শব্দতত্ত্ব সম্বন্ধে তিনি যে গবেষণা করেছেন তার গভীরতা পন্ডিতদের নির্বাক করে দিয়েছে”- এখানে ‘শব্দতত্ত্ব’ কী? ‘শব্দতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর গবেষণার সম্যক পরিচয় দাও

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শব্দতত্ত্বসম্বন্ধীয় গবেষণার কথা বলেছেন।

শব্দতত্ত্ব

‘শব্দতত্ত্ব’-এর অর্থ হল-বাংলা ব্যাকরণে শব্দের গঠন, সৃষ্টি, ব্যুৎপত্তি ইত্যাদি বিষয়ক তত্ত্ব। কিন্তু এখানে তা ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪২ বঙ্গাব্দে ‘শব্দতত্ত্ব’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। প্রাবন্ধিক এখানে সেই গ্রন্থের কথাই বলেছেন।

গবেষণার সম্যক পরিচয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শব্দতত্ত্ব’ বইতে তাঁর প্রায় সারাজীবনের ভাষাচিন্তা, মতান্তর, বিশ্লেষণ-প্রবণতা, ধারণার বিবর্তন এগুলিই মুদ্রিত হয়ে আছে। এই গ্রন্থে বাংলা ভাষার স্বভাব ও স্বাতন্ত্র্য আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। একদিকে ভাষার সর্বাঙ্গীণ রূপ সম্বন্ধে পাশ্চাত্য ভাষাবিজ্ঞানীসুলভ সচেতনতা, অন্যদিকে বাংলা ভাষার বিশ্লিষ্ট প্রকৃতি সম্বন্ধে তীক্ষ্ণ বোধ রবীন্দ্রপাণ্ডিত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে উঠেছে। সমকালীন ভাষাচর্চার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর পরিচ্ছন্ন ধারণা ছিল এবং তিনি ভারতীয় ভাষা সম্পর্কিত রচনাগুলি মনোযোগ দিয়ে পড়েছিলেন তাই তিনি প্রচলিত কাঠামোতে বাংলা ভাষাবিশ্লেষণের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলা ভাষার পূর্বনির্ধারিত কোনো রূপের ভিত্তিতে তিনি ‘ভাষাতত্ত্ব’ রচনা করেননি- বাংলা ভাষা আবিষ্কারই তাঁর আলোচনা পর্যালোচনার লক্ষ্য ছিল।

Leave a Comment