এখানে ‘ক্ষ্যাপারে’ বলতে বাউল সম্প্রদায়ের ভক্ত সাধক মানুষকে বলা হয়েছে।
‘দ্বি-দলের মৃণালে’-কথাটির অর্থ লেখো।
দ্বি-দল অর্থে দুই পত্রক বিশিষ্ট যা। ‘মৃণাল’ হল শ্বেতবর্ণের পদ্মের ডাঁটা বা কন্দ বা মূল। অর্থাৎ ‘দ্বি-দলের মৃণালে’ বলতে বোঝায় দুই পত্রকবিশিষ্ট শ্বেতবর্ণের পদ্মের ডাঁটা।
কীভাবে দ্বি-দলের মৃণালে সোনার মানুষ উজ্জ্বলভাবে অবস্থান করে?
লালন শাহের সালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটিতে দেহতত্ত্ব প্রকাশের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ অর্থাৎ মানব ভাবনায় উজ্জ্বল মানুষের অবস্থানের কথা বলেছেন। মানুষের দুই ভুবুর মধ্যবর্তী দ্বিদল অর্থাৎ আজ্ঞাচক্রে মনের মানুষে অবস্থান ঘটে।
‘মানুষ-গুর কৃপা হলে/জানতে পাবি।।”- এখানে ‘মানুষ-গুরু’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? উত্তর এখানে ‘মানুষ গুরু’ হলেন যিনি শিক্ষক বা দীক্ষাদানকারী, যিনি তাঁর জ্ঞান ও উপদেশের মাধ্যমে শিষ্যের মধ্যে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটান। যিনি প্রাণে প্রাণে মানবতার ভাবনা সঞ্চারিত করেন, মানবহৃদয়তটে এঁকে দেন মানবতাবাদের আলিশন রেখা।
মানুষ-গুরুর কখন কৃপা হবে?
উত্তর যখন একজন বাউল তাঁর কঠিন সাধনার মাধ্যমে আজ্ঞাচক্রে একজন মনের মানুষের আগমন ঘটাতে সক্ষম হবেন অর্থাৎ তিনি মনুষ্যত্বের ভাবনায় নিজেকে উত্তীর্ণ করতে পারবেন তখন সেই গুরু তাঁকে কৃপা করবেন এবং বাউলও তাঁর দেহতত্ত্বের মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃত অর্থে জানতে পারবেন।
‘আলেকলতা’ কী? কবি আলেকলতার সঙ্গে মানুষের তুলনা করেছেন কেন?
‘আলেকলতা’ হল আলোকলতা বা স্বর্ণলতা উদ্ভিদ। এটি একটি লতানো পরজীবী উদ্ভিদ।
আলোকলতা বা স্বর্ণলতা উদ্ভিদ যেমন অন্য কোনো গাছের আশ্রয়ে বেঁচে থাকে, তাঁকে অবলম্বন করেই সে বেড়ে ওঠে, তেমনই মানুষ হল পারস্পরিকতার উপর নির্ভরশীল। মানুষ যখন অপর একজনের হৃদয়ে আত্মস্থ হবেন, তখনই তিনি খুঁজে পাবেন মনের মানুষের সন্ধান। তাঁর আকুতি হবে ‘মিলন হবে কতদিনে’। এই কারণেই কবি আলোকলতার সলো মানুষের তুলনা করেছেন।
“জেনে শুনে মুড়াও মাথা/জাতে তরবি।।”-অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? ‘জাতে তরবি’ বলতে ঐ বোঝানো হয়েছে?
কবিতাংশটি লালন শাহ ফকিরের ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘জাতে তরবি’ বলতে জাতে উত্তরণ ঘটার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত মনুষ্যত্বের ভাবনায় উত্তরণ ঘটবে।
‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটি কার লেখা? কবিতায় ‘মানুষ ছাড়া মন’ কেমন হওয়ার কথা বলা হয়েছে?
‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটি লালন শাহ বা লালন ফকিরের লেখা।
এই কবিতায় কবি বলেছেন, মানুষ ছাড়া তাঁর মন একেবারে শূন্য, রিস্ত, নিঃস্ব। কারণ মানুষ বাঁচে মানুষকে ভালোবেসে। তাই মনের মানুষ যদি দ্বি-দলে উপস্থিত না থাকে, তাহলে জীবন পুরোপুরি শূন্য হয়ে পড়ে।
“মানুষ-আকার/ভজলে তরবি।।”-অংশটির বস্তা কে? কেন একথা তিনি বলেছেন?
প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটির বস্তা হলেন ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতার কবি লালন ফকির।
বাউল সম্প্রদায় নিরাকারে বিশ্বাসী নয়। তাঁরা মানুষের আকার বা মূর্তি ভজনায় বিশ্বাসী। তাই মানুষকে সেবা করার মধ্য দিয়ে, তাঁর উপাসনার মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বে উত্তরণের কথা বলেছেন।
‘লালন ফকির কীভাবে মানবতাবাদকে প্রাধান্য দিয়েছেন তা পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
বাউলসাধনার শ্রেষ্ঠ সাধক লালন ফকির ছিলেন গভীরভাবেই মানবতাবাদে বিশ্বাসী। মনুষ্যত্বের সাধনাই ছিল তাঁর কাছে সর্বোত্তম সাধনা। মানুষকে ভজনা করলেই সোনার মানুষ হওয়া যাবে বলে তিনি প্রত্যয়ী ছিলেন। মানুষে-মানুষে গভীরতম ভালোবাসার পথেই নির্মিত হয় স্বর্গের রূপরেখা, সৌন্দর্যের নন্দনকানন। ‘মানুষ-আকার’-কে ভজনা করলেই উত্তরণ ঘটে মানুষের। আলোচ। কবিতায় জীবনবাদী কবি এভাবেই জীবনেশ্বরের বন্দনা গান রচনা করে মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন ও উত্তর ( Marks 3)
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি/মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কবিতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
প্রসিদ্ধ বাউল সাধক লালন শাহ ফকির তাঁর ‘লালন শাহ ফকিরের গান’-এ বাউল ভক্ত বা সাধকদের বাউল তত্ত্ব সম্পর্কে উপদেশ দান প্রসঙ্গে এই গান রচনা করেছেন। বাউলের মূল সুর দেহাত্মবাদ ও মানবতাবাদের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন এই গানের মধ্য দিয়ে।
কবি বলেছেন, সাধন-ভজন-পূজনে মানুষই হল মূল আধার। মানুষকে ভালোবেসে তাঁর সেবার মধ্য দিয়েই মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের ভজনা করলে অর্থাৎ তাঁর প্রতি দয়া-মায়া-প্রেম-করুণা প্রদর্শনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা যাবে। এই মনুষ্যত্বে উত্তরণ না ঘটলে মানুষ একদিন তাঁর মূল হারিয়ে ফেলবে। তাই মানুষকে অবলম্বন করে পরস্পরকে আঁকড়ে নিজেদের অধিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠা দিতে হবে। তবেই সোনার মানুষ নিজের শিকড়ে এবং মানবতায় দৃঢ়বন্ধ থাকবে। মানুষের হৃদয়ই যাবতীয় উপাসনার মন্দির। মনুষ্যত্বের উত্তরণের জন্য চাই অন্তরের দেবতাকে উপলব্ধি করার বাসনা। সেই বাসনা ও আরাধনার পথেই সোনার মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। কবির মতে, মন্দির, মসজিদ, পূজার্চনা নয়, মানুষে-মানুষে মেলবন্ধনই পরম সত্য।-
"তোমার পথ ঢেকেছে মন্দিরে মসজিদে তোমার ডাক শুনে চলতে না পাই বুইখা দাঁড়ায় গুরুতে মুরশোদে।"
অর্থাৎ সর্বমানবসত্তাই মানবতার শেষ বাণী।
“দ্বি-দলের মৃণালে / সোনার মানুষ উজ্জ্বলে / মানুষ-গুরু কৃপা হলে / জানতে পারবি।।” -বাউল তত্ত্বের দেহাত্মবাদ অনুসারে অংশটির ব্যাখ্যা করো।
বাউল সাধক লালন শাহ ছিলেন দেহাত্মবাদী মরমিয়া কবি। তাই তিনি তাঁর ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সেই দেহাত্মবাদিতাকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। বাউল সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি সেই মানুষ-গুরুর কৃপা পেতে চান। তাই বলেন, ‘মিলন হবে কতদিনে’। ‘শ্রীমন্তাগবৎগীতা’য় বলা হয়েছে ‘আত্মানাং বিন্দি’-নিজেকে জানা। পরমতম সাধনার পথেই আসে মুক্তি। আরাধনার আলোয় আলোয় মিলন হয় আত্মনিবেদন ও আত্মানুসন্ধানের। সেই মিলনই শেষ অনিবার্য সত্য।
বাউলতত্ত্বে বলা হয়েছে যটচক্রের কথা। আমাদের দেহে আছে ছয়টি চক্র; যথা-মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুরক, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা। এই ঘটচক্রের মধ্যে আজ্ঞাচক্র আমাদের দুই ভুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। একেই বলা হয় দ্বি-দল। অর্থাৎ শ্বেতবর্ণ পদ্মের ডাঁটার মতোই আমাদের দেহ এই চক্রকে শ্বেতশুভ্র চাঁদের মতো ধারণ করে আছে। এই চক্রেই পরম সাধনায় মনের মানুষ বা গুরুর আগমন ঘটে। যখন গুরু কৃপা করবেন এবং আজ্ঞাচক্রে এসে উপস্থিত হবেন তখনই মনুষ্যত্বের চরম রূপ অনুধাবন করা সম্ভব হবে। তখনই একজন বাউল সাধকের মনুষ্যত্বে উত্তরণ ঘটবে।
“জেনে শুনে মুড়াও মাথা / জাতে তরবি।” -কার কীভাবে জাতে উত্তরণ ঘটবে ব্যাখ্যা করো।
বাউল সাধক লালন শাহ ফকির তাঁর ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাটিতে বাউল ভক্তদের জাতে উত্তরণের কথা বলেছেন।
কবি বলতে চেয়েছেন, মানুষ হল স্বর্ণলতা বা আলোকলতার মতো অপরের প্রতি নির্ভরশীল। এই লতানে গ অন্য গাছকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকে। তার নিজস্ব কোনো শিকড় বা মূল থাকে না। ঠিক তেমনই মানুষ হল এতে অপরের সঙ্গ্যে প্রেমের গ্রন্থিবন্ধনে আবন্ধ। মানুষের সঙ্গো মানুষের এই বন্ধনকে বিশ্লেষণ করতে হলে প্রয়োজন ভালোবাসার আনুগত্য। তবেই মানব্যভাবনার সঠিক সংশ্লেষণে অর্থাৎ মানবিকতার উজ্জ্বলতায় সবরকম সংকীর্ণতার উৎপাটন ঘটানো সম্ভব হবে। ভালোবাসা, শ্রদ্ধার পল্লবে পল্লবে মানবতার জাহ্নবীধারায় মানবজীবন আলোকিত হয়। একেই কবি ‘জেনে শুনে মুড়াও মাথা’ বলতে চেয়েছেন। যখন এই অনুগত সত্তা নিজেকে মানুষের জন্য বিলীন করতে পারবে, তখনই তাঁর মধ্যে মনুষ্যত্বের উত্তরণ ঘটবে এবং সে প্রকৃত মনুষ্যজাতির অন্তর্ভুক্ত হবে। কবির কথায়-
"চিত্ত-আসন দাও মেলে, নাই যদি দর্শন পেলে আঁধারে মিলিবে তাঁর স্পর্শ- হর্ষে জাগায়ে দিবে প্রাণ।"
“মানুষ ছাড়া মন আমার / পড়বি রে তুই শূন্যকার / লালন বলে, মানুষ-আকার / ভজলে তরবি।।” -প্রসঙ্গাসহ অংশটি ব্যাখ্যা করো।
বাউল সাধক লালন শাহ তাঁর ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতাংশটি বাউল ভক্তদের প্রতি বাউল তত্ত্ব সম্পর্কে জান দান প্রসঙ্গো এই কথাগুলি বলেছেন।
কবি বলতে চেয়েছেন, মানবতাবাদের মূল আধার হল মানুষ। তাই মানুষকে বাদ দিলে সব হয়ে পড়বে অস্তিত্বহীন, শুনা, নিঃস্ব। মানবতাহীন সাধনার বাস্তব অস্তিত্ব নেই, মহানন্দে নিরন্তর মানব-প্রেমের সাধনায় মনুষ্যত্বের অরুণালোক প্রজ্জ্বলিত হয়। তাই তিনি মানুষের পূজা করতে চেয়েছেন এবং সকলকে বলেছেন। যেহেতু কবি ছিলেন দেহাত্মবাদী, তাই তিনি কখনো নিরাকারের উপাসনা করেননি। মানবমূর্তিকেই তিনি ভজনা করতে চেয়েছেন। মানুষের ভজনা বা উপাসনার মধ্য দিয়েই তিনি মনুষ্যত্বে উত্তরণ ঘটানোর কথা বলেছেন। এটাই হল ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র পথ। নিখিলের অন্তর মন্দিরপ্রাঙ্গণে মানুষের মঙ্গলারতি জ্বালাতে পারলে মানবতার উৎসবে বেজে ওঠে মধুর প্রেমের সুর। তাই কবি মানুষের মাঝেই ‘মানুষ রতন’কে খুঁজে পেতে চান, প্রেম-ভক্তি দিয়েই তাকে পাওয়া যায়। সেইজন্যই মরমিয়া কবি বলেছেন-“মনের মধ্যে মনের মানুষ কর অন্বেষণ।”
‘লালন শাহ ফকিরের গান’ -কবিতায় কবির দার্শনিক মনোভঙ্গির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো।
বাউল সম্প্রদায় সহজিয়া জীবনসাধক। মানুষকে জানাই এদের প্রধান সাধনা। উদারতার ও মানবতার মহিমময় স্পর্শ আছে বাউল সাধনায়। বাউলগানের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধক লালন ফকির রচিত ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতায় কবি বলেছেন মানুষের প্রকৃত ভজনা করলেই সোনার মানুষ হয়ে ওঠা যায়। কবি নিরাকারের উপাসক নন, মানুষের রূপ তথা আকারকে ভজনা করতে বলেছেন তিনি কারণ মানব উপাসনার মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বে উত্তরণ ঘটে।
আলোচ্য কবিতায় কবি দেখিয়েছেন, মানুষ রতনের প্রতি প্রেমই মানবতার মৈনাক চূড়া স্পর্শ করে। মানবতাবাদ, নিরাকার ধর্ম। হৃদয়ধর্মকেই কবি সর্বাধিক সাধনার ধন বলেছেন। কবিমনের উদারতা ও মানবতার মহিমময় দর্শনই প্রতিফলিত আলোচ্য কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ একেই ‘মানবধর্ম বলেছেন (Religion of Man)। ইহমুখী মানবতাবাদী দর্শনই কবির ভাবনায় প্রতিফলিত-
"মানুষ-রতন কর যতন, অযতনে পাবি না। সেই মানুষের সঙ্গ নিলে বরণ হবে কাঁচা সোনা।" আরও পড়ুন - প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা