সরকারের শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের অভিমত আলোচনা করো

সরকারের শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের অভিমত আলোচনা করো

The Politics নামক গ্রন্থে অ্যারিস্টটল বিভিন্ন প্রকার সংবিধান, সরকার ও তার শ্রেণিবিভাজন প্রসঙ্গে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন, যা রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সরকারের শ্রেণিবিভাজন

মূলত শাসকের সংখ্যা ও তার গুণ-এই দুটি বিষয়কে সামনে রেখে অ্যারিস্টটল সরকারের স্তরবিভাজন করেছেন। এর মধ্যে স্বাভাবিক (Pure) এবং বিশুদ্ধ অবস্থার শাসন হল- রাজতন্ত্র (Monarchy), অভিজাততন্ত্র (Aristocracy) এবং বহুজনতন্ত্র (Polity)। অন্যদিকে বিকৃত (Perverted) শাসনতন্ত্র থেকে যেসকল রূপের সৃষ্টি হতে পারে সেগুলিকেও তিনি তিনভাগে বিভক্ত করেছেন, যথা- স্বৈরতন্ত্র (Tyranny), গোষ্ঠীতন্ত্র (Oligarchy) এবং গণতন্ত্র (Democracy) ।

(i) রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র

অ্যারিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র যখন একজন ব্যক্তির দ্বারা শাসিত হয় ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে শাসনকার্য পরিচালিত হলে তাকে বলা হয় রাজতন্ত্র। আবার রাষ্ট্রে একজন ব্যক্তির শাসনে যখন সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিবর্তে শাসকের ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রাধান্য পায়, তখন সেই বিকৃত রাজতান্ত্রিক সরকার স্বৈরতন্ত্র হিসেবে পরিচিত হয়।

(ii) অভিজাততন্ত্র ও গোষ্ঠীতন্ত্র

মুষ্টিমেয় ব্যক্তি সাধারণ মানুষের স্বার্থে শাসনকার্য পরিচালনা করলে সেই সরকারকে বলা হবে অভিজাততন্ত্র। অন্যদিকে অভিজাততন্ত্র যখন বিকৃত ব্যবস্থায় পরিণত হয়ে মানুষের স্বার্থবিরোধী পথে পরিচালিত হয়, তখন তা গোষ্ঠীতন্ত্র বা মুখ্যতন্ত্র বলে পরিচিত হবে বলে অ্যারিস্টটল উল্লেখ করেছেন।

(iii) বহুজনের শাসন (পলিটি) ও গণতন্ত্র

রাষ্ট্র যখন জনগণের দ্বারা পরিচালিত হবে এবং বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে কলহ থাকবে না, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য থাকবে না, সেই ব্যবস্থাকে বলা হবে পলিটি। অনুরূপভাবে অদক্ষ জনগণের দ্বারা রাষ্ট্র শাসিত হলে তথা জনগণের শাসন যখন প্রগতিবিরোধী হয়ে দাঁড়ায় এবং রাষ্ট্রে দলাদলি, সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়- তখন সেই সরকারকে বলা হয় গণতন্ত্র।

অ্যারিস্টটলের মতে, পলিটি হল সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। বহুজনের শাসন হলেও এই ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষিত হয়। শুধু তাই নয়, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে এই শাসন রাষ্ট্রের ভিত্তিও সুদৃঢ় করতে তৎপর হয়ে ওঠে। আইনের শাসন বা Rule of Law-কেই তিনি এক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেছেন। অন্যদিকে অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসন হল গণতন্ত্র। কারণে এরূপ শাসনে শাসকের কোনও প্রশাসনিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকে না। প্রাধান্য পায় বিশৃঙ্খলা।

সমালোচনা

অ্যারিস্টটল সরকার বা শাসনতন্ত্রের যে শ্রেণিবিভাজন করেছেন তা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই বলেন যে, মূলত নগররাষ্ট্রের পরিসরেই তিনি সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছিলেন, যা তাঁর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন করে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে যেভাবে তিনি সরকারের বিকৃত রূপ বলে বিবেচনা করে মতামত প্রদান করেছেন, সেটিও যথেষ্ট সংশয়পূর্ণ এবং সমালোচিত হয়েছে বিস্তর। তবে নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অ্যারিস্টটল প্রদত্ত সরকারের শ্রেণিবিভাজন সর্বোপরি সমসাময়িককালের রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ যে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক ও যুক্তিনিষ্ঠ ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আরও পড়ুন – কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কী ছিল

Leave a Comment