শিক্ষার পরিধি আলোচনা কর
শিক্ষার পরিধির মধ্যে শিক্ষার্থীদের যেসকল দিকের বিকাশ অন্তর্ভুক্ত, সেগুলি হল
প্রজ্ঞামূলক দিক
শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো। যে-কোনো শিক্ষার্থী যে বিষয়েরই হোক-না-কেন শিক্ষার মাধ্যমে তাকে ওই বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় জ্ঞানই দেওয়া প্রয়োজন।
অনুভূতিমূলক দিক
কোনো বিষয়ের কোনো একক সম্পর্কিত যথাযথ জ্ঞান শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি পাঠে আগ্রহের সঞ্চার করবে। এইভাবে কোনো একটি বিষয়ের প্রতিটি এককের প্রতি আগ্রহের সঞ্চার করতে পারলে শিক্ষার্থীর মধ্যে ওই বিষয় সম্পর্কে ধনাত্মক তথা ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠবে। সে বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করবে এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে বিষয়টিকে নিজের বিষয় হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মধ্যে ধনাত্মক মনোভাব সৃষ্টিই হল শিক্ষার অনুভূতিমূলক দিক।
দক্ষতা
শিক্ষার পরিধির অন্তর্ভুক্ত অপর একটি দিক হল, শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা গড়ে তোলা। যেমন একজন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠলে তার মধ্যে সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা (problem solving ability), কথা বলার দক্ষতা (speaking ability), লেখার সামর্থ্য (writing capacity) ইত্যাদি গড়ে ওঠে।
সৃজনশীলতা
শিক্ষার অন্যতম একটি পরিধি হল, শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা। অর্থাৎ সৃজনশীল শিক্ষার্থীর মধ্যে যখন কোনো বিষয়ে যথাযথ প্রজ্ঞা, অনুধাবন, দক্ষতার বিকাশ ঘটবে তখন সে বিষয়টি সম্বন্ধে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করবে।
মেধা
যথাযথ শিক্ষা শিক্ষার্থীর মেধা অন্বেষণে সাহায্য করে। একজন শিক্ষার্থী কোনো শ্রেণিতে একাধিক বিষয় পড়ে কিন্তু সব বিষয়ে সমান আগ্রহী হয় না। কোন্ বিষয়টি সে সবদিক থেকে ভালো বুঝতে পেরেছে, তা জানতে হলে তার সেই বিষয় সম্পর্কিত চিন্তাভাবনাকে যাচাই করা দরকার। এ ব্যাপারে শিক্ষক বা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এইভাবে কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীর মেধা অন্বেষণ করা সম্ভব।
পারদর্শিতার মান
একই শ্রেণির বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের বিষয় সম্পর্কে কতটা জ্ঞান আছে তা বুঝতে গেলে লিখিত ও মৌখিক অভীক্ষা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয় নিয়ে আলোচনা ইত্যাদির দ্বারা মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের মান বোঝা সম্ভব এবং একাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে তুলনা করা যায়। শিক্ষার্থীদের পারদির্শতার মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মেধাসম্পন্ন, মাঝারি মেধাসম্পন্ন, নিম্ন মেধাসম্পন্ন যে-কোনো প্রকারেরই হতে পারে। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীভেদে মতামত ভিন্ন হয়। তাই দেখা যায় একই শিক্ষাস্তর পর্যন্ত শিক্ষিত দুজন ব্যক্তির মধ্যে একজন কোনো সমস্যামূলক বিষয় সম্পর্কে যত সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্যজন কিন্তু তা পারে না। এর অন্যতম কারণ হল, প্রথম জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অপর জনের তুলনায় বেশি, যা ডিগ্রির উপর নির্ভরশীল নয়, তা নির্ভর করে ব্যক্তিদ্বয় নিজের শিক্ষা কতটা ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে তার উপর।
সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা
একই বিষয়ে পাঠদান বা পাঠগ্রহণের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে যেমন বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, ঠিক তার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীও কোনো-না-কোনো সমস্যায় পড়তে পারে। আবার দৈনন্দিন জীবনে কিংবা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন মানুষ নানান সমস্যামূলক পরিস্থিতির শিকার হয়। সেই প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হয়। যে ব্যক্তির ওই বিষয়ে ধারণা যত গভীর সে তত সহজে সেই সমস্যাটির সমাধানে সফল হবে।
কল্পনাশক্তির বিকাশ
একজন ব্যক্তি যে-কোনো শিক্ষায় শিক্ষিত হন-না-কেন বা শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও তার মধ্যে কিছু-না-কিছু কল্পনাশক্তি থাকে। সেই কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান সে করতে পারে। সুতরাং শিক্ষা বিভিন্ন কল্পনাশক্তির বিকাশে সহায়ক।
চিন্তাশক্তি, যুক্তিশক্তি
একমাত্র শিক্ষাই পারে শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির মধ্যে চিন্তাশক্তি ও যুক্তিশক্তির যথাযথ বিকাশ ঘটাতে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে। শিক্ষার প্রসার এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে কম্পিউটার প্রযুক্তির যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা আমাদেরকে চন্দ্র অভিযানে সাফল্য এনে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও নানান যন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি
শিক্ষার মাধ্যমে সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি ঘটেছে। ফলত সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে আমরা সংস্কার ও কুসংস্কারের মধ্যে তফাতটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ
স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালেও বহুদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে নিরক্ষরের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী নিরক্ষরের সংখ্যার চেয়ে অধিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি সুযোগসুবিধা, নানান ধরনের কর্মসূচি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এই নিরক্ষরতা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তবে নিরক্ষরতা দূরীকরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু শিক্ষার মানে কিছুটা অবনমন ঘটেছে। তবে আশার কথা হল শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প স্কুলছুটের সংখ্যা (Dropout) কমিয়ে দিয়েছে।
বিশেষ শিক্ষা
সাক্ষরতা অভিযান, বয়স্ক শিক্ষা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা ইত্যাদি আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
শিশুর ব্যক্তিসত্তার বিকাশ
শিক্ষায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জ্ঞান প্রয়োজন, শিক্ষার অন্যতম কাজ ব্যক্তিসত্তার সংরক্ষণ।
শিশুর মানসিক উপাদান
মনোযোগ, স্মৃতি, চাহিদা, প্রক্ষোভ, বিস্মৃতি, শিখনপ্রক্রিয়া, অভ্যাস, প্রবণতা ইত্যাদি শিক্ষাবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
শিশুর জীবনবিকাশের ধারা
শৈশব, ব্যাল্যকাল, কৈশোর ও পরবর্তী সময়ে শিশুর ভাষার বিকাশ, মানসিক ও প্রাক্ষেভিক বিকাশ, দৈহিক ও সামাজিক বিকাশ শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্তর্গত।